আজ শুক্রবার | ১৫ আগস্ট ২০২৫ | ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২০ সফর ১৪৪৭ | রাত ২:২২

সিদ্ধিরগঞ্জে ময়লা ফেলে রেলের জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণ

ডান্ডিবার্তা | ২২ জুন, ২০২৩ | ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট সিদ্ধিরগঞ্জে নাসিক ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বিভিন্ন কর্মকান্ডে বিতর্কিত যুবলীগ নেতা মতিউর রহমান মতির নির্দেশে বাসা বাড়ির ময়লা-আবর্জনা ফেলে রেলের জায়গা দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কাউন্সিলরের এসব কর্মকান্ড নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চলছে বিভিন্ন আলোচনা সমালোচনা। গতকাল বুধবার সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সুমিলপাড়া এলাকায় সরেজমিনে গেলে এমন চিত্রের দেখা মিলে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় আদমজী-চাষাড়াস্থ নির্মাণাধীন নাগিনা জোহা সড়কের সুমিলপাড়া এলাকায় রাস্থার পাশে রেলওয়ের জায়গায় ওয়ার্ডের বিভিন্ন বাসা বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করে সেখানে ফেলছেন পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। তবে সেখানে ময়লা ফেলতে উক্ত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির নির্দেশ রয়েছেন বলে জানান পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, তাঁদের বাসা বাড়ির সামনে এভাবে দিনের পর দিন ময়লা-আবর্জনা রাখার ফলে ময়লার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পরেছেন তারা। অল্প বৃষ্টিতেই বাসায় পানিতে তলিয়ে যায় ভুক্তভোগীদের। তার উপর ময়লার দুর্গন্ধ বাড়তে থাকে। বৃষ্টি আসলে ময়লা থেকে পোকা জন্মে তা বাসা বাড়িতে প্রবেশ করেন বলে অভিযোগ তাদের। দুর্গন্ধে ছেলে-মেয়েরা অসুস্থ হয়ে পড়ার কথাও জানান। খাতা-কলমে সিটি করপোরেশন হলেও সিদ্ধিরগঞ্জের আওতাধীন ১০টি ওয়ার্ডের বর্জ্য ফেলার পর্যাপ্ত জায়গা নেই বললেই চলে। তবে সিদ্ধিরগঞ্জের প্রতিটি ওয়ার্ডে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর মধ্যে অন্যতম নাসিক ৬ নম্বর ওয়ার্ড। ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়কের পাশেও গড়ে উঠেছে ছোট ছোট ময়লার ভাগাড়। সবখানেই দেখা যায় ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। সব মিলিয়ে পুরো ওয়ার্ডই যেন এখন পরিণত হয়েছে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে। সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কাপড় দিয়ে নাক ঢেকে চলতে হচ্ছে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী ও পথচারীদের। সৌরভ নামের এক স্কুল ছাত্রের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্রতিদিন নাক চেপে স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। বৃষ্টি হলে দুর্গন্ধ আরও বেড়ে যায়। এসব ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে পথচারী ও স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী ও শিশু বাচ্চাদের অসুস্থ হওয়ার ঝুকি রয়েছে। এদিকে সরকারি রেলওয়ের জমি অভিনব কায়দায় ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করে দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির বিরুদ্ধে। ময়লা-আবর্জনার আড়ালে সেখানে একটি দোকান নির্মাণ করে তা ভাড়াও দিয়েছেন দখলকারীরা। সরকারি জমি মাটি দিয়ে ভরাট করতে গেলে বাধার মূখে পড়তে পারে এমন ধারনা থেকেই অভিনব কৌশল অবলম্বন করছেন দখলদারচক্র। এই চক্রটি সরকারি জমি দখলের জন্য নতুন কৌশলে ময়লা-আবজর্না ফেলে তা ভরাট করে ফেলছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সকাল থেকেই সেখানে ময়লা ফেলছেন হাফিজ মোল্লা নামের এক পরিচ্ছন্ন কর্মী। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, দীর্ঘ ৬-৭ বছর ধরে তিনি এ কাজ করছেন। তবে ময়লা ফেলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি এ ব্যাপারে কিছুই কইতে পারবো না। কাউন্সিলর মতি ভাই বলছে এখানে ময়লা ফেলতে তাই আমরা এখানে ময়লা ফেলছি। এদিকে ভুক্তভোগী রেহেনা আক্তার বলেন, আমরা বাবা গরীব মানুষ। কিছু বলতেও পারি না আবার সইতেও পারছি না। ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে ভাত খাবো তো দুরের কথা ঠিক মতো ঘরের ভিতর থাকতেই পারছি না। অল্প বৃষ্টি হলেই বাড়ির উঠোনে পানি জমে যায় তার সাথে আবার ময়লার পানিও চলে আসে। ময়লা থেকে যে পোকা তৈরি হয় তা ঘরের ভিতরে ঢুকে পরে। বাচ্চাদের নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছি। বিষয়টি কাউন্সিলরকে জানিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাউন্সিলরের (মতিউর রহমান মতি) কাছে গেলে তিনি বলেন আমার কিছুই করার নাই। আমি এই ময়লা কোথায় ফেলবো তাহলে। আরও অশোভন আচরণ করেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ভুক্তভোগী নারী বলেন, ময়লার দুর্গন্ধে বাসায় থাকতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে দুর্গন্ধ আরও বেড়ে গেছে। পোকা ঘরে চলে আসে। কিছুদিন আগে আমার ছোট বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পরেছে এই ময়লার গন্ধে। বিষয়টি জেনেও কাউন্সিলর মতি ভাই কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ভোট দিয়ে তাঁকে পাশ করিয়েছি। কিন্তু বিপদের সময় তাকে পাশে পাই না। তাহলে ভোট দিয়ে তাকে পাশ করানো কি আমাদের অপরাধ? এর কোন সমাধান না পেলে ঘর বাড়ি বিক্রি করে এখান থেকে চলে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোন পথ নেই। মানিক নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, এই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর যা বলে তাই হয়। সে দিন বললে দিন, রাত বললে রাত। ময়লার দুর্গন্ধ ও পঁচা পানির কারণে বড় বড় গাছ পর্যন্ত মরে যাচ্ছে। কাউন্সিলরের এ বিষয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই। এসব বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পর্যন্ত পায় না। তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে তাকে জামাত-বিএনপির নাশকতা মামলা দিয়ে হয়রানি করেন বলেও জানান তিনি। তবে কাউন্সিলর এখানে ময়লা ফেলে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভির সুনাম নষ্ট করছেন। মেয়র এ ঘটনা জানে কিনা আমার জানা নেই। তাই মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। এদিকে নাসিক ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। এবং তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোনটি কেটে দেন। পরবর্তীতে তার মুটোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হোসেন মুঠোফোনে বলেন, কাউন্সিলর এখানে ময়লা ফেলতে পারে না। তিনি কেনো রাস্থার পাশে ময়লা ফেলবেন। এ বিষয়ে আমরা দ্রুতই ব্যবস্থা নিবো বলে জানান এই কর্মকর্তা। রেলওয়ের জমিতে সিটি করপোরেশনের ময়লা ফেলার বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ের স্টেশন মাষ্টার কামরুল ইসলাম খান বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কেউ জানায় নি। যেখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে সেটা আমি চিনি না। সম্ভবত সেটা সড়ক ও জনপথের জায়গা হবে বলে তিনি জানান।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা