আজ শনিবার | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৫ আশ্বিন ১৪৩২ | ২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭ | রাত ৯:২৯

বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্কে বড় ফাটল

ডান্ডিবার্তা | ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ৯:৩৫ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সাথে জামায়াতের নেতাদের দহরম মহরম ছিল আকাশ ছোয়া। নারায়ণগঞ্জে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে বিএনপি-জামায়াত এক সাথে আন্দোলন করেছে। বিএনপি কোন কর্মসূচি দিলে বিএনপি নেতাদের সাথে জামায়াত নেতারা ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলন করেছে। আবার জামায়াত কোন কর্মসূচি দিলে বিএনপি নেতারা তাদের সহযোগিতা করতেন। এমন ঐক্যতে ফাটল ধরেছে। বিএনপি যেমন আওয়ামীলীগেকে এগিয়ে চলতেন এখন তেমনই বিএনপি জামায়াতকে এরিয়ে চলছেন। এখন তারা রাজপথ থেকে শুরু করে আলোচনার টেবিল সব জায়গাই তারা ছিল পরস্পরবিরোধী অবস্থানে। তাদের সেই রাজনৈতিক বিরোধ এখন নতুন রূপে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যকার সম্পর্কে দেখা যাচ্ছে। এক সময় জোট সরকার গঠন এবং আন্দোলন-সংগ্রামে মিত্র হলেও সা¤প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই দুই দলের অবস্থান পাল্টেছে। বিশেষ করে জুলাই সনদ ইস্যু, সংস্কার ও আসন্ন নির্বাচনের পদ্ধতি, কৌশলগত ভিন্নতা ও একে অপরকে দায়ী করার প্রবণতা তাদের মধ্যে ফাটল স্পষ্ট করছে। বিএনপিকে ইঙ্গিত করে জামায়াত নেতাদের বক্তব্য এই দূরত্বকে করছে প্রকট, তার বিপরীতে বিএনপির অবস্থান জামায়াতকে নিয়ে যাচ্ছে চরম প্রতিদ্ব›দ্বীর অবস্থানে। রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় দুই দলের আদর্শগত ভিন্ন অবস্থান স্বাভাবিক হলেও স্বৈরাচার হাসিনার পতনের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ থাকা বিএনপি-জামায়াতের বর্তমান বিরোধ কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায়, তা নিয়েই চলছে নানা আলোচনা। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটের ময়দান সামনে রেখে ভিন্ন কৌশলে এগোতে পারে দু-দলই। কিন্তু সেটা যেন অস্থিরতা তৈরির সুযোগ না দেয় পতিত শক্তিকে। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে জোট সরকার চালিয়েছিল বিএনপি ও জামায়াত। তাদের মধ্যকার সম্পর্কে দীর্ঘদিন মিত্রতা থাকলেও ২০১৩-১৪ সাল পরবর্তী প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক চাপসহ নানা কারণে জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে থাকে বিএনপি। যদিও দুই দলই ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে লড়েছে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। কিন্তু জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর সেই টানাপোড়েন বেড়ে যায়। সংস্কার আগে নাকি জাতীয় নির্বাচন আগে, নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে—এমন প্রশ্নে বিএনপি ও জামায়াত পরস্পরবিরোধী অবস্থান নেয়। বিএনপি দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থে দ্রæত নির্বাচনের দাবি জানালেও জামায়াত রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের দাবিতে অনড় থাকে। তাদের তরফ থেকে বলা হতে থাকে, প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে ভবিষ্যতেও এ ধরনের সংকট তৈরির ঝুঁকি রয়ে যাবে। যদিও আবার তারা সংসদ নির্বাচনকে মাথায় নিয়ে বিভিন্ন আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে। দলটির এ ধরনের তৎপরতায় বিএনপির মধ্যে সন্দেহ ও আস্থাহীনতা আরও বাড়ে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়েও বিরোধে জড়ায় দল দুটি। বিএনপি বলতে থাকে, জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্য কোনো নির্বাচন নয়। আর জামায়াতের দাবি ছিল, আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হোক। স¤প্রতি পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামী কয়েকটি সমমনা দলকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে। এ দাবিগুলোর মধ্যে আছে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রæয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। প্রাথমিকভাবে দলগুলো ঢাকাসহ দেশব্যাপী তিন দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ধারাবাহিকভাবে আরও কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের। এর বিপরীতে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। দলটি সারাদেশে নির্বাচনী আবহ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রার্থী বাছাই, দলীয় ৩১ দফা ও ইতিবাচক কর্মসূচির প্রচার, ভোটারদের মন জয় করতে বাড়ি বাড়ি যাওয়া এবং নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি প্রচারসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বিএনপির নেতারা। এছাড়া জামায়াতের পিআর পদ্ধতি দাবির পেছনেও উদ্দেশ্য দেখছেন বিএনপির নেতারা। তারা মনে করছেন, আসনভিত্তিক নির্বাচনে ফলাফল অনুক‚ল হবে না ভেবে জামায়াত পিআর পদ্ধতি চাইছে। তাছাড়া আন্দোলনে পিআর পদ্ধতি নির্ধারণ হবে না। এটার জন্য আলোচনার টেবিলে আসতে হবে। বিএনপির মতে, জামায়াতের যুগপৎ আন্দোলনের উদ্দেশ্য নির্বাচনের আগে মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখা এবং নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা রাখা। এ অবস্থায় বিএনপি নিজ দলের নেতা-কর্মীদের নির্বাচনমুখী করার কৌশল নিয়েছে। দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীসহ সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে জনসম্পৃক্তিমূলক কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর থেকেই সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির অবস্থানের সঙ্গে একমত ছিল জামায়াত। বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের মধ্যে বিরোধের মূল কেন্দ্রে আছে জাতীয় নির্বাচন। অর্থাৎ জাতীয় নির্বাচন কখন হবে কিংবা কোনটি আগে হবে- জাতীয় নির্বাচন নাকি স্থানীয় নির্বাচন। তারা বলছেন, বিএনপি ভাবছে জামায়াত ৩০০ আসনে প্রার্থী দিচ্ছে বা তারা অন্য ধরনের কিছু করতে পারে। আবার জামায়াত মনে করছে সংস্কারের আগে নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সেটি আর জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী বাস্তবায়ন হয় কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এমন কিছু বিষয়েই দল দুটির চিন্তার ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, তাদের ধারণা, বিএনপি যেন নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী না হতে পারে, সেজন্যই জামায়াত নির্বাচন প্রলম্বিত করতে নানা ধরনের তৎপরতা শুরু করেছে। আর জামায়াত নেতাদের দাবি, বিএনপির সঙ্গে তাদের দূরত্ব বা বিরোধিতার কোনো বিষয় নেই। বরং বিএনপির মতো তারাও তাদের দলীয় কাজ করে চলেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক গোলাম হাফিজ বলেন, রাজনীতিতে প্রতিনিয়ত উত্থান-পতন একটি স্বাভাবিক নিয়ম। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের জোট হবে বা হবে না, তার অনেক কিছু নির্ভর করবে সামনে বাংলাদেশের রাজনীতি কোন দিকে যাবে সেই পরিস্থিতির ওপর।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা