
আবু সাঈদ কাদেরী
আপোষহীন একটি শব্দ বা বাক্য। এটা পাঁচ অক্ষরের একটি শব্দ বা বাক্য। কিন্তু এর হিসেব অত্যান্ত কঠিন। কঠিন তো শুধু কথা বা লেখায় নয়– জীবনের উপর চরম নির্যাতন সয়ে সেই কঠিনকে ধারন বা প্রকাশ করতে হয়। কখনো সর্বোচ্চ লোভকে ত্যাগ করে,কখনো সর্বোচ্চ শাস্তিকে অভয় করে আপোষহীন খেতাব নিতে হয়। আর এমন কঠিন বিষয়টি কোন পুরুষকে বহন করতে দেখা যায়নি। শুধু একজন নারী ব্যতিত অন্য কোন নারীকেও বহন করতে দেখা যায়নি। আর যাকে লোভ, মর্যাদা ত্যাগ ও নির্যাতন সয়ে আপোষহীন খেতাব পেতে হয়েছে, তিনি হলেন খালেদা আকতার পুতুল। যার জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট। যাকে সবাই খালেদা জিয়া অথবা বেগম খালেদা জিয়া নামে চিনেন। আজ ১৫ আগস্ট-২০২৫ তার ৮০ তম জন্ম বার্ষিকী। পাকিস্তানের মেজর জিয়াউর রহমান এক দেখাতেই খালেদা আকতার পুতুলকে বিয়ের জন্য পছন্দ করেন। জিয়াউর রহমান ১৯৬০ সালে খালেদা আকতার পুতুলকে বিয়ে করেন। জিয়াউর রহমান পাকিস্তান থেকে তার জন্মস্হান পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) পরাধীনতা থেকে মুক্ত করার জন্য ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা ঘোষনা করেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ থেকে তাকে ফেরাতে তার স্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাকিস্তানী শোসকরা গ্রেফতার করেন। এ ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমান যেমন অকুতোভয় ছিলেন–তেমন তার গ্রেফতার হওয়া স্ত্রী খালেদা জিয়াও আপোষহীন থেকেছেন। খালেদা জিয়া তখন বন্দি দশা হতে মুক্তি পেতে স্বামীকে স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে সড়ে যেতে বলেননি। ফলে তাকে সন্তানসহ নয় মাস কারাবন্দী থেকে আপোষহীন চরিত্রের প্রমান দিতে হয়েছে। তিনি আপোষহীন হিসেবে প্রমানিত হয়েছেন। কিন্তু স্বাধীনতা উত্তর রাজনৈতিক পরিস্হিতির কারনে তখন তিনি কোন খেতাব পাননি। তাকে আপোষহীন খেতাবের আরো পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের সেনা প্রধান থেকে জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান হন। তিনি ১৯৭৮ সালের ৩ জুন অনুষ্ঠিত নিবাচনে রাষ্ট্রপতি পদে বিজয়ী হন। তাকে স্বাধীন বাংলাদেশের শত্রুচক্র ১৯৮১ সালের ৩০ মে হত্যা করেন। খালেদা জিয়া বিধবা হন। খালেদা জিয়া ও তার দু’পুত্রের জন্য এটা একটা কঠিন পরীক্ষা। সেনা ছাউনী থেকে বেড়িয়ে বন্দুকের নল ঠেকিয়ে বিএনপি সরকারকে হটিয়ে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখল করে রাষ্ট্রপতি হন। দেশের মানুষ খালেদা জিয়াকে বিধবা খেতাব দিয়ে গৃহবন্দি রাখতে চায়নি। তাকে রাজনীতিতে আহবান করা হয়। তিনি সাড়া দেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারী খালেদা জিয়া যোগদান করেন। বিএনপিতে ১৯৮৪ সালের ১২ জানুয়ারী বেগম খালেদা জিয়াকে চেয়ারপারসন পদ দেয়া হয়। জাতি এরপর খালেদা জিয়াকে স্বৈরাচার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য রাজপথে ডেকে নেন। বেগম খালেদা জিয়া বাড়ী ছেড়ে রাজপথে নামেন। এরশাদ এক পর্যায়ে আন্দোলন ঠেকাতে খালেদা জিয়াকে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হবার প্রস্তাব দেন ও লোভ দেখান। কিন্তু তিনি লোভে আসক্ত হননি। তিনি এরশাদের প্রস্তাবে সম্মতি দেননি। এরশাদের সাথে তিনি আপোষ করেননি। ফলে ক্ষুব্ধ এরশাদ ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে প্রথম গ্রেফতার করেন। এরশাদ ১৯৮৪ সালের ৩ মে খালেদা জিয়াকে দ্বিতীয় দফায় গ্রেফতার করেন। এরশাদ ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর তৃতীয় বার খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করেন। এরশাদ তিন বার গ্রেফতার করলেও খালেদা জিয়া আপোষ করেননি। তিনি জেল জুলুমকে ভয় না করে আপোষহীন ছিলেন। তখন জাতির সাথে বেঈমানী করে আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনা লোভনীয় প্রস্তাব গ্রহন করেন। শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা হন। ফলে খালেদা জিয়া চরম বেকায়দায় পড়ে যান। এরশাদের সাথে তখনও খালেদা জিয়া আপোষ করেননি। জাতি ওই সময় খালেদা জিয়াকে আপোষহীন খেতাব প্রদান করেন। কিন্তু খেতাব টিকিয়ে রাখতে তাকে আরো পরীক্ষা দিতে হয়। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে খালেদা জিয়া ২০০৬ সালে পদত্যাগ করেন। এরপর দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দিন এবং সেনাবাহিনীর প্রদান মঈনুদ্দিন সমন্ময়ে একটি ওয়ান ইলেভেন সরকার গঠন হয়। সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ওয়ান ইলেভেনের সরকার গ্রেফতার করে। ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকার খালেদা জিয়াকে মানষিক, শারিরিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমানকে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ ও কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমানকে একই বছরের ১৬ এপ্রিল গ্রেফতার করে। বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাকেও ওয়ান ইলেভেনের ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকার গ্রেফতার করে। ওয়ান ইলেভেন সরকার দেশে রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী গ্রেফতার ও চাঁদাবাজী শুরু করে। ওয়ান ইলেভেনের ওই সরকার কিংসপার্টি প্রতিষ্ঠা করতে দুই নেত্রীকে কারাদন্ড দেয়ার জন্য প্রানপন চেষ্টা করে। কিন্তু জাতি তা হতে দেয়নি। এক পর্যায়ে ওয়ান ইলেভেনের সরকার চাঁদাবাজির, মামলাবাজির অপরাধ থেকে রক্ষা চেয়ে খালেদা জিয়াকে আবারও ক্ষমতায় আসীন করতে প্রস্তাব দেয়। খালেদা জিয়া কারাবন্দি থাকাবস্থায় আপোষ প্রস্তাবে সম্মতি দেননি। তিনি আপোষহীন চেতনা অব্যাহত রাখেন। ওয়ান ইলেভেন সরকারকে কারাবন্দি খালেদ জিয়া নেতাদের গ্রেফতার, নির্যাতন ও ব্যবসায়ীদের টাকা লুট করার অপরাধ ক্ষমা না করার বিষয় ধ্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দেন। তিনি আপোষ না করায় ক্ষমতা লাভ থেকে বঞ্চিত হন। অবশ্য ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকার ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। অন্য দিকে ওয়ান ইলেভেন সরকারের সব শর্ত মেনে শেখ হাসিনা আবার প্রধানমন্ত্রী হন। ক্ষমতায় বসে শেখ হাসিনা মামলার ভয় দেখিয়ে খালেদা জিয়াকে প্রতিবাদ থেকে দূড়ে রাখতে চেষ্টা করেন। খালেদা জিয়াকে বশে নিতে চায়। হাসিনা সরকার ব্যর্থ হয়। শেখ হাসিনা সরকারের অন্যায় অবিচারের সাথে খালেদা জিয়া আপোষ করেননি। হাসিনা সরকার ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করেন। তিন মাস তিন দিন পর খালেদা জিয়া মুক্তি পান। হাসিনা সরকার ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারী গুলশানের অফিসে খালেদা জিয়াকে বন্দি করেন। স্বামী জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর শোক যখন প্রতি মুহূর্তে খালেদা জিয়াকে পীড়া দিতো-তখন ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারী হুলিয়া মাথায় নিয়ে কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান মালোয়েশিয়ায় ইন্তেকাল করেন। “মা খালেদা জিয়া” পুত্র শোকে বিলাপ করেছেন। কিন্তু হাসিনা সরকারের সাথে আপোষ করেননি। এরশাদের মতো নির্যাতনের ধারাবাহিকতা যখন খালেদা জিয়াকে কাবু করা সম্ভব হচ্ছিলো না – তখন শেখ হাসিনা শুধু “গ্রেফতার অস্ত্রটা” প্রয়োগে সীমাবদ্ধ থাকেনি। শেখ হাসিনা সরকার এরপর ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার ও কারাদন্ড প্রদান করেন। ২০২৪ সালের জুলাই- আগস্টের আন্দোলনে হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে তার প্রিয় ভূমি ভারতে পালিয়ে যান। খালেদা জিয়া ৫ আগস্ট নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান। এদিকে নিজের চিকিৎসার জন্য এবং ছেলে তারেক রহমানকে দেখতে তিনি চলতি বছরের ৭ জানুয়ারী বৃটেন সফর করেন। এরপর তাকে ড. মুহাম্মদ ইউনুস সরকার বাগে নিতে চান বলে অসমর্থিত গুজব রটেছে। গুজব মতে, খালেদা জিয়াকে বর্তমান অন্তর্বতী সরকার নির্বাচন বিষয়ক কিছু শর্ত দিয়েছেন। শর্ত না মানলে তাকে দেশে ফিরতে দেয়া হবে না। খালেদা জিয়া সেই সকল শর্তের এক বিন্দুও মানতে অস্বীকৃতি জানান। খালেদা জিয়া বর্তমান সরকারের সাথেও আপোষ করেননি। আবার কখনো কোন কঠিন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে আপোষহীনতার পরীক্ষা দিতে হবে কি’ না কে জানে?
হাবিবুর রহমান বাদল ষোল বছরের স্বৈরশাসনে দেশকে পঙ্গু করে শত দমন পীড়ন আর নির্বিচারে গুলি বর্ষন করে দেড় হাজারের বেশী ছাত্র-জনতাকে হত্যার পরও শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা তার গতি রক্ষা করতে পারেনি। গত বছরের ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার রোষানল থেকে বাঁচার জন্য ছোট বোন রেহানাসহ স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক আত্মসমর্পণ এতটাই […]
হাবিবুর রহমান বাদল নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার ঘটনা প্রতিদিন প্রকাশ পাচ্ছে। এনিয়ে সাধারণ নাগরিকরা সরব হয়ে উঠেছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে বিভিন্ন মহল থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা […]
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট: আড়াইহাজার থানায় দায়ের করা উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি বাবুল মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবুল মিয়ার মৃত্যু হলেও দুই মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে ২২ আগস্ট হত্যা মামলা করেছেন দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন। এই […]
প্রকাশক ও সম্পাদক
হাবিবুর রহমান বাদল
০১৯১১০১০৪৯০
hr.badal@yahoo.com
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়
৬. সনাতন পাল লেন
(হোসিয়ারী ক্লাব ভবন, তৃতীয় তলা)
৭৬৪২১২১
dbartanews@gmail.com
রেজি: ডিএ নং-২০৯৯