আজ বৃহস্পতিবার | ১৪ আগস্ট ২০২৫ | ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৯ সফর ১৪৪৭ | সন্ধ্যা ৬:১৪

আজ শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী

ডান্ডিবার্তা | ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ

রণজিৎ মোদক

পৃথিবীতে যখনই ধর্মের গ্লানী হয় এবং পাপ বৃদ্ধি পায়, তখনই আমি শরির ধারণ করে পৃথিবীতে কল্যানের জন্য অবতীর্ণ হই। ভাগবত গীতায় শ্রীকৃষ্ণ নিজেই বলেছেন, তার জন্ম কর্ম সবই দিব্য। কেউ যখন তা তত্ত্বগত ভাবে জানতে পারে তখন তিনি ভগবতদ্ধামে প্রবেশ করার যোগ্যতা অর্জন করেন। লীলা পুরুষোত্তম পরমেশ^র শ্রীকৃষ্ণ ভগবানের আবির্ভাব শুভ জন্মাষ্টমী আজ। সনাতন ধর্মের ¯্রষ্টা এবং রক্ষক সয়ং শ্রীকৃষ্ণ পরমেশ্বর ভগবান। তার মহান গীতাই শান্তির পথ প্রদর্শক। বিশে^র সবাই আজ শান্তির প্রত্যাশী। দ্বাপর যুগ। পাঁচ হাজার বছর পূর্বে রাজা কংশের অত্যাচারে প্রজাকুল অতিষ্ঠ ছিল। পৃথিবী পাপের ভারে ক্রন্দসী হয়ে উঠছে। সাধু সন্যাসীরা দিনরাত প্রার্থনা করছেন, হে মধুসুদন, হে মানব তুমি মধু কৈঠভকে বধ করেছিলে। রাবন, কুম্ভকর্ণ হিরন্যকশিপুকে হত্যা করেছো। দুষ্টাচার কংসের হাত থেকে এ ধরণীকে রক্ষা কর। দুষ্টের দমন করে ধার্মিকদের পরিত্রাণ কর প্রভু। ভক্তের প্রার্থনায় ভগবান ধরাধামে অবতীর্ণ হন। অবলীলাক্রমে সুর সেনের পুত্র বসুদেব, দেবকের কন্যা দেবকীকে বিয়ে করে তার নব বিবাহিত পতœীকে নিয়ে রথে চড়ে প্রাসাদে ফিরছেন। উগ্রসেনের পুত্র রাজা কংস তার ভগ্নী দেবকীকে প্রসন্ন করার মানসে বসুদেবের রথের সারথী হয়ে সেই রথে যাচ্ছিল। এমন সময় আকাশবাণী হলো কংস, তুমি অতি নির্বোধ। মুর্খতার বসে তুমি, তোমার ভগ্নী এবং ভগ্নীপতির রথ চালিয়ে যাচ্ছো। তুমি জান না যে, এই ভগ্নীর অষ্টমগর্ভের সন্তান তোমার মৃত্যুর কারণ হবে। আকাশবাণী শোনা মাত্রই কংস তার অসি দিয়ে দেবকীকে হত্যা করতে উদ্যত হন। এসময় বসুদেব তার নির্দয়, নির্লজ্জ শ্যালক কংসকে শান্ত করার জন্য মধুর কণ্ঠে বললেন, হে প্রিয় কংস। আপনি যর্শম্বী রাজা, শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা এবং মহাবীর। আপনি কেন এমন মৃত্যু ভয়ে ভীত হচ্ছেন? জন্মের সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু লেখা হয়েছে। একটা শিশুর জন্ম নিয়ে তুমি কেন এত বিচলীত হলে? মানুষ স্বভাবিকভাবেই চঞ্চল। শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধ এ পঞ্চম ইন্দ্রিয়ের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে মানুষ। বসুদেব নানা রকম সুন্দর উপদেশ এবং দ্বর্শনিক বিচার দ্বারা কংসকে শান্ত করলেন। মুর্খ ও ক্রোধাতুরকে আদর দিয়ে বসে আনতে হয়। সেই পথই বেছে নিলেন বসুদেব। বোনকে পিতার ন্যায় রক্ষা করাই ভাইয়ের কর্তব্য। প্রিয় কংস তুমি শান্ত হও। তোমার ভগ্নীর পক্ষ থেকে বিপদের কোন আশঙ্কা নেই। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, দেবকীর গর্ভের সন্তানকে আমি তোমার হাতে জন্মের পর তুলে দেব। একথায় কংস শান্ত হলো। কংস শান্ত হলো সত্য। কিন্তু তার অন্তরে মৃত্যুর ভয় কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। তাই দেবকী এবং তার স্বামী বসুদেবকে অন্ধকার কারাগারে বন্দি করলেন তিনি। কর্মের বিপাকে বন্দিশালায় একে একে সাতটি পুত্র সন্তান জন্ম হলো। কংস আত্মরক্ষার জন্য একে একে ছয় সন্তানকে হত্যা করলেন। কিন্তু তার অন্তরে সব থেকে ভয় দেবকীর আট নাম্বার সন্তান। পিতার মাতার সম্মুখে সন্তান হত্যার দৃশ্য কোন পিতা মাতাই সহ্য করতে পারেন না। তারপরও দেবকী ও বসুদেব তা সহ্য করে ভগবানের শ্রীচরণে সমস্ত দুঃখ নিবেদন করলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে বহু রাজ পরিবারের অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে, যেখানে স্বার্থ সিদ্ধির জন্য পিতা ভাই বন্ধু বা সমস্ত পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে। এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। কেননা তাদের অতিষ্ট সিদ্ধির জন্য অসুররা যা ইচ্ছা যাকে ইচ্ছা হত্যা করতে পারে। স্বার্থের কমতি হলেই বন্ধু শক্র হয়। স্বার্থ মানুষকে পশুর চরিত্রে রূপ দেয়। এ সংসারে মানুষই দেবতার রূপ নেয়। আজ সংসারে মানুষ দেবতার খুবই অভাব। তাই সংসারে অশান্তি আর অশান্তি সর্বত্র বিরাজ করছে। কংসের রাজ্যে সেই অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ¦লছে। এদিকে কারাগারে মাতা দেবকী ও বসুদেব প্রহর গুনছেন অষ্টম সন্তানের আগমন প্রতিক্ষায়। ভাদ্রের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথি। বিশ^ সংসার সুসুপ্তিতে মগ্ন। আকাশ ঘনকালো মেঘের পরে মেঘ জমেছে। ঝটিকা বিক্ষুদ্ধ রাত। সদ্য ভূমিষ্ট দেবকীর অষ্টম সন্তান শ্রীকৃষ্ণ। জননী দেবকী শিশুর রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। নিঃশব্দ কান্নায় বুক ভেসে যাচ্ছে দেবকীর। শিশু শ্রীকৃষ্ণকে রক্ষার জন্য দেবকী তার সন্তানকে তুলে দিলেন স্বামী বসুদেবের কোলে। বসুদেব শিশুকে নিয়ে যাত্রা করলেন গোকুলের দিকে। বৃষ্টি মাথায় যমুনা পেরিয়ে গোকুলে মা যশোদার আলয়ে রেখে এলেন শ্রীকৃষ্ণ আর নিয়ে এলেন যোগমায়া রূপী শিশুকন্যা। শিশুকন্যাকে কংসের কারাগারে নিয়ে আসার পর ভোর হলো। কংস শিশুর কান্না শুনে কারাগার থেকে শিশু কন্যাকে নিয়ে হত্যা করলেন। আকাশবাণী হলো, হে মুঢ় কংস। ‘তোমাকে বধিবে যে, গোকূলে বাড়িতেছে সে’। কেউ কেউ তর্ক করতে পারে যে, পরমেশ^র ভগবান যিনি কেবল মাত্র দৃষ্টিপাত করার মাধ্যমে সমস্ত ঝড় বৃষ্টিকে প্রশমিত করেন, তিনি কেন দেবকীর গর্ভে আবির্ভূত হলেন? এখানে সয়ং ভগবানের মা হলেন দেবকী, সন্তানহারা আর ভক্তরূপী মা যশোদা সুকৃতিবলে হলেন ভগবানের পালক মাতা। নন্দালয়ে শুরু হয়েছে নন্দ উৎসব। সেই ক্ষণে সেই দিবসকে স্মরণ করেই আজও সনাতনী হিন্দু সমাজ যথাযথ মর্যাদায় পরমেশ^র ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী উৎসব পালন করে আসছে। শ্রীমদ্ভগবদ গীতার প্রর্বতক শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, ‘পরিত্রানায় সাধু নং বিনাশায় চ দুস্কৃতাম ধর্ম সংস্থাপনায় সম্ভাবামি যুগে যুগে’। আজকে এযুগের কংস থেকে রক্ষা পেতে পরমেশ্বর ভগবান অনাদির আদি গোবিন্দ, সর্বকারণের কারণ শ্রীকৃষ্ণের ও শ্রীকৃষ্ণ ভক্তদের স্মরণ নিচ্ছে শান্তি প্রিয় সর্বজীব। আর সেই পরম শান্তির উদ্যেশেই আজকের এই শ্রীকৃষ্ণ জন্মষ্টমী উৎসব। সর্বশেষে আজকের এই শুভদিন সুন্দর হোক স্বার্থক হোক এই প্রার্থনা জানাই। সবার মাঝে স্থাপিত হোক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন, প্রসারীত হোক শান্তির বারতা… হরেকৃষ্ণ।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা