আজ বুধবার | ১৩ আগস্ট ২০২৫ | ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৮ সফর ১৪৪৭ | সকাল ১১:৫৫

প্রার্থনা-উৎসবে দুর্গাকে বিদায়

ডান্ডিবার্তা | ২৫ অক্টোবর, ২০২৩ | ১:০৭ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার আয়োজন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে বিজয়া দশমীতে প্রতিমাকে বিসর্জন দেওয়ার আগে উৎসবে মাতেন দেবীর ভক্ত-অনুরাগীরা। এমনই এক আয়োজন ছিল নারায়ণগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৩নং ঘাটে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা উৎসবে-আনন্দে প্রতিমাকে বিসর্জন দেন এই নদীতে। দেবী দুর্গা বিদায় নিচ্ছেন। দুর্গাপূজার ম-পগুলোতে একদিকে বিসর্জনের বিষাদ, অন্যদিকে সিঁদুর খেলার আনন্দ। ফলে আনন্দ-বিষাদে ভরে আছে ভক্তদের অন্তর। নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি মন্দিরে গতকাল মঙ্গলবার বিকালে লাল-সাদা শাড়ি পড়ে শত শত গৃহিণী বরণডালা ও সিঁদুরের কৌটা নিয়ে হাজির হয়। তাঁরা দেবীর চরণ স্পর্শ করে সঙ্গী বা উপস্থিত অন্য ভক্তদের কপালে-কপোলে সিঁদুর মাখিয়ে দিচ্ছেন। এ বছর জেলার ২২৪টি মন্ডপে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সদরে ৮০টি, বন্দরে ২৯টি, রূপগঞ্জে ৪৬টি, সোনারগাঁয়ে ৩৫টি ও আড়াইহাজারে ৩৪টি। নারায়ণগঞ্জের পূজা সব সময়ই জাঁকজমকপূর্ণ হয়। তাই নারায়ণগঞ্জসহ রাজধানী ঢাকা, কুমিল্লা, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জের সনাতন ধর্মালম্বীরা এ জেলায় পূজা দেখতে আসেন। নারায়ণগঞ্জ সদরের ৮০টি মন্ডপের প্রতীমা বিসর্জন দিচ্ছে লক্ষ্যা পাড়ে। বিসর্জন দেখতে সেখানে বিকাল থেকেই ভীড় করেছে হাজার হাজার ভক্ত। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক ও শহীদ সরোয়ারদী সড়কের দু’পাশে বসে আছে অনেকে। কুমিল্লা থেকে নারায়ণগঞ্জের পূজা দেখতে এসেছেন শান্তা ঘোষ। তিনি জানান, বিসর্জনের পর এই সিঁদুরখেলা মূলত বিবাহিত নারীদের একটি মাঙ্গলিক আচার। স্বামী-সংসারের মঙ্গল কামনা করে সবাই বরণডালা সাজিয়ে বা সিঁদুরের কৌটা সঙ্গে নিয়ে আসেন। এই সিঁদুর দেবীর চরণ স্পর্শ করিয়ে কৌটায় করে সংরক্ষণ করেন। এই সিঁদুরই তাঁরা সারা বছর ব্যবহার করেন। যাঁরা বরণডালা সাজিয়ে আনেন, তাতে থাকে ধান, দূর্বা, বেলপাতা, কাঁচা হলুদ, কড়ি, যেকোনো রকম অন্তত একটি ফুল, নাড়ু আর মিষ্টি। আর সিঁদুরের কৌটা তো থাকেই। এই বরণডালা নিয়েই দেবী প্রণাম করে ঘরে ফেরেন তাঁরা। নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি ম-পে বিকালে সিঁদুর খোলার আয়োজন করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে প্রতিমা মন্দির গুলো থেকে শোভাযাত্রা করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শীতলক্ষ্যার পাড়ে। নদীর ৩নং সার ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। বন্দরের বিভিন্ন মন্ডপের প্রতীমাগুলিও বন্দর খেয়াটে এসে বিসর্জন দেয়া হয়। নারায়ণগঞ্জের রাম সীতা মন্দিরের প্রধান পুরোহিত রতন চক্রবর্তী জানান, এবার দেবী এসেছে ঘোটকে, যাচ্ছেনও ঘোটকে। এর তাৎপর্য হলো বিশ্বে উত্তেজনা বাড়বে। তবে দেবীর চরণে অঞ্জলি দিয়ে তাঁরা শান্তি আর কল্যাণই কামনা করেছেন। প্রতীমা বির্সজন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান। শহরের বিআইডব্লিউটিএ’র ৩নং ঘাটে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আয়োজনে ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রতিমা বিসর্জন দেয়ার আয়োজন করা হয়। এই ঘাটে শহরের বেশিরভাগ মন্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। সেখানে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন। বিকেল তিনটায় থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে এই ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন। বিজয়া দশমীতে অর্থাৎ শেষ দিনের আনুষ্ঠানিকতার শুরু থেকেই নগরীর মন্ডপে মন্ডপে ভক্তদের ভিড় ছিলো। দিনব্যাপী চলে নানা পূজা- অর্চনা। সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় দশমীবিহিত পূজা ও দর্পণ বিসর্জন। শহরের রামকৃষ্ণ মিশন, আমলা পাড়া পূজা মন্ডপ, উকিল পাড়া হোসিয়ারী পূজা মন্ডপ, সাহা পাড়া পূজা মন্ডপ, নতুন পালপাড়া পূজা মন্ডপ, নতুন নয়া মাটি পূজা মন্ডপসহ বেশে কিছু মন্ডপে চলে ভক্তদের আরতি আর রঙের হোলি খেলা। পরম ভক্তি নিয়ে নিজ নিজ মনের বাসনা জানিয়ে নারীরা দেবী দুর্গার সিঁথিতে সিঁদুর পরান এবং মিষ্টি মুখ করান। পরে মন্দিরে আগত নারীরা একে অপরের সিঁথিতে সিঁদুর বিনিময় করেন। এরপর বিসর্জনের জন্য সধবা নারীরা দেবীকে সাজান ফুল, সিঁদুর ও নানা অলঙ্কার দিয়ে। সন্ধ্যার পর থেকেই নগরীর বিভিন্ন পূজা ম-প থেকে ট্রাক ও ভ্যানগাড়ি করে নগরীতে দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা শুরু হয়। এ শোভাযাত্রা গুলোয় যোগ দেন মন্দিরগুলোর পুণ্যার্থীরা। সেখানে ভক্তদের নাচ-গানে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ। তারা রং ছিটিয়ে ও ঢাকঢোলসহ অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের পাশাপাশি উলুধ্বনিতে উৎসবমুখর করে তোলেন পরিবেশ। শোভাযাত্রাগুলো নগরীর বিআইডব্লিউটিএ’র ৩ নং ঘাটে গিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হয়। এদিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জনের ঘাটসমূহে ছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিসর্জনের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি পূজা কমিটির নিজস্ব ভলান্টিয়াররাও দায়িত্ব পালন করেছেন। নিরাপত্তার কাজে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি, সাদা পোশাকধারী পুলিশ, নৌ-পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিস, বিআইডব্লিউটিএ’র ডুবুরি টিম, সিভিল সার্জনের মেডিকেল টিম সদস্যরাও নিয়োজিত ছিলেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখণ সরকার শিপন বলেন, নারায়ণগঞ্জে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী এই দুর্গোৎসব দেবীর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে। যা বুঝিয়ে দিয়েছে ধর্ম যার যার উৎসব সবার। এবারে পুজোয় আনন্দের কোন কমতি ছিলো না। তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরে এবার ২২৪টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে । কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। এতেই বোঝা যায় নারায়ণগঞ্জ একটি সাম্প্রদায়ীক সম্প্রীতির জেলা। সকল উৎসব আমরা একসাথে উৎযাপন করে থাকি। শারদীয় দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হওয়ায় নারায়ণগঞ্জবাসীকে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। শিখন সরকার, ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান, সদর-বন্দর আসনের সাংসদ একেএম সেলিম ওসমানসহ সকল জনপ্রতিনিধির প্রতি সার্বিক সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি তাদের এই অবদান অব্যহত রাখার দাবী করেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক শংকর কুমার দে’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শিখণ সরকার শিপনের সঞ্চালনায় শারদীয় দূর্গোৎসবের বিজয়া দশমী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা, সহ-সভাপতি রবিউল হোসেন, নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল, নারায়ণগঞ্জ নৌ পুলিশের এসপি মিনা মাহমুদা, নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) চাউলাউ মারমা, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিষ্ণুপদ সাহা, সহ- সভাপতি সাংবাদিক উত্তম কুমার সাহা, সাধারণ সম্পাদক সুশীল দাপ, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রদীপ কুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত মন্ডল, বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্টের সভাপতি লিটন সাহা, চাষাঢ়া রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের অধ্যক্ষ স্বামী একনাথানন্দ, দেওভোগ নাগমহাশয় মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক তারাপদ আচার্য্য, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষ্ণ আচার্য, বন্দর থানা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল বিশ্বাস, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটির সভাপতি শিশির ঘোষ অমরসহ প্রশাসন ও পূজা পরিষদের নেতৃবৃন্দ।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা