ময়লার পানিতে ডুবছে ডিএনডিবাসী

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট কয়েক দিনের টানা বর্ষণে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে ডিএনডি(ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমড়া) এলাকায়। পায়ে হাটার রাস্তা দিয়ে চলছে নৌকা, বসতবাড়ীতে পানি প্রবেশ করায় অনেকে বাড়ী ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। চরম দূর্ভোগের কারণে দুঃসহ জীবন যাপন করছেন ডিএনডির বাসিন্দারা। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে নারায়ণগঞ্জের ডিএনডি এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বছরের বেশীরভাগ সময় ডিএনডির অভ্যন্তরের বাসিন্দারা পানিবদ্ধ থাকে। বৃষ্টি হলে এই দূর্ভোগ চরমে পৌঁছে যায়। তবে দীর্ঘমেয়াদী এ সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু হয়েছে কয়েক বছর ধরে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে বলেও জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড। এদিকে, জলাবদ্ধতার সমস্যা দ্রুত সমাধান না হলে ময়লা পানির বর্জ্যে নেমে অবস্থান ধর্মঘট করার ঘোষণা দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সরকার দলীয় সাংসদ শামীম ওসমান। এরপর থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৎপরতা বেড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডে চেয়ারম্যান সরেজমিন পরিদর্শন করে দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ফতুল্লার লালপুর পৌষাপুকুরপাড় এলাকায় যে রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল করতো, সে রাস্তা দিয় এখন নৌকা চলছে। আশেপাশের বসতবাড়ীতে কালো ময়লা পানি প্রবেশ করেছে। পানি বন্দী এসব এলাকার মানুষ বাড়ীঘর রেখে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। এই এলাকার কয়েক হাজার মানুষ পানি বন্দী হয়ে আছে বেশ কিছু দিন ধরে। কোথাও কোমর সমান, কোথাও হাঁটু সমান পানি। ময়লা ক্যামিকেল মিশ্রিত এসব পানির কারণে অনেকেই চর্মরোগসহ নানা সমস্যায় ভুগছেন। এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। স্কুলে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদ জানায়, জলাবদ্ধত কারণে জীবন থমকে গেছে। এই এলাকা বসবাসে অযোগ্য হয়ে পরেছে। সড়ক দিয়ে চলাচল করতে নৌকার কোন বিকল্প ব্যবস্থা নেই। যাতায়াত বাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। তবুও সময় মতো কর্মস্থলে পৌঁছানো যাচ্ছেনা। ব্যবসায় স্থবিরতা বিরাজ করছে। এই সমস্যা দ্রুত সমাধান না হলে মানুষ এই এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য হবে। ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদে একই অবস্থা বিরাজ করছে। ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সারা বছর ধরেই জলাবদ্ধতা লেগে থাকে। মানুষের চলাচলের রাস্তায় পানি থাকার পাশাপাশি বসতবাড়ীতেও পানি থাকে বছর জুড়ে। একই অবস্থা বিরাজ করছে সিদ্ধিরগঞ্জের অনেক এলাকায়। নি¤œাঞ্চল তলিয়ে গেছে ময়লা পানিতে। মিজমিজি এলাকায় গিয়ে মানুষের বসতবাড়ীতে পানি দেখাগেছে। ময়লা পানিকে সঙ্গী করেই এই এলাকার মানুষের বসবাস। গত ক’দিনের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কারণে কেউ কেউ আত্মীয় স্বজনদের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, জলাবদ্ধতার কারণে কোরবানীর ঈদের দিন অনেকে পশু কোরবানী দিতে পারেনি অনেকে। টিউবওয়েল, রান্নাঘর পানির নিচে থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছে স্থানীয় বাসিন্দারা। এদিকে, ডিএনডি এলাকার জলাবদ্ধতার খবরে এলাকাবাসীর কাছে ছুটে এসেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান। বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যম জানিয়েছেন, পানিটা সাদা হলে ব্যাপার ছিল না। এটা পানি না. এটা হচ্ছে একটা বিষাক্ত পদার্থ। এই পানির সাথে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ময়লা থেকে আরম্ভ করে এমন কোন বিষ প্রক্রিয়া নাই এই পানির সাথে না আছে। আমার এলাকার ৩০ থেকে ৪০ লাখ লোক এই পানির ভিতরে থাকে এবং তারা পানি বন্দি অবস্থায় আছেন। এই পানি যদি কমপ্লিটলি অপসারণ না করা যায় এবং করা না হয় তাহলে আমার একটাই পথ থাকবে আমি তো আর কোন প্রতিবাদ করতে পারবোনা। আমি এলাকার মানুষকে সাথে নিয়ে ওই ময়লা পানির বর্জ্যের মধ্যে নেমে অবস্থান ধর্মঘট করবো যতক্ষণ পর্যন্ত এটা সমস্যার সমাধান না হবে। সেনাবাহিনীর ভাইরাও তখন আমাকে ময়লা পানি থেকে উঠাতে পারবে না। আমি যেটা বলি সেটা কিন্তু করি। আমি যেটা বলবো আমি সেটা করবো। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেন, জলাবদ্ধতায় তাদের দু:খ দুর্দশার কথা শুনেন ও দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়ে যাবে। আমার প্রত্যাশা আছে। ডিএনডি প্রজেক্টের জন্য ১২শ ৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। মূলত করোনা ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এই টাকাটা আসতে দেরি হয়ে গেছে। তবে এই জুলাই মাসেই টাকাটা আসবে। যেহেতু সেনাবাহিনী কাজটি করবে আমার প্রত্যাশা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজটি তারা শেষ করতে পারবে। তাদের ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে। এদিকে, শামীম ওসমানের ময়লা পানিতে নামার ঘোষণার পর টনক নড়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকের। ডিএনডির অভ্যন্তরে জলাবদ্ধতার পানি দ্রুত নিষ্কাশন করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। গত ৪ জুলাই সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি নিষ্কাশনের পাম্প স্টেশন পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক রমজান আলী প্রামাণিক। সেখানে গিয়ে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জলাবদ্ধতার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে তাদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন। এ সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক জানান, কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টিপাত ও কোরবানির পশুর বর্জ্যের কারণে নিষ্কাশন খালে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ডিএনডি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ও ডেমরার বেশ কিছু নি¤œ এলাকা প্লাবিত হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। দুর্গত এলাকার মানুষের এ ভোগান্তি দূর করতে পানি নিষ্কাশন খালগুলোর বাঁধাসমূহ অপসারণ ও পানি প্রবাহ নিশ্চিত করে জমে থাকা পানি দ্রুত নিষ্কাশন করার নির্দেশ দেন।