আজ বৃহস্পতিবার | ১৬ অক্টোবর ২০২৫ | ৩১ আশ্বিন ১৪৩২ | ২৩ রবিউস সানি ১৪৪৭ | সকাল ৮:৩৫

নারায়ণগঞ্জে ভয়াবহ রূপে ডেঙ্গু বিত্তবানদের এগিয়ে আসা জরুরী

ডান্ডিবার্তা | ০৪ অক্টোবর, ২০২৫ | ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ডেঙ্গু এখন মহামারিতে রূপ নিয়েছে। নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গুর উন্নত চিকিৎসার অভাবে এ শহরের হাসপাতাল রেখে রোগীরা যাচ্ছে ঢাকাতে। সেখানে বিভিন্ন হাসপাতালে মারা যাচ্ছেন তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন বিষয়টি নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে দুর্গা পূজায় যেভাবে বিত্তবানরা সনাতনীদের পাশে দাঁিড়য়েছেন সেভাবে ডেঙ্গু মহামারি থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষায় এগিয়ে আসাটা বেশী জরুরী হয়ে পড়েছে। কারণ নারায়ণগঞ্জে কোনো হাসপাতালে প্লাটিলেট কাউন্ট বা সেপারেশন মেশিন নেই। যার কারণে নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গুর জটিল রোগীদের ঢাকায় যেতে হচ্ছে। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মুশিউর রহমান জানান, নারায়ণগঞ্জে কোনো হাসপাতালে প্লাটিলেট কাউন্ট বা সেপারেশন মেশিন নেই। এ কারণে জটিল অবস্থার রোগীদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ বা মহাখালীর ডিএনসিসি হাসপাতালে পাঠাতে হচ্ছে। প্রতিদিন সদর হাসপাতাল ও ৩০০ শয্যা হাসপাতালে শতাধিক রোগী ভর্তি হচ্ছে। বেড সীমিত হওয়ায় অনেককে ঢাকায় পাঠানো বাধ্যতামূলক। চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গুর জটিল অবস্থায় রোগীর প্লাটিলেট কমে যায়, যা রক্তক্ষরণ ঝুঁকি বাড়ায়। প্লাটিলেট ট্রান্সফিউশন একমাত্র কার্যকর সমাধান। ঢাকায় কয়েকটি হাসপাতালে এই সুবিধা থাকলেও নারায়ণগঞ্জে একটিও নেই। প্রতিদিন অন্তত ১৫ থেকে ২০ রোগীকে মেশিন না থাকায় ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, একটি আধুনিক প্লাটিলেট সেপারেশন মেশিনের মূল্য প্রায় ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা। বাজেট সীমাবদ্ধতা ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এটি এখনও কেনা হয়নি। এদিকে নগরবাসী বলছেন ভিন্নকথা। তারা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ দেশের অন্যতম ধনী জেলা। ব্যবসা বাণিজ্য কেন্দ্রীক এ নগরেও আছে ধনকুবেরা। নির্বাচন ঘিরে রাজনীতিতে ঢালছেন কোটি কোটি টাকা। কিন্তু একটি প্লাটিলেট মেশিন কেনার মত আগ্রহ দেখাচ্ছে না কেউ। বিষয়টি নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আছে নানা মতামত। কেউ কেউ বলছেন, এমপি প্রার্থী হিসেবে মডেল গ্রæপের মাসুদুজ্জামান, প্রাইম গ্রæপের আবু জাফর আহমেদ বাবুল প্রচুর টাকার মালিক। এছাড়াও আছে নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপু, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের মত কোটিপতি নেতা। তাঁরা চাইলেই এ ধরনের মেশিন নারায়ণগঞ্জের হাসপাতালে স্থাপন করতে পারেন নিজ উদ্যোগে। তাহলেই ঝুঁকি কমবে নগরবাসীর। এখন প্রতিনিয়ত পাড়া মহল্লা থেকে খবর আসছে ডেঙ্গু আক্রান্ত, পরক্ষণে মৃত্যুর খবর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন বিষয়টি নিয়মিত ঘটনা। কার্যত পরিস্থিতি মহামারিরে রূপ নিয়েছে। কিন্তু বিপরীতে প্রশাসন একেবারেই উদাসীন। নেই কোন দৃশ্যমান ব্যবস্থা। ফলে মৃত্যুর মিছিল ক্রমশ বাড়ছে। একদিকে থেমে থেমে বৃষ্টি। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ড্রেনেজ ব্যবস্থার বেহাল দশা। ফলে জলাবদ্ধতার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রধান বাহক এডিস মশার বিস্তার। কিন্তু এডিসের লার্ভা (ডিম) নির্মূলে জেলা প্রশাসন কিংবা সিটি করপোরেশনের আলাদা কোনো গবেষণা, জরিপ ও কর্মযজ্ঞ না থাকায় হু হু করে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা। বলা হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গুতে যেই ভয়ঙ্কর অবস্থা তৈরি হয়েছে তার পেছনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের অসচেতনতাও কম দায়ী নয়। তবে সরকারি অব্যবস্থাপনাকেই এজন্য এখন বেশি দয়ী করছেন সবাই। চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে আগষ্ট পর্যন্ত ৬ মাসে জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ৯০০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। আর গত ৩০ দিনে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাসেই এই সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে। নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাক্তার আবুল ফজল মুহম্মদ মুশিউর রহমানের ভাষ্য, এই তথ্য শুধু সরকারি হাসপাতালগুলো থেকে নেয়া। বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য বা জেলায় সঠিক কতজন এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন সেটির হিসেব তার প্রতিষ্ঠানের কাছে নেই। জনপ্রতিনিধির পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের ১৪নং ওয়ার্ডের পানির ট্যাংকি এলাকার সাদ্দাম হোসেন নামে এক যুবক জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে তার মাকে গত এক সপ্তাহ শহরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে হঠাৎ করে প্লাটিলেট কমে গেলে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একদিন পরই মারা যান সাদ্দামের মা। জানা গেছে, শহরজুড়ে এমন আরো অনেকের ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে যারমধ্যে বেশির ভাগ শিশু। তবে এই তথ্য নেই সরকারি খাতায়। তথ্য বলছে, ডেঙ্গু আক্রান্তদের বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত ও নিন্মমধ্যবিত্ত। যারা চিকিৎসার জন্য সবার আগে স্থানীয় সরকারী হাসপাতালগুলোতে গিয়ে উঠছেন। তবে জেলার কোনো সরকারি হাসপাতালে প্লাটিল্যাট মেশিন এবং আইসিইউ সুবিধা না থাকায় রোগীদের অবস্থা একটু শোচনীয় হলেই যেতে হচ্ছে ঢাকায়। স্থানীয় স্বাস্থ্য খাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান, প্লাটিলেন মেশিন কোটি টাকার উপরে দাম। তাই এটি অনেক জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে নেই। এবং শহরের খানপুর ও ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে আইসিইউ মেশিন থাকলে আইসিইউ ডাক্তারদের শূন্যপদ থাকায় তা রোগীদের সেবায় ব্যবহার করা যাচ্ছেনা। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইউ) মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, আমরা ওষুধ দিচ্ছি এবং সবকিছুই ঠিকমতো চলছে। তবে কি কারণে এটা বাড়ছে তা বোঝা যাচ্ছেনা। মশার যেই বংশ বিস্তার সেখানে জিনগত পরিবর্তন হচ্ছে। যার করছে ওষুধেও কাজ হচ্ছেনা। আর বেশি ওষুধ দিলে তা আবার পরিবেশের জন্যও ক্ষতি। এখন এটা নিয়ে জাতীয় ভাবে গবেষণা দরকার। সেটি হলে এই সমস্যার টেকসই সমাধান হতে পারে। নারায়ণগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডাক্তার মুশিউর রহমান বলেন, জেলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে আমি এটা মনে করিনা। আমাদের কাছে মৃত্যুর খবরও নেই। হাসপাতালগুলোতে আমরা চেষ্টা করছি সেবা দিয়ে যেতে। কিন্তু জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন এবং উপজেলা পর্যায়ে আরো সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। নারায়ণগঞ্জ শহরের ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া পরিস্থিতি নিয়ে নাসিকের ১৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেন, সারা নারায়ণগঞ্জে বিশেষ কর্মসূচী নিতে হবে ডেঙ্গুর জন্য। সিটি করপোরেশন অথবা জেলা প্রশাসনের এই মুহূর্তে একটা ক্র্যাশ প্রোগাম নিতে হবে। এটা না হলে সামনে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। এটা করোনার মতোই ভয়াবহ হয়ে যাচ্ছে। একটা ওয়ার্ডে যতটুকু ওষুধ লাগে তা সিটি করপোরেশন কিংবা সরকার দিতে পারছেনা। তারপরও চেষ্টা চলছে যাতে কিছুটা হলেও এডিস মশা কমিয়ে আনা যায়। আমাদের জনগণকেও আরেকটু সচেতন হওয়া বিশেষ প্রয়োজন।ন নাসিকের ২৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশা বলেন, পর্যাপ্ত ওষুধের ব্যবস্থা নেই। ঘরে ঘরে ডেঙ্গু রোগী। মৃত্যুর খবরও অনেক জায়গা থেকে শুনতে পাচ্ছি। আগের আমার ওয়ার্ডের ড্রেনগুলোর মুখ খোলা ছিলো তাই চাইলেই সেটা উঠিয়ে পরিষ্কার করা যেতো। এখন তা করা যায়না বলে ভেতরেই মশার বংশবিস্তার হচ্ছে। তারপর আমরা নিজেরাও সচেতন না। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে হলে আমাদের নিজেদেরও সচেতন হতে হবে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা