ক্লিন ইমেজের খোঁজে বিএনপি

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
আগামী ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগেই নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপিতে ক্লিন ইমেজের নেতাদের মূল্যায়ন করতে যাচ্ছে কেন্দ্র। এর পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি আগ্রহ কমিটিতে বাদ পড়তে যাচ্ছে চাঁদাবাজি-দখলদারিত্বসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগকারী নেতারা। এই তালিকা মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে নেতাদের পদে পদে বাদ দিবেন বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত তারেক রহমানের ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখেছেন, বিএনপি কোনো ধরনের গ্রæপিং বরদাশত করবে না হাই কমান্ড। একই সঙ্গে যাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি-দখলদারিত্বসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে, তাদেরও মনোনয়ন ও দলীয় পদ পাবে না। এদিকে জাইমা রহমানও তার বক্তব্যে বিতর্কিত নেতাদেরকে বিএনপি দায়ভার নিবে না। দ্রæত সময়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সুপার সেভেন কমিটি দিতে যাচ্ছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মহানগরে দ্ব›দ্ব কোন্দল ও বিভাজন অবসানে তিনি নিজেই কমিটি ঘোষনা দিবেন এমন বার্তা দিয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তারা জানিয়েছেন, মহানগর বিএনপি অধিনে সদর-বন্দর আসন নির্বাচনী এলাকায়। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির এমপি ছিলেন আবুল কালাম। এরপর থেকে টানা আওয়ামীলীগ সরকারের মহাজোটের জাতীয় পার্টির প্রার্থী চারবার এমপি দায়িত্ব পালন করেন। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন খানকে নিয়ে অবগত রয়েছেন দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত তারেক রহমান। তিনি আওয়ামীলীগ সরকার আমলে ঘটিত আলোচিত সেভেন মার্ডার ও প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ঘটনার আইনজীবী ছিলেন। এর কারণে তাকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী হিসেবে বিএনপি মনোনীত করেন। ২০১৯ সালের নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাকে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ২০২২ সালের বর্তমান কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে। ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর সাখাওয়াত হোসেন খানের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পায়নি কেন্দ্র। এদিকে আহবায়ক কমিটি ঘোষনা পর থেকে সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু বিরোধীতা পদত্যাগপত্র জমা দেন ১৫জন যুগ্ম আহবায়ক ও সদস্যরা। ওই সময়ে কমিটি রক্ষায় কেন্দ্রীয় নেতাদের ছায়ায় আহবায়ক কমিটি রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম ও সভা সমাবেশে সক্রিয় ছিলেন। অপরদিকে আহবায়ক ও সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহী নেতারাও রাজপথে আলোচনায় ছিলেন। আওয়ামীলীগ সরকার পতনের এক মাসের মাথায় বন্দরে সদস্য সচিব টিপু তার নিজ দলের নেতা-কর্মীদের হাতে পিটুনী শিকার হন। এতে মহানগরের সাবেক ও বর্তমান যুগ্ম আহবায়ক সহ একাধিক নেতাদের নামে মামলায় আসামী করা হয়। মহানগর বিএনপি সুপার সেভেন কমিটিতে আলোচনায় গুঞ্জন রয়েছেন বর্তমান আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, যুগ্ম আহবায়ক আবুল কাউসার আশা, বন্দর থানা সভাপতি শাহেন শাহ আহম্মেদ, নারায়ণগঞ্জ সদর থানা সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার প্রধান, সাবেক মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, বর্তমান যুবদলের আহবায়ক মনিরুল ইসলাম সজল ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা সাগরের নাম। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি আহবায়ক কমিটি প্রায় মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে রয়েছে। ৩১ মাসে আহবায়ক কমিটির ওয়ার্কিং কমিটির একটিও সভা করতে পারেনি বর্তমানের আহবায়ক ও সদস্য সচিব। আহবায়ক কমিটির ঘোষনার শুরুতে ১৫ সদস্য বিদ্রোহী গ্রæপে প্রকাশ্যে রূপ নেয়। এর জের ধরে যুগ্ম আহবায়ক হাজী নুরুউদ্দিনকে অব্যাহতি, আরেক যুগ্ম আহবায়ক আতাউর রহমান মুকুল, সদস্য শওকত হাসেম শকু ও হান্নান সরকারকে বহিস্কার করা হয়েছে। এদের মধ্যে যুগ্ম আহবায়ক এম এইচ মামুন ও সদস্য মাহমুদ হোসেন মৃত্যুবরণ করেছেন। বিগত দুই বছরে মহানগর বিএনপি দুই গ্রæপের পাল্টাপাল্টিতে রাজপথ ছিলো উত্তেজিত। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলাকালে বিএনপি হরতাল অবরোধ কর্মসূচীতে মহানগর বিএনপি এক গ্রæপ সক্রিয় দেখা গেলেও বিদ্রোহী গ্রæপ ছিলো নিস্ক্রিয়। গত বছর ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর মহানগর বিএনপি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। আধিপত্য বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে আওয়ামী প্রতিষ্ঠান ও দখলবাজীতে মহানগর বিএনপি নেতাদের নাম জড়িয়ে পড়ে। এর ছাড়াও তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় পাতি নেতারা প্রতিষ্ঠান ও দখলবাজীতে নিয়ন্ত্রণে লিপ্ত হয়ে পড়ে। ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সাখাওয়াত হোসেন খানকে আহবায়ক ও আবু আল ইউসুফ খানকে সদস্য সচিব করে মহানগর বিএনপির ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে কমিটিতে থাকা ১৫ জন বিদ্রোহী নেতা কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন। তার পর থেকেই মহানগর বিএনপি দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। আর বিভক্ত হওয়া আকাংশ বিএনপিতে থাকা পুরাতন বহিষ্কৃত নেতাদের সাথে একত্রিত হয়ে মহানগর বিএনপির বিদ্র্রোহীরা আলাদাভাবে রাজপথে কাজ করছে।