
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে একসময় যারা প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত ছিলেন তাদের গর্জনে তটস্থ থাকতেন রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ ব্যবসায়ীরা। আজ সময়ের ব্যবধানে তাদের নিষ্ঠুর পরিণতি বহন করতে হচ্ছে। তারা বিড়ািেলর মত পালিয়ে গেছে। এমনই মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জের নাগরীক সমাজ। একসময় প্রশাসন থেকে শুরু করে সকলেই যাদের কথায় উঠ-বস করতো বর্তমানে তারা শীর্ষ অপরাধী হিসেবে পরিণত হয়েছেন। সেই সাথে যাদেরকে সবাই ভয় পেতো বর্তমানে তাদের সবকিছুই জনসাধারণ লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের বাড়ি-ঘর থেকে শুরু করে কোনো কিছুই রেহাই পাচ্ছে না। জানা যায়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সরকারের পতন ও দেশত্যাগ করেন। আর এই পতন ও দেশত্যাগের পর থেকেই সারাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির মোড় ঘুরে যায়। সারাদেশেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দেখা মিলেনি। সেই সাথে যারা সংসদ সদস্য ছিলেন এবং প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন তারাও আড়াল হয়ে যান। কোথাও তাদের দেখা মিলেনি। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। ক্ষমতায় থাকাকালিন সময়ে যাদের অনুসারীর অভাব ছিলো না। যে কোনো সভা সমাবেশে তারা নজর কাড়তেন। কিন্তু ক্ষমতা ছাড়ার সাথে সাথেই গোলাম দস্তগীর গাজী ও শামীম ওসমানের সকল অনুসারীরা উধাও হয়ে গেছেন। তাদের বাড়ি-ঘর কল কারখানা সাধারণ মানুষজন লুটপাট করে নিয়ে অথচ কেউ বাধা দেয়ার মতো কেউ নেই। স্থানীয়রা বলছেন, রূপগঞ্জ এলাকায় গোলাম দস্তগীর গাজীর একছত্র আধিপত্য ছিলো। তিনি যা বলতেন তাই হতো রূপগঞ্জে। তার কথার বাইরে যাওয়ার মতো কারও সাধ্য ছিলো না। সর্বমহলেই তার প্রবল প্রভাব ছিলো। তিনি যেখানেই যেতেন সেখানেই নেতাকর্মীদের দ্বারা বেষ্টিত থাকতেন। রূপগঞ্জের প্রতিটি স্তরেই তার নিজস্ব বলয়ের লোক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো। কিন্তু ক্ষমতা ছাড়ার সাথে সাথেই তার সবকিছু উল্টে যায়। তার সকল অনুসারীরা গাঁ ঢাকা দেন। সেই সাথে গত ৫ আগস্টের পর থেকে রূপগঞ্জের খাদুন এলাকার গোলাম দস্তগীর গাজীর মালিকানাধীন গাজী টায়ার্স কারখানায় লোকজন লুটপাট করা শুরু করেন। এরই মধ্যে রূপগঞ্জ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী গত ২৫ আগস্ট ভোররাতে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে গ্রেফতার হন। গোলাম দস্তগীরের গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়লে গত ২৬ আগস্ট সোমবার দুপুরে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন কারখানার ভেতরে ঢুকে লুটপাট শুরু করেন। রাত নয়টার সময় বিদ্যুৎহীন অন্ধকার ছয়তলা ভবনটিতে শত শত লোক লুটপাট চালাতে থাকেন। লুটপাটের এক পর্যায়ে কে বা কারা ভবনের নিচতলায় সিঁড়ির মুখে আগুন দিয়ে দেন। সেই সাথে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা টানা ৩২ ঘণ্টা ধরে চেষ্টা চালিয়ে এই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আর এই সময়ে কারখানার ভিতরে থাকা সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কারখানাটিতে অবশিষ্ট আর কিছুই নেই। এদিকে গত ২৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ আদালতে উঠানোর সময়ে বিক্ষুদ্ধ জনতা রূপগঞ্জ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর উপড় ডিম নিক্ষেপ করেছে বিক্ষুদ্ধ জনতা। এদিন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় গোলাম দস্তগীর গাজীর বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমা- চেয়ে আদালতে তোলা হলে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মোহাম্মদ মোহসেন শুনানী শেষে ৬ দিনের রিমা- মঞ্জুর করেন। অথচ ক্ষমতায় থাকাকালিন সময়ে এই আদালতের কাছেই অবস্থিত সার্কিট হাউজে গোলাম দস্তগীর গাজীকে স্যালুট দেয়া হতো। বর্তমানে সেই সার্কিট হাউজের কাছেই তাকে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে উঠানো হয়। অন্যদিকে ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানেও ব্যাপক প্রভাব ছিলো। তিনি ডাক দেয়ার সাথে সাথেই হাজার হাজার নেতাকর্মী নেমে আসতো। নারায়ণগঞ্জে তিনি যা চাইতেন তাই যেন হতো। তিনি একটা হুংকার দিলে সবকিছু কেঁপে উঠতো। বর্তমানে সেই শামীম ওসমান সহ তার অনুসারীদের কারও কোথাও ঠাঁই নেই। ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের যে বাড়িটি অত্যন্ত জাকজমকপূর্ণ ছিলো একদিনের ব্যবধানে সেই বাড়িটি একটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। একমাস আগেও যেখানে অনাড়ম্বরপূর্ণ ছিলো বর্তমানে সেখানে কিছুই নেই। ভাংচুর আর লুটপাটে বাড়িটিতে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। আলিশান জাকজমকপূর্ণ বাড়িটি যেন একটা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। সেই সাথে বাড়িতে যে সকল আসবাবপত্র ছিলো কোনো কিছুই বাদ রাখেনি। বাথরুমের হাইকমোড থেকে শুরু করে বিদ্যুতের তারগুলো পর্যন্ত নিয়ে গেছে। বর্তমানে ইট ছাড়া বাড়িতে আর কিছুই নেই। সেই সাথে গত ৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ শহরে সারাদিন যে আনন্দ উল্লাস আর বাধভাঙ্গা উচ্ছ¡াস হয়েছে সেখানে অনেকেই শামীম ওসমানকে ‘বোরকা শামীম পালিয়েছে’ ¯েøাগান দিয়ে পুরো চাষাঢ়া চত্ত¡র মাতিয়ে রাখে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকেও এ বিষয়টি নিয়ে রীতিমত ঝড় উঠেছিলো। সচেতন নাগরিকবাসীর মতে, একসময়ের প্রভাবশালী নেতাদের বর্তমান অবস্থা থেকে অনেক কিছুই শিক্ষা নেয়ার আছে। কোনো কিছুই স্থায়ী নয়। একমাস আগেও যেখানে জাকজমকপূর্ণ ছিলো আজ সেখানে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। কোনো কিছুই বাকী রাখে নাই। সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছে। অথচ এসকর স্থাপনার আশেপাশে আসলেও হিসেব নিকেষ করে আসতে হতো। আর বর্তমানে মানুষজন যদি সুযোগ পেত তাহলে বাড়ির ইটগুলো পর্যন্তু খুলে নিয়ে যেতো।
হাবিবুর রহমান বাদল ষোল বছরের স্বৈরশাসনে দেশকে পঙ্গু করে শত দমন পীড়ন আর নির্বিচারে গুলি বর্ষন করে দেড় হাজারের বেশী ছাত্র-জনতাকে হত্যার পরও শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা তার গতি রক্ষা করতে পারেনি। গত বছরের ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার রোষানল থেকে বাঁচার জন্য ছোট বোন রেহানাসহ স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক আত্মসমর্পণ এতটাই […]
হাবিবুর রহমান বাদল নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার ঘটনা প্রতিদিন প্রকাশ পাচ্ছে। এনিয়ে সাধারণ নাগরিকরা সরব হয়ে উঠেছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে বিভিন্ন মহল থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা […]
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট: আড়াইহাজার থানায় দায়ের করা উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি বাবুল মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবুল মিয়ার মৃত্যু হলেও দুই মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে ২২ আগস্ট হত্যা মামলা করেছেন দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন। এই […]
প্রকাশক ও সম্পাদক
হাবিবুর রহমান বাদল
০১৯১১০১০৪৯০
hr.badal@yahoo.com
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়
৬. সনাতন পাল লেন
(হোসিয়ারী ক্লাব ভবন, তৃতীয় তলা)
৭৬৪২১২১
dbartanews@gmail.com
রেজি: ডিএ নং-২০৯৯