আজ বৃহস্পতিবার | ১৪ আগস্ট ২০২৫ | ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৯ সফর ১৪৪৭ | বিকাল ৫:৪৫

ভাঙ্গনের পথে মহানগর বিএনপি!

ডান্ডিবার্তা | ১০ আগস্ট, ২০২৩ | ১২:০১ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণার পর থেকেই একের পর এক ঘটনায় বিতর্কিত হয়ে আসছেন আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আল ইউসুফ খান টিপু। বিভিন্ন ঘটনায় তারা আলোচিত সমালোচিত হয়ে আসছেন। একসময় যে সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে দুই কোটি আত্মসাতের অভিযোগ করেছিলেন টিপু এবার সেই টিপুর বিরুদ্ধে এবার ৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। আর এনিয়ে সর্বত্র চলছে আলোচনা সমালোচনা। আর এ কারণে দলে ভাঙ্গনের উপক্রম হয়ে উঠেছে। যে কোন সময় কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপিকে বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি ঘোষণা করতে পারে। এমনটাই অভিমত বিএনপির একাধিন নেতার। বিএনপির ত্যাগী নেতাদের দাবি অচিরেই এই বির্তকিত কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি ঘোষণার। এর আগে সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুললেও কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেননি তিনি আবু আল ইউসুফ খান টিপু। শুধু মাত্র বিভিন্ন মহলে তিনি অভিযোগই করে গেছেন। এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে দা-কুমড়ার সম্পর্ক সৃষ্টি হলেও মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সকলকে অবাক করে দিয়ে সাখাওয়াত ও টিপু এক বলয়ে চলে আসেন। সেই সাথে কয়েক মাস দলীয় কার্যক্রমও পরিচালনা করেন। কিন্তু সেই কমিটি ঘোষণার এক বছরের মধ্যেই আবার টাকা নিয়েই তাদের সম্পর্কে টানাপোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সাখাওয়াত ও টিপুর বলয়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে। সদস্য সচিব টিপুর বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ নেতাকর্মীদের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে। আর এর দায়ভার সাখাওয়াতের উপরও পড়তে যাচ্ছে টিপুকে সঙ্গ দেয়ার কারণে। আর এই টিপুর কারণেই দিন দিন নিজের জনপ্রিয়তা হারাতে বসছেন সাখাওয়াত হোসেন খান। জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার বিভিন্ন কমসূচিকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় বিএনপির কাছ থেকে দুইবারে ৮ লাখ টাকা অনুদান আনেন সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু। নেতাকর্মীদের মধ্যে সেই টাকা বন্টনের কথা বলা হলেও সেই টাকা বন্টন না করেই নিজের পকেটবন্দী করেছে আবু আল ইউসুফ খান টিপু এমন অভিযোগ নেতাকর্মীদের। মহানগর বিএনপির নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ২৮ জুলাই রাজধানীতে বিএনপি মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ ওই সমাবেশের আগে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কাছে নগদ ৫ লাখ টাকা পাঠানো হয়। নির্দেশ দেওয়া হয় মহানগর বিএনপি যেন টাকার যথার্থ ব্যবহার করে লোকজনের সমাগম ঘটায় সেই সঙ্গে সহযোগি সংগঠনগুলোকেও যেন সমবন্টন করে টাকা দেওয়া হয়। সেই সাথে আগের দিন ২৩টি ইউনিট কমিটিকে ৫ হাজার টাকা করে ১ লাখ ১৫ হাজার ও ১০টি সহযোগি সংগঠনকে সমসংখ্যক টাকা দেওয়া হয়। কেন্দ্রের টাকা দেওয়ার খবরটি প্রচার হয়ে গেলে সহযোগি সংগঠন ও বিএনপির শীর্ষ নেতারাও এর সমবন্টন করার দাবী তুলেন। কিন্তু সদস্য সচিব সেটা করেননি। সেই সাথে টাকার হিসেবও নেতাকর্মীদের বুঝাননি। ২৮ জুলাই ঢাকায় সমাবেশে লোকজন যোগ দিলেও পরে কাউকে এ টাকার ভাগ দেওয়া হয়নি। টাকা ঢুকে যায় শীর্ষ নেতাদের পকেটে। এর আগেও ৩ লাখ টাকা এনেছিলেন আবু আল ইউসুফ খান টিপু। সেটারও কোনো হিসেব পাননি মহানগর বিএনপির নেতারা। নেতাকর্মীদের মাঝে বন্টনও করা হয়নি। এদিকে গত ১৫ জুলাই নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। সেই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে অনুদানও সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে সম্মেলনের আগ মুহুর্তে সম্মেলন স্থগিত করা হয়। তবে সম্মেলন স্থগিত হলেও সেই অনুদানের টাকা ফেরত দেয়া হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়করা বলেন, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ টিপু দলের পদবী পেয়ে এখন ব্যবসায় নেমেছেন। ইতিমেধ্যে তিনি একটি ফ্লাটের মালিক হয়েছেন। দলীয় আন্দোলন সংগ্রামের দোহাই দিয়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে তিনি টাকা সংগ্রহ করেন। কিন্তু সেই সাথে দলের নেতাকর্মীদের জন্য খরচ করেননি তিনি। তিনি কারও সাথেই ভাল ব্যবহার করেন না। সকলেই তার আচরণে অতিষ্ঠ। তার জন্য রাজনীতি করতে ইচ্ছা হয় না। বিএনপির কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সদস্য মাহমুদুর রহমান স্লোগান দিতে দিতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেও তাকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য আবু আল ইউসুফ টিপুর কাছে টাকা চাইলে তিনি প্রথমে টাকা দিতে অস্বীকার করেন। পরে কিছু টাকা দিলেও সেটা ছিলো একেবারেই নগন্য। যুগ্ম আহ্বায়করা আরও জানান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ টিপু অতীতেও দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিতর্কিত হয়েছেন। তিনি বক্তব্যে বলেন দলের জন্য জীবন দিবেন। কিন্তু আন্দোলন সংগ্রামে কোনো বাধা আসলে তিনি সবার আগে পালিয়ে যান। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয় না। অতীতে কয়েকবার দল থেকে বহিস্কৃত হয়েছে। বিএনপির বিরুদ্ধে বিএনএফ প্রতিষ্ঠা করেছে। বিএনপির জন্য তার নূন্যতম ত্যাগ নেই। এর আগে ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ৪১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে অ্যাডভোকেট মো. শাখাওয়াত হোসেন খান এবং সদস্য সচিব হিসেবে অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর এই কমিটি ঘোষণার পর থেকেই নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। সেই সাথে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি থেকে ১৫ জন নেতা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তার আগে ২০১৬ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে প্রভাবশালী মহল হতে ২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছিলেন সহযোদ্ধা টিপু। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মাঝের কয়েক বছর বিরূপ সম্পর্ক থাকলেও গত সেপ্টেম্বরে মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি দেয়ার সময়ে মিলন ঘটে। তবে বছর না যেতেই এ কমিটির বিরুদ্ধে আবারো অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারীর অভিযোগ উঠেছে। সেই সাথে নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি কমিটি ঘোষণার পর টাকার বিনিময়ে কমিটি দেয়ার অভিযোগও রয়েছে টিপুর বিরুদ্ধে। এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ ভাসানী বলেন, যারা পরের টাকার লোভ সামলাতে পারে না তাদেরকে কমিটিতে রাখা দলের জন্য ভালো হবে না। ৫ লাখ টাকা ৮ লাখ টাকা যাই হোক না কেন এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা উচিত। সেই সাথে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত। গত সোমবার সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে টাকা কেলেঙ্কারির ঘটনা সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ ভাসানী বলেন, তদন্ত কমিটিতে যদি প্রমাণিত হয় তাহলে তাদের শাস্তি হিসেবে মহানগর কমিটি দ্রুত ভেঙ্গে দেয়া উচিত। তারা বিশ্বাসঘাতক। বিশ্বাসঘাতক দিয়ে দল চলে না। এই ধরনের চোর বাটপারের কমিটি আগেও অস্বীকার করেছি এখনও অস্বীকার করি। তিনি আরও বলেন, তাদের মতো লোক যদি বাংলাদেশের ২০টি জেলায় থাকে তাহলে বিএনপি কখনও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। কারণ তারা এজেন্সি তারা দলের সোর্স। তারা আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করছে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য। তারা দলের ক্ষতি করছে। প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার বিভিন্ন কমসূচিকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় বিএনপির কাছ থেকে দুইবারে ৮ লাখ টাকা অনুদান আনেন সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু। নেতাকর্মীদের মধ্যে সেই টাকা বণ্টনের কথা বলা হলেও পরবর্তীতে সেই টাকা বণ্টন না করেই নিজেই পকেটবন্দি করেছে আবু আল ইউসুফ খান টিপু। যা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা