আজ শনিবার | ৩১ মে ২০২৫ | ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ৩ জিলহজ ১৪৪৬ | রাত ৩:৪২

নির্বাচন ইস্যুতে উত্তাল রাজনীতি

ডান্ডিবার্তা | ২৭ মে, ২০২৫ | ৭:১৮ পূর্বাহ্ণ

নাসির উদ্দিন
দেশে নির্বাচন ইস্যুতে উত্তাল রাজনৈতিক অঙ্গন। সকলেই দ্রæত নির্বাচন দাবিতে অনড়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্ন মত দিলেও নির্বাচনের দাবিতে সকলেই একমত। নির্বাচন নিয়ে দেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা দেখা দিলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস সকলের সাথে বৈঠক করেন। তিনি সকল দলের কথা শুনেন এবং নির্বাচনের জন্য পরিবেশ তৈরীর নিশ্চয়তা দেন। এ দিকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিএনপি কখনো প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ চায়নি। বরং শুরু থেকেই এই সরকারকে সহযোগিতা করবে। সরকারের সংস্কারের বিষয়েও ঐকমত্য বলে জানিয়েছে বিএনপি। খন্দকার মোশাররফ বলেন, বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী রাজনৈতিকভাবে, ব্যক্তিগতভাবে এবং পারিবারিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আওয়ামী লীগের আমলে। তাই এই বিচারকার্য সম্পন্ন করার জন্য বিএনপি যখন ক্ষমতায় যাবে, তখন একটি স্বাধীন বিচারব্যবস্থার মাধ্যমেই এসব বিচারের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন বিষয়ে সংস্কার কার্যক্রম অবিলম্বে শেষ করে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দ্রæত একটি রোডম্যাপ প্রণয়নের দাবি আমরা জানিয়েছি। বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বাস করে, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দ্রæত সম্পন্ন হবে। নির্বাচন বিলম্বিত হলে দেশে স্বৈরাচার ফিরে আসার সম্ভাবনা বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, নির্বাচন যত বেশি বিলম্ব করা হবে, আমরা মনে করি জাতির কাছে আবারও স্বৈরাচার ফিরে আসার সম্ভাবনা তত বেশি বাড়বে। আর এর দায়-দায়িত্ব বর্তমান সরকার ও সংশ্লিষ্টদের উপরেই বর্তাবে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব পালনে যেন সফল হন, এমন চাওয়ার কথা উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ওনার সফলতা মানেই হলো জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সফলতা। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা যদি বলি যে আগামীকাল রাস্তায় নামবো, তাহলে মনে হয় ড. ইউনূস ২৪ ঘণ্টাও থাকতে পারবেন না। কিন্তু আমরা চাই ড. ইউনূস সফল হোন। ওনার সফলতা মানেই হলো জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সফলতা। গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অভিমান করে বলেছেন থাকবেন না। কোথায় যাবেন, নির্বাচন দিয়ে যেতে হবে, যাওয়া এত সহজ না। ’ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, ‘৯ মাসে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। আপনাদের সংস্কার, অপসংস্কার, কুসংস্কার; এগুলো আর দেখায়েন না। এগুলো অনেক দেখিয়েছেন। ৯ মাসে কিছু করতে পারেন নাই, আপনি আরো ৯ মাস নেবেন, সেটা আর হবে না। অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী আরও বলেন, ‘আপনি যখন পারেন নাই, সুতরাং বাগাড়ম্বরতা দিয়ে আমাদের আর বোকা বানাবেন না। আপনারা বসে বসে ক্ষমতা ভোগ করছেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা ২০২৬ সালের ৩০ জুনের আগেই একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দৃঢ় প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। মামুনুল হক বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, তিনি দেশ ও জাতিকে একটি নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে দায়িত্ব শেষ করতে চান। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে সব ধরনের প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, এমন একটি নির্বাচন হবে যেখানে একটি ইতিহাস তৈরি হবে। প্রত্যেকটি মানুষ হাসিমুখে ভোট দিয়ে বের হবে। কেউ গিয়ে দেখবে না যে, একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে এসেছে। ভোট হবে স্বচ্ছ, কোনো ধরনের কারচুপি হবে না। তিনি বলেন, মানবিক করিডোর না দেওয়ার বিষয়ে আমাদের অবস্থান সরকারকে জানানো হয়েছে। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এক বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্র আন্দোলন থেকে আসা বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দেওয়ার পাশাপাশি সামরিক বাহিনী ও প্রশাসনের সঙ্গে সরকারের সুসম্পর্ক বজায় রাখার আহŸান জানিয়েছেন। এছাড়াও, করিডোর ইস্যুতে অন্তর্বতী সরকারকে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার আহŸান জানিয়েছেন তিনি। নুরুল হক নূর বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি যে সকল উপদেষ্টার নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, বিশেষ করে ছাত্র আন্দোলনের পটভূমি থেকে আসা যেসব উপদেষ্টার বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে, তাদেরকে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সরিয়ে দিলে সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষা পাবে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি রেজাউল করিম (চরমোনাই পীর) বলেছেন, আমরা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বলেছি আমরা দেশ ও জনগণের প্রয়োজনে আপনাকে নিয়ে এসেছিলাম একটি সুন্দর ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ার জন্য। আপনি যদি পরাজিত হন, তাহলে আমরাও পরাজিত হবো। তিনি বলেন, আপনাকে সহজভাবে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না, এটাও আমাদের কাছে স্পষ্ট। আমরা উনাকে স্পষ্টভাবে জানিয়েছি—আপনি যদি পরাজিত হন, তাহলে আমরাও পরাজিত হবো। কিন্তু মাঝপথে আপনি আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন, এটা কোনোভাবেই হতে পারে না। নির্বাচন প্রসঙ্গে চরমোনাই পীর বলেন, যদি প্রয়োজনীয় সংস্কার না হয়, তবে সামনে জাতীয় নির্বাচন কালো টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাবে প্রভাবিত হবে। এতে আগের কলঙ্কিত নির্বাচনের ইতিহাস ফিরে আসবে—যা আমরা কোনোভাবেই চাই না। তিনি জানান, স্থানীয় নির্বাচনে কালো টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাব ঠেকাতে তিনি সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার আহŸান জানিয়েছেন। নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে তিনি বলেন, কারও মতে ডিসেম্বর, আবার কেউ বলছেন মার্চ। তবে প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন— ২০২৬ সালের জুনের ৩১ তারিখের পরে তারা আর থাকবেন না। এতে আমাদের ভেতরে থাকা কিছু ভয় কেটে গেছে। শেষে চরমোনাই পীর বলেন, যেসব বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়, সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে আমরা অনুরোধ করেছি। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ড. ইউনূসকে যেহেতু জনগণ একটা ভরসার জায়গায় রেখেছে, সে কারণেই তাকে এই দায়িত্ব পালন করতে হবে। একদিকে হত্যাকারীদের বিচার এবং অন্যদিকে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করার জন্য গণতান্ত্রিক সংস্কারে যেতে হবে। এই দায়িত্ব অন্তর্বতী সরকারকেই নিতে হবে, অন্যথায় আর কোনো সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন জোনায়েদ সাকি। জায় রেখে এগিয়ে যায়। অন্তর্বতী সরকার ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা বললেও গণসংহতি আন্দোলন একটি সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। জোনায়েদ সাকি বলেন, একটি সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণা করা হলে রাজনৈতিক দলগুলো প্রস্তুতি নিতে পারবে এবং বিনিয়োগ পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা সহজ হবে। আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার কাছে ৫ ফেব্রæয়ারির মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, প্রশাসনে তার নিয়ন্ত্রণে এলেই রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন। মঞ্জু বলেন, প্রধান উপদেষ্টা কেন পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে তিনি শঙ্কায় ছিলেন। আমরা বলেছি, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য। বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব কমানোর জন্য সংস্কার ও নির্বাচনের কথা বলেছি। সেইসঙ্গে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতার সঙ্গে আলোচনা করার আহŸান জানিয়েছি। সংস্কার ও নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। সাইফুল হক‌বলেন, গত কয়েক দিনের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টা বিব্রত হয়েছিলেন। তাই পদত্যাগের কথা ভাবছিলেন। আমরা বলেছি, এতে রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হবে। সাইফুল হক‌ বলেন, আমরা প্রস্তাব দিয়েছি সবাইকে যেন সমানভাবে মূল্যায়ন করা হয়। কারণ সরকারের নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা যাচ্ছে। উপদেষ্টারা একেক সময় একেক কথা বলছেন। করিডোর ও বন্দরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নিতে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মাঝনদীতে মাঝি বদলাতে হয় না। আপনার সরকারের ওপরে আমরা আস্থা রাখতে চাই। আমরা এক সরকারের মধ্যে অনেকগুলো সরকার দেখতে চাই না। আপনাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা যাচ্ছে। একেক উপদেষ্টার একেক রকম মন্তব্য। সবকিছু ঠিক করা জরুরি। নির্বাচন ইস্যুতে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ১৬ বছর ধরে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা আপনাদের যৌক্তিকভাবে সহযোগিতা করতে চাই এবং সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চাই। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না জানিয়েছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা কোনোভাবেই তার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চান না এবং তিনি অন্তর্বতী সরকারের সময় আর বাড়াতে চান না। এপ্রিলের পর নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও তিনি আশ্বস্ত করেছেন। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি এতদিন যা করেছি তা সবই ব্যর্থ হয়ে যাবে; যদি না সবাই আমার সঙ্গে একমত হন – এরকম ধারণা প্রধান উপদেষ্টার ছিল। তখন আমরা তাকে বুঝিয়েছি যে, আপনার বেশি করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করতে হবে, কথা বলতে হবে, মতবিনিময় করতে হবে। আপনি কেমন করে নির্বাচন করতে চান তা সকলের সঙ্গে শেয়ার করবেন। মান্না বলেন, ‘আমরা সংস্কারের বিষয়ে কিছু বলছি না, আমরা শুধু চাই একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। ’




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা