আজ বুধবার | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২৬ ভাদ্র ১৪৩২ | ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭ | রাত ২:২৯

গাড়ির কাঁচ ভাঙায় পোলাডারে পিটাইয়া মারলো ওরা

ডান্ডিবার্তা | ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ১১:১০ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
মানসিক ভারসাম্যহীন সাইফুল ইসলাম সাজ্জাদ (২৪)। বাবা-মা আলাদা হয়ে যাওয়ার পর নানি ও মামার কাছেই বড় হয়েছেন তিনি। চার ভাইবোনের মধ্যে ছিলেন সবার বড়। পড়াশোনা করেছিলেন নবম শ্রেণি পর্যন্ত, তবে মানসিক অসুস্থতার কারণে আর এগোয়নি তার শিক্ষা। গত শনিবার দিবাগত রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী এলাকার ক্রাউন সিমেন্টের রেডিমিক্স কারখানার ভেতরে প্রাণ হারান এই যুবক। কারখানার গাড়িতে ঢিল মারায় ড্রাইভার, হেলপার ও রাতের শিফটে কর্মরতরা তাকে আটক করে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে হত্যা করে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল সোমবার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের নয়াপাড়া এলাকায় সাজ্জাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, লাশের সামনে আহাজারি করছেন স্বজনেরা। সাজ্জাদের মা সাজিদা আক্তার খাটে রাখা সন্তানের নিথর দেহ আঁকড়ে ধরে কাঁদছিলেন বারবার। প্রতিবেশীরা সান্ত¡না দেওয়ার চেষ্টা করলেও থামছিল না মায়ের বুকফাটা আর্তনাদ। কাঁদতে কাঁদতে সন্তানহারা এ নারী বলেন, “আমার ছেলে পাগল, এইডা সবাই জানতো। আমি দূরে থাকলেও খোঁজ নিতাম। আমার এই পাগল ছেলেই আমায় ‘মা’ বলে ডাক দিতো। কিন্তু কাঁচ ভাঙার জন্য ওকে পিটিয়ে মেরে ফেললো! মানুষ কি এমনে মানুষরে মারতে পারে? আমি এই পিটিয়ে মারার বিচার চাই। আমার আর কিছু লাগবে না।” সাজ্জাদের স্বজনরা জানান, বিচ্ছেদের পর সাজ্জাদের বাবা কামাল হোসেন সিলেটে চলে যান। মাও চলে যান কুমিল্লাতে। আদমজী এলাকায় নানি ও মামার কাছেই বড় হয়েছেন এ যুবক। এলাকাবাসীর ভাষ্য, সাজ্জাদ প্রায়ই রাতে একা একা ঘুরে বেড়াতেন। মানসিক সমস্যার কারণে ঘরে রাখা যেত না তাকে। সবাই জানতো তিনি অসুস্থ। তবুও তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার বিচার দাবি করেন স্থানীয়রা। সাজ্জাদের মামা আল-আমিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ঢিল মারার অভিযোগে ছিনতাইকারী বানাইয়া সাজ্জাদরে যেদিন ধরে কারখানায় নেয়, আমরা সেই রাতে কিছুই জানতাম না। সকালে ওর বন্ধুরা জানায়, কারখানার লোকজন পিটিয়ে মেরেছে। খবর পেয়ে কারখানায় গেলে দেখি লাশ নেই। পরে জানতে পারি বেওয়ারিশ লাশ বানিয়ে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে পাঠাইছে। মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করি।” গত রোববার সকালে মরদেহ উদ্ধারের পর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাসিনুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “শনিবার দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে ক্রাউন সিমেন্টের একটি গাড়িতে ঢিল মারে। এতে গাড়ির গ্লাস ভেঙে গেলে ড্রাইভার, হেলপার, রাতের শিফটের কারখানায় কর্মরত লোকজন ধরে কারখানার ভেতর নিয়ে আসে এবং রাতে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। নির্যাতনের এক পর্যায়ে সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে সে মারা যায়।” সিমেন্ট কারখানার লোকজনই গত রোববার সকালে সাজ্জাদকে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা। গত রোববার দুপুরে কারখানার গাড়িচালক, তার সহযোগী ও নিরাপত্তা কর্মীসহ ১০ জনকে আটক করে পুলিশ। তবে, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনূর আলম। তিনি বলেন, “নিহতের পরিবারকে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিতে অনুরোধ করেছি, কিন্তু তারা বারবার মত পাল্টাচ্ছেন। কেন তারা মামলা করতে গড়িমসি করছেন তা আমার বোধগম্য নয়।” তবে, এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হবে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা