আজ বৃহস্পতিবার | ২৯ মে ২০২৫ | ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ১ জিলহজ ১৪৪৬ | রাত ৩:৪৩

ড. ইউনূসের সাথে বৈঠকে কী পাওয়া গেল

ডান্ডিবার্তা | ২৭ মে, ২০২৫ | ৭:৪১ পূর্বাহ্ণ

সোহরাব হাসান
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস দুদিন ধরে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন। প্রথম দিন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির নেতারা দেখা করেছেন। পরদিন ১৯ নেতা কথা বলেছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নিজ নিজ অবস্থান থেকে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন। সেই সঙ্গে সরকারের অবস্থানও জানতে চেয়েছেন। তবে তাঁদের কথায় যে অভিন্ন সুর ছিল সেটা হলো, মুহাম্মদ ইউনূসই অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান থাকুন এবং নির্বাচন ও সংস্কারসহ তার ওপর জাতির ঐতিহাসিক দায়িত্বটি সম্পন্ন করুন। জবাবে প্রধান উপদেষ্টা কী বলেছেন, বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে দ্বিতীয় দিনের বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলন করে যা বলেছেন, সেটা নির্বাচন নিয়ে সরকারের আগের অবস্থানেরই প্রতিধ্বনি। প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে প্রেস সচিব বলেন, ‘তিনি বলেছেন যে আমরা বড় যুদ্ধাবস্থার ভেতরে আছি। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর ডিস্টাবিলাইজ করার জন্য যত রকমভাবে পারে, চেষ্টা করছে। এটা থেকে আমাদের রক্ষা করতে হবে।’ প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। বিভাজন থেকে আমাদের উদ্ধার পেতে হবে। ঐকমত্য থাকতে হবে। আত্মমর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে আমরা যতটুকু দাঁড়াতে পেরেছি, এটা যেন সামনের দিকে যায়।’ প্রধান উপদেষ্টার কথায় এটা স্পষ্ট যে গণ-অভ্যুত্থানের অংশীজনদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এখানে সরকারেরই দায়িত্ব ছিল সেই বিভক্তি নিরসনে নিজে থেকে উদ্যোগ নেওয়া। কিন্তু তারা উদ্যোগটি নিল পরিস্থিতির চাপে। শফিকুল আলম বলেন, ‘সবাই একসঙ্গে বসাতে ড. ইউনূস মনে সাহস পেয়েছেন।’ কিন্তু কেন ও কীভাবে সাহসটা হারিয়ে ফেলেছিলেন কিংবা কেন সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব তৈরি হলো সেটা খোলাসা করেননি। আমরা প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি দেখে এসেছি। সরকার সেটা বন্ধ করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। একধরনের নির্বিকার ভাব ছিল। গত বছর ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট যখন মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতী সরকার গঠিত হয়, তখন সব রাজনৈতিক দলের অকুণ্ঠ সমর্থন ছিল তাদের প্রতি। এরপর সরকার যেকোনো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করত। পরামর্শ নিত। কিন্তু সা¤প্রতিক কালে কিছু বিষয়ে সরকার তার মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করে না। বরং নির্বাচন নিয়ে উপদেষ্টারা একেক রকম বক্তব্য রাখছেন। এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ শেষে একটি দলের প্রধান বলেছেন, সরকারের ভেতরে অনেক সরকার আছে। তারা একটা সরকারই দেখতে চান বলে জানিয়েছেন তিনি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে ইশরাক হোসেনকে শপথ গ্রহণ না করানোর প্রতিবাদে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছয় দিন ধরে নগর ভবন ও সড়কে আন্দোলন করেন। এখনো নগর ভবনে তাদের কর্মসূচি অব্যাহত আছে। বিএনপির পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বারবার দেখা করার আবেদন জানিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। এটাকে তাঁরা অপমানজনক মনে করেছেন। দুদিন ধরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর যে সংলাপ হলো, তার ফলাফল কী। বৈঠকে যেসব রাজনৈতিক দলের নেতারা ছিলেন, তাঁদের সূত্রে জানা গেছে, যে যাঁর আগের অবস্থানেই অনড় আছেন। বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায়। বিএনপির মিত্রদলগুলোও অবিলম্বে নির্বাচনের পথনকশা তৈরির জন্য সরকারের কাছে আহŸান জানিয়েছে। তারা বলেছে, করিডর ও চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে। কোনো কোনো দল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরকারের দূরত্বও কমিয়ে আনার কথা বলেছে। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকার মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে যে রিট করা হয়েছিল গত ২২ মে হাইকোর্ট তা খারিজ করে দেন। ওই আদেশের পর ফেসবুকে পোস্টে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা সারজিস আলম লেখেন, ‘মব তৈরি করে যদি হাইকোর্টের রায় নেওয়া যায়, তাহলে এই হাইকোর্টের দরকার কী?’ এর আগে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়াও কী কারণে শপথ পড়ানো হচ্ছে না তার ব্যাখ্যা দেন। বিএনপির নেতা-কর্মীরা যখন ইশরাকের পক্ষে রাস্তায় আন্দোলন করছিলেন, তখনই এনসিপি নির্বাচন কমিশনে ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে। তারা কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে পুনর্গঠনেরও দাবি জানায়। ফলে ইশরাকের ইস্যুটি বিএনপির জন্য মর্যাদার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। সরকারের নীরবতার প্রেক্ষাপটে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে দুই ছাত্র উপদেষ্টাসহ তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন। এ মুহূর্তে বিএনপি ও সরকারের মধ্যকার বিরোধ দেশের জন্য ক্ষতিকর বলে যে মহলটি মনে করে, তাদের মধ্যস্থতায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ হয় বলে জানা গেছে। এই সংলাপ নিয়ে ব্যবসায়ী মহলেরও আগ্রহ ছিল। তাঁরা মনে করেন, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকলে অর্থনীতি আরও বিপর্যস্ত হবে। দুদিন ধরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর যে সংলাপ হলো, তার ফলাফল কী। বৈঠকে যেসব রাজনৈতিক দলের নেতারা ছিলেন, তাঁদের সূত্রে জানা গেছে, যে যাঁর আগের অবস্থানেই অনড় আছেন। বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায়। বিএনপির মিত্রদলগুলোও অবিলম্বে নির্বাচনের পথনকশা তৈরির জন্য সরকারের কাছে আহŸান জানিয়েছে। তারা বলেছে, করিডর ও চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে। কোনো কোনো দল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরকারের দূরত্বও কমিয়ে আনার কথা বলেছে। মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সবার সমর্থন থাকলেও সরকার যেভাবে কাজ করছে, সেটা অনেকেই পছন্দ করছেন না। দ্বিতীয় বৈঠকের দিন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে হবে। অবশ্য এনসিপি ও কয়েকটি ইসলামি দল সরকারের সব কাজে নিঃশর্ত সমর্থন জানিয়েছে। আবার কোনো কোনো দল সরকারের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে বলেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। একটি ছোট দলের শীর্ষ নেতা ব্যক্তিগত আলাপে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মাঠ পুরোপুরি বিএনপির দখলে চলে যেতে পারে। পুলিশ ও প্রশাসনও তখন তাদের পক্ষে কাজ করবে। সে ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার ভাষায় ‘সেরা নির্বাচন’ দূরে থাক, মোটামুটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা কঠিন হবে। সরকারের সর্বশেষ অধ্যাদেশ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আরও ক্ষুব্ধ করেছে। এনবিআর নিয়েও সরকার নিজের অবস্থানে অনড় থাকতে পারেনি। সংলাপের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে নির্বাচনের রোডম্যাপ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তা-ও পুরোনো কথার পুনরাবৃত্তি। আগামী ডিসেম্বর অথবা পরের বছর ৩০ জুনের মধ্য নির্বাচন হবে এবং যথাসময়ে তফসিল ঘোষণা করা হবে। এর অর্থ রাজনৈতিক দল ও সরকার যার যে অবস্থান, সেখানেই অনড় আছে। বৈঠকের আগে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিএনপির যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, তা কাটেনি। সর্বশেষ খবর হলো হাইকোর্টে ইশরাকের পক্ষ দেওয়ার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হয়েছে। আপিলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জট খুলছে না। বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, সরকার যখন বিপদে পড়ে, তখনই রাজনৈতিক দলগুলোকে ডাকে। বিপদ কেটে গেলে নিজেদের মতো করে চলে। তাঁরা বলেছেন, ‘সমস্যা তৈরি করেছে সরকার। সরকারকেই সেটা সমাধান করতে হবে।’
সোহরাব হাসান প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা