আজ বৃহস্পতিবার | ১৪ আগস্ট ২০২৫ | ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৯ সফর ১৪৪৭ | রাত ২:৪৬

তৈমূর পরিবার ও বন্ধু হারালেন

ডান্ডিবার্তা | ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার তৃনমূল বিএনপিতে সদস্য সচিবের সদ্য পদ পাওয়ার পর বিএনপি ত্যাগ করায় পারিবারিক ভাবে একা হয়ে গেলেন। বিএনপির রাজনীতির সাথে দীর্ঘ দিন জড়িত থাকার পর তিনি তৃনমূল বিএনপিতে চলে যাওয়ায় তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেন পরিবারের সদস্যরা। তৈমূরের পাশে নেই বলে তারা বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের দলত্যাগ নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন তার ছোট ভাই মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। তিনি বলেছেন, তৈমূরের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে তিনি ও তাঁর পরিবার একমত না। খোরশেদ নিজেও বিএনপি নেতা। তিন ডজন মামলার আসামী তিনি। ছিলেন যুবদলের মহানগরের সাবেক আহবায়ক ও সভাপতি। টানা চারবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর খোরশেদ এখনো বিএনপির সকল কর্মকান্ডে সক্রিয়। সম্প্রতি তৈমূরের ভাগ্নে রাশিদুর রহমান রশো মহানগর কৃষক দলের সেক্রেটারী হয়েছেন। তিনিও কয়েক ডজন মামলার আসামী। এছাড়া তার আরেক ভাগ্নে নাজমুল কবির নাহিদ সহ অনুগামী কয়েকজনেরও ঠাঁই মিলেছে কমিটিতে। ২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারী তৈমূর বহিস্কারের পর যখন পরিবারে এক অন্ধকার তখন কৃষক দলের কমিটিতে আশার আলো দেখা যায়। এ সময়ে এসে তৈমূরের দলত্যাগ পুরো পরিবারকে বিমর্ষ করে তুললেও তাঁরা সকলেই বলছেন, এটা তৈমূর আলম খন্দকারের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এ ব্যাপারে মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বিবৃতিতে বলেন, তৈমূর আলম খন্দকার আমাদের পরিবারের একমাত্র ভরসাস্থল ও নীতি নির্ধারক।তবে তার বর্তমান রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের সাথে আমরা একমত নই। মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি একটি মহাসমুদ্র। বলতে চাই আমৃত্যু আমি বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল হয়ে বিএনপিতেই থাকতে চাই। হয়তো আর কোনদিন দলের কোন পদ পদবী পাবো না। তবুও দলের সাধারণ সদস্য হিসাবে, একজন কর্মী হিসাবে কাজ করে যাব। বিএনপি যদি আমাকে বহিষ্কারও করে তবুও আমি ধানের শীষের একজন ভোটার বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী আদর্শের একজন অনুসারী ও শুভাকাঙ্খীহিসাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতি আস্থাশীল ও দলের সাথে থাকবো ইনশাআল্লাহ।আমাকে ভালবাসেন এমন নেতাকর্মীদের ও নারায়ণগঞ্জবাসীকে বিভ্রান্ত না হয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান রইলো। তৈমূর আলম খন্দকার আমাদের পরিবারের একমাত্র ভরসাস্থল ও নীতি নির্ধারক। তবে তার বর্তমান রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের সাথে আমরা একমত নই। প্রসঙ্গত, মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের চার বারের নির্বাচত কাউন্সিলর। ২০০৩ সালে শুরু পৌরসভার নির্বাচন দিয়ে। এর পর আর তাকে পেছনে ফিরতে হয়নি। পরের ২০১১, ২০১৬ ও সবশেষ ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারী নির্বাচনে তিনি সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তবে খোরশেদ এখন সারাদেশে একটি আলোচিত নামে পরিণত। করোনার ভয়াবহতা বাড়তে শুরু করলে দাফন, সৎকার থেকে শুরু করে সবকিছুতেই এগিয়ে ছিলেন খোরশেদ। তখন থেকেই তিনি রাজনীতি থেকে কিছুটা দূরে থাকেন। প্রচারণা করেন ব্যক্তি খোরশেদের। আর অল্পদিনেই বনে যান ‘করোনা হিরো’ আর ‘করোনা বীর’ সহ নানা উপাধিতে। খোরশেদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ৪৯টি। বিগত দিনে হরতাল অবরোধ চলাকালে সামনের সারিতে থাকা এ যুবদল নেতাকে এখন পর্যন্ত কারাবন্দী হতে হয়েছে ১০ বারের মত। এছাড়া জেল গেট থেকেও গ্রেপ্তার হয়েছেন অনেকবার। মহানগর যুবদলের সেক্রেটারী থেকে সভাপতির দায়িত্ব পালন কালে খোদ প্রতিপক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বিরাও তাঁর সক্রিয়তাকে স্বীকার করেছেন। তৈমূরের ভাগ্ন রাশিদুর রহমান রশো এক সময়ে ছাত্রদলের ডাকসাইটে নেতা ছিলেন। ৯৫ সালে নারায়ণগঞ্জ কলেজ শাখার যুগ্ম আহবায়ক ও পরে সভাপতি হন। ওই সময়ে নারায়ণগঞ্জ থানা ছাত্র দলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক, পরে তিনি মহানগরের যুগ্ম আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ইতোমধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা চলমান রয়েছে। কারাভোগ করেছেন ৯ বার। ২০১৪ সালের গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘ ৮ মাস কারাবন্দী ছিলেন রশু। এরপর নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানার মামলায় টানা চারবার জেলগেট থেকে গ্রেফতার এবং অনেকবার রিমান্ডে গিয়েছেন। বর্তমানে তিনি কৃষক দলের মহানগরের সাধারণ সম্পাদক। এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ বলেন, বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা এড. তৈমুর আলম খন্দকার একজন সুবিধাবাদী ও বিশ্বাসঘাতক। সে বিএনপির সাথে বেইমানি করে আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত গত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করেছিলেন। সে সময় দলী শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এখন আবার সে নতুন করে বিএনপি’র আরেক বিশ্বাসঘাত নাজমুল হুদার তৃনমুল বিএনপিতে যোগদান করছেন। আজাদ বলেন, তৈমুর আলম খন্দকার নতুন করে আবারো আওয়ামী লীগ থেকে সুবিধা নেওয়ার জন্যই তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করছেন এবং বিএনপির অনেক নেতা কর্মীদেরও এই দলে যোগদান করতে আহবান করেছে বলে আমি জানতে পেরেছি। তার মতন সুবিধাবাদী ও বিশ্বাসঘাতক বিএনপি’র মতন একটি জনপ্রিয় দলের প্রয়োজন নেই। বিএনপি ক্ষমতাকালীন সময় তিনি বিএনপি থেকে অনেক সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেছিলেন। তাকে ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল বানানো হয়েছিল। এরপর তাকে বিআরটিসি’র মতন গুরুত্বপূর্ণ জায়গার চেয়ারম্যান বানানো হয়েছিল। সেই সময় থেকে তিনি দল থেকে অনেক সুযোগ সুবিধা নিয়েও তিনি এখন দলের আন্দোলন মুখি সময়ে আওয়ামী লীগের প্রেসক্রিপশনে এখন তিনি তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করছেন। তিনি বলেন, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা শাসকদলের প্রধান শেখ হাসিনার সাথে পরামর্শ করে তৃণমূল বিএনপি গঠন করেছিলেন। বাংলাদেশের জনগণ ভালো করে জানে এই তৃণমূল-বিএনপি বর্তমান শাসক শেখ হাসিনার গদিকে চিরস্থায়ী রুপ দেওয়ার জন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁদের মনোনীত প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। এই মুহূর্তে জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকা করে যারা” তৃণমূল বিএনপিতে “যোগ দিয়ে আগামী দিনে বাংলাদেশে নীল নকশা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাঁদেরকে বাংলাদেশে রাজনীতির অঙ্গনে বিশ্বাসঘাতক হিসাবে চিহ্নিত করা হবে। তিনি আরও বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের প্রতিপূর্ণ আস্থাশীল। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আগামীর রাষ্ট্র নায়ক জননেতা তারেক রহমানের দিকনির্দেশনায় আমরা পরিচালিত। আমাদের নেতা দেশনায়ক তারেক রহমান। আমরা সকলেই তারুণ্যের অহংকার জনাব তারেক রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রতিপূর্ণ আস্থাশীল। তারেক রহমানের আহব্বানে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে “আমার ভোট আমি দিবো “এই আন্দোলনে বিএনপির নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। জনতার এক দফা শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি বাস্তবায়নে আমরা ঐক্যবদ্ধ। জেল-জুলুম নির্যাতন করে আমাদেরকে দেশনায়ক জনাব তারেক রহমানের আহব্বানে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন ও সংগ্রাম থেকে বিরত রাখা যাবে না। এছাড়া তৈমূর আলম খন্দকারকে বেঈমান মন্তব্য করেছেন দলের কেন্দ্রীয় সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু। তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন ওয়েতে জানতে পারছি তৈমূর আলম খন্দকার তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন বা দিবেন। তবে বিএনপি একটি সর্ববৃহৎ দল। যেখানে ৮৫ পার্সেন্টের উপরে বিএনপির সমর্থক বা বিএপিকে চাচ্ছে। এর মাঝে তৈমূর আলম খন্দকারের মতো একজন অথবা তার মতো একশত জন লোক কিংবা অনেকেই যদি হয় দলের জন্য কিছু আসে যায় না। তারা গিয়ে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এরকম জনবিচ্ছিন্ন মানুষ আগেও ছিল অথবা ভবিষ্যতে আরও বেশিও হয়ে যাবে। তৈমূর একজন ভোটার হিসেবে থাকতে পারতেন উল্লেখ করে দিপু বলেন, তৈমূর আলম খন্দকার সাহেব সম্পর্কে আমি যতটুকু জানি শুধু তিনি না যাদের ক্ষমতার লোভ বেশি কিংবা টাকাটা গুরুত্ব দেয় তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপ ধারণ করে। তৈমূর আলম খন্দকার একসময় বিএনপি থেকে অনেক কিছু পেয়েছে দল তাকে ডিপুটি এটর্নি জেনারেল বানিয়েছে বিআরটিসির চেয়ারম্যান বানিয়েছে এত কিছুর পরেও দলের দুঃসময়ে দলকে দিতে পারুক অথবা না পারুক দলের একজন ভোটার হিসেবে থাকতে পারতেন। কিন্তু এ ধরনের লোকগুলো দল ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, একটি কথা আছে মীরজাফর যুগে যুগে চলে আসে। আসলে তিনি মীরজাফরের মতোই একটা কাজ করছেন। শুধুমাত্র নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়েই তিনি এই কাজটা করছেন। এটার মাধ্যমে তিনি সারাজীবনের জন্য শুধু দলের কাছে জাতির কাছে বেঈমান হিসেবে গণ্য হবেন। বিএনপি একটি সর্ববৃহৎ দল। ব্যক্তিগতভাবে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে তৈমূর আলম খন্দকারের কোনো বলয় ছিল না। তিনি দলের উপর ভিত্তি করেই বলয় তৈরি করেছিলেন। যেহেতু তিনি এখন দলে নেই সে হিসেবে এখন তার কোনো বলয়ও থাকবে না। দিপু বলেন, তৈমূর আলম খন্দকারকে দল থেকে বহিষ্কার করার কারণ রয়েছে। তাকে বহিষ্কারের অন্যতম কারণ ছিল দল যেখানে বলছে এই সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না, সেখানে তিনি নিজের ইচ্ছার জন্য অথবা কারও অনুপ্রেরণা পেয়ে লোভের আশায় নির্বাচন করেছে। দলের বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করছে দল তাকে বহিষ্কার করাটাই স্বাভাবিক ছিল। এটার পরে কিভাবে আশা করেন দল তার সাথে যোগাযোগ করবেন।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা