আজ সোমবার | ১২ মে ২০২৫ | ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ | ১৩ জিলকদ ১৪৪৬ | সকাল ৬:০৫

আ’লীগ নিষিদ্ধ এখন সময়ের ব্যাপার!

ডান্ডিবার্তা | ১১ মে, ২০২৫ | ৯:১৫ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এই সভায় সভাপতিত্ব করেন। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় রাত আটটার দিকে এ সভা শুরু হয়। সভা শেষে যমুনার সামনে রাত ১১টার দিকে ব্রিফিং করে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত সম্পর্কিত উপদেষ্টা পরিষদের লিখিত বিবৃতি পাঠ করেন। এতে বলা হয়েছে, উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতা–-কর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাস বিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে। অন্তর্বতিকালীন সরকারের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এক সময় আওয়ামীলীগ শাহবাগে গণজাগরনমঞ্চ তৈরী করে জামায়াত নেতাদের ফাঁসির কার্যকর করানোর জন্য আওয়াজ তুলেছিল সেই আওয়ামীলীগের পাতা ফাঁদে এবার আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধ করার ডাক উঠেছে। জুলাই গণহত্যাসহ শাপলা চত্বরে গণহত্যা, পিলখানায় গণহত্যার দায়ে আওয়ামীলীগ এখন সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে প্রমানিত হওয়ায় আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি যুক্তিসংঘত বলে একাধিক রাজনৈতিক দল মনে করেন। তাই আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধ হওয়াটা যেন সময়ের ব্যাপার। ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধ করা হবে কি না এ নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। এদিকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে অবস্থান করতে বিক্ষোভকারীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, ২০১৩ সালে যে শাহবাগ হয়েছে, ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শোনা গেছে, আমরা সে ফ্যাসিবাদের পতনধ্বনিতে শেষ পেরেক মারব। তিনি বলেন, আমরা রাস্তায় আছি। যেকোনো সময়ে অসুস্থ হতে পারি। কোনো ষড়যন্ত্রে পড়ে আমার মুখ থেকে যদি আন্দোলন প্রত্যাহার করার কথা বের হয়, তাহলে আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। হাসনাত আরও বলেন, যত ষড়যন্ত্র, বিভক্তি ও প্রেশার আসুক, কেউ আমাদের জুলাইয়ের ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে আলাদা করতে পারবে না। আমি যদি কোনো ঘোষণা নাও দেই, আপনাদের মনজিলে মকসুদ হচ্ছে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা। নিষিদ্ধ করার আগ পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে যে শাহবাগ হয়েছে, ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শোনা গিয়েছে, আমরা সে ফ্যাসিবাদের পতনধ্বনিতে শেষ পেরেক মারব। আমাদের মত-পথ আলাদা হতে পারে, তবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে আমরা এক। এনসিপির এই নেতা আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সময়ে যারা গুম, খুন হয়েছেন, আয়নাঘরে ছিলেন, তাদের জন্য আমরা এখানে বসেছি। যারা গুম হয়েছেন, আমরা হয়তো তাদের ফিরিয়ে দিতে পারব না। তবে আমরা এই বার্তা প্রতিষ্ঠা করব, নমরুদ ও ফেরাউনের যেভাবে পতন হয়, হাসিনারও সেভাবে পতন হয়। এছাড়া আওয়ামী লীগের বিচার ও রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে চলমান ছাত্র-জনতার আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেছে জনতার দল। গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে শাহবাগের আন্দোলনে যোগ দেয় দলটি। এ সময় তাদের হাতে দলীয় ব্যানারসহ জুলাই আন্দোলনে বিভিন্ন পোস্টার দেখা যায়। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিভিন্ন ¯েøাগানও দেন তারা। জনতার দলের সদস্য সচিব আজম খানের নেতৃত্বে আন্দোলনে অংশ নেন দলটির মুখ্য সমন্বয়ক ডেল এইচ খান, সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. আতিকুল ইসলাম জুনেদ, সদস্য অধ্যাপক আজরিন সুলতানা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মহসিন, মেজর (অব.) জাকিরসহ শতাধিক নেতাকর্মী। দলটির সদস্য সচিব আজম খান বলেন, আজ আমরা জনতার দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে এই আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করতে এসেছি। সারাদেশে আজ দাবি উঠেছে ফ্যাসিস্টদের দল আওয়ামী লীগকে ব্যান করে দেওয়ার জন্য। এর সঙ্গে আমরা একাত্মতা ঘোষণা করছি। তিনি আরও বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে নিজেই আওয়ামী লীগকে ব্যান করে দিয়েছিল। গতকাল অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট ১৯ এর ধারায় এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগকে ব্যান করে দেওয়া সম্ভব। অস্ত্র হাতে নেওয়ার জন্য ছাত্রলীগকে ব্যান করা হয়েছে, অথচ যারা ছাত্রলীগের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে তাদের কেন ব্যান করা হবে না? যতক্ষণ ছাত্রলীগকে ব্যান করা হবে না, ততক্ষণ জনতার সঙ্গে জনতার দল বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে যাবে। দলটির মুখ্য সমন্বয়ক ডেল এইচ খান বলেন, আমরা আজ সবাই জনতার দলের পক্ষ থেকে এখানে সমবেত হয়েছি। কারণ আমাদের ছাত্র-জনতা এক দফা, এক দাবিতে অটল। তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ চাইছে। ইতোমধ্যে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদি আপনি ডালপালা কাটতে পারেন, তাহলে গোড়া কেন কাটবেন না? এই সংগ্রাম আমাদের ছাত্র-জনতার অস্তিত্বের সংগ্রাম। যদি আওয়ামী লীগ ফিরে আসে, তাহলে তাদের একে একে হত্যা করা হবে। আবার আয়না ঘরে ভরা হবে। সুতরাং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করাতে আমরা তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জ অংশে বিক্ষোভ করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতৃবৃন্দরা। এতে মহাসড়কের কয়েক কিলোমিটারজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। দেখা গেছে, প্রায়-৫০-৬০ জন ছাত্র-জনতা একত্রিত হয়ে আ:লীগকে সন্ত্রাসী দল আখ্যা দিয়ে নিবন্ধন বাতিলের দাবি করে বিভিন্ন ¯েøাগান দেন। এতে মহাসড়কের ঢাকাগামী নেলে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়ে জনভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। বিক্ষোভে অংশ নিতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্র শিবিরের সভাপতি, আমিত হাসান বলেন, আমাদের এই বিক্ষোভ সন্ত্রাসী আ:লীগকে নিষিদ্ধ করার জন্য। যতক্ষণ না আ:লীগ নিষিদ্ধ হচ্ছে আমরা আন্দোলন চলমান থাকবে। সাগর নামের আরেকজন বলে, আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধ করেই আমরা মাঠ ছাড়বো। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ মহানগর সভাপতি বলেছেন, গত জুলাই-আগষ্টসহ বিগত পনের বছরে আওয়ামী লীগের অপরাধের ব্যাপকতা ও মাত্রা এতো বেশি যে, আওয়ামী লীগকে আর রাজনৈতিক দল বলা যায় না। এটা বরং ভয়ংকর অপরাধীদের একটি অপরাধচক্র। এরা রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে। এদেরকে রাজনীতি করতে দেয়ার মানে একটি ভয়ংকর অপরাধীচক্রকে আবারো নির্মমতা চালানোর সুযোগ করে দেয়া। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর আমীর মাওলানা আব্দুল জব্বার বলেছেন, গত দুই দিন ধরে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ যমুনার এরিয়া খুব গরম। সবাই বলছে ভ্যান ভ্যান আওয়ামীলীগ ভ্যান। আমরা যদি বলি আওয়ামী লীগ এতদিন যে দু:শাসন করেছে, এরপরও যদি বলি বাংলাদেশে যদি তারা দুই-চার কোটি লোক থেকে থাকে, তাহলে তারা কি অমানুষিক মানুষের উপর নির্যাতন চালিয়েছে আজকে পুরো বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কেন আপনাদের নিষিদ্ধের দাবী তুলেছে এটা আপনাদের কাছে জাতি জানতে চায়। এ জন্য জাতি আজ আওয়াজ তুলেছে তাদের নিষ্পেসন থেকে নিষ্পাপ হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ লোক তাদের কাছ থেকে রেহাই পায় নাই। বিগত দিনে আমাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দিয়েছে, কি জন্য দিয়েছে আমরা তা জানি না। তারা টাকা দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। সুতরাং যারাই জালিমবাজী করবে, যারা মানুষের উপর জুলুম-নির্যাতন চালাবে বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত গ্রহন করেব তারা রাজনীতি করবে কি করবে না। সন্ত্রাসী দল আওয়ামীলীগকে অতি দ্রæত নিষিদ্ধ করতে হবে দাবি করে এবিএম সিরাজুল মামুন বলেন, আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করা জরুরী কারণ দেশবরেণ্য অসংখ্য আলেম ওলামা কেরামগন সহ লক্ষ লক্ষ বিনা অপরাধ মানুষদেরকে নির্বিচারে জেল জুলুম সহ নানান নির্যাতন করেছে খুনি হাসিনা সরকার। শুধু তাই নয় আলেমসমাজ সহ মাদরাসার অবুজ শিশুদের মতিঝিলের শাপলাচত্বরে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছে এই খুনি হাসিনা সরকার। তাই সন্ত্রাসী দল হিসাবে এই দলকে অতি দ্রæত নিষিদ্ধ করতে হবে। এতে করে আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করে সেই সাথে আওয়ামীলীগের নিবদ্ধনও বাতিল করার দাবি এখন জোড়ালো হচ্ছে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা