আজ শনিবার | ৯ আগস্ট ২০২৫ | ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৪ সফর ১৪৪৭ | বিকাল ৫:৩১
শিরোনাম:
নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে আ’লীগ    ♦     জলাবদ্ধতা নিরসনে জনগণের পাশে নেই বিএনপি নেতারা    ♦     কলকাতায় আ’লীগের ‌‘পার্টি অফিস’    ♦     অন্তর্বর্তি সরকারের যে ভাবে যাত্রা শুরু    ♦     রূপগঞ্জে অবৈধ ভরাটের ফলে মাসের পর মাস পানিবন্দি অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ    ♦     খেলাফত মজলিসের নির্বাচনী প্রস্তুতি সমাবেশ    ♦     ইউনূস সরকারের চ্যালেঞ্জের এক বছর    ♦     ভূইগড়ে সন্ত্রাস চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ মিছিল    ♦     ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে শয্যার অভাবে মেঝেতে রোগীর চিকিৎসা    ♦     আগামী নির্বাচনে বিএনপির সফলতা যেনো অন্যেরা ছিনিয়ে নিতে না পারে    ♦    

গাজী টায়ারে আগুন নিভেছে ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি

ডান্ডিবার্তা | ২৮ আগস্ট, ২০২৪ | ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
দীর্ঘ প্রায় ৩৩ ঘণ্টা পর গতকাল মঙ্গলবার ভোর ৫ টার দিকে নেভানো হয়েছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গাজী টায়ারস কারখানার আগুন। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ছয়তলা ভবনটি ধসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। গতকাল মঙ্গলবার আগুন নেভানো হলেও ভবনটি নাজুক অবস্থায় থাকায় এখন পর্যন্ত ভেতরে ঢুকে উদ্ধার অভিযান শুরু করা যায়নি বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক আনোয়ারুল হক। এদিকে অগ্নিকান্ডের কারণ নির্নয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এডিএমকে প্রধান করে ৮ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি রিপোট পেশ করবে। অপরদিকে নিখোঁজ স্বজনদের সন্ধানে তাদের পরিবারের সদস্যরা গাজী টায়ারের আশে পাশের এলাকায় ভীড় জমিয়ে স্বজনদের খোঁজছে। এ পর্যন্ত ১৮৭জন নিখোঁজ থাকার দাবি করেছে তাদের স্বজনরা। গাজী টায়ারের ভবনের ভেতরের উত্তাপ থেকে আবারও আগুন ধরে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক আনোয়ারুল হক বলেন, দীর্ঘ চেষ্টার পর আপাতত অগ্নিশিখা নেভানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এখনও ভবনের ভেতরে উত্তাপ আছে। অল্প অল্প করে আগুন জ্বলছে। ভবনটা বেঁকে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ভেতরে ঢুকে কাজ করা যাচ্ছে না। টার্ন টেবিল ল্যাডারের (টিটিএল) সাহায্যে ভবনের ছাদে এক দফায় তল্লাশি চালানো হয়েছে কিন্তু ছাদের কোনো অংশে হতাহত কাউকে পাওয়া যায়নি। ভবনের ভেতরে ঢোকা সম্ভব হয়নি। আগুনটা যেহেতু নেভাতে পেরেছি, সব বিবেচনা করে ভেতরে উদ্ধার অভিযান শুরু করব। গাজী টায়ারে আগুনের ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমানের নেতৃত্বে ৮ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে গাজী টায়ার কারখানায় জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এই তদন্ত কমিটিতে বিদ্যুৎ কল কারখানা ফায়ার সার্ভিসসহ সব বিভাগের লোকজনই রয়েছে। এ সময় তিনি গাজী টায়ার কারখানা পরিদর্শন করেন। জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক বলেন, ৮ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের একটি তালিকা তৈরি করতে। ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গাজী টায়ারের যে ভবনটি সে ভবনের ভেতরে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ থাকার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও তাপ ও ধোঁয়া রয়ে গেছে। এ কারণে উদ্ধার কাজ চালানো যাচ্ছে না। খুব দ্রæত উদ্ধার কাজ শুরু করা হবে। গত সোমবার রাত ৭টায় টায়ার কারখানার ছয়তলা একটি ভবন থেকে আগুনের কুÐলী বের হতে দেখা যায়। আগুনের ভয়াবহতা ও স্বজনের খোঁজ না পাওয়া আহাজারির মধ্যেই অনেককে দেখা যায় কারখানার ভেতর থেকে সরঞ্জাম লুটপাট করছে। রাতে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও কারখানার পোড়া ধ্বংসস্তূপের ভেতরে খোঁজ নেওয়া সম্ভব হয়নি। কেউ কেউ মেশিনপত্র নিয়ে বের হচ্ছেন, কেউ আবার দামি আসবাবপত্র মাথায় নিয়ে ছুটছেন। অনেক নারী-পুরুষকে যন্ত্রাংশ, স্টিল, প্লাস্টিক ও তামা লুট করতে দেখা যায়। কাউকে কাউকে বাথরুমের কমোড নিতে দেখা গেল। কারখানার সামনের অংশে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে লুটপাট হচ্ছিল না। কিন্তু ৯৬ বিঘার বিশাল কারখানার অন্যান্য অংশ অরক্ষিত থাকায় দেদার লুট চলছে। লুটপাটে অংশ নেওয়া চারজনের সঙ্গে কথা হয়। নাম-পরিচয় জানতে চাইলে ক্ষিপ্ত হন। এসব সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে একজন তেড়ে আসেন। আরেকজন বলেন, ‘গাজী (কারখানার মালিক গোলাম দস্তগীর গাজী) অনেকের জমি-জায়গা দখল করছে।’ প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, যারা নিখোঁজ রয়েছেন, তাদের অধিকাংশই লুটপাট করতে গিয়েছিলেন। কেউ কেউ উৎসুক হিসেবে ছবি ও ভিডিও করতে গিয়েছিলেন। গাজী টায়ার কোম্পানির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) সাইফুল ইসলাম বলেন, গত রোববার সকাল ১০টার দিকে কারখানার দু’দিক থেকে দুই গ্রæপে ভাগ হয়ে কয়েকশ লোক ভেতরে ঢুকে পড়ে। এর পর তারা কোম্পানির সিকিউরিটি গার্ডসহ সব কর্মীকে অবরুদ্ধ করে। রাত ৮টার দিকে প্রথমে পলি সেকশনে আগুন দেয়। ১০টার দিকে ছয়তলার ভবনে আগুন দেওয়া হয়। ওই ভবনটিতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য ছিল। সেটি মিক্সার ভবন নামে পরিচিত। সাইফুল ইসলাম জানান, গত ৫ আগস্টের পর থেকে কারখানাটি বন্ধ ছিল। ওই দিন কারখানার একটি বড় অংশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এর পর নিরাপত্তার জন্য শুধু কিছু কর্মী থাকত। গত রোববার দুই গ্রæপে যারা কারখানায় ঢুকেছিল, লুটপাট নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে মারামারি হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে কোপাকোপি শুরু হয়। দুই গ্রæপ যখন মারামারি করছিল, তখন আমাদের কর্মীরা কারখানা থেকে বের হয়ে যায়। ব্যবস্থাপক জানান, কারখানাটিতে ২ হাজার ৩শ’ শ্রমিক কাজ করতেন। তাঁর দাবি, অন্তত আট হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এটি আরও বাড়তে পারে। ‘নিখোঁজ’ ব্যক্তিদের মধ্যে ৩০ জনের স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের মধ্যে ২৯ জন বাইরে থেকে এসে ওই কারখানায় ঢোকেন। একজন ওই কারখানার কর্মী। আগুন লাগার খবর শুনে বাসা থেকে এসে তিনি নিজ কর্মস্থলে ঢুকেছিলেন। নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা জানান, গত রোববার থেকে তাদের স্বজন নিখোঁজ। তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ। গত সোমাবার রাত পর্যন্ত ১৮৭ জন নিখোঁজ থাকার তথ্য জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। গাজী টায়ার কারখানায় উদ্ধারকারী হিসেবে অনেক ছাত্রকে দেখা যায়। তাদের একজন সাব্বির হোসেন বলেন, গোলাম দস্তগীর গাজী আটক হওয়ার খবর শুনে অনেকে কারখানার ভেতর লুটপাট করতে ঢোকে। কেউ কেউ তাঁর ওপর আগে থেকেই ক্ষিপ্ত ছিল। এলাকার অনেক মানুষের জমি কম দামে কিনে কারখানা বর্ধিত করেছেন। গত রোববার রাতে যারা কারখানায় গিয়েছিল, তাদের অনেককেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রেজাউল করিমের খোঁজে আহাজারি করে পলি আক্তার বলেন, ‘বাজার-সদাই নিয়ে গত রোববার রাইতে আমার স্বামী বাসায় আইছিল। পরে অনেকের সঙ্গে গাজীর কারখানায় যায় সে। রাত থাইক্যা খুঁজতাছি। আমার বাচ্চারা কি এতিম হয়ে যাইব? তার হাড্ডিগুলা কি পামু?’ নাতি নিরবকে (১৭) খুঁজতে এসেছিলেন সুরাইয়া। নিরব যাত্রামুড়া এলাকার নবীন কটন মিলে কাজ করেন। যাত্রামুড়া গাজী টায়ার কারখানা থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে। সুরাইয়া জানান, মিল্লাত নামে এক বন্ধু তাঁকে ডেকে এনেছিলেন। এখন মিল্লাতও নিখোঁজ। কারখানার সামনেই দুই বছরের ছেলে আদনানকে নিয়ে বিলাপ করছিলেন গৃহবধূ মোসা. রুবি। তিনি জানান, তাঁর স্বামী মো. সজীবের সঙ্গে গত রোববার রাত ৯টায় শেষবার কথা হয়েছে। তখন তিনি ভেতরেই ছিলেন। কারখানায় লুটপাট হচ্ছে শুনে তিনি এসেছিলেন। পরে আর তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি উপজেলার মুড়াপাড়া গঙ্গানগর এলাকার শহীদ মিয়ার ছেলে। সজীব রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। একই জায়গায় বিলাপ করছিলেন রূপসীর মইকুলি এলাকার সজীব ভূঁইয়ার স্ত্রী কন্না আক্তার। তিনি জানান, তাঁর স্বামী জামদানি ব্যবসায়ী। তাদের কারখানার শ্রমিক সাদ্দাম কারখানা লুটপাটের সময় আসেন। তাঁর খোঁজে রাত ১০টায় কারখানায় আসেন সজীব। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি মাকে ফোন করে তাঁকে বাঁচানোর আকুতি জানান। এর পর আর সজীবের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পুরো কারখানা ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে পোড়া ধ্বংসস্তূপ। সেনাবাহিনীর সদস্যরা ভেতরে রয়েছেন। শিল্প পুলিশের সদস্যদের সেখানে দেখা গেল। ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত শিল্প পুলিশের পরিদর্শক রাজ্জাকুল হায়দার সমকালকে বলেন, ৫ আগস্ট প্রথম দফায় কারখানা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সর্বশেষ রোববার যেখানে আগুন লেগেছে, সেখানে কেমিক্যাল ছিল। স্থানীয় ফল ব্যবসায়ী মো. জুয়েল রূপসী এলাকার বাসিন্দা। রোববার রাতে নূর নামে এক যুবকের সঙ্গে তিনি কারখানায় ঢুকেছিলেন। জুয়েল বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে আমরা ভিডিও করার জন্য কারখানার ভেতরে ঢুকেছিলাম। নূর আমার দূরসম্পর্কের আত্মীয়। কারখানায় ঢোকার পরপরই তিনি তিনতলায় উঠে যান। আমি দোতলায় ছিলাম। মিনিট দশেক সেখানে থাকার পর পরিস্থিতি বুঝে বেরিয়ে আসি। আরেকটু দেরি হলে প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারতাম না। এর পর নূরকে কল করে তাঁর ফোন বন্ধ পাই। আশপাশের সবাই লুটপাটে ব্যস্ত ছিল। যে ভবনটিতে আগুন লেগেছে, সেটি ছয়তলা। কয়েকজনকে রশি দিয়ে নামতে দেখেছি। এ ঘটনা সম্পর্কে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, ‘গাজী সাহেব অপরাধ করেছেন। এ জন্য তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। আইন অনুযায়ী তাঁর বিচার হবে। কিন্তু তাঁর কারখানায় হামলা করা, আগুন লাগিয়ে দেওয়া সমর্থন করি না। কারণ এ কারখানা সবার। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে গাজী সাহেব আমার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দিয়েছেন। সেগুলো আমি আইনিভাবে মোকাবিলা করেছি। রাজনীতির সঙ্গে শিল্প প্রতিষ্ঠানের কোনো সম্পর্ক নেই।’ মোস্তাফিজুর রহমান দীপু বলেন, যারা এই কারখানায় আগুন দিয়েছে, তারা সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসীদের ঠেকাতে তারাবো পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ ওয়ার্ড বিএনপির নেতারা ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন। রূপগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) জুবায়ের হোসেন জানান, নিখোঁজদের কেউ এখনও থানায় রিপোর্ট বা জিডি করেনি। শিল্প পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করছে। গাজী টায়ার কারখানার ভেতর কোনো শ্রমিক ছিলেন না বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, রূপগঞ্জে গাজী গ্রæপের পাঁচটি কারখানায় ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করতেন। এখন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কীভাবে দেওয়া হবে, তাদের কর্মসংস্থান কী হবে– তা নিয়ে সবাই শঙ্কায় রয়েছেন।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা