আজ বৃহস্পতিবার | ১৪ আগস্ট ২০২৫ | ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৯ সফর ১৪৪৭ | রাত ২:৪৪

সিদ্ধিরগঞ্জে সিমেন্ট কারখানার ধুলোয় জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে

ডান্ডিবার্তা | ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট সিদ্ধিরগঞ্জে পরিবেশ দূষণ ও ফুসফুসে ক্যান্সারের জন্য দায়ী সিমেন্ট ফ্যাক্টরীগুলো।আইন অনুযায়ী বায়ুতে ভাসমান বস্তুর গ্রহণযোগ্য মাত্রা ২০০ পিপিএম। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ জেলার সিমেন্ট কারখানাগুলোর বায়ুতে এর চেয়ে অনেক বেশি মাত্রার ধূলিকণা রয়েছে। কোনো কোনোটির ক্ষেত্রে তা সহনীয় মাত্রা থেকে প্রায় শত গুণ বেশি। অথচ সেখানে নেই ধুলা প্রতিরোধক ব্যবস্থা। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সেভেন হর্স সিমেন্ট (ইস্টার্ন সিমেন্ট) কারখানায় এলাকার পুরো কারখানা ও আশেপাশের এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে আছে ছাই। গাছের পাতা থেকে শুরু করে বাসা বাড়ির চালেও ছাই ও ধূলোকণার উপস্থিতি স্পষ্ট। রাতের শেষ ভাগে সিমেন্ট কোম্পানি থেকে ডাস্ট নির্গতের কারণে পুরো এলাকা হয়ে যায় কুয়াশাছন্ন। স্থানীয় মাঝি করিম (৫৫) বলেন, ‘জাহাজ থেকে ছাই (ক্লিংকার) উঠানোর সময় পুরো এলাকা সাদা হইয়া যায়। দম নিতে কষ্ট হয় আমাগো। আশেপাশের মানুষ এই ছাইয়ের কারণে বাসাভাড়া থাকতেও চায় না।’ ভেকু যন্ত্র দিয়ে জাহাজ থেকে ক্লিংকার তুলে হপারে (কারখানায় কাঁচামাল ঢোকানোর পাত্র) ফেলার পর ক্লিংকারের ছাই ও ধুলো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে। এক থেকে দেড় কিলোমিটার দূরের এলাকায় বাসাবাড়িও ছেয়ে যাচ্ছে ছাই-ধুলোর সূক্ষ্ম কণায়। প্রতিনিয়ত এই দূষণের ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা যেমন অসুস্থ হচ্ছে, তেমনি পাতা ঢেকে গিয়ে গাছের বৃদ্ধি ও ফলন ব্যাহত হচ্ছে। প্রাথমিক নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়াই কাজ করছেন শ্রমিকরা। এতে ক্লিংকারের গুঁড়া, চুনাপাথর, ফ্লাই অ্যাশ, মাটিতে থাকা ধূলিকণা ও পারদ মিশে যাচ্ছে বায়ুতে। ফলে মারাত্মক দূষণ ঘটাচ্ছে পরিবেশের। এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কাগজে কলমে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রসহ সব কিছু ঠিক থাকলেও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বাস্তব চিত্র তার উল্টো। রফতানিমুখী কিছু প্রতিষ্ঠান নিয়ম মানলেও অন্যান্যরা ক্ষমতার প্রভাবে দিব্যি নিয়ম ভাঙছে। সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার জাহাজ থেকে নামানোর সময় বাতাসে উড়ে আশপাশের এলাকা দূষিত করছে। ৬নং ওয়ার্ডের ছোট একটি এলাকায় ৩টি কারখানা এলাকাবাসীকে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ক্লিংকারের ধুলি-কণা মানবদেহের ফুসফুসে সিলিকোসিস রোগের সৃষ্টি হয়। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ ও মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সুমিলপাড়ার দুইটি রেডিমিক্স কারখানায় খোলা ক্রেনে করে সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে খালাস হচ্ছে ক্লিংকার। বয়লারের চিমনি থেকে ধোঁয়া আকারে বের হয়ে আসছে ফ্লাইঅ্যাশ, যা বাতাসের সঙ্গে মিশে দূষিত করছে আশপাশের পরিবেশ।কারখানাগুলোতে লোডিং-আনলোডিং আধুনিক ইকু হপার এবং ডাস্ট কালেক্টর ঠিকমতো ব্যবহার করা হচ্ছে না। খোলামেলা পরিবেশে ধুলিঝড় তুলেই তারা জাহাজ থেকে ক্লিংকার খালাস করছেন। এতে করে বাতাসের কারণে চারিদিকে ধুলিঝড়ের সৃষ্টি হচ্ছে।ক্লিংকারের ধুলো সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান এই জনপদে।পরিবেশবিদরা বলছে, সব জায়গায় ডাস্ট কালেক্টর ব্যবহার করতে হবে। আর যেটা আমাদের চিমনি দিয়ে উঠে যাচ্ছে সেটা ধরে রাখার জন্যও টেকনোলজি আছে সেটা ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু সিমেন্ট কারখানাগুলো সেটা ব্যবহার করে না।পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শেখ মোজাহিদ বলেন, সিমেন্ট কারখানাগুলোকে আধুনিক ইকু হপার এবং ডাষ্ট কালেক্টর ব্যবহার করার শর্তে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।সেভেন হর্স সিমেন্ট কোম্পানিকে এ শর্তেই ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। মূলত ২০২২ সালের পূর্বে দুই’শ এসপিএম (বায়ুর মানমাত্রা পরিমাপক) এর বেশি থাকলে জরিমানা করা হয়তো। বর্তমানে সেটি ছয়’শ এসপিএমে উন্নীত করা হয়েছে। সেই সূত্রে তাদের বায়ুর মানমাত্রা জরিমানার বাইরে থাকছে। সেভেন হর্স সিমেন্টের ক্ষেত্রে সর্বশেষ ২০০+ বেশি এসপিএম পাওয়া গিয়েছিল। যা মোটামুটি সন্তোষজনক হওয়ায় এজন্য এদের ছাড়পত্র নবায়ন করা হয়েছে। তারপরও আমরা নিয়মিত তাদের পরিবেশ দূষণ রক্ষার্থে চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছি। ৩ মাস পরে আবারও কোম্পানিতে অভিযান দেয়া হবে। এছাড়া শাহ সিমেন্ট রেডিমিক্স ও ক্রাউনকে কোনো ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। খুব শীঘ্রই তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা