আজ বৃহস্পতিবার | ১৬ অক্টোবর ২০২৫ | ৩১ আশ্বিন ১৪৩২ | ২৩ রবিউস সানি ১৪৪৭ | সকাল ১১:৩৩

প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার নগরবাসী

ডান্ডিবার্তা | ১৪ অক্টোবর, ২০২৫ | ৫:০৩ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জ শহরে প্রতিনিয়ত দুভোর্গের শিকার হতে হচ্ছে নগরবাসীকে। শহর জুড়ে তিব্র যানজট। ফুটপাত হকারদের দখলে, সড়কে খানাখন্দকে ভরা। ড্রেনেজ কাজের ধীরগতির কারনে ভোগান্তি যেন পিছু ছাড়ছেনা নগরবাসীকে। প্রতিদিন সকাল হওয়ার সাথে সাথেই ব্যস্ততা বাড়ে নগরীতে। খোলা হয় অফিস-আদালত-স্কুল-হাসপাতালের দরজা, কর্মস্থলমুখি হয় চাকুরীজীবিরা। তবে দিনের শুরু থেকে একের পর এক ভোগান্তির শিকার হয় নগরবাসী। এই ভোগান্তি পোহাতে হয় সড়ক থেকে শুরু করে ফুটপাত-বাজার-হাসপাতালসহ বিভিন্ন জায়গায়। কোথাও সড়কের মাঝে বাসের পার্কিংয়ের জন্য যানজটের ভোগান্তি, কোথাও অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য পথচারীদের ভোগান্তি, কোথাও আবার দিনভর ময়লার দুর্গন্ধের ভোগান্তি। দিন শেষে বাড়ি ফিরলেই যেন একটু হাফ ছেড়ে বাঁচে জণসাধারন। গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে নগরীর খানপুর, কালিরবাজর, চাষাঢ়াসহ বিভিন্ন স্থানের দেখা মেলে এমন ভোগান্তির চিত্র। এসময় স্থানীয় ও পথচারীরাও প্রকাশ করেছে তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। চলতে চলতে বঙ্গবন্ধু সড়কের মাঝে হটাৎ করে দাড়িয়ে গেল একটি যাত্রীবাহী বাস। উঠানো হলো ২-৩ জন যাত্রী। ব্যস্ততম এ সড়কে সেই বাসের পিছনে দাড়িয়ে গেল রিকশা, মাইক্রো, অটো, সিএনজি ও অ্যাম্বুলেন্সসেহ নানান যান। মুহুর্তের মধ্যেই বেধে গেল যাটজট। এমন ভোগান্তিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে চাকুরিজীবি মোরশেদ সরোয়ার বলেন, নারায়ণগঞ্জের ভোগান্তির কথা বলে শেষ করা যাবে না। ছোট-বড় একটার পর একটা লেগেই আছে। এ শহরের ২নং গেট, চাষাড়াসহ যেখানে যেখানে বাস থামিয়ে যাত্রি উঠা নামা করে সেখানেই একটা ২০-৩০ মিনিটের যানযট লাগে। বাসগুলো একদম সড়কের মাঝে দাড়িয়েই যাত্রি নামায়। এছাড়াও কালির বাজারের রাস্তায় নারায়ণগঞ্জ স্কুল থেকে শুরু করে একদম ১নং রেল গেট পর্যন্ত রাত ৯টা থেকেই বিভিন্ন কোম্পানির বাস এসে দাড় করিয়ে রাখে। ওরা রাস্তার একটা অংশ দখল করে নিয়ে নেয়। কালির বাজারের রাস্তা এমনিতেই খুব চিকন। তার মধ্যে এক লেন বন্ধ করে দেওয়া হলে বাকি রাস্তার অবস্থা চলাচলের মতো থাকে না। ফুটপাত ছেড়ে সড়ক দিয়েই নিজের মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছিলেন মা তাসলিমা খাতুন। বিপরিত থেকে আসা একটি অটো থেকে অল্পের জন্য ধাক্কা খাওয়া থেকে বেঁচে যান তিনি। ফুটপাত দিয়ে না হাটার কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন এসএসসি পরিক্ষা চলছে, পরিক্ষা শেষ হলে হল থেকে স্টুডেন্টরা বের হয়। এই বিবি রোড শহরের ব্যস্ততম একটা সড়ক। এখানে ফুটপাতে কমবেশি সবসময় পথচারীর আনাগোনা বেশি থাকে। সেখানে যখন স্টুডেন্টরা বের হয় তখন রাস্তায় পথচারীরা ঠিক মতো হাটতে পারে না, কিন্তু পপুলার, মেডিনোভা ক্লিনিক ও মার্ক টাওয়ারের সামনে ফুটপাতের উপর মটোরসাইকেল পার্কিং করা থাকে। ফুটপাতে এ অবস্থায় আমাদের তো তখন হাটাতে হলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে সড়কে নামতে হয়, রিকশা-গাড়ির ধাক্কা খেতে হয়। তার উপর ফুটপাতে অধিকাংশ জায়গা জুড়ে বসে থাকে হকাররা। আগে এতো হকার ছিলো না। এখন ফুটপাতের উপরে বসে একদল, ভ্যানে করে সড়কের পাশে বসে একদল। সব মিলিয়ে ফুটপাতে ফথচারীদের হাটার জায়গা নেই। ফুটপাতে হাটা আর নিজেকে ভোগান্তির মধ্যে ফেলে দেওয়া সমান কথা। নগরীর যানজট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছের পথচারী আসলামও। তিনি বলেন, এ শহরে যানজট নেই এ্মন সড়ক নেই। হাতে গুনলে এই যানজটের কারণ অনেকগুলেই আছে। যেমন ট্রাফিক পুলিশরা ঠিক মতো কাজ করে না, রিকশা ও অটো রিকশার সংখ্যা অনেক বেশি, রাস্তা সরু, যে রাস্তা আছে সেগুলো ভাঙ্গা বা খানা-খন্দে ভরা, কদিন পরপর সংস্কারের নামে এক রাস্তা বন্ধ করে রাখা তারপর মাসের পর মাস রাস্তা এভাবেই থাকা, অধিকাংশ ভবনে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই ইত্যাদি। যানজট কমবেশি সব শহরেই আছে তবে যে পরিমান নারায়ণগঞ্জে আছে সেটা সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। কালিরবাজারের বাসিন্দা রিফাত তালুকদার বলেন, ছোট থেকে বড় হয়েছি এই এলাকায়। নারায়ণগঞ্জে যে পরিমানে মানুষ সে পরিমানে কিন্তু চলাচলের জন্য রাস্তা বা ফুটপাত নেই। এতে এমনিতেই সড়কে যানজট লেগেই থাকছে কিন্তু তার মধ্যে রাস্তার অর্ধেকের বেশি অংশ খেয়ে রেখেছে ফলের দোকানগুলো। সারাদিন কেনাবেচা করে পচা ফল, ফলের সাথে আসা বিভিন্ন পলিথিন বা প্যাকেট ও ফলের অবশিষ্ট গুলো এভাবেই ফেলে রেখে চলে যায়। নারায়ণগঞ্জে সড়ক বা ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করা নতুন কিছু না, এটা নিত্য দিনের ঘটনা। খানপুরে নিজ বাড়ির সামনে ময়লার দুর্গন্ধের কারণে বিরক্ত আফজাল হোসেনের পরিবার। ময়লার এই দুর্গন্ধের কারণে স্বাস্থ্য খারাপ হচ্ছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, শুধু খানপুরের মেডিএইড ক্লিনিকের সামনে না, পত্রিকায় পড়েছি এই নারায়ণগঞ্জের এই ছোট্ট শহরের প্রায় ২০-২২ টি স্থানে প্রতিদিন ময়লা ফেলা হয়। সবগুলো স্কুল-কলেজ-বাজার, বাসাবাড়ি বা হাসপাতালের সামনে। সারাদিন ময়লা সেখানে জমতে থাকে আর দুর্গন্ধ-রোগ জীবাণু ছড়াতে থাকে। পরের দিন ভোর সকালে এসে সিটি কর্পোরেশনের লোকরা এসে ময়লা নিয়ে যায়। তারপর আবার সারাদিন একই চিত্র। সিটি কপোরেশন নিয়ে যায় বলেই মানুষ এই জায়গাগুলোতে ময়লা ফেলে। এই ময়লার কারণে এখানে বাসিন্দাদের থাকতে অনেক কষ্ট হয়, তাছাড়া ভাড়াটিয়ারাও থাকতে চায় না। যেখানে সেখানে ময়লার স্তূপের কারণে তো আমাদের বাচ্চারা স্বাস্থ্য ঝুকিঁতেও পড়ছে। পলিথিনের কারণে সড়কের ড্রেন বøক হয়ে আছে। বৃষ্টির পানিতে সড়কে জমেছে ময়লা-কাদাঁ। এতে ভোগান্তিতে পরেছেন দ্বিগু বাবুর বাজারে আসা স্কুল শিক্ষক আসমা। তিনি বলেন, আমরা কয়েকমাস আগেই পত্রিকায় দেখেছি পলিথিন-প্লাষ্টিক নিষিদ্ধ ও এ সংক্রান্ত বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। তবে সেগুলো তো বাস্তবিক ভাবে বাজারগুলোতে বাস্তবায়ন হয়নি। এখনো বিভিন্ন বাজারগুলোতে মাছ-মাংশ-ফল ও সবজি পলিথিনে করেই বিক্রি করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় এখনো বোতলজাত ও মোড়কজাত পন্যে অধিকাংশ সময় পলিথিন বা প্লাষ্টিক ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা স্কুলে বাচ্চাদের শেখাই পলিথিন পরিবেশের জন্য অভিশাপ, কিন্তু আমরা নিজেরাই তো এই অভিশাপ থেকে বের হয়ে আসতে পারিনি। এই পলিথিন যে সরাসরি শুধু আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তা নয়। এই পলিথিন ড্রেনে জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। সামনে বৃষ্টির দিন আসছে বিভিন্ন জায়গায় এই জলাবদ্ধতা আবারও আমাদের ভোগান্তিতে ফেলবে। ২নং রেল গেট এলাকার ব্যবসায়ি হুমায়ুন বলেন, সামান্য বৃষ্টিতেই প্রধান সড়কগুলোতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। আগেও দেখেছি আধাঘন্টার বৃষ্টিতে বিবি রোডে হাটু সমান পানি উঠেছে। আমার বাসা পাঠানটুলি হওয়ায় প্রতিদিন খানপুর কালিরবাজার হয়ে দ্বিগু বাবুর বাজারের মধ্য দিয়ে দোকানে আসতে হয়। এই গতকাল আর আজকের বৃষ্টিতে সড়কের কোথাও পা রাখার জায়গা নেই। গ্রামের কাঁচা রাস্তায় কাঁদা-ময়লা থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু একই অবস্থা হয়ে আছে কালির বাজার চারারগোপ থেকে দ্বিগু বাবুর বাজারের ভিতর পর্যন্ত। বৃষ্টি হলেই পানি জমে যাবে, কাঁদা-ময়লার মধ্য দিয়ে আমাদের হেটে যেতে হয়। ছেলের চিকিৎসা করতে খানপুরের সরকারী হাসপাতালে এসেছিলেন এক রোগী। হাসপাতাল থেকে বের হতেই একলোক এসে তাকে নিয়ে এক প্রকার টানাটানি করতে থাকে পাশের ক্লিনিকে যাওয়ার জন্য। এসময় এক রিকশাচালক মহিউদ্দিন বলেন, সরকারি হাসপাতালে রোগীর থেকে দালাল বেশি থাকে। একজন রোগী হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে বের হওয়া আগে হাত থেকে প্রেসকিপশন টা নিয়ে যায় তারা। তারপর পরিক্ষার জন্যে এক একজন রোগীর পরিবারকে নিজ নিজ ক্লিনিকে টানতে থাকে। এদিকে গতকাল সোমবারও শহরে যানজটে ভোগান্তির শিকার হতে হয় নগরবাসীকে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা