আজ মঙ্গলবার | ৩ জুন ২০২৫ | ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ৬ জিলহজ ১৪৪৬ | সকাল ১০:৪৭

রাজনীতিতে ম্যাজিক সার্কাস

ডান্ডিবার্তা | ০১ জুন, ২০২৫ | ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ

সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ
কয়েক সপ্তাহ আগে দৈনিক প্রথম আলোতে প্রখ্যাত প্রবাসী অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পাল একটি অত্যন্ত মূল্যবান নিবন্ধন লিখেছেন। এতে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের অর্থনীতির সমালোচনা করা হয়েছে। এব্যাপারে কোনো মন্তব্য করার যোগ্যতা আমার নেই। তবে তিনি কিছু বিষয় উল্লেখ করেছেন, তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই। আর্থিক খাতকে যদি গাড়ির সঙ্গে তুলনা করা যায় তাহলে তার চারটি চাকা থাকবে, নিখুঁত হলে গাড়িটি চলবে ঠিকভাবে। চাকা চারটির প্রথমটি হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থাৎ রাষ্ট্রের ব্যাংক এর উপর ভর দেবে। প্রশ্ন করা যায় যে, বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই তো কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান। অথচ এর প্রধান হয়ে এসেছেন অত্যন্ত অভিজ্ঞ আমলা, পিএইচডি ডিগ্রিধারী অর্থনীতিবিদ কিংবা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক খাতে দীর্ঘ দিনের কর্মরত ব্যক্তি। কিন্তু কেউই যথাযথভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দায়িত্ব বা কর্তব্য পালন করেননি। অর্থমন্ত্রী উন্মুক্ত আলোচনা সভায় বলেছেন যে, যদিও বর্তমানে বাংলাদেশে নতুন ব্যাংক খোলার অনুমতি দেয়ার অবস্থা নেই, তবুও খুব শিগগিরই কয়েকটি ব্যাংক খোলা হবে। এরপর আর কিছু বলার আছে? কোনো গভর্নর নীতিবহির্ভূত কাজ করার প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগ করেন। কিন্তু তারা সম্মানিত ব্যক্তি। দ্বিতীয় ডাকা হলো পুঁজিবাজারের চালক বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বাংলাদেশের জন্ম ১৯৭১ সালে। এতদিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব কন্ট্রোলার অভিজ্ঞ ক্যাপিটাল ইস্যুজ অর্থাৎ সিসিআই-এর দায়িত্ব পালন করে এসেছে। এর কাজ হলো পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিকে পুঁজি উত্তোলনের অনুমতিপত্র দেয়া। কিন্তু পুঁজি নিয়মমাফিক উত্তোলন করা হলো কিনা, তা দেখার দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি। যাই হোক বিএসইসি’র জন্মের পর প্রেস ক্লাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। বর্তমান পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদুন মাহমুদ এবং অধ্যাপক আবু আহমেদ-এর উপস্থিতিতে কথা আমার সুস্পষ্ট মনে আছে। সেই সভায় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী বিএসইসিকে সুস্পষ্ট কিছু দিলেন যা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবায়িত করতে। পুঁজিবাজারকে সক্রিয় করার জন্য এসব অনিবার্য ছিল। কিন্তু পরে জানা গেল যে, উপর মহলের নির্দেশে এসব স্থগিত থাকবে। এখানে উল্লেখ্য যে, স্টক এক্সচেঞ্জ সব সময় ডজনখানেক এমপি থাকতেন। অতএব যখনই যে দল ক্ষমতায় থাকুন না কেন, তদবিরে কোনো অসুবিধা হবে না। বিএসইসি বুঝে গেল যে চাকরি করতে হলে স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে তাল মিলিয়ে থাকতে হবে। ২০১৩ সালে স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর বিএইচসি’র চেহারা পাল্টে যায়। সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা। বিএসইসি থেকে অব্যাহতভাবে সার্কুলার আসতে থাকে। বিশেষ করে নেতিবাচক কিছু নির্দেশনামার ফলে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার মার্কেট ছেড়ে যেতে থাকে। এখানে বলা হয়েছে যে, গত কয়েক মাস ধরে শেয়ারবাজারের সূচক কমেই চলেছে। এ প্রসঙ্গে বলতে গেলে আবার সেই ম্যাজিকের কথা বলতে হয়। সূচক নিয়ে ম্যাজিক দেখানো খুব সহজ। দু’তিনজন প্রভাবশালীর ব্রোকারের সাহায্যে নিয়ে সূচককে ইচ্ছামতো উঠানামা করা যায় সেটা কিনা রাজনৈতিক সরকার থাকলে কাজটা করা সহজ। কিন্তু অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের পক্ষে কাজটা করা কঠিন। যে কারণে অন্তর্র্বতী সরকারকে সূচকের এই অবস্থাকে মেনে নিয়ে চলতে হবে। তৃতীয় চাকা বিনিয়োগ- এই বিনিয়োগ বলতে বিদেশি বিনিয়োগও বুঝায়। আজ যাকে বিডা বা বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ড বলা হয় ইতিমধ্যে কমপক্ষে ৩বার রূপ বদলানো হয়েছে। প্রথমে ছিল শিল্প অধিদপ্তর, তারপর নাম হলো বোর্ড অফ ইনভেস্টমেন্ট এবং তারপর বর্তমান নাম। এর সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের প্রধানের পদবিও বাড়ছে। বেশ বিলাসবহুল দপ্তর। বিদেশিদের চিত্তকে জয় করতে হবে। যিনি আসেন, তার চিত্তও দুলতে থাকে। কল্পনায়, আবেগে আপ্লæত হন। নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। ফলে তুলনা করেন সিঙ্গাপুরের সঙ্গে। অবশ্য রাজনীতিতে এধরনের বড় বড় বুলি অন্যক্ষেত্রেও শোনা যায়। যেমন ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়ররা কখনো বলেছেন তিলোত্তমার কথা, কখনো ইতালির ভেনিস নগরের কথা। অথচ ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া রোগ প্রতিহত করার জন্য মশা মারার দক্ষতা টুকু দেখাতে পারে না। এরপর আমি চতুর্থ চাকায়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এটি শতভাগ আমলাতান্ত্রিক। বাংলাদেশের আমলারা এখনো মনে করে তারা বৃটিশ আমলাদের উত্তরাধিকারী। গোটা জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকলেও অফিসার্স ক্লাবে বিদ্যুৎ থাকতে হবে। কেননা, টেনিস না খেললে রাতে ঘুম হবে না। এই হলো অর্থনীতির বাহনের চার চাকার অবস্থা। এই নিয়েই তো পথ চলা। হিন্দি সিনেমার নায়ক না হয় সব চাকা খুলে গেলেও হাওয়ার উপর দিয়ে গাড়ি নিয়ে ধাওয়া করতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তো তা সম্ভব নয়। সেজন্য হয়তো অস্তিত্বের জন্য একটু আধটু ম্যাজিক দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে একটা কথা মেনে নিতে হবে যে, নানা ধরনের প্রতিক‚ল অবস্থায় যে রিজার্ভ আসছে, তাকে নিয়ে তামাশা করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। গত ১৫ বছর যেভাবে টাকা পাচারের কারবার হয়েছে, তা জানার পর আমাদের প্রবাসীরা দেশের কল্যাণে অর্থ প্রেরণ করে যাচ্ছেন। তাদের অনেকে অত্যন্ত কঠিন পরিবেশে অর্থ উপার্জন করছেন। জিডিপি বৃদ্ধি মানে দেশের সম্পদ বৃদ্ধি, তা নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। তবে সেই সঙ্গে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্যও বেড়ে যাচ্ছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান বলেছিলেন ধনীর উদ্বৃত্ত সম্পদ চুঁইয়ে চুঁইয়ে গরিবের গৃহে ঢুকবে। তা যে ঢোকে নাই এবং ঢোকে না, তা প্রমাণিত হয়েছে। এখন বিল গেটসের মতো সবাই যদি তাদের মজুত অর্থ গরিবের মধ্যে বিতরণের সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে ভিন্ন কথা। নইলে জিডিপি যতই বাড়ুক, একদল মানুষ দরিদ্রে নিষ্পেষিত হবে। ভারত তো এখন পঞ্চম অর্থনীতি। বৃটেনকে হটিয়ে দিয়ে সেই জায়গা দখল করেছে। এনিয়ে কতো গর্ব, যে এককালের কলোনি তার প্রভুকে হটিয়ে দিয়েছে যারা এসব বলেন তাদের কী ভারতের সামগ্রিক আর্থিক সামাজিক চিত্রটা মনে পড়ে। আমাদেরও যে দারিদ্র্যের সংখ্যা বাড়ছে তা তো ড. বিরূপাক্ষ পাল স্পষ্টভাবে বলেছেন। অবশ্য বিশ্বব্যাংকের বরাত দিয়ে আমরা নিজ চোখে দেখছি। পত্রিকায় একটি সুখবর দেখলাম। মাননীয় প্রধান বিচারপতি এবং মাননীয় আইন উপদেষ্টা দক্ষিণ আফ্রিকা যাবেন সেখানকার ট্রæথ অ্যান্ড রিকনসিয়েলশন সম্পর্কে জানতে। এই প্রতিষ্ঠার জন্ম এবং কার্যক্রম সম্পর্কে তো জানবেন। আইন উপদেষ্টা নিজেই এ কথা বলেছে। কিন্তু যেটি ওনারা অতিরিক্ত দেখবেন তাহলো সেখানে পলিটিক্যাল পার্টি আছে, পলিটিক্যাল ডাইনেস্টি নেই, যারা লেনসন ম্যান্ডেলার আত্মজীবনীকে পড়েছেন, তারাও কোথাও আমিত্ব খুঁজে পাবেন না। যখনই ম্যান্ডেলার কাছে কোনো প্রস্তাব এসেছে তখনই তিনি বলেছেন যে, দলের লোকের সঙ্গে কথা বলতে হবে। চূড়ান্ত আলোচনার আগে সাদাদের অত্যাচারে যে সব দলীয় কর্মী দক্ষিণ আফ্রিকার বাইরে অন্য দেশে ছিলেন, তাদেরকেও আনা হয়েছে। ম্যান্ডেলা এক টার্ম ক্ষমতায় থাকলেন। তার শান্তি ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকা নয়, সাধারণ মানুষের কাছে থাকা। বাংলাদেশে একবার কেউ দলের প্রধান পদ পেলে তা ছেড়ে দেয়ার প্রশ্ন ওঠে না। বংশানুক্রমিক ভাবে হস্তান্তর করাটা বেশি পছন্দের। দক্ষিণ আফ্রিকাবাসীরা তাদের পছন্দ মতো রাষ্ট্রের পরিচালক নির্বাচিত করতে পারছেন, অন্য অসুবিধা যাই হোক না কেন ভারত-পাকিস্তান মহারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এক টুইটে থেমে গেল। যাক উপমহাদেশ তো বটে, বিশ্ব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তবে এ ঘটনায় পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট স্বঘোষিত ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ আইয়ুব খানের একটা কথা মনে পড়লো। দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন যে, দুনিয়াতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমান রাশিয়া) ছাড়া কোনো সার্বভৌম রাষ্ট্র নেই। চীনকে কিছুটা বলা যায় বলে তার ধারণা। ৬০/৬৫ বছর আগে আইয়ুব খান যা বলেছিলেন তার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। চীন একটু বেশি শক্তিশালী হয়েছে। কিন্তু ইউরোপীয় দেশ সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের নিকট বেশি নির্ভরশীল হয়েছে বললে অত্যুক্তি হবে না। এদিকে উপমহাদেশের সমস্যা হলো ভারতের যে সরকার অর্থাৎ বিজেপি হিন্দুত্ব কায়েম করার স্বপ্নে বিভোর। ফলে সব সময়ে যুদ্ধংদেহী মনোভাব। ভারতের মুসলমানদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানিয়ে ফেলেছে। আর পাকিস্তানকে শিক্ষা দেয়ার জন্য সার্জিকাল স্ট্রাইক সহ নানান বাহানা করে যাচ্ছে। ১৯৬৫ এবং ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান পূর্ণ যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। ১৯৭১ সালে অবশ্য স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ভারতের সঙ্গে মিত্র বাহিনী গঠন করতে হয়েছিল। যাই হোক এই দু’বারের কোনো সময় জাতিসংঘের নেতৃত্বে স্বাক্ষরিত পাক-ভারত সিন্ধু অববাহিকা চুক্তি অনুযায়ী পানি সরবরাহ বন্ধ করার কোনো কথা ভারত বলেনি। এবারে এই চুক্তি অনুযায়ী পানি বন্ধের কথা বলে মোদি অত্যন্ত হীনম্মন্যতার পরিচয় দিয়েছেন।
ই-




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা