গর্ত থেকে উঁকি মারছে আ’লীগ!

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
গোপন থেকে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে আওয়ামীলীগের আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা। সরকারি ভাবে আওয়ামীলীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকলেও তারা আস্তে আস্তে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। গত সোমবার আওয়ামীলীগের ৭৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করে সিদ্ধিরগঞ্জের এক মহিলালীগ নেত্রী। যা তিনি নিজেই যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করে নিজের অস্তিত্ব জানান দেয়। সেই সাথে প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় যে, সরকার নিষিদ্ধ করলেও আমরা সরকারের নির্দেশ মানি না। আর প্রশাসনও এখন পর্যন্ত তাদের আইনের আওতায় আনতে পারেনি। বন্দরের কদম রসুল দরগাহ শরীফে খিচুড়ি বিতরণ, দেওভোগে কেক কেটে আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালনসহ বিভিন্ন এলাকায় গোপনে আওয়ামীলীগ কার্যক্রম পরিচালনা করায় শহরময় এখন সরকারের গোয়েন্দা বিভাগের সক্ষমতা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছে। কারণ সরকারি গোয়েন্দা বাহিনী কেন তাদের কার্যক্রমের খবর রাখতে পারল না। কয়েক দিন যাবত দেখা যাচ্ছে পালিয়ে থাকা আওয়ামীলীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা এলাকায় ফিরেছে। তারা লোক চক্ষুর আড়ালে দলীয় কার্যক্রম করলেও বাইরে এসে সাধু সেজে ঘুরা ফেরা করছে। কিন্তু তারা তাদের কার্যক্রম ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে। শহর বন্দরে আওয়ামীলীগের অনেক পাতি নেতাকে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে। তারা পুলিশের আঘে পাশে ঘুরলেও তারা গ্রেফতার হচ্ছে না। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা দিলারা মাসুদ ময়না জানান, আমি দেওভোগে বসবাস করি। আমার বাড়ির পাশে লিটন নামে এক আওয়ামীলীগ নেতা নিজ বাড়িতে কয়েক দিন পর পর মিটিং করে। গত সোমবারও সে কেক কেটে আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করে। এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে তাই তাদের কিছু বলিনি। বন্দরে কদম রসুল দরগাহ শরীফে আসা দর্শনার্থী আবুল কালাম তুহিন বলেন, একজন আওয়ামীলীগ নেত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘূ কামনা করে দোয়া করান এবং খিচুড়ি বিতরণ করেন। আর কদম রসুল দরগাহ কমিটির সভাপতি নিজে থেকে সেই নেত্রীকে সহায়তা করছেন। এভাবে আওয়ামীলীগ তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের কার্যক্রমের খবর পাওয়া গেলেও দেশের অন্য জেলা থেকে তেমন খবর পাওয়া যায়নি। কারণ নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে আওয়ামীলীগ দলটি। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বড় একটি অংশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পলাতক রয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দি রয়েছেন শীর্ষ পর্যায়ের বহু নেতা ও তাদের সরকারের সাবেক মন্ত্রী-এমপিরা। বিদেশে পাড়ি জমানো আওয়ামী লীগ নেতাদের কেউ কেউ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, বেলজিয়াম, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। তবে অধিকাংশ নেতা পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ভারতে। তারা দিল্লি, কলকাতা, শিলং, আগরতলা, শিলিগুড়িসহ ভারতের বিভিন্ন শহরে অবস্থান করছেন। ভারতে পালিয়ে যাওয়া নেতাকর্মীদের মধ্যে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও রয়েছেন। দেশে রয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের নেতাকার্মীরা হয় আত্মগোপনে রয়েছেন, নয় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তৃণমূলের কোনো কোনো কর্মী মাঝেমধ্যে ঝটিকা মিছিল করলেও পুলিশ ভিডিও দেখে পরবর্তীতে তাদের আটক করছে। শুধু তাই নয়, আইন সংশোধনের পর ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারের মুখে রয়েছে দলটি। অথচ মুক্তিযুদ্ধসহ এই দলের রয়েছে বর্ণাঢ্য ইতিহাস। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে বিরোধীদের ওপর ব্যাপক দমনপীড়ন, গুম, খুন, নির্যাতন এবং সবশেষ গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন চালায় আওয়ামী লীগ। এর ফলে দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং নিবন্ধন স্থগিত করায় এখন তাদের নির্বাচনে অংশ নেয়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। স¤প্রতি একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নির্বাচনে তারা (আওয়ামী লীগ) থাকবে কি না, সেটা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। এদিকে বেশ কিছু দিন ধরে দলের বর্তমান নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে একটি রিফাইন্ড বা পরিশুদ্ধ আওয়ামী লীগের আলোচনা সামনে এসেছে। যদিও এটাকে দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে মনে করছিল আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে দলের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলের মূল নেতৃত্বকে মাইনাস করা বা বাদ দেয়াই এর উদ্দেশ্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের এই বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির এক নেতা বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আওয়ামী লীগ অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে অগ্রসর হয়েছে। আওয়ামী লীগের পথ চলা অধিকাংশ সময়ই প্রতিকুল ছিল বলা যায়। প্রতিক‚লতা পেরিয়েই বাংলাদেশের অর্জন ও সফলতা আওয়ামী লীগের হাত ধরে এসেছে। যদিও বর্তমান সময়ের বিপর্যয় দলের ইতিহাসের অনেক কঠিন ও বড় বিপর্যয়। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের মানুষের দল। এ বিপর্যয় কাটিয়ে আওয়ামী লীগ আবারও এদেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাবে। এ ব্যপারে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, কারো ঘরে বসে কার্যক্রম করলে তাৎক্ষনিক পুলিশের জানার কথা নয়। তবে আমরা খোঁজ নিয়ে এর ব্যবস্থা নিচ্ছি। সেই সাথে আমরা নজধারী বৃদ্ধি করেছি।
ই