আজ শুক্রবার | ১৫ আগস্ট ২০২৫ | ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২০ সফর ১৪৪৭ | দুপুর ২:২৫

তফসিল ঘোষণার পর দেশে ফিরবেন তারেক রহমান

ডান্ডিবার্তা | ১৫ আগস্ট, ২০২৫ | ১২:৩৩ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
গত বছরের ৫ আগস্ট থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ছিল- কবে দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান? কারণ তিনি বিএনপি এবং বাংলাদেশের জন্য এক অপরিহার্য নেতায় পরিণত হয়েছেন। প্রায় ১৭ বছর ধরে তিনি লন্ডনে নির্বাসিত। সব মামলা থেকে মুক্ত হওয়ার পরও তিনি দেশে ফেরেননি। এ নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়নি। শীর্ষ নেতারা শুধু বলেছেন, সময়মতোই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, তারেক রহমান তাড়াতাড়ি দেশে ফিরলে তাকে ঘিরে একটি বলয় তৈরি হতো। তার নাম ভাঙিয়ে তদবির বাণিজ্য হতো। প্রবীণ রাজনীতিক বা প্রশাসনের বঞ্চিত অনেকের আবদার তিনি ফেলতে পারতেন না। ফলে তিল তিল করে গড়া তার রাজনৈতিক ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকতো। দলও ক্ষতিগ্রস্ত হতো। সে কারণে তিনি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত লন্ডনেই অবস্থান করতে চান। অন্যদিকে তারেক রহমানের দেশে না ফেরা নিয়ে বিরোধীপক্ষ নানা রকমের গুজব রটাচ্ছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। গত রোববার রাজশাহী মহানগর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেওয়ার সময় তারেক রহমান নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ শিগগিরই দেশের জনগণের সঙ্গে সরাসরি দেখা হবে। ’এরপর থেকেই তার দেশে ফেরার বিষয়ে আলোচনা সামনে চলে আসে। দেশে ফিরতে তারেক রহমানের কার্যত কোনো আইনি বাধা নেই। কিন্তু তার নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতারা বেশ শঙ্কিত। সরকারসহ বিভিন্ন মহল মনে করে, সামনের নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করলে তারেক রহমানই হবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তাই এমন একজন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বেশ জটিল বলে মনে করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক কৌশলগত কারণেও বিএনপি চাইছে, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন যেন রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে কার্যকর সময়ে হয়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক আগে বা পরে তার ফিরে আসাটা দলের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এছাড়া চলমান বর্ষা মৌসুমে বৈরী আবহাওয়ার কারণে তাকে বড় ধরনের গণসংবর্ধনা দেওয়ার ক্ষেত্রেও বিঘœ ঘটতে পারে বলেও মনে করছেন দলীয় নেতারা। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রসঙ্গে বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শিগগিরই দেশে ফিরবেন, এটা নিশ্চিত করতে পারি। নির্বাচনের আগেই তিনি ফিরবেন। আমাদের মতো পুরো দেশবাসী তার ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ এখনই চূড়ান্তভাবে বলা যাবে না। উনি আসার দিন-তারিখ ঠিক করলে দলের পক্ষ থেকে সবাইকে জানানো হবে। বিএনপির একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফিরবেন। সম্প্রতি তার পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবিরও গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তফসিল ঘোষণার পরপরই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। একই তথ্য জানিয়েছেন তারেক রহমানের ব্যক্তিগত আইন বিষয়ক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এ কে এম কামরুজ্জামানও। সম্প্রতি দিনাজপুরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, নির্বাচনের সময় নির্ধারণ হয়েছে, তার আগেই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন। এদিকে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে, অর্থাৎ রোজার আগেই আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক, এর পরদিন ৬ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে রোজা শুরুর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর ফলে, নির্বাচন পেছানোর বা না হওয়ার যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল জনমনে, সেটা কেটে গেছে বলে মনে করছে বিএনপিসহ নির্বাচনের দাবিতে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো। ইতোমধ্যেই আগামী ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত ৭ আগস্ট সন্ধ্যায় ইসির বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। সে হিসেবে এ বছরের শেষ দিকে তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাবনা প্রবল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা। দলীয় সূত্রগুলোও বলছে, তফসিল ঘোষণার পর দেশে ফিরে ভোটার তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করাবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু হলেও সে সময় তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান লন্ডনে থাকায় ভোটার তালিকায় নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করাতে পারেননি। তবে নির্বাচন কমিশনের সূত্রমতে, চলতি বছর ৬ মে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদে জোবাইদা রহমান ভোটার হয়েছেন। কিন্তু তারেক রহমান এখনো ভোটার হননি। দলের নেতাকর্মীদেরকে সরাসরি দিকনির্দেশনা দিতে এবং দলের ও নিজের ‘ক্লিন ইমেজ’ জনমানুষের কাছে তুলে ধরতেই তারেক রহমানের দ্রুত দেশে ফেরাটা জরুরি বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে সেক্ষেত্রে, দেশে ফেরার পর তার নিরাপত্তা নিয়েও কেউ কেউ শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে বিরোধী রাজনীতির জন্য যে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা ইতিবাচক হলেও নিরাপত্তার শঙ্কা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করছেন রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা। দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চলমান রয়েছে বলে ধারণা করেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে সন্দেহ করা হয় পাশ্ববর্তী একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার কিলিং টার্গেটে রয়েছেন তিনি। যার প্রমাণ সামনে আসে গত ২৭ মে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদকে গ্রেফতারের পর। এই দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতারের পর উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা যায়, অস্থিতিশীলতার মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করার মিশন নিয়ে নেমেছিল সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদরা। এতে অর্থ জোগান দিচ্ছে গণঅভ্যুত্থানে পতিত আওয়ামী লীগ। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, সুব্রত বাইনকে পাকিস্তানি পাসপোর্টে লন্ডনে পাঠিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। আমেরিকা ও কানাডাসহ বহু দেশ পার্শ্ববর্তী দেশের ওই গোয়েন্দা সংস্থাটির সংশ্লিষ্টদের নিষিদ্ধের প্রস্তাব করেছে বিভিন্ন সময়। এই সংস্থাটির বিরুদ্ধে তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তিদেরকে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ঢুকেও হত্যার অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে কানাডায় খালিস্তানপন্থি দুই নেতাকে হত্যার পেছনে ওই সংস্থার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানা যায়। বাংলাদেশেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও ভিন্ন মতাদর্শীদের গুমের পিছনে এই সংস্থার প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততার প্রমাণ এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ বাংলাদেশ সরকারের কাছে রয়েছে। সে হিসেবে তারেক রহমানের নিরাপত্তার শঙ্কা তৈরি হওয়াটা ভিত্তিহীন হিসেবে দেখার সুযোগ নেই বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এছাড়া ক্ষমতা হারিয়ে আবার তা পুনরুদ্ধারের জন্য প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে আছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি গোপালগঞ্জের ঘটনাও তা স্মরণ করিয়ে দেয়। ফলে তাদের অন্যতম প্রধান টার্গেটে হিসেবে তারেক রহমানের থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। আওয়ামী লীগের অতীতের প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি এটিই ইঙ্গিত বহন করে। ফলে ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে তারেক রহমানকে রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় বা নির্মূল করার চেষ্টার এমন আশঙ্কাকে আমলে নেওয়াটাও জরুরি মনে করছেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রাজনৈতিক নেতাদের এ ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি সবসময় ছিল, আছে এবং থাকবে। তারেক রহমানের দেশে আসার আগে তাই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির যেমন বিষয় আছে, তেমনই সরকারেরও একটা নিশ্চিত পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও নিরাপদ হবে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা