আজ রবিবার | ১০ আগস্ট ২০২৫ | ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৫ সফর ১৪৪৭ | সকাল ৬:৩০
শিরোনাম:
নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে আ’লীগ    ♦     জলাবদ্ধতা নিরসনে জনগণের পাশে নেই বিএনপি নেতারা    ♦     কলকাতায় আ’লীগের ‌‘পার্টি অফিস’    ♦     অন্তর্বর্তি সরকারের যে ভাবে যাত্রা শুরু    ♦     রূপগঞ্জে অবৈধ ভরাটের ফলে মাসের পর মাস পানিবন্দি অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ    ♦     খেলাফত মজলিসের নির্বাচনী প্রস্তুতি সমাবেশ    ♦     ইউনূস সরকারের চ্যালেঞ্জের এক বছর    ♦     ভূইগড়ে সন্ত্রাস চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ মিছিল    ♦     ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে শয্যার অভাবে মেঝেতে রোগীর চিকিৎসা    ♦     আগামী নির্বাচনে বিএনপির সফলতা যেনো অন্যেরা ছিনিয়ে নিতে না পারে    ♦    

জনমনে স্বস্তি ফিরলেও রয়ে গেছে অজানা আতঙ্ক

ডান্ডিবার্তা | ২৭ জুলাই, ২০২৪ | ১২:০২ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
ঘুমের মধ্যে আচমকা কেঁপে উঠি। ঘরের মধ্যে বন্দি ছিলাম। কী ভয়াবহ সেই দৃশ্য বলে বোঝাতে পারবো না। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে সারাদিন-রাত উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠায় পার করেছি। চারিদিকে শুধু আহাজারি। সবার মধ্যেই অজানা আতঙ্ক কখন কী হয়!’ কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলা আন্দোলনের মধ্যে রামপুরায় চলা সহিংস দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করছিলেন গৃহিণী শিমুল আক্তার। দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে শিমুল আক্তার থাকেন রামপুরায় হাইস্কুল গলিতে। রাজধানী ঢাকায় বাস করছেন ২০০৩ সাল থেকে। এর মধ্যে ২০০৮ সাল থেকে আছেন রামপুরায়। অর্থাৎ ১৬ বছর ধরে রামপুরার বাসিন্দা তিনি। কোটা আন্দোলন ঘিরে চলা সহিংসতার মতো দৃশ্য আগে কখনো দেখেননি জানিয়ে শিমুল বলেন, যেদিন রামপুরায় আন্দোলন শুরু হয়, সেদিন বাজারে গিয়েছিলাম। চোখের সামনেই দেখেছি ভয়াবহ দৃশ্য। একদিকে গুলি চলছে, অন্যদিকে রড-লাঠি নিয়ে একদল রাস্তা অবরোধ করছে। কোনো রকমনে জীবন বাঁচিয়ে ঘরে ফিরতে পেরেছিলাম সেদিন। সেই দৃশ্য স্বপ্নে দেখে দুদিন ঘুমের মধ্যে আচমকা কেঁপে উঠি। ভয়ে নিজে ঘরের মধ্যে বন্দি থেকেছি, ছেলে-মেয়েদেরকেও ঘর থেকে বের হতে দেইনি আন্দোলনের দিনগুলোতে। এখন পরিস্থিতি শান্ত, কিন্তু ওইদিনগুলোর কথা মনে হলে এখনো ভয়ে কেঁপে উঠি, বলেন তিনি। রামপুরা হাইস্কুল গলির একটি বাসায় ভাড়া থাকেন আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের বাসা মেইন রোড থেকে বেশ কাছে। বাসার ছাদ থেকে রাস্তার দৃশ্য দেখা যায়। কিছুদিন আগে রামপুরার রাস্তার দৃশ্য ছিল খুবই ভয়াবহ। এমন দৃশ্য দেখতে হবে কল্পনাও করিনি। রামপুরা অঞ্চল যেন যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। ভয়াবহ ওইদিনগুলো পার হয়ে এসেছি। এখন পরিস্থিতি শান্ত। কিন্তু অনেকে আপনজন হারিয়েছেন, নষ্ট হয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এতে কার উপকার হয়েছে? তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় সম্পদে যেভাবে হামলা করা হয়েছে তা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য না। যেসব সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে, তা তো জনগণের সম্পদ। আমার মতো সাধারণ মানুষের করের টাকায় এসব সম্পদ করা হয়েছে। যারা এই সম্পদ ধ্বংস করেছেন, তাদেরও অবদান রয়েছে এই সম্পদের পেছনে। সুতরাং এই সম্পদ নষ্ট করার মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে দেশের সব মানুষের ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, একদিকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট হয়েছে, অন্যদিকে অনেকগুলো প্রাণ চলে গেছে। যে আপনজন হারিয়েছে, সেই বুঝে আপনজন হারানোর ব্যথা। এই সহিংসতার ফলে কারও উপকার হয়নি বরং সবার ক্ষতি হয়েছে। তাই সবার উচিত সহিংসতা পরিহার করে, শান্তির পথে চলা। আমার মতো সাধারণ মানুষ কোনো সহিংসতা চায় না। আমরা পরিবার নিয়ে শান্তিতে বসবাস করতে চায়। অকালে কোনো মায়ের বুক খালি হোক আমরা সেটা চাই না। হাজিপাড়ার বাসিন্দা হিমেল বলেন, আন্দোলনের সময় ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া, গুলি, আগুন, বেধড়ক পিটুনি কী হয়নি রামপুরার রাস্তায়। ৩টা দিন ভয়ঙ্কর আতঙ্কের মধ্য দিয়ে পার করতে হয়েছে এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের। গলির রাস্তাগুলোতেও ভর করেছিল আতঙ্ক। কারণ পুলিশ, বিজিবির ধাওয়া খেয়ে অনেক সময় আন্দোলকারীরা গলির রাস্তায় অবস্থান নেয়। তাদের হাতে রড, দেশি অস্ত্র, লাঠি, মোটরসাইকেলের অ্যাক্সেল ছিল। এসব দৃশ্য দেখলে সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক দানাবাঁধবে এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, দাঙ্গার দৃশ্য সিনেমাতে দেখেছি। কোটা আন্দোলন ঘিরে রামপুরার যে দৃশ্য হয়েছিল, তা যেন সিনেমাকেও হার মানায়। ভয়ে বাজার করতেও বের হয়নি। কোনো রকমে ভর্তা-ডাল ভাত খেয়ে দু’দিন পার করেছি। কারফিউ জারি করার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এসেছে। মানুষের মনে স্বস্তি ফিরছে। কিন্তু ভয়ঙ্কর দৃশ্যগুলো মনে যে ক্ষত সৃষ্টি করেছে তা তো মুছে ফেলা সম্ভব হবে না। তারপরও সৃষ্টিকর্তার কাছে চাওয়া এমন দৃশ্য যাতে আর দেখতে না হয়। রামপুরা টিভি রোডের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, আন্দোলনের মধ্যে টিভি সেন্টারে আগুন দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। রামপুরার মেইন রোড ছিল পুরোপুরি রণক্ষেত্র। যেদিন টিভি সেন্টারে আগুন দেওয়া হয়, তারপরের দিন রাস্তায় নেমে শুনি একজন গুলি খেয়েছে। ভয়ে আমার আশপাশের বাসিন্দারা রাস্তায় বের হয়নি আন্দোলনের সময়। সবার মধ্যেই অজানা আতঙ্ক ছিল। কখন কী হয়ে যায়, সবাই সেই টেনশনে ছিলেন। এখন রামপুরা পুরোপুরি শান্ত। দেখে বোঝার উপায় নেই, কিছুদিন আগে এই অঞ্চল ছিল রণক্ষেত্র। তিনি বলেন, পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে, কিন্তু মনের আতঙ্ক পুরোপুরি দূর হয়নি। এখনো রাস্তায় নামতে গা ছমছম করে। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ ডাক দিলে ভয়ে আঁতকে উঠি। জানি ধীরে ধীরে সবকিছুই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু যাদের জীবন গেছে, তাদের জীবন আর ফিরে আসবে না। আপনজন হারানোর ক্ষত সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলা আন্দোলনের মধ্যে ১৭ থেকে ২১ জুলাই সহিংস হয়ে উঠে রাজধানী ঢাকা। এ সময়ের মধ্যে একদল দুষ্কৃতকারী সরকারি স্থাপনায় নজিরবিহীন তাÐব চালিয়েছে। যাত্রাবাড়ীতে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজায় আগুন দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হওয়া এই তাÐব। একে একে পুড়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বনানী ও মহাখালী টোলপ্লাজা, বিটিভি ভবন, সেতু ভবন, মেট্রোরেলের দুটি স্টেশন। রক্ষা পায়নি ফায়ার সার্ভিসও। মিরপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে হামলা চালানো হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। পিটিয়ে আহত করা হয়েছে ফায়ার ফাইটারদের। দুষ্কৃতকারীদের তাÐবের শিকার হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়, মিরপুরের ইনডোর স্টেডিয়াম। বিআরটিএ ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মতো সরকারি স্থাপনায়ও। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি ও ট্রাফিক বক্স। হামলা চালানো হয়েছে থানাতেও। স্বাধীন বাংলাদেশে এর আগে কখনো সরকারি স্থাপনায় এভাবে তাÐব চালানো হয়নি। শুধু রাজধানীতে নয় দুষ্কৃতকারীরা তাÐব চালিয়েছে ঢাকার বাইরেও। নরসিংদী জেলা কারাগার এবং পৌরসভা ও ইউনিয়ন কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে। নরসিংদীতে কারাগার ভেঙে ৯ জন জঙ্গিসহ ৮২৬ বন্দি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নারায়ণগঞ্জে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে চালানো হয়েছে তাÐব। দৃষ্কৃতকারীদের তাÐবে রাজধানীসহ সরাদেশে জনমনে সৃষ্টি হয় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। পরিস্থিতি সামাল দিতে এক পর্যায়ে কারফিউ জারি করে সরকার। সেই সঙ্গে নামানো হয় সেনাবাহিনী। এতে অনেকটাই ঘরবন্দি হয়ে পড়ে মানুষ। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে খুব একটা বের হননি। তবে সেনাবাহিনী রাস্তায় নামার পর অল্প সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। ফলে শিথিল করা হয়েছে কারফিউ। আবারও খুলেছে সরকারি-বেসরকারি অফিস। মানুষের মনেও স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা