দুই মেরুতে ফের উত্তেজনা!

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুই মেরুতে আবারো উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। নাসিক মেয়র বাজেট অনুষ্ঠানে উত্তর মেরুর নিয়ে বক্তব্য দেয়ার পর শামীম ব্লকে নানা আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। এ নিয়ে দুই মেরুতে ফের নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। তবে সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বিরোধ দীর্ঘদিনের পুরনো। তাদের এ বিরোধপূর্ণ সম্পর্কের কথা নারায়ণগঞ্জ ছাড়িয়ে সারাদেশেই জানা। তারা যেনো পরস্পরের জাত শত্রু। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগও এ বিষয়ে জ্ঞাত রয়েছেন। তারা একাধিকবার চেষ্টা করেও এই দুই নেতার মধ্যকার বিরোধ দূর করতে পারেনি। অধিকাংশ কর্মসূচি কিংবা প্রোগ্রামে তারা পরস্পরকে উদ্দেশ্য করে তির্যকমূলক বক্তব্য দিয়ে থাকেন। তারা আওয়ামী লীগের একাধিক প্রোগ্রামে এক মঞ্চে বসেছিলেন। পাশাপাশি বসলেও একজন আরেকজনের সঙ্গে কোনো কথা বলেনি। এবার শামীম ওসমান এক কর্মসূচিতে বক্তব্যকালে সিটি করপোরেশনের মেয়র আইভিকে উদ্দেশ্য করে ঐক্যের আহবান জানান। কিন্তু এই ঐক্যের আহবান গ্রহণ করেনি মেয়র আইভী। বরং শামীম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের এমপি আমাকে পিটিয়েছিল, রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছিল। এর ফলে শামীম ওসমানের সঙ্গে আবারও মেয়র আইভীর দ¦ন্দ্ব প্রকাশ পেয়েছে। অর্থাৎ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের অবসান ঘটবে না, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। মেয়র আইভীর সর্বশেষ প্রতিটি বক্তব্যে শামীম ওসমানের প্রতি মেয়র আইভীর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তাই মেয়র আইভীকেই হয়তো শামীম ওসমান একসাথে মাঠে নামার আহবান জানিয়ে ইতিবাচক সাড়া পাননি তা বলাই যায়। জানা যায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে আওয়ামী লীগের এক কর্মী সভায় মেয়র আইভীর নাম উল্লেখ না করলেও তাকে ইঙ্গিত করে একেএম শামীম ওসমান বলেন, আমার কোনো চাওয়া পাওয়া নাই। নেত্রীর কাছে আমি এবারো বলে আসছি আমাকে ড্রপ দেন। সবাই নমিনেশন চায়, আমি বলছি আমাকে ড্রপ দেন এইবার। আমাকে ইলেকশনে নমিনেশন দিয়েন না এবার। আমার জায়গায় অন্য কাউকে দেন। আমাকে সারা বাংলাদেশে কাজ করতে দেন। আমি এমপি হইলে কিচ্ছু আসবে যাবে না। প্রধানমন্ত্রী যদি শেখ হাসিনা না হয়, তাহলে বাংলাদেশে বাঁচবে না। তাই এই সময়টায় এক থাকেন। আমি আপনাদের সবাইকে নিয়ে আলাদা আলাদাভাবে বসব। সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ে, ফতুল্লা নিয়ে, সদর নিয়ে, সোনারগাঁ; সব জায়গা নিয়ে বসবো। এখন লাগার সময় না। এখন এক থাকার সময়। সেজন্য যারা আমার বিরুদ্ধে অনেক খারাপ খারাপ কথা বলেন তাদেরকেও আমি আকুতিমিনতি করে বলেছি যে, আসো আমরা সবাই এক সাথে মাঠে নামি। এখন পর্যন্ত সাড়া পাই নাই। তবে আশা করি পাবো। হয়তো উত্তর দিবে। সেই ৯-এ আগস্ট আহবান করেছি। কেন? দেখা যাবে আমাদের দেখাদেখি যে, নারায়ণগঞ্জে ঐক্য হয়েছে তাই নিজেদের এলাকায় আমরাও ঐক্য গড়ে তুলি। মানুষ তো দেখেও শিখে। সেই চেষ্টা করেছি। এদিকে গত সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নগর ভবন অডিটোরিয়ামে ২০২৩- ২০২৪ অর্থ বছরের সিটি করপোরেশনের বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে প্রশ্নত্তোর পর্বে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, দিগু বাজারে আজ থেকে চাঁদাবাজি হয় না। দীর্ঘদিন ধরে এই চাঁদাবাজি চলে আসছে। বাজার বসতে বসতে শায়েস্তা খান রোডকে বাজার বানিয়ে ফেলেছে। নারায়ণগঞ্জে কে চাঁদাবাজি করে তা সবাই জানে। সবার চোখের সামনে ২০১৮ সালে হকার নামধারী কতিপয় লোকজন কিভাবে আমাদের মারধর করলো। আপনাদের সামনেই পড়ে রইলাম, আপনাদের প্রেস ক্লাবেই গিয়ে পড়ে রইলাম। সাংবাদিকরা আহত হলেন। এরপরও কি আপনারা বলবেন হকার উচ্ছেদ করতে আমি সিটি করপোরেশনের লোকজন পাঠাবো। ফুটপাতের লোক কি পরিমাণ এগ্রেসিভ তা আপনারা ভালো করেই জানেন। এই ঘটনায় মামলা করা হলো। ঘটনার এক বছর পর হাইকোর্টের নির্দেশে মামলা হয়। ফুটপাত হকারমুক্ত করা পুলিশের দায়িত্ব। যানজট নিরসন করা পুলিশের দায়িত্ব। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নয়। এই শহরে মেয়র বললে কিছু হয় না, সাংবাদিক বললে কিছু হয় না, নাগরিক বললে কিছু হয় না। একমাত্র নারায়ণগঞ্জের দুই এমপি বললে প্রশাসন কাজ করে। অটোরিকশায় সাংবাদিকদের স্টিকার লাগানো, পুলিশের স্টিকার লাগানো। এখন যদি এগুলো ভেঙ্গে ফেলি তাহলে আপনারা বলবেন আমরা জাতীয় সম্পদ নষ্ট করছি। শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক জাইকা প্রজেক্টে দেওয়া আছে। আমরা খুব শিগগিরই টেন্ডারে যাবো। এই প্রজেক্টে ড্রেন প্রশস্ত করা, সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে। শহরের ভিতর বিশাল পাইপলাইন করে এই পানি শীতলক্ষ্যায় ফেলা হবে। অনেকেই এমপির স্টিকার ব্যবহার করে থাকেন তাহলে সাংবাদিকদের স্টিকার কেনো ব্যবহার করতে পারবেন না। সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে আমি মনে করি। ২০১৩ সালে এক সামাজিক আন্দোলন শুরু হয়েছিল ত্বকী হত্যাকা-কে সামনে রেখে। এরপর সিরিয়াসভাবে আর কোনো সামাজিক আন্দোলন অনুষ্ঠিত হয়নি। আমাদের ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য উনি প্রকাশ্যে যেভাবে হকারদের অর্ডার দেন ফুটপাতে হকাররা বসবেই। প্রেস ক্লাব অসহায় কিনা আমি তা জানি না। কিন্তু আমি অসহায়। কারণ আমি আমার নিজস্ব লোকদের নিয়ে মাইরের শিকার হয়েছি। ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের এমপি আমাকে পিটিয়েছিল, রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছিল। এদিন অল্পের জন্য আমি বেঁচে গিয়েছিলাম। তারপরও আমি থেমে নাই। আমি একটা কথা বললে এসপি সাহেব শুনবে না, ডিসি সাহেব শুনবে না। কারণ আমার তো বাহিনী নেই। আমি তো কাউকে পিস্তল দিতে পারবো না। আমি শুধু সাধারণ মানুষদের নিয়ে প্রতিবাদ করতে পারবো। বাসের বর্ধিত ভাড়া কমানো আন্দোলন করতে গিয়ে রফিউর রাব্বী তার ছেলেকে হারিয়েছেন। এ ধরনের মন্তব্যে এবার দুই গ্রুপের মধ্যে আবার বাক যুদ্ধের উত্তেজনা শুরু হয়েছে।