আজ সোমবার | ২৩ জুন ২০২৫ | ৯ আষাঢ় ১৪৩২ | ২৬ জিলহজ ১৪৪৬ | বিকাল ৪:৫০

বন্দরে আধিপত্য নিয়ে দুই খুন

ডান্ডিবার্তা | ২৩ জুন, ২০২৫ | ১২:০৩ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
বন্দরের আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি দেখা দিয়েছে। চলতি মাসের কয়েকদিনে ৪টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। ২টি হত্যাকান্ড ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনির মাধ্যমে আর ২টি আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটে। বন্দর উপজেলায় অটো স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের দ্ব›েদ্ব কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে দুইজন খুন হয়েছে। গত শনিবার রাতে বন্দর রেললাইন ও শাহী মসজিদ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে বলে জানান জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার। নিহতরা হলেন: বন্দর উপজেলার হাফেজীবাগ এলাকার প্রয়াত সাদেক আলীর ছেলে আব্দুল কুদ্দুস (৫৫) এবং পাশের শাহী মসজিদ এলাকার প্রয়াত আব্দুল জলিল মুন্সির ছেলে মেহেদী হাসান (৪২)। নিহত কুদ্দুস পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি এবং মেহেদী বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহŸায়ক। এ ঘটনায় ৫ যুবককে আটক করেছে র‌্যাব ও পুলিশ। আটককৃতরাহলো, মোঃ শান্ত, মোঃ রবিন, মোঃ সোহেল, মোঃ কবির ও মোঃ ফাহিম। স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও ইজিবাইক স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য (বহিষ্কৃত) হান্নান সরকার এবং বিএনপির কিছু নামধারীদের মধ্যে কয়েকমাস ধরেই দ্ব›দ্ব চলছিল। ওই দ্ব›দ্বকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের মধ্যে গত শুক্রবার ও গত শনিবার দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহতের স্বজন, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের দ্ব›েদ্ব বিএনপির নামধারীদের মধ্যে বিভক্তি তৈরী হয়। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী রনি ও জাফর এবং অপর একটি পক্ষের নেতৃত্বে দিচ্ছিলেন মেহেদী হাসান, বাবু সিকদার, বাবু ওরফে জুয়ারি বাবু ও শ্যামল। কয়েকদিন আগে চুরির টিন বিক্রি নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। গত শুক্রবারও এ নিয়ে তাদের দুইপক্ষের মারামারিতে অন্তত আটজন আহত হন। এরই জেরে গত শনিবার বিকেলে উভয়পক্ষ শাহী মসজিদ, বন্দর রেললাইন ও হাফেজীবাগ এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দেন। রাতে বন্দর রেললাইন এলাকায় আব্দুল কুদ্দুসকে সড়কের উপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারি কুপিয়ে হত্যা করে। নিহত কুদ্দুসের ছেলে পারভেজ রনি ও জাফর গ্রæপের সদস্য। পারভেজকে খুঁজতে এসে না পেয়ে তার বাবাকে ছুরিকাঘাত করে। কুদ্দুসের ছোটভাই দুদু মিয়া বলেন, “বড়ভাই চায়ের দোকানে ছিলেন। তারে ডাইকা নিয়া পারভেজের কই জানতে চায়। পরে তারা ভাইরে এলোপাথারি ছুরি দিয়া আঘাত করে। ভাই নাকি বারবার তাগোরে কইছে, আমারে জানে মাইরো না। কিন্তু কিচ্ছু শোনে নাই। আমরা লাশ গিয়া পাইছি হাসপাতালে।” এদিকে, আব্দুল কুদ্দুসের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশও মোতায়েন করা হয় এলাকায়। টহলে ছিল সেনাবাহিনীর সদস্যরাও। রাত সাড়ে ১১টার দিকে রনি ও জাফর গ্রæপের লোকজন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মেহেদী হাসানকে ধরে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয় একটি ক্লাবের সামনে নিয়ে গিয়ে তাকে বেধরক মারধর করা হয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করে ডাক্তার। মেহেদীর দুলাভাই মাহফুজুল হক সৌরভ বলেন, “বন্দরে যখন মার্ডারটা হয় তখন মেহেদী ছিল বাড়িতে। ও থাকতো অন্তত এক কিলোমিটার দূরে আমিন আবাসিক এলাকায়। মার্ডারের পর প্রতিপক্ষের লোকজনকে খুঁজতে গেলে রাস্তায় মেহেদীরে পাইয়া যায়। মেহেদীরে তখন তুইল্লা নিয়া সিরাজউদ্দোল্লা ক্লাবে নিয়ে বেধরক মারে। বুকে, মাথা আর মুখমন্ডল একেবারে থেতলে দিছে। আমরা লাশ পাইছি হাসপাতালে।” এই ঘটনার পর গত শনিবার রাত থেকে গতকাল রোববার দুপুর পর্যন্ত ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বন্দর রেললাইন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন দেখা যায়। সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার। এ প্রসঙ্গে কথা বলতে হান্নান সরকারের মুঠোফোনের নম্বরে একাধিকবার কল করেও তার সংযোগ পাওয়া যায়নি। খুদেবার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি তিনি। রনি-জাফর গ্রæপের নেতা জাফর বলেন, “আমি একজন বিএনপির কর্মী। বাবু-মেহেদী গ্রæপ এলাকায় মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজি করে। আমি এর প্রতিবাদ করায় হান্নান সরকারের নির্দেশে তারা আমাকে হত্যার হুমকি দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় পারভেজের বাবাকে হত্যা করেছে।” এদিকে, দুই হত্যাকাÐের ঘটনায় জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার। রাতেই র‌্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে অন্তত পাঁচ জনকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। “স্থানীয়ভাবে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হত্যাকাÐ দু’টি ঘটেছে। এই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে এবং যারা এর নেপথ্যে আছেন তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।” এ ঘটনায় পৃথক দু’টি হত্যা মামলাও নেয়া হবে বলে জানান জেলা পুলিশের শীর্ষ এ কর্মকর্তা। এখনো এলাকায় থমথমে ভাব বিরাজ করছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

 




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা