আজ শনিবার | ৩১ মে ২০২৫ | ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ৩ জিলহজ ১৪৪৬ | বিকাল ৪:০০

নির্বাচনী চাপ বাড়াচ্ছে বিএনপি

ডান্ডিবার্তা | ৩০ মে, ২০২৫ | ১২:০২ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
বর্তমান সরকারের উপর নির্বাচনের জন্য চাপ বাড়াতে মাঠে নামছে। তারণ্যের সমাবেশ থেকে ফিরে নারায়নগঞ্জ বিএনপি নেতাকর্মীরা নির্বাচনের রোডম্যাপ আদায়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা ঈদের পর কোমর বেধে মাঠে নামার ঘোসণা দিয়েছে। এদিকে দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপি এবার নির্বাচন নিয়ে আলটিমেটাম দিয়েছে সরকারকে। ঢাকার নয়াপল্টনে এক সমাবেশে বিএনপির শীর্ষ নেতা তারেক রহমান বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। একইসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। নির্বাচন প্রশ্নে অন্তর্বতী সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে এখন বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে এমন বক্তব্য দেওয়া হলো বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের জন্য কেন চাপ বাড়াতে চাইছে বিএনপি, কতটা চাপ তৈরি করতে পারবে তারা? নির্বাচনের সময়ের ব্যাপারে চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়ে এগোতে গিয়ে রাজনীতিতে বিএনপি একা হয়ে পড়বে কিনা, এই প্রশ্নেও আলোচনা রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। কারণ বিএনপির এই অবস্থানের সঙ্গে নেই বর্তমানে রাজনীতিতে প্রভাবশালী অন্য দলগুলো, অর্থাৎ জুলাই গণ-অভ্যত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থানের প্রতি এই দলগুলোর সমর্থন রয়েছে বলা যায়। তবে বিএনপিও অভিযোগ করছে যে, অন্তর্র্বতী সরকার বিএনপি এবং সেনাবাহিনীকে প্রতিপক্ষ বানানোর চেষ্টা করছে। যদিও সরকারের একাধিক উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বললে তারা এ ধরনের অভিযোগ মানতে রাজি নন। কিন্তু বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর কৌশল এখন সামনে এসেছে, দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব ডিসেম্বরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি দেশের মানুষের প্রতিও আহŸান জানিয়েছেন। দলটির নেতারা বলছেন, বাধ্য না হলে অন্তর্বতী সরকার নির্বাচনের রোডম্যাপ দেবে না। এমনকি সরকার ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে চায় না বলে তারা মনে করেন। সে কারণে সরকারকে বাধ্য করানোর চেষ্টা তাদের থাকবে। বিএনপির বক্তব্য বা চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়ে সরকারের দিক থেকে তাৎক্ষণিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত বুধবার জাপান সফরে গিয়ে দেশটির সরকারের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন করার পুরানো অবস্থানই তুলে ধরেছেন। অন্যদিকে, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের ভাবনা নিয়ে স¤প্রতি যে সংকট তৈরি হয়েছিল, তা সামাল দিতে তিনি গত শনি ও রোববার দুই দিনে ২২টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দলগুলোর সঙ্গে এই আলোচনায় সংকটের সমাধান হয়েছে বলা হচ্ছে। রাজনীতিকদের অনেকে এবং বিশ্লেষকেরা বলছেন, আপাতত উত্তেজনা থেমেছে। কিন্তু এই সরকারের অংশীজনদের মধ্যে বড় দুই শক্তি বিএনপি ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব কমেনি; রয়ে গেছে অস্বস্তি। নির্বাচন হলেই বিএনপি ক্ষমতায় যাবে, এই ধারণা তৈরি হয়েছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে এবং দেশের রাজনীতিতে। কারণ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে ভোটের মাঠে অন্য কোনো দলকে শক্ত প্রতিদ্ব›দ্বী মনে করছে না বিএনপি। ফলে রাজনৈতিক দল হিসেবে তৈরি হওয়া সুযোগ বা সম্ভাবনা দ্রæত কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার একটা বিষয় রয়েছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, বিএনপি ইতোমধ্যেই ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে–-এমন চিন্তা থেকে রাজধানী থেকে একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত দলটির নেতা-কর্মীদের অনেকে আধিপত্য বিস্তার, দখল, চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েছেন। এ ধরনের অপরাধে জড়িত নেতা-কর্মীদের অনেককে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া এবং এমনকি বহিষ্কার করাসহ সাংগঠনিক বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু থামানো যায়নি বিএনপির নেতা-কর্মীদের দখল, চাঁদাবাজির মতো অপরাধ। এই পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের মাঝে বিএনপি সম্পর্কে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিয়েছে; অনেক সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে দলটিকে। নেতা-কর্মীদের এ সব অপরাধের অভিযাগ নিয়ে চিন্তিত বিএনপির নেতৃত্ব। তারা মনে করছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানে যত দেরি হবে, দলের নেতা-কর্মীদের সামলানো তত কঠিন হবে; দখল, চাঁদাবাজি ও অধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা বা এ ধরনের অপরাধ বাড়তে থাকবে। এমন প্রেক্ষাপটে নির্বাচন দেরিতে হলে কতটা সহায়ক পরিস্থিতি থাকবে, সেটা দলটিকে ভাবাচ্ছে। হয়তো তারাই ক্ষমতায় যাবে, কিন্তু সমালোচনা বাড়বে। ষড়যন্ত্র তত্ত¡ও কাজ করছে বিএনপির ভেতরে। দলটির নেতারা মনে করছেন, এনসিপির প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের দুর্বলতা বা পক্ষপাতিত্ব আছে। এই দলটি সংস্কার ও আওয়ামী লীগের নেতাদের বিচার শেষ করার পর নির্বাচন চায়। আর জামায়াত সুবিধাবাদী একটা অবস্থান নিচ্ছে। এই দুটি দলের সঙ্গে ইসলামপন্থি আরও কিছু দলকে এক অবস্থানে এনে সরকার বিএনপিকে প্রতিপক্ষ বানানোর চেষ্টা করছে। এমন ষড়যন্ত্রের অভিযোগও বিএনপি আনছে। তবে জামায়াাত ও এনসিপি এমন অভিযোগ মানতে রাজি নয়। জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বিবিসিকে বলেন, আগামী বছর রোজার আগ বা পরে নির্বাচন চান তারা। তাদের এই অবস্থানকে ভিন্নভাবে দেখা ঠিক হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন। ভোট হলেই বিএনপির ক্ষমতায় আসা নিশ্চিত, এই বাস্তবতা থাকার পরও বিএনপিকে ঠেকানো যায় কিনা- এ ধরনের ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা রয়েছে বলেও বিএনপি নেতারা বিশ্বাস করেন। অন্তর্বতী সরকারের ভেতরে ক্ষমতায় থাকার লোভ তৈরি হয়েছে, সেজন্য নির্বাচন প্রলম্বিত করার চেষ্টা রয়েছে, এমন ধারণা থেকে বিএনপি নেতারা এখন সরকারের সমালোচনা করছেন। গত বুধবার ঢাকায় বিএনপির আয়াজনে তারুণ্যের সমাবেশে বিএনপি নেতা তারেক রহমানও বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মনে হয় এরই ভেতরে টালবাহানা শুরু হয়েছে বা চলছে। কথিত অল্প সংস্কার আর বেশি সংস্কারের অভিনব শর্তের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যত। তিনি এ-ও বলেন, জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে সংস্কার নিয়ে সময়ক্ষেপণের আড়ালে অন্তর্র্বতী সরকারের ভেতরে ও বাইরে কারও কারও মনে হয় ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। অন্তর্বতী সরকাররে দুর্বলতার বিষয়কেও বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাওয়ার পেছনে যুক্তি হিসেবে দেখাচ্ছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি সামলাতে সরকারের ব্যর্থতা রয়েছে। সেই ব্যর্থতা ঢাকতে সরকারও ‘ষড়যন্ত্র তত্ত¡’ আওড়াচ্ছে। এর মধ্যে নির্বাচন প্রলম্বিত করার চিন্তা কাজ করছে বলেও বিএনপি নেতাদের অনেকে মনে করেন। আর সেজন্যই বিএনপি ডিসেম্বরে নির্বাচন করার জন্য সরকাররে ওপর চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়ে এবার মাঠে নামছে। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলছেন, তারা সমাবেশ-গণজমায়েতের মতো গণতান্ত্রিক কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতে চান। দলটির ধারণা, অন্তর্র্বতী সরকারর বাধ্য না হলে নির্বাচনের রোডম্যাপ দেবে না। ফলে সরকারকে বাধ্য করার চেষ্টাও থাকবে বিএনপির। ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে হবে বলে বিএনপির শীর্ষ নেতা যে বক্তব্য দিয়েছেন, সে ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সরকারের একাধিক উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন করার পুরোনো অবস্থানই তুলে ধরেন। তবে তাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তায় এটা মনে হয়েছে যে, সরকার আগামী বছরের আগে অর্থাৎ ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে চায় না। এই ধারণা বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও রয়েছে। গত বুধবার যখন বিএনপির সমাবেশ থেকে আলটিমেটামের সুরে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাওয়া হয়েছে, সেদিনই জাপান সফরে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা আবারও ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের পুরোনো অবস্থানই তুলে ধরেছেন। এদিকে অন্তর্বতী সরকারের বয়স সাড়ে নয় মাস পার হয়েছে। এ সময়ে সংস্কার কাজ কিছুই হয়নি বলেও অভিযোগ আছে। নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়ও সরকার বলেনি বা রোডম্যাপ দেয়নি। আর সেজন্যই বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও অন্য অংশীজনদের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এখনো সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে কিছু বলা হচ্ছে না। সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বাহিনীর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বৈঠকে বলেছিলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত। এরপর অন্তর্বতী সরকার নিয়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা এবং উত্তেজনা তৈরি হয়। সেই পরিস্থিতি সামলাতে অধ্যাপক ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। উপদেষ্টা পরিষদের অনির্ধারিত সভা করে এক বিবৃতিও দেওয়া হয়েছিল। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ওই সব পদক্ষেপে সরকার একটু শ্বাস নেওয়ার সময় পেয়েছে। আপতত উত্তেজনা কমেছে। কিন্তু পর্দার আড়ালে অস্বস্তি রয়েছে। কারণ সরকারের সঙ্গে বিএনপি এবং সেনাবাহিনীর দূরত্ব কমেনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান মনে করেন, সরকার তাদের অংশীজনদের মধ্যে বড় দুই শক্তি বিএনপি ও সেনাবাহিনীকে ধমক দিয়েছে। ফলে উত্তেজনা ও অস্বস্তি রয়ে গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে। এর মধ্যে যেহেতু সরকারের বড় অংশীজনদের মধ্যে সরকারকে ঘিরে সন্দেহ, অবিশ্বাস রয়ে গেছে। ফলে অস্থিরতা বা উত্তেজনা আবারও বাড়তে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়িয়ে নির্বাচন করতে হলে সরকার ও অংশীজনদের সব পক্ষের সমঝোতা প্রয়োজন বলে বিশ্লেষকরা বলছেন।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা