আ’লীগ ব্যস্ত কোন্দল নিয়ে রাজপথে বিএনপি দাপটে

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট কোন্দল আর গ্রুপিংয়ের বেড়াজালে পড়ে সাংগঠনিক ভাবে ধীরে ধীরে কোণঠা হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগ। অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি মৃতপ্রায় সংগঠন থেকে পুনরুজ্জীবতি করে জেলা ব্যাপী ওয়ার্ড ইউনিয়ন থেকে শুরু করে থানা উপজেলা এবং সর্বশেষ জেলা বিএনপিতে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ রূপ নিয়ে একটি শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে ইতিমধ্যে আওয়ামীলীগের চোঁখের সামনে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি তাদের সাংগঠনিক সক্ষমতার জানান দিয়েছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ বিএনপি গলির ভিতরে থাকা আন্দোলন সংগ্রামের গন্ডি পেড়িয়ে এখন জেলা থেকে উপজেলা, থানা ওয়ার্ড পর্যায়ে সক্রিয়ভাবে সাধারণ জনগণের সম্পৃক্তার মাধ্যমে আন্দোলন সংগ্রাম একের পর এক সফলমন্ডিত করে যাচ্ছেন। তবে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা কেবল বিএনপিকে নিয়ে বক্তব্য দিয়ে সমালোচনা করে দায় সারছেন। এছাড়া তাদের দায়সাড়া নেতৃত্বের কারণে নারায়ণগঞ্জ জেলা এবং মহানগর সাংগঠনিকভাবে উর্বর হতে পারছে না। যার কারণে ধীরে ধীরে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগ কোণঠাসায় পরিণত হচ্ছে। বর্তমান সময়ে নারায়ণগঞ্জ জেলায় আওয়ামীলীগ ও বিএনপির রাজনীতি নিয়ে পর্যালোচনা করে দেখা যায় অন্তঃকলহে জর্জরিত হয়ে আছে আওয়ামীলীগ এবং মৃতপ্রায় বিএনপি উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। কারণ নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতির দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় ২০২২ সালের শেষ দিক নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে নেতৃত্বের পরিবর্তনের মাধ্যমে সুবাতাস বইতে থাকে। কারণ নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপিতে ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব গিয়াসউদ্দিনকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবং জেলা যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম ফারুক খোকনকে সদস্য সচিব করে জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হলে ধীরে ধীরে পাল্টে যায় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির রাজনীতি। কারণ জেলা বিএনপির সকল ইউনিটে সম্মেলনের মাধ্যমে স্বচ্ছা প্রক্রিয়ায় নেতা নির্বাচিত করা হয়। জেলা বিএনপির সকল ইউনিটে কমিটি গঠনের পর অনুষ্ঠিত হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন। সেখানেও নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যালেটের মাধ্যমে ভোট প্রদানের আয়োজন করা হয়। তবে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপিতে ঐক্যে রাজনীতির কারণে আহ্বায়ক পদে থাকা আলহাজ্ব গিয়াসউদ্দিন সভাপতি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হোন। সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়েও নানা নাটকীয়তা থাকলেও পরিশেষে সদস্য সচিব পদে থাকা গোলাম ফারুক খোকন সাধারণ সম্পাদক পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশানায় পূর্বের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে তাদের শক্তির জানা দিবে বলে ইচ্ছামত প্রকাশ করছেন। অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপিতে ২০২২ সালের শেষ দিকে এড.সাখাওয়াত হোসেনকে আহ্বায়ক এবং এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে সদস্য সচিব করা হলে ধীরে ধীরে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির রাজনীতি পাল্টো যেতে থাকে। কারণ দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আওতাধীন সকল থানা ওয়ার্ড ইউনিয়ন কমিটিগুলো মেয়াদহীন থাকায়। সাখাওয়াত-টিপুর নেতৃত্বে মহানগর বিএনপির আওতাধীন সকল ইউনিটে সম্মেলনের মাধ্যমে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নেতা নির্বাচিত করা হয় বলে তাদের দাবি। তবে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের পর থেকেই একটি বিদ্রোহী গ্রুপে আত্মপ্রকাশ ঘটে। কিন্তু মহানগর বিএনপি নেতাদের মতে যেহেতু নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সকল ইউনিট কমিটি গঠনের কার্যক্রম শেষ এখন মহানগর বিএনপির সম্মেলনে পালা আর এই সম্মেলন থেকেই নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির বিদ্রোহী গ্রুপের নিষ্পত্তি ঘটতে পারে দলীয় নির্দেশে দুই গ্রুপের সমন্বয়ে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সম্মেলনও ব্যালেটে ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যার কারণে মহানগর বিএনপির সম্মেলন হলেই মহানগর বিএনপির রাজনীতির সকল জট খুলে যাবে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ ও মহানগর আওয়ামীলীগে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগ রাজনীতির প্রচীনতম দুই বলয় উত্তর দক্ষিণ বলয়ে বিভক্তি আছেই। এছাড়া আওয়ামীলীগের প্রতিটি ইউনিটে বিভক্তি আন্তঃকলহের কারণে প্রায়শই বিতর্কিত কান্ড নিয়ে আলোচনা সমালোচনা চলমান থাকে। নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের ২০২২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে জেলা আওয়ামীলীগে পূর্বের সভাপতি আব্দুল হাই এবং সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদলকে বহাল রেখেই নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠন করা হয়। যেহেতু জেলা আওয়ামীলীগের আওতাধীন সকল ইউনিট কমিটি পূর্বেই তারা গঠন করতে পেরেছিলেন। যার কারণে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে জেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ খসড়া কমিটি করে কেন্দ্রে জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে দীর্ঘ আট মাস অতিবাহিত করে গত মে মাসের দিকে জেলার সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক দুভাগে বিভক্ত হয়ে আলাদা আলাদা খসড়া কমিটি করে কেন্দ্রে জেলা আওয়ামীলীগের খসড়া কমিটি জমা দেন। জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাকের আলাদা আলাদা খসড়া কমিটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্ট হয়। জেলার নেতাদের সূত্রে জানা যায়, তাদের আলাদা আলাদা খসড়া কমিটি নিয়ে জেলা আওয়ামীলীগে বেশ সমলোচিত হয়েছে। যার কারণে কেন্দ্রের নির্দেশনা মোতাবেক সমন্বয় করে খসড়া দুই কমিটিকে এক কমিটিতে পরিণত করার জন্য কাজ করছে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক। তবে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের পর নেতৃত্বে এসেও সকল ইউনিট কমিটি গঠন করে জেলা বিএনপির সম্মেলন করেছে শীঘ্রই পূর্নাঙ্গ রূপে ফিরছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ বিতর্কে জর্জরিত হয়ে এখনো পূর্নাঙ্গ কমিটি পূর্ণতা দিতে পারছে না। অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগকে দীর্ঘদিন ধরেই সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আনোয়ার হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন খোকন সাহা। ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও আবহাওয়াজনিত কারণে সম্মেলন হয়নি। পরবর্তীতে কেন্দ্র থেকে ওয়ার্ড কমিটিগুলো গঠনের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনা মোতাবেক ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৭টি ওয়ার্ডে সম্মেলন করে হাতেগোনা কয়েকটি ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করে সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা বিভক্তিতে জড়িয়ে ফুলস্টপ হয়ে যান। যার কারণে কেন্দ্র থেকেও তাদেল তলব করা হয়। তারপরও ওয়ার্ড কমিটিগুলো শেষ করে মহানগর আওয়ামীলীগের সম্মেলনের দিকে এগুতে গড়িমসি করছেন। কারণ সময় অতিবাহিত হলেই সংসদ নির্বাচন নির্বাচনের অযুহাতে কমিটিগুলো আটকে দীর্ঘদিন কমিটি প্রতিষ্ঠিত ছক আটছেন আনোয়ার-খোকন। যার কারণে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি থেকে সাংগঠনিক ভাবে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে।