
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
দেশবাসীর আকাঙ্ক্ষা ছিল দিন বদলের। সেটা ঘটছে কি? ঘটেনি। বরং অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। প্রকাশ্যে ছিনতাই, হত্যা, মব ভায়োলেন্সে দেশ ছেয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা, মানুষের নিরাপত্তা সবই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এমনকি বৈষম্যবিরোধী আওয়াজটা পর্যন্ত ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে গেছে। বর্তমান সরকার দেশে যথার্থ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল। গণতন্ত্র জিনিসটা আসলে কী– তা বোঝা মুশকিল এবং সাধারণভাবে এটা বলা অসংগত নয় যে, গণতন্ত্র কী নয়, তা বলা যতটা সহজ; গণতন্ত্র কী তা বলা ততটা সহজ নয়। তার একটা কারণ, গণতন্ত্রের ব্যাপারে আমাদের অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। আমরা শাসিত হয়েছি নানাবিধ স্বৈরাচারের দ্বারা, যা কখনও এসেছে প্রকাশ্যে, অন্য সময়ে ছদ্মবেশে। তা ছাড়া ওটাও সত্য যে, আমাদের বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ব্যবস্থায় যথার্থ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। আমরা জানি, গণতন্ত্র মানে সংখ্যাগরিষ্ঠের একচ্ছত্র আধিপত্য নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠতার দম্ভে ও দাপটে জনগণের দুর্দশা যে কোন স্তরে গিয়ে পৌঁছতে পারে, সে-ব্যাপারে ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। লোকে ওই শাসনকে প্রত্যাখ্যান করে এবার আন্দোলনে জন্ম নেওয়া সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। নিরঙ্কুশ, ক্ষমতার বলে বলীয়ান হয়ে তারা যদি আগের শাসকদের মতোই আচরণ করে, তবে কেবল যে জনগণের ক্ষতি হবে, তা নয়, যারা এখন দেশ শাসন করছেন, তাদের জন্যও যে ব্যাপারটা বিপজ্জনক হবে, তাতে সন্দেহ নেই। গণতন্ত্রের জন্য একটি অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে স্থানীয় শাসন। স্থানীয় শাসনের অর্থ হলো ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। এই বিকেন্দ্রীকরণের মূল কথাটা হলো, তৃণমূলে স্থানীয় মানুষেরাই নিজেদের দেখভাল করবেন। কর্তৃত্ব থাকবে তাদের হাতেই। কেন্দ্রীয় শাসন অবশ্য থাকবে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে, তবে সে শাসনের পরিধি যতটা খাটো হবে সমাজের ততটাই উপকার ঘটবে। স্থানীয়ভাবে সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে উঠবে। স্থানীয় লোকেরা যতটা সম্ভব নিজেদের দায়িত্ব নিজেরাই নেবেন। কিন্তু শাসন ক্ষমতার এই বিকেন্দ্রীকরণে এ পর্যন্ত কোনো সরকারই উৎসাহ দেখায়নি। অথচ আমাদের সংবিধানের ৪৯, ৫৯ ও ৬০ ধারায় পরিষ্কারভাবে বলা আছে– স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারি কর্মচারীরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অধীনেই থাকবে। বলা আছে, স্থানীয় শাসন স্থানীয় মানুষদের স্বার্থের তদারক করবে; আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কিত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দায়িত্বও হবে তাদের। স্থানীয় সরকার কর আরোপ এবং নিজস্ব তহবিল রক্ষণাবেক্ষণের অধিকারও পাবে। সংবিধানের অনেক কিছুই কাটাছেঁড়া করা হয়েছে, তবে স্থানীয় সরকার সংক্রান্ত বিধানগুলো এখনও অক্ষতই রয়ে গেছে। দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিল দেশের আপামর মানুষ। একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে অধরা গণতন্ত্র আসবে। উপদেষ্টারা সেই লক্ষ্যে কাজ করবেন; কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি সমর্থন-সহযোগিতা করবেন না। তারা শপথও নিয়েছিলেন নিরপেক্ষতার অঙ্গীকারে। তাদের নিরপেক্ষতার বিষয় যেন অক্ষুণ্ন থাকে, সেদিকে সচেতন থাকা এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত হতাশাজনক বটে। এমনিতেই রাজধানী অতিকায় হয়ে উঠেছে, গ্রামে কর্মসংস্থান নেই; দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক; গ্রাম শুকিয়ে যাচ্ছে। পানির অভাবে তো বটেই, গণতান্ত্রিক শাসনের অভাবেও। আমরা একাত্তরে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভে একটি রাষ্ট্র পেয়েছি। রাষ্ট্র যখন আছে তখন রাজনীতি থাকবেই এবং আছেও। অবৈধ পথে যারা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে ফেলেন তারা প্রথমেই যা বলেন তা হলো, তাদের কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নেই এবং তারা অতিদ্রæত নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে অব্যাহতি নেবেন। কিন্তু অসাংবিধানিক পন্থায় রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার কাজটা তো নির্জলাভাবেই রাজনৈতিক এবং একেবারে প্রথম দিন থেকেই তারা নতুন রাজনীতি শুরু করেন; দল গড়েন। তাদের পক্ষে কাজ করতে প্রস্তুত এমন লোক খোঁজেন, তাদেরকে উপদেষ্টা বানান, লোক-দেখানো সংস্কারের নামে সাধারণ মানুষের কষ্ট বৃদ্ধি করেন এবং সাজানো নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নিজেদেরকে নির্বাচিত বলে ঘোষণা করে দেন। সাধারণ মানুষও বিলক্ষণ রাজনীতি বোঝে। রাজনীতিকে তারা বলে পলিটিকস। ওই পলিটিকস কথাটা সব কিছু পরিষ্কার করে দেয়। বোঝা যায়, পলিটিকস সবখানেই আছে। রয়েছে এমনকি পরিবারের ভেতরেও; স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রেও। এই ছোট ছোট পলিটিকস রাষ্ট্রে যে পলিটিকস চলছে তার মূল্যবোধ দ্বারাই পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় পলিটিকসে মূল্যবোধটা কী? স্পষ্টতই সেটা হলো নিজের দিকে সবকিছু টেনে নেওয়া, নিজের আখের নিজের হাতেই গুছিয়ে নেওয়া। সরকার বদলেছে, রাজনীতি বদলায়নি। যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় যাতায়াত করে তারা নিজেদের স্বার্থ দেখে, দেশের স্বার্থ দেখে না। দেশের সম্পদ যেটুকু আছে সেটা তারা অতিদ্রæত নিজেদের করতলগত করে তুলে দিতে চাচ্ছে সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে। জনগণের মুক্তির কথা যখন আমরা বলি তখন ওই সম্পদের ওপর জনগণের মালিকানার প্রশ্নটাই প্রথমে আসে, আসতে বাধ্য। আমাদের দেশ যে দরিদ্র তার কারণ সম্পদের অভাব নয়। কারণ হচ্ছে সম্পদের ওপর জনগণের মালিকানা না-থাকা এবং সম্পদ বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া। দেশের খরচে আমরা মানুষকে শিক্ষিত করি, সেই শিক্ষিত মানুষদের স্বপ্ন থাকে বিদেশে যাওয়ার, নয়তো দেশে থেকেই বিদেশি কোম্পানিতে চাকরি করার। এ ক্ষেত্রে যেটা ঘটে; দেশের খরচে যে দক্ষতা তৈরি হয়– তা দেশের কাজে লাগে না, ব্যয় হয় বিদেশিদের সম্পদ উৎপাদনে। তার চেয়েও যেটা নিষ্ঠুর তা হলো, দেশের সম্পদ বিদেশে চলে যাওয়া। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মূল কারণ ছিল সম্পদের ওই মালিকানাই। ইংরেজের ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রে যা ঘটেছে, তথাকথিত স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রেও তা-ই ঘটেছিল। পূর্ববঙ্গের সম্পদের ওপর কর্তৃত্ব পূর্ববঙ্গবাসীর ছিল না; কর্তৃত্ব ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের। আমরা বলেছিলাম, এ দেশে যা কিছু আছে তা আমাদেরই থাকবে। ওই দাবির ব্যাপারে বাঙালিদের দৃঢ়তা দেখেই পাঞ্জাবি সেনাবাহিনী ক্ষেপে গেল এবং গণহত্যা শুরু করে দিল। নইলে বাঙালিদের সঙ্গে ওই রকমের বিপজ্জনক খেলায় তারা মত্ত হতে যাবে কেন?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
হাবিবুর রহমান বাদল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সাথে সাথে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার দোসররা কেউবা পালিয়েছে আবার কেউ আত্মগোপনে রয়েছে। বিগত পতিত সরকারের আমলে পেশাদার সাংবাদিকরা সব কিছু দেখলেও কোন কিছুই লিখতে পারতনা। আকাঁরে ইঙ্গিতে কোন কিছু লিখলেই সেইসব সাংবাদিকের উপর খর্গ নেমে […]
হাবিবুর রহমান বাদল নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার ঘটনা প্রতিদিন প্রকাশ পাচ্ছে। এনিয়ে সাধারণ নাগরিকরা সরব হয়ে উঠেছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে বিভিন্ন মহল থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা […]
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট: আড়াইহাজার থানায় দায়ের করা উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি বাবুল মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবুল মিয়ার মৃত্যু হলেও দুই মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে ২২ আগস্ট হত্যা মামলা করেছেন দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন। এই […]
প্রকাশক ও সম্পাদক
হাবিবুর রহমান বাদল
০১৯১১০১০৪৯০
hr.badal@yahoo.com
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়
৬. সনাতন পাল লেন
(হোসিয়ারী ক্লাব ভবন, তৃতীয় তলা)
৭৬৪২১২১
dbartanews@gmail.com
রেজি: ডিএ নং-২০৯৯