আজ বুধবার | ৩০ জুলাই ২০২৫ | ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ | ৪ সফর ১৪৪৭ | সকাল ৯:২৮

বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতিতে টানাপোড়ন

ডান্ডিবার্তা | ২৭ জুলাই, ২০২৫ | ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জে বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির মধ্যে মধ্যে টানাপোড়ন দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে তাদের এক সাথে দেখা গেলেও তারা তাদের দলীয় মঞ্চে একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে চলছেন। এদের কয়েক দশকের রাজনৈতিক সহচর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এখন এক নতুন বাস্তবতায় উপনীত। এক সময়ের শক্তিশালী চারদলীয় জোট এবং পরবর্তীসময়ে ২০ দলীয় জোটের অংশীদার এই দল দুটি এখন আর একমুখী রাজনৈতিক পথ অনুসরণ করছে না। কিছুদিন ধরে দল দুটির মধ্যে ‘গুমোট ভাব’ বিরাজ করছিল। পরস্পরের প্রতি বিশ্বাসহীনতা, সন্দেহ ও কৌশলগত প্রতিদ্ব›িদ্বতা বর্তমানে তাদের সম্পর্ক ভিন্নরূপ দিয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগ প্রশ্নে এখনো তারা একমত। গত বছর রাজপথে গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের প্রেক্ষাপটে বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক নতুন করে আলোচনায় আসে। মূল দ্ব›েদ্বর সূত্রপাত হয় ‘সংস্কার আগে, না নির্বাচন’ এই প্রশ্ন ঘিরে। এক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান, ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রæত নির্বাচন হোক- বিশেষ করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই। তবে জামায়াতের বক্তব্য ছিল, সার্বিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়। পরবর্তীসময়ে জামায়াত কিছুটা নমনীয়তা দেখালেও নির্বাচনের সময় নির্ধারণে নিজেদের অবস্থান থেকে খুব বেশি সরে আসেনি বিএনপি। এই নীতিগত ভিন্নমতের বাইরে আরও বেশ কিছু বিষয়ে দুই দলের দূরত্ব বাড়তে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে- স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জামায়াতের অংশগ্রহণ, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে জামায়াতের পৃথক বৈঠক, জুলাই আন্দোলনের কৃতিত্ব নিয়ে বিতর্ক, ধর্মভিত্তিক জোট গড়ার আলাদা প্রয়াস, ভোটারদের বয়সসীমা, জাতীয় সরকার ও পিআর পদ্ধতির বিতর্ক। এসব ইস্যুতে জমে ওঠে রাজনৈতিক প্রতিদ্ব›িদ্বতা। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রাজশাহীতে এক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বলেন, ‘জামায়াতের প্রতি উদারতা দেখিয়ে বিএনপি মুনাফেকির পুরস্কার পেয়েছে।’ এর জবাবে জামায়াতের মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘বিএনপির গাত্রদাহ হচ্ছে জামায়াতের ভারতবিরোধী অবস্থান দেখে।’ রিজভী ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জামায়াত সংশ্লিষ্টতার বিষয়েও ইঙ্গিত করেন। এছাড়া জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের ‘দেশপ্রেমিক শক্তি’র বক্তব্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা টেনে আনেন। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সর্বশেষ জাতীয় সমাবেশে বিএনপিসহ পিআর পদ্ধতির বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানায়নি জামায়াতে ইসলামী। সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন জামায়াত আমির। পরে সন্ধ্যায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জামায়াত আমিরকে দেখতে ওইদিন রাতেই হাসপাতালে যান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও ব্যক্তিগতভাবে জামায়াত আমিরের খোঁজখবর নেন। বিষয়টিকে দুই দলের নেতারা পারস্পরিক শিষ্টাচার ও সৌজন্যতার নিদর্শন হিসেবে বর্ণনা করছেন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একসঙ্গে বৈঠক গত ২২ জুলাই বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠক শেষে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ফ্যাসিবাদের আর কোনো স্থান নেই, জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড এবং নির্বাচনপূর্ব স্থিতিশীলতা নিয়েও কথা বলেন তিনি। ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য অটুট রয়েছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ থাকবে, কথার লড়াই থাকবে- এটাই রাজনীতির সৌন্দর্য। গণতন্ত্র মানেই হচ্ছে শত ফুল ফুটতে দেওয়া। তার মধ্য থেকেই সেরা সুবাস বেরিয়ে আসবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক বর্তমানে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং ভালো। রাজনীতির মাঠে দুই দলের নেতাদের বাদানুবাদ এবং বিভিন্ন ঘটনায় একে-অন্যকে দায় চাপানোর বিষয়ে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, জামায়াতে ইসলামী অনেক পুরোনো দল। তারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। আর যিনি (জিয়াউর রহমান) স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন- তার নেতৃত্বে বিএনপি গঠন হয়েছে। সুতরাং দল হিসেবে দুটি দলের নিজস্ব সাংগঠনিক চিন্তাভাবনা থাকবে এটা স্বাভাবিক। রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন খান মোহন বলেন, জামায়াতে ইসলামী স্বর্ণলতার মতো পরগাছা- অন্য দলের ওপর নির্ভর করে টিকে থাকে, আবার সুযোগ পেলে তাকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। রাজনৈতিক কৌশলের বিচারে এটাই স্বাভাবিক। কারণ, সব দলই নিজের স্বার্থ বিবেচনায় পক্ষ বদল করে কৌশল গ্রহণ করে। ১৯৯৫ সালে বিএনপির ইমেজ খারাপ হলে আওয়ামী লীগের দিকে ঝোঁকে জামায়াত। আবার ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তাদের সঙ্গে জোটে। গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর জামায়াত নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির ওপর সওয়ার হয়েছে। তারা পিআর সিস্টেমে প্রহসনের নির্বাচন করে সরকার গঠন করতে চায়, কিন্তু বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. স ম আলী রেজা বলেন, বিএনপি এবং জামায়াত বড় দুটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বর্তমানে আবির্ভূত হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। যেহেতু একটি রাজনৈতিক দলের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষমতায় যাওয়া, সেহেতু দুই দলের মধ্যেই সে চেষ্টা থাকবে। তিনি আরও বলেন, দুই দলই দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। মূল বিষয়গুলোতে কিন্তু তাদের মধ্যে খুব একটা বিরোধ নেই। উভয় দলই বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী। তাদের বিরোধের জায়গা খুব অল্প। সেটি থাকাই স্বাভাবিক। তাদের বিরোধিতা মূলত বক্তব্যে, বিবৃতিতে এবং আলোচনার টেবিলে। এটা থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। দীর্ঘদিন সহমর্মিতা, সহানুভূতির রাজনীতি আমাদের মধ্যে অনুপস্থিত ছিল। ফলে আমরা সেটি দেখিনি। কিন্তু স¤প্রতি জামায়াত আমির যখন অসুস্থ হলেন, তখন আমরা দেখলাম বিএনপি মহাসচিব তাকে দেখতে গেলেন। আমরা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় যেটিকে বলি কমপিটেটিভ কোঅপারেশন, অর্থাৎ প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক সহযোগিতা। এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি ভালো দৃষ্টান্ত।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা