আজ বৃহস্পতিবার | ১০ জুলাই ২০২৫ | ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ | ১৪ মহর্‌রম ১৪৪৭ | রাত ৯:০১

বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বহিস্কার আতঙ্ক

ডান্ডিবার্তা | ১০ জুলাই, ২০২৫ | ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বেশ কয়েক জনকে বহিস্কার করা হয়েছে। কিন্তু এখনো তাদের দলে ফিরিয়ে নেয়া হয়নি। এখন আবার নতুন করে নেতা কর্মীদের মধ্যে বহিস্কার আতঙ্ক বিরাজ করছে। ৫ আগষ্টের পর যারা বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে দলকে বির্তকিত করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে হাই কমান্ড। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন করে যেন প্রান ফিরে পেয়েছে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। হাসিনা সরকারের শাসনামলে বিএনপির নেতাকর্মীদের গায়েবি মামলা ও হামলা সহ্য করেই দিন কাটতো। ফলে দিনের পর দিন নিজ নিজ এলাকায় বা ঘরে থাকতে পারতো না এমন নেতাকর্মীদের সংখ্যা অহরহ। পরবর্তীতে ০৫ আগষ্ট পটপরিবর্তনের পর সাংগঠনিক ভাবে বেশ চাঙা হয়ে উঠেছে বিএনপি। এরই পাশাপাশি গত ১১ মাসে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের সাথে ব্যবসা বাণিজ্যে ও দখলদারিত্বে আপোষ করে যেমন বিএনপির বহু নেতাদের উত্থান হয়েছে তেমনই পতন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এদিকে ছাত্র আন্দোলনে পুরো দমে ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীদের। ইতিমধ্যে বিগত দিনে বিএনপির নাম বিক্রি করে আওয়ামী লীগের সাথে মিলেমিশে সুফল নেওয়া একাধিক নেতাকর্মীরা বড় বিএনপি নেতা বনে গিয়ে কেউ কেউ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। কিন্তু বর্তমানে তা একে একে ফাঁস হচ্ছেন। গত ১১ মাসে বিএনপি নেতাদের সকল অপকর্মের আমলনামা গোয়েন্দাদের হাতে রয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র। তা ছাড়া গত ১১ মাসে সারাদেশে ৫ হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ের দল থেকে বহিস্কার হয়েছে। যার মধ্যে নারায়ণগঞ্জের দেড় শতাধিক নেতাকর্মী রয়েছে। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জের একাধিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শোকজসহ রয়েছে। বিএনপির এমন কার্যক্রম কদর বাড়ছে বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীদের। তাছাড়া ইতিমধ্যে সারাদেশের বিএনপির নতুন ৫ কোটি সদস্য যোগান দিতে মাঠে নেমেছেন। তাছাড়া আগামী ফেব্রæয়ারী মাসে নির্বাচন হতে পারে জাতীয় নির্বাচন সব কিছু বিবেচনা করেই বিএনপির দলীয় সকল কার্যক্রম যথাযথ অবহৃত থাকলে ও বিএনপির মূলদল ও অঙ্গসংগঠনের অনেকেই বড় বড় পদ নিয়ে যারা বহু অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পরছেন এদের মধ্যে অনেকেই কেন্দ্রীয়ভাবে ম্যানেজ করে রেহায় পেয়ে যাওয়াদের বিরুদ্ধে ও দ্রæত একশ্যান চাইছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। যাকে ঘিরে দলের নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, দখল এবং নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়া নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরি করছে বিএনপি। বিশেষ করে ‘হাইব্রিড’ ও ‘নব্য বিএনপি’ পরিচয়ে যেসব ব্যক্তি তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত কোন্দল সৃষ্টি করছে এবং দলে বিশৃঙ্খলা ছড়াচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে শুরু হয়েছে শুদ্ধি অভিযান। যা নিয়ে ইতোমধ্যে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত কমিটিগুলোর যাচাই-বাছাই শুরু হয়েছে। সূত্র জানায়, পটপরিবর্তনের পর থেকে এখন পর্যন্ত গত ১১ মাসের নানা অপকর্মের আমলনামা গোয়ান্দাসহ কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের হাতে প্রস্তুত থাকায় অনেকটাই চিন্তিত বিএনপি নেতারা। তাছাড়া বর্তমানে শুধু বহিস্কারই নয় পাশাপাশি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও নেওয়া হচ্ছে। যার অংশ হিসেবে ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রভাবশালী নেতা রিয়াদ চৌধুরীকে দলীয় ভাবমূর্তি নষ্টের দায়ে বিএনপির সকল পদ ও প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পদ থেকে বহিষ্কার এবং একই দিনে চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন। যার পর থেকেই নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে নেমে এসেছিলেন এক বিশাল আতঙ্ক। এদিকে যেসব নেতাকর্মীর কর্মকাÐ জনমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছেন বা দলের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন, তাদের আর দলে রাখার প্রয়োজন নেই বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন হাইকমান্ড। তাছাড়া বিএনপির নেতকার্মীরা বলছে, ‘দল ও দেশের স্বার্থে যে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, বিএনপি তা-ই নেবে। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, প্রয়োজনে তালিকাও করা হচ্ছে।’ ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতোমধ্যে নেতৃত্বে গুণগত পরিবর্তন এনেছেন। ৫ আগস্টের আগের বিএনপি আর পরের বিএনপি এক নয়। তাই যারা অপকর্মে লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে দলের বিন্দু মাত্র ক্ষতি হবে না। দল জনগণের চোখে ভালো ও সঠিক কাজের মাধ্যমে ফুটে উঠবে। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জে পট-পরিবর্তনের পর আলাদিনের চেরাগের মতোই কয়েক মাসের ব্যবধানের কেউ কেউ হয়েছেন গাড়ি ও বাড়ির মালিক। তাছাড়া বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সবকিছুই বিএনপি নেতাদের দখলে। নগরীর হাট-বাজার, ঘাট, বাস টার্মিনাল শুধু নয়, বিভিন্ন মালিক সমিতির কমিটি, চেম্বার অব কমার্স, ইয়ার্ন মাচেন্ট এসোসিয়েশন, ট্রাক স্ট্যান্ড, এমনকি বিসিক শিল্পনগরী, বালু মহাল, ড্রেজিংয়ের ব্যবসা ও থ্রি হুইলার স্ট্যান্ড, টেন্ডারবাজি, সরকারি দপ্তর নিয়ন্ত্রণ, থানা নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ স্ট্যান্ড, ফুটপাত, পানি সরবারহ, সরকারি জায়গায় দোকান, জায়গার লিজ বাণিজ্য, মামলা বাণিজ্যে, সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন উপজেলার সকল টেন্ডার। এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের অনেকেরে দেশের বাহিরে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে বৈঠক করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বিগত দিনে আওয়ামী লীগের সকল ব্যবসা বাণিজ্যেসহ তাদের দখলে থাকা সবই আপোষের মাধ্যমে বুঝে নিয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে ডিস বাবুর ক্যাবল ব্যবসা ভাগ যোগের মাধ্যমে বিএনপি নেতারা নিয়ন্ত্রণ করছেন, অয়ন ওসমানের ইন্টারনেট ব্যবসা এটা ও ভাগযোগের মাধ্যমে বিএনপি নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন। তাছাড়া ও চারপাশের জানা অজানা সবই বর্তমানে এককভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া গত ৯ মাসে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানা ও উপজেলায় ঝুট সন্ত্রাসী কর্মকাÐ, জাহাজ কেঁেট হজম, চাঁদা না পেয়ে গার্মেন্টস ও আওয়ামী লীগের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুনসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির একাধিক গ্রæপের সংঘর্ষের দৃশ্যমান রয়েছে। যাকে ঘিরে অনেকের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন আবার অনেককে রাখা হয়েছে কেন্দীয় নজরদারিতে তা ছাড়া এর বাহিরে বিএনপির সকল নেতাকর্মীই বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারিতে। তাছাড়া আওয়ামী লীগে নেতার পরিবারের কাছ থেকে মামলা বানিজ্যের টাকা চাওয়ার রেকডিং ফাঁস হওয়ায় বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণকে শোকজ করেছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহŸায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, দুষ্টের দমন করতে হবে সৃষ্টের লালন করতে হবে। দলের মধ্যে যদি কোন দুষ্ট থাকে তাকে অবশ্যই দমন করতে হবে। তা ছাড়া বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল এই দলের মধ্যে বহিস্কার কার্যক্রম না থাকলে তো কিছু বেপরোয়া নেতাকর্মীরা বেপরোয়া থেকে যাবে। আর এটা একটি সাংগঠনিক পক্রিয়া যা বিগত দিনে আওয়ামী লীগ কখনোই করে নাই। তিনি বলেন, বিএনপি বর্তমানে যেভাবে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে নিজ দলের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় বহিস্কার করে তা জনগণ বিএনপির দ্বারা আশা করে। কারণ এটা নতুন কিছু নয় পুরনো আমল থেকেই বিএনপি কোনই অপকর্মকারীকে পশ্রয় দেয় না। দলকে শুশৃঙ্খল রাখার জন্য এই কার্যক্রম সর্বদা অব্যহৃত রাখার পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীদের ক্লিন ইমেজ সৃষ্টির লক্ষে আগামী নির্বাচনকে ঘিরে আরো কঠোর অবস্থানেও যেতে পারে। মহানগর বিএনপির আহŸায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল এই দলের একটি মহানগরী ও একটি ইউনিটে হাজারো হাজারো নেতাকর্মী রয়েছে। যারা দলের মধ্যে থেকে দলের স্বার্থ বিরোধী, জনগণের স্বার্থ বিরোধী কাজ করবে। তাদের বিরুদ্ধে দল সাংগঠনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নিবে সেটাই স্বাভাবিক। আর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে যে বহিস্কার কার্যক্রম চলছে তাকে আমরা সমর্থন জানাই। আর অপকর্মের সাথে জড়িত থাকা নেতাকর্মীদের বহিস্কার বা গ্রেফতার করায় দল কোন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। জেলা বিএনপির ১নং সদস্য আলহাজ¦ মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে সকল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তা দলের জন্য মঙ্গল তার পাশপাশি দেশের জনগণের জন্য মঙ্গল। তিনি দেশের জনগণের সামনে বিএনপিকে ক্লিন ইমেজ হিসেবে গড়ে তুলতে যে সকল কার্যক্রম অবহৃত রেখেছেন যাকে আমরা সাধুবাদ ও সমর্থন জানাই। তাছাড়া কেউ দলের সুনামক্ষুন্ন করলে তাদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নিবে এটা আমাদের দলের অবস্থান। তা ছাড়া গত ১১ মাসে ৫ হাজার বহিস্কার করেছে বিএনপি যা এতো বড় দলের কাছে কিছুই নয়। কারণে সমুদ্র থেকে একটু ময়লা পানি তুলে নিলে সেখানে কোন প্রভাব দেখা যায় না।

 




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা