জেলাকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে মহানগর আ’লীগ
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আওয়ামীলীগ যেন ঝিমিয়ে পড়েছে। কমিটি গঠনের কারণে মহানগর আওয়ামীলীগকে মাঠে দেখা গেলেও জেলা আওয়ামীলীগকে দেখা যাচ্ছে না। তারা যেন একেবারেই ঝিমিয়ে পড়েছে। এদিকে আগামী জাতীয় সাংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজপথে ব্যাপক ভূমিকা পালন শুরু করে দিয়েছে দেশে রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের সাথে তাল মিলিয়ে রাজপথে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগ এবং ওয়ার্ড কমিটির মাধ্যমে রাজপথ নিজেদের দখলে রাখতে সাধারণ নেতাকর্মীদের উজ্জ্বীবিত করছে তারা। কিন্তু বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগের নানা কর্মকান্ড চোখে পড়লেও দেখা যাচ্ছে না জেলা কমিটির কাউকে। অপর দিকে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সম্মেলনের আগে রাজপথে সরব ছিলেন। এবং মাঠ গরমে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি পূর্ণ বহাল রাখার নির্দেশ দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব দিয়ে যান শীঘ্রই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কিন্তু তা এখানো হয়ে উঠেনি। যার ফলে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা দল থেকে পা পিছিয়ে নিচ্ছেন। আর তারা সম্মেলনের আগের ব্যাপক ভূমিকা রেখে সম্মেলনের পর হঠাৎ করে তারা যেন আড়ালে হারিয়ে গেলেন। যার কারণে তৃণমূলের দাবি, জেলা আওয়ামী লীগকে মহানগরের মতো শক্তিশালী করে গড়ে তুললে অচিরেই তারা বিরোধী দলের নৈরাজ্যে ভেঙ্গে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগকে আরো শক্ত অবস্থানে রাখা সম্ভব হবে। দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে ১১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ঘোষণা করা হয় আনোয়ার হোসেনকে ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় এড. খোকন সাহাকে পরবর্তীতে ২ বছর পর ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। পরে দীর্ঘ ৯ বছর পর আবারো মহানগর আওয়ামী লীগের নুতন কমিটি গঠনের প্রস্তুতি নেয় দলটি আর গত বছরের ২৫ অক্টোবর কমিটি গঠনের দিন ধার্য করা হয়েছিল। কিন্তু দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন স্থগিত রাখা হয়। কিন্তু কোনভাবেই আগের রূপ থেকে ফেরানো যায়নি মহানগর আওয়ামী লীগকে তারা রাজপথে ব্যাপকভাবে সরব রয়েছে। এরই মাঝে নতুন বছরের প্রথম মাসেই তারা নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে মাঠে কাজ করা শুরু করে দিয়েছে। মহানগর আওয়ামী লীগের অধীনে ওয়ার্ড কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত হবে এসব ওয়ার্ড কমিটি। বন্দরের ৯টি ওয়ার্ড ও শহরের ১০টি ওয়ার্ডে কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা। ইতিমধ্যেই তারা নানা ওয়ার্ড কমিটি গঠন শুরু করে দিয়েছে এবং মাঠের সকল নেতাকর্মীকে বিরোধী দলের নানা নৈরাজ্যে ঠেকাতে প্রস্তত রেখেছে। তাদের মধ্যে এ ধরনের উজ্জ্বীবিত ভাব দেখে দলের ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অনেকটাই উৎফুল্ল হয়ে উঠেছে এবং নেতাকর্মীরা মহানগর আওয়ামী লীগকে আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সাধারণ নেতাকর্মীরা ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে মহানগর আওয়ামী লীগ সর্বশীর্ষে অবস্থান করছে বলে ভাবছে দলের তৃণমূল। অপর দিকে জেলা আওয়ামীগের সম্মেলনে ঘিরে স্থানীয় এমপিসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বিভিন্ন আয়োজন করতে দেখা গিয়েছে আর তারা সর্বদা মাঠ গরম রাখার চেষ্টা করেছেন। পরবর্তীতে নানা চড়াই উতড়াই পেরিয়ে ২৩ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সম্মেলনকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি পুরোই আওয়ামী লীগের দখলেই ছিল। আর সকল নেতাকর্মীই আশাবাদী ছিলেন এবার জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি রদ-বদল হবেই কিন্তু এতো ঢাকঢোল পিটিয়ে ও সম্মেলনে কোন রদ-বদল হয়নি পূর্বের কমিটিতে থাকা বিতর্কিত হাই-বাদলকে বহাল রেখেই কমিটি ঘোষণা করেন ওবায়দুল কাদের। আর ওবায়দুল কাদের শীঘ্রই এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার দায়িত্ব দিয়ে গেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হাতে। আর এছাড়া ও ওবায়দুল কাদের তাদের নানা সতর্কবাণী দিয়ে যান। কমিটিতে ডেকে ডেকে পকেট কমিটি দেওয়া চলবে না, পদ বাণিজ্য চলবে না, যোগ্য ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের দ্বারা যেন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু কমিটি হওয়ার ৪ মাস পেরিয়ে গেলে ও কমিটি পূর্ণাঙ্গ হওয়ার কোন আভাস ও পাওয়া যাচ্ছে না। আর সম্মেলনকে ঘিরে জেলা আওয়ামী লীগকে ব্যাপকভাবে মাঠ গরম করতে দেখা গেছে। কিন্তু চলতি বছর জেলা আওয়ামী লীগ যেন আড়ালে হারিয়ে গেলেন। আর অপর দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের মধ্যে পূর্বে ও কোন ঐক্যবদ্ধতা দেখা মিলে না। আর এখনো তাদের মাঝে দুরত্ব আরো অনেকটা গভীরে চলে গিয়েছে যার কারণে তারা নিজেরা বসে সমন্বয় করে জেলা আওয়ামী লীগকে পূর্ণাঙ্গ কমিটির দ্বারা শক্তি করতে ব্যর্থতার প্রমান দিচ্ছেন। দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানান, শীর্ষ নেতারা দল থেকে সুবিধা নিলেও দলের এই ক্লান্তিকালে তাদের কাউকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না। আর এই ক্ষোভ নিয়ে দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা রাজপথ ছাড়তে শুরু করেছেন। তবে দলের শীর্ষনেতাদের দায়িত্বহীনতার কারণে সাংগঠনিক ভাবে দূর্বল অবস্থানেই রয়ে যাচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগ। সব মিলে দেখা যাচ্ছে মহানগর আওয়ামী লীগ বর্তমানে জেলাকে ছাড়িয়ে সামনের স্থানে অবস্থান করছেন। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. আবু হাসনাত শহিদ বাদল যুগের চিন্তাকে বলেন, আমরা বর্তমানে রাজপথে রয়েছি। আর আমাদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার জন্য আলাপ-আলোচনা চলছে। কিন্তু ছয়টা থানা মিলিয়েই তো কমিটি গঠন করা হবে তাই একটু সময় লাগছে। আমরা আশা করছি শীঘ্রই হবে। আর ইতিমধ্যে আমাদের জেলা পর্যায়ের সকল নেতাকর্মী অনেকটাই উজ্জ্বীবিত।