আজ শুক্রবার | ১৫ আগস্ট ২০২৫ | ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২০ সফর ১৪৪৭ | রাত ১২:২১

না’গঞ্জের রাজনীতির নক্ষত্র নাসিম ওসমান

ডান্ডিবার্তা | ২১ জুলাই, ২০২৩ | ১২:৩১ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নাসিম ওসমান। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক কর্মময় জীবনের অধিকারি এই রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধা নারায়ণগঞ্জ থেকে চারবারের নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য। এই পর্যন্ত হওয়া ১১টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে চারটিরই সংসদ সদস্য হয়েছেন নাসিম ওসমান। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হওয়ায় ছোট বেলা থেকেই সাংগঠনিক কর্মকান্ডে ছিলেন আসক্ত। সব সময় মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকার চেষ্টা করতেন। জনগনের সমস্যা সব সময় নিজের সমস্যা মনে করে সমাধান করার চেষ্টা করে যেতেন। ছাত্র জীবন থেকেই তিনি ছিলেন সাহসী ও প্রতিবাদী কন্ঠস্বর। নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের কল্যাণে আমৃত্যু কাজ করেছেন তিনি। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে ক্ষমতারধর ওসমান পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। দেশমাতৃকাকে মুক্ত করার সুপ্ত বাসনা নিয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধিনতা যুদ্ধে অংশগ্রহনের জন্য কাউকে না বলেই তিনি ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ওসমান পরিবারের কান্ডারী যদি কাউকে বলতে হয়, তবে সে হলো প্রয়াত নাসিম ওসমান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নবপরীনিতা স্ত্রীকে বাসর ঘরে ফেলে রেখে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে দেশ ছেড়েছিলেন তিনি। ১৯৫৩ সালের ৩১ জুলাই নাসিম ওসমান নারায়ণগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৪ আগষ্ট তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নাসিম ওসমান ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল ভারতের দেরাদুনে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক কর্মময় জীবনের অধিকারি নাসিম ওসমান প্রথমে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দলীয় রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তার বাবা একেএম শামসুজ্জোহা ছিলেন প্রখ্যাত আওয়ামীলীগ নেতা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম সহচর। পরবর্তীতে নাসিম ওসমান বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে পড়েন। তিনি ৪ বার বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির হয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, যথাক্রমে ১৯৮৬, ১৯৮৮, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে নাসিম ওসমান পালিয়ে ভারতে চলে যান। সেখানে তিনি গেরিলা যুদ্ধ প্রশিক্ষণ শেষ করে দেশে ফিরে এসে যুদ্ধ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের সকলের সাথে হত্যা করা হয়। তার আগের দিন ১৪ আগস্ট তিনি পারভীন ওসমানকে বিয়ে করেন। বিয়েতে শেখ মুজিবুর রহমানের পুত্র শেখ কামাল উপস্থিত ছিলেন। ১৫ আগস্ট স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলে নাসিম ওসমান নবপতœীকে ফেলে হত্যার প্রতিশোধ নিতে চলে যান। তিনি ঢাকায় প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর তিনি আবার ভারতে চলে যান এবং সেখানে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেন। তৎকালীন কাদের বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। নাসিম ওসমানের বাবা একেএম শামসুজ্জোহা ছিলেন প্রখ্যাত আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। তিনি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর আবার ১৯৭৩ সালে তিনি একই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। নাসিম ওসমানের ছোট ভাই শামীম ওসমান বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের একজন সংসদ সদস্য। তার আরেক ভাই সেলিম ওসমান তার মৃত্যুর পর সাংসদ নির্বাচিত হন। নাসিম ওসমানের স্ত্রীর নাম পারভিন ওসমান। এই দম্পতির এক ছেলে ও দুই কন্যা আছে। ২০১৪ সালের ১৮ এপ্রিল চিকিৎসার জন্য নাসিম ওসমানকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। দিল্লিতে চিকিৎসা নেওয়ার পর তিনি দেরাদুন যান। সেখানে একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থানকালে আকস্মিক হূদেরাগে আক্রান্ত হলে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি ৩০ এপ্রিল, ২০১৪ সালে মারা যান। নাসিম ওসমানের নামে নারায়ণগঞ্জে একটি শিশু পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। নাসিম ওসমান এমন একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন যিনি সদর ও বন্দরের উন্নয়নে আমৃত্যু চেষ্টা করে গেছেন। জাতীয় পাটির প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়া স্বত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর শুধু একনিষ্ট ভক্তই ছিলেন না বরং জাতীয় পার্টির সভায় প্রকাশ্যে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে তার বক্তব্য শেষ করতেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে। বাচ্চু চৌধুরী হত্যাকান্ডে জড়িতসহ চাষাড়ায় জোড়া খুনের মামলায় তাকে জড়ানোর একাধিক চেষ্টা চলেছে। নাসিম ওসমান নারায়ণগঞ্জকে একটি আধুনিক নগরীতে পরিনত করতে চেয়েছিলেন। শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মানে আমৃত্যু তিনি কাজ করে গেছেন। বার বার শীতলক্ষ্যা সেতুর নির্মানকাজ শুরুর সিদ্ধান্ত হলেও একটি বিশেষ মহল বার বার শীতলক্ষা সেতুর নির্মানকাজ বন্ধে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র হয়েছে। শেষ পর্যন্ত দীর্ঘদীন পরে হলেও শীতলক্ষা সেতু দিয়ে এখন মানুষসহ যান চলাচল করে। যে সেতু নিয়ে সবচেয়ে বেশি জোড়ালো ভাবে কাজ করেছেন ভাগ্যের পরিহাস তা উদ্বোধন দেখতে পারেনি। ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল না ফেরার দেশে চলে যান কর্মীবান্ধব নেতা নাসিম ওসমান। নাসিম ওসমান ছিলেন সাধারণ শ্রমজীবি মানুষের নেতা। তিনি রাজনীতি করতেন এবং প্রতিপক্ষ রাজনীতিবীদদের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতেন। সাধারণ জনতার মনে যুগ যুগ বেচে থাকবেন রাজনীতির উজ্জল নক্ষত্র নাসিম ওসমান। সাধারন জনগন তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্বরন করলেও ভুলে যাচ্ছেন তার হাতে গড়া রাজনৈতিক নেতারা। স্বার্থের কবলে একই পরিবারের সন্তান হলেও প্রায় ভুলে যেতে বসেছে এই বীর সেনানীকে। তেমনি জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান পল্লী বন্ধু খ্যাত হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের মৃত্যু বার্ষিকীতেও তাকে তেমন একটা স্বরন করতে দেখা যায়নি। কালের বিবর্তনে সকলকে চলে যেতে হবে বা ভুলেও যাবে কিন্তু তার রেখে যাওয়া স্মৃতিগুলো বাঁচিয়ে রাখবো আজীবন।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা