আজ রবিবার | ২৭ জুলাই ২০২৫ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১ সফর ১৪৪৭ | দুপুর ২:৩১

আলোচনায় ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসন

ডান্ডিবার্তা | ১৮ এপ্রিল, ২০২৩ | ১২:২২ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জের বিএনপির নেতাদের ব্যাপারে বিগত সময়ে তেমন সিরিয়াস না থাকলেও এবার নতুন নেতৃত্বে আসার পর থেকে তাকে বেশ সিরিয়াস দেখা যাচ্ছে। বিএনপির এই নেতৃত্ব নিয়ে তিনি যেন কোনোভাবেই স্বস্তি পাচ্ছে না। বিশেষ করে বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনকে ইঙ্গিত করে প্রায় সময়ই বিভিন্ন সভা সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন। যা অন্য কোনো নেতৃত্বের বেলায় দেখা যায়নি। বরং কোনো কোনো সময়ই তাদের ব্যাপারে প্রশংসা করছেন শামীম ওসমান। সম্প্রতি একাধিক অনুষ্ঠানেও বক্তব্য রাখতে গিয়ে ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনকে ইঙ্গিত করে বক্তব্য দিয়েছেন। যা ইতোমধ্যে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সদস্যদের আনুষ্ঠানিক দায়িত্বভার গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। আর এই অনুষ্ঠানের বক্তব্য রাখতে গিয়ে শামীম ওসমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন খুনীদের সাথে কোনো আলোচনা হবে না। নির্বাচনে আসলে আসুক না আসলে নাই। আমাদের এ নারায়ণগঞ্জেও অনেকে নেতা হয়ে আস্ফালন দেখাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে অনেক খুনিদের আস্ফালন দেখছি। যারা নারায়ণগঞ্জে কিছু বড় নেতার হওয়ার পরে নারায়ণগঞ্জে খুনের রাজত্ব সৃষ্টি করেছিলো। খুনের রাজত্ব আমাদের দলে বাদ দেন বিএনপির নেতা তৈমূর আলম খন্দকারের ভাইকে হত্যা করা হয়েছিলো সাব্বিরকে। কারণ, সে মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। দিনে দুপুরে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিলো। এটা নারায়ণগঞ্জের সবাই জানে। তিনি বলেন, সারা দুনিয়া আজ সঙ্কটে। তার পরেও বাংলাদেশ ভালো আছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী দিনরাত পরিশ্রম করছেন। তারা আজ এ নেত্রীকেও মারতে চায়। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সম্পদ না বরং দেশের সম্পদ। এছাড়াও নারায়নগঞ্জের একটি কলেজে নবীন বরন অনুষ্টানে বিএনপি নেতা গিয়াসউদ্দিনকে খুঁনী বলেও দাবি করেন এমপি শামীম ওসমান। এমনকি সাবেক ছাত্রদল নেতা জাকির খাঁনকে একজন ভদ্র ছেলে বলে বক্তব্য প্রদান করতে দেখা গেছে এমপি শামীম ওসমানকে। যা কিনা নিজ দলের মধ্যেও আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার অনেকে এমপি শামীম ওসমানের এমন বক্তব্যকে রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি বলেও দাবি করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষককের মতে, এই বক্তব্যে শামীম ওসমান মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের কোনো নাম উচ্চারণ না করলেও গিয়াস উদ্দিনকেই ইঙ্গিত করেই তিনি এ বক্তব্য দিয়েছেন। এর আগে, গত ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ শহরের দুই নম্বর রেলগেইট এলাকায় শামীম ওসমানের উদ্যোগে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করা হয়। আর এই সমাবেশে তৎকালিন বিএনপির সদস্য সচিব মামুন মাহমুদকে ভদ্রলোক হিসেবে সম্বোধন করেন শামীম ওসমান। আর এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তৈরি হয় রাজনৈতিক মহলে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কেউ কেউ বিষয়টিকে শামীম ওসমানের স্থানীয় বিএনপি নেতা প্রীতি হিসেবে দেখছেন। এদিন দীর্ঘ এক ঘণ্টার বক্তব্যে শামীম ওসমান বলেন, জেলা বিএনপির সেক্রেটারি মামুন মাহমুদ। ভদ্রলোক মানুষ তিনি। কিছুদিন আগে তাকে ঢাকার রাস্তায় ছুরিকাঘাত করা হয়। আশেপাশের লোকজন দ্রুত তার ঘাতককে আটক করে পল্টন থানায় সোপর্দ করে। সেখানে স্বীকারোক্তিতে সে জানায়, নারায়ণগঞ্জের একজন এক্স এমপির ছেলে তাকে ভাড়া করেছে মামুন মাহমুদকে হত্যা করার জন্য। যদি সেদিন কোন অঘটন ঘটে যেত, তাহলে ত্বকী হত্যার মত আমাদের উপর দোষারোপ করা হতো। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই সময়ে মামুন মাহমুদ নারায়ণগঞ্জ জেলার রাজনীতিতে বেশ প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন। নিজ দলের মধ্যেই অন্যদের মাইনাস করে নিজের আলাদা বলয় তৈরি করার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনে বিগত নির্বাচনে চেয়েছিলেন ধানের শীষ প্রতীক। আর একই আসনে রয়েছে সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনের প্রতিযোগীতামূলক অবস্থান। এই রাজনীতি নিয়ে যখন বিএনপির অভ্যন্তরে টানাপোড়েন তখন ঘটে ছুরিকাঘাতের ঘটনা। বিতর্কের মুখে পড়েন গিয়াস উদ্দিন। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এবার শামীম ওসমানও বাতাসে পাল তুলে দিয়েছিলেন। মামুন মাহমুদের ঘটনা টেনে এনে গিয়াসকে উপস্থাপন করেছেন ভিলেন হিসেবে। কিন্তু একজন আওয়ামী লীগের এমপি নিজের মুখে নাশকতা সহ ৩০ মামলার আসামিকে ভদ্রলোক হিসেবে সম্বোধন করেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে সকলের কাছে। এর আগে এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি সভা গত ১৯ আগষ্ট নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ডিআইটি মাঠে শোক দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামীম ওসমান বলেন, নাশকতা হবে। নাশকতার জন্য ব্যাপক পরিমাণ টাকা ঢুকে গেছে। এমন নাশকতা হতে পারে বিএনপির মধ্যম সারির নেতাদের মেরে ফেলা হতে পারে। মাইরা আমাদের উপর চাপাতে পারে। কইদিন আগে হইছেও কিন্তু। বিএনপির সেক্রেটারী অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। অল্পের জন্য বেঁচে গেছে। ঢাকার একটি রেস্টেুরেন্টের সামনে মাইরা ফালাইছিল কিন্তু। পাবলিক ধরে পেলেছে। শামীম ওসমান বলেন, এখানে নাম আসছে কার? যে মারছে সে নারায়ণগঞ্জের লোক না কন্টাক্ট কিলার। চাকুটা ঘুরাতে পারে নাই। আমি শুনছি সাত দিন পর। ঘুরাইলে এই অধ্যাপক মামুন মারা যেতে। পরে যখন তদন্ত করা হয়েছে দেখা গেছে এই এলাকার একজন এমপি ছিলেন (গিয়াস উদ্দিন) আমাদের বড় ভাই। যার হাতে আমাদের বহু লোক মরছে। তার ছোট ছেলের নাম স্বীকারোক্তিতে এসেছে। সে টাকা দিয়ে কন্টাক্ট করে তাকে মারার জন্য। গিয়াসউদ্দিনের ছোট ছেলের নাম রিফাত। এখানে যে রিফাতের কথা বলা হচ্ছে সেই রিফাত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে নয়। অন্য এক রিফাতের নাম আসে আর এটাকে গিয়াস উদ্দিনের ছোট ছেলে বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। সূত্র বলছে, চলতি বছরের শুরু থেকে বিএনপি জাতীয় রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হতে শুরু করতেই আবারও তর্জন গর্জন শুরু করেন শামীম ওসমান। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে যারা বিএনপির রাজনীতি ধরে রেখেছিলো তাদের কেউই শামীম ওসমানের সাথে ফাইট দেয়ার মত দক্ষ নন। একদিকে মামুন মাহমুদ ও অন্যদিকে মনিরুল ইসলাম রবি। উভয়েই বেশ ভদ্র রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। শামীম ওসমানের বিপরীতে গর্জন দেয়া বা লড়াই করার মত সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া সাবেক জেলা বিএনপির আহ্বায়ক তৈমূর আলম খন্দকারকে নিজেদের আইনজীবী বলেই মন্তব্য করে থাকেন শামীম ওসমান। ফলে শামীমের এমন হুংকারের বিপরীতে বিএনপির অবস্থান ছিলো না বললেই চলে। তবে নতুন কমিটির মধ্য দিয়ে সেই শূন্যস্থান যেন পূরণ হয়েছে। জেলা বিএনপির দায়িত্ব নিয়েছে খোদ শামীম ওসমানকে নির্বাচনে হারানো বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন। ফলে তার শক্তিমত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবার কোন অবকাশ নেই রাজনৈতিক বোদ্ধামহলের। দীর্ঘদিন বিএনপি দুর্বলদের দ্বারা পরিচালিত হলেও বর্তমানে গিয়াস উদ্দিন বেশ সবল হিসেবেই ফিরে আসছেন। কারন তার অতীত ইতিহাস এমনটাই বলছে। যেই নেতা এতদিন রাজনীতিতে না থাকলেও তার প্রভাব ছিলো সর্বত্র, আর সেই নেতা যখন নিজেই সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরছেন তখন তার প্রভাব কেমন হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিএনপির তৃণমূলের কর্মীরা বলছেন, এবার নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের সাথে টক্কর দেয়ার মত নেতা এসেছে দলের ভেতর। এবার লড়াইটা হবে সেয়ানে সেয়ানে। একই আসনের দুই এমপি যখন মুখোমুখী অবস্থানে থাকবে রাজনীতিতে তখনই টের পাওয়া যাবে রাজনৈতিক উত্তাপ। একদিকে ক্ষমতাসীন দলে শামীম ওসমান, অন্যদিকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা বিএনপিতে গিয়াস উদ্দিন। ফলে লড়াইটা এবার বেশ ভালোই জমবে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা