আজ বৃহস্পতিবার | ৫ জুন ২০২৫ | ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ৮ জিলহজ ১৪৪৬ | ভোর ৫:৪৭

অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে আ’লীগ

ডান্ডিবার্তা | ০৩ জুন, ২০২৫ | ১০:৪৭ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামীলীগের আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা তৎপর হয়ে উঠেছে। নারায়ণগঞ্জের একাধিক নেতাকে দেখা গেছে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরাফেরা করতে। অনেকে বলছেন, আওয়ামীলীগ নেতারা গোপনে মিটিং করে নয়া ছক কষছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিলের প্রতিবাদে তারা ঝটিকা মিছিলসহ মশাল মিছিল করার পরিকল্পনা করছে। তারা নিরব স্থানে এ ধরনের তৎপরতা দেখিয়ে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। যাতে তাদের অপতৎপরতা দেখিয়ে মানুষকে বুঝাতে চায় তারা সজাগ আছে। ঝটিকা মিছিল করে তারা তাদের অস্বিত্ব জানান দেয়ার চেষ্টা চালানোর পায়তারা করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামীলীগের এক নেতা বলেন, তারা দেওভোগে একাধিক মিটিং করেছে। তবে তারা নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করছে এমন অস্বিত্ব জানান দেয়ার জন্য তারা সোচ্চার রয়েছে। এদিকে রাজধানীর ধোলাইপাড় এলাকায় ডেলটা হাসপাতালের সামনে ঝটিকা মিছিলের চেষ্টাকালে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ৩ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে শ্যামপুর থানা পুলিশ। গতকাল রোববার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- শ্যামপুর থানা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক খোরশেদ-উর-রহমান মাসুম, কদমতলী থানা যুবলীগের সদস্য আহসান কবির আদর ও কদমতলী থানা যুবলীগের সদস্য ইদ্রিস আলী ঈশান। উপপুলিশ কমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, গত শনিবার দুপুরে আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গসংগঠনের কিছু লোক সরকারবিরোধী মিছিল করতে সমবেত হলে ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে এ সময় অন্যরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। গ্রেফতার সবার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্টের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করার মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পাঁচটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগ আমলে নেওয়ার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই প্রথম কোনো মামলার বিচার প্রক্রিয়ার অগ্রগতি আরেক ধাপ এগোল। শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে জারি করা হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এ ছাড়া কারাগারে থাকা আরেক আসামি, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় পুলিশের আইজির দায়িত্বে থাকা চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আগামী ১৬ জুন ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার-সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদনও প্রসিকিউশনকে একই দিন জমা দিতে বলা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপনের পর চিফ প্রসিকিউটরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গতকাল রোববার এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। ট্র্যাইবুনালের বিচারকাজ বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) মাধ্যমে সরাসরি স¤প্রচার করা হয়। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম মামলার বিচার কার্যক্রম সরাসরি স¤প্রচার হলো। এর আগে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম তিনজনের বিরুদ্ধে ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের দপ্তরে দাখিল করেন। এর পর ১৩৫ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগের সারসংক্ষেপ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়। তা পড়ে শোনান অপর দুই প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও আব্দুস সোবহান তরফদার। শুরুতেই চিফ প্রসিকিউটর ট্রাইব্যুনালকে বলেন, এই মামলায় আট খÐের অভিযোগপত্রে সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। ২ হাজার পৃষ্ঠায় শহীদের তালিকা রয়েছে।
এর পর শুনানির শেষ দিকে চিফ প্রসিকিউটর তিন আসামির সর্বোচ্চ সাজা চান। একই সঙ্গে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে জুলাই-আগস্টে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণের জন্য ট্রাইব্যুনালের নির্দেশনা চান। বক্তব্যের শুরুতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই-আগস্টের নারকীয় বীভৎসতা বিশ্ববিবেককে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার উস্কানি ও সরাসরি নির্দেশ রয়েছে। এ বিষয়ে তাঁর বহু কল রেকর্ড, অডিও-ভিডিও পাওয়া গেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে এসেছে, প্রায় দেড় হাজার লোককে হত্যা, ২৫ হাজারের বেশি মানুষকে গুলি করে আহত, নারীদের ওপর বিশেষভাবে সহিংসতা চালানো, লাশ একত্রিত করে পুড়িয়ে দেওয়া, আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিতে ও চিকিৎসকদের চিকিৎসা দিতে এবং পোস্টমর্টেম করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, হাসপাতালে শেখ হাসিনা নিজে গিয়ে বলেছিলেন, এসব ভর্তি রোগীর যাতে চিকিৎসা দেওয়া না হয়। রোগীরা যখন যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে হাসপাতাল থেকে চলে যেতে চেয়েছিলেন, তাদের সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। যাতে পচে গেলে কেটে ফেলতে হয়, সে রকম নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া আন্দোলনকারীদের ওপর দায় চাপানোর জন্য বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় নিজেদের লোক দিয়ে অগ্নিসংযোগের নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা