আজ শুক্রবার | ৪ জুলাই ২০২৫ | ২০ আষাঢ় ১৪৩২ | ৮ মহর্‌রম ১৪৪৭ | রাত ৩:৩৯

ডিসেম্বরে নির্বাচন আদায়ে সোচ্চার বিএনপি

ডান্ডিবার্তা | ০১ জুন, ২০২৫ | ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আদায়ের জন্য হাডলাইনে বিএনপি ও সমমনা দলগুলি। আর এর সূত্র ধরে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিও বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করে চলেছেন। গত শুক্রবার তেকে ৫দিন ব্যাপী শহীদ জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করছে। আর এতে করে বিএনপি রয়েছে রাজপথে। এখন বিএনপি এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারা ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। নেতা বলেন, নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা লাভ করবে না। আর বিএনপি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সবসময় সংগ্রাম করে যাচ্ছে এবং যাবে। এদিকে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত শতাধিক দল আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দাবি করছে। শুধু একটি দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়-প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক নেতারা। একজন নোবেল লরিয়েট দেশের বাইরে গিয়ে বিদেশি গণমাধ্যমে কীভাবে এ ধরনের বক্তব্য দিলেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কঠোর সমালোচনা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার এ বক্তব্যকে অনেকে নির্বাচনের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র বলেও মনে করছেন। প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ছাড়াও বেশির ভাগ দলই ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের পক্ষে অনড়। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত সব দল ছাড়াও অনিবন্ধিত দলগুলোও চাচ্ছে ডিসেম্বর কিংবা সম্ভব হলে তারও আগে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করুক। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৫০টি রাজনৈতিক দল রয়েছে। এর মধ্যে স্থগিত রয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন। বাকি ৪৯ দলের প্রায় সবকটিই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি করছে। এ ছাড়া আরও শতাধিক অনিবন্ধিত দলের অধিকাংশই চায় ডিসেম্বর কিংবা তারও আগে সংসদ নির্বাচন। এ ব্যাপারে তাদের সবার অবস্থানই পরিষ্কার। জানা গেছে, বেশির ভাগ দলের নেতারা মনে করেন, দেশের মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র অপহৃত। এ ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। একটি নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন সম্ভব। বিশেষ করে স্থবির হয়ে পড়া ব্যবসাবাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি সচল করতে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক তথা নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। তাঁদের মতে সবাই তো একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে এতদিন আন্দোলন করেছে। দেশের সর্বত্র বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। সরকার এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ফলে যত দ্রæত সম্ভব একটি নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা এ সরকারের দায়িত্ব। এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং দলের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি নিজেই তো ৪০টির বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করেছি। তাদের সবাই একবাক্যে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে। তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে দাবিও জানিয়ে এসেছে। এ ছাড়া বাম ঘরানার ও ইসলামপন্থি আরও বেশ কিছু দলের অবস্থান একই। এর পরেও প্রধান উপদেষ্টার মতো একজন ব্যক্তি কী উদ্দেশ্যে এবং কেন এ ধরনের একটি অসত্য ও অবাস্তব কথা বললেন তা আমার বোধগম্য নয়। তিনি বিদেশে গিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে কী কারণে এ ধরনের কথাবার্তা বলা শুরু করেছেন তা তিনিই বলতে পারবেন। তবে তাঁর মুখে এ ধরনের কথা শুনে দেশবাসী বিস্মিত। ’ একই বিষয়ে গত শুক্রবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য, দলের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘যারা গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও দল করেন এবং বাংলাদেশকে ভালোবাসেন তারা সবাই চান যত দ্রæত সম্ভব একটি ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনের মাধ্যমে দেশে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নিক। আর দেশের জনগণের সঙ্গে যাদের কোনো সম্পর্ক নেই, যারা জনগণের কাছে যেতে পারে না তারা চায় না একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। বরং তারা নানান অজুহাতে নির্বাচনটা প্রলম্বিত করে নিজেদের ফায়দা হাসিল করতে চায়। ’ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বীরবীক্রম বলেন, ‘আমি শেষবার যখন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছি তখনো নির্বাচন এবং রোডম্যাপ ঘোষণার কথা বলে এসেছি। ’ গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা এটা ঠিক বলেননি। দেশের ৯০ শতাংশ দলই ডিসেম্বর কিংবা তারও আগে জাতীয় নির্বাচনের পক্ষে। তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেও একই দাবি জানিয়ে এসেছে। এর পরেও প্রফেসর ইউনূস কীভাবে এমন কথা বলতে পারলেন। তাঁর এ বক্তব্য একেবারেই ঠিক নয়। ’বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘সরকার সমর্থক দুই-তিনটি দল ছাড়া সবাই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। তা ছাড়া নির্বাচনের জন্য কেন আগামী বছর জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, সরকার তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন দেওয়া সম্ভব। নির্বাচন বিলম্বিত করার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে। ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘প্রফেসর ইউনূসের মুখ থেকে আমরা এ ধরনের কথাবার্তা আশা করিনি। আমরা চাই তিনি মানুষের মনের ভাষা বুঝতে পেরে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে সম্মানজনকভাবে বিদায় নিন। দেশে জনগণের নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করুক। ’বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘বিএনপি দাবি করেছে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন। আমরা বলছি সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বরের মধ্যেই ভোট হওয়া সম্ভব। তা না করে অন্তর্র্বতী সরকারের পক্ষে ধোঁয়াশা তৈরি করা হচ্ছে। এতে সন্দেহ দানা বাঁধছে। ’ তিনি বলেন, ‘অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে নানাবিধ সংকট ঘনীভূত হবে। বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ভোট দিতে দেরি করবেন বলেই বলেছেন-একটি দল শুধু ডিসেম্বরে ভোট চায়। আমরা বলছি, ডিসেম্বরে নয়, নভেম্বরেও ভোট করা সম্ভব। নির্বাচন কমিশনের সে প্রস্তুতি আছে বলে জেনেছি। সুতরাং কালক্ষেপণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। ’বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আমরা তো শুরু থেকেই বলে আসছি, এখন নির্বাচনের রূপরেখা দিতে হবে এবং যত দ্রæত সম্ভব নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। সেটা যদি ডিসেম্বরের মধ্যে হয়, তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু এর পরে নির্বাচন নিয়ে যাওয়া কোনোভাবেই ঠিক হবে না। ’ গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘যারা সরকারের সুবিধা পাচ্ছে এবং নিজেদের দল গোছাতে সময় চায়, এমন দুই-তিনটি ছাড়া প্রায় সব দলই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। বিশেষ করে এনসিপি নির্বাচনবিরোধী অবস্থানে আছে। অন্তর্র্বতী সরকারের শুরুর দিকে সরকারের কর্মকান্ডের প্রতি জনগণের শর্তহীন সমর্থন ছিল। কিন্তু গত নয় মাসে সরকারের কর্মকান্ডে মানুষ বুঝতে পারছে, নির্বাচিত সরকার ছাড়া রাষ্ট্রে স্থিতিশীলতা আসবে না। ’ গণফোরাম ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দাবি করেছে। গতকাল এক দলীয় বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস-একটি দল ছাড়া আর অন্য কোনো দল ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চায় না-বলে যে মন্তব্য করেছেন তা সঠিক নয়। অবিলম্বে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ঘোষণার দাবি জানিয়ে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মোহাম্মদ ইবরাহীম মিয়া বলেন, ‘দেশ ও জনগণের স্বার্থে ডিসেম্বর বা তারও আগে নির্বাচন হওয়া জরুরি। নির্বাচনের পরেই দেশে স্থিতিশীলতা আসবে। জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল আমিন বলেন, ‘গণতন্ত্রকামী মানুষ ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরাও ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চাই কিংবা তারও আগে হলে ভালো হয়। ’বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাই। অন্তর্ব্তী সরকারকে এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ইমাম হায়াত বলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের পক্ষে আমাদের সুস্পষ্ট অবস্থান। ’১২-দলীয় জোটের মুখপাত্র, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘আমাদের জোট বা দলের অবস্থান হলো অবশ্যই ডিসেম্বরের ভিতরে নির্বাচন হতে হবে। মুক্তিজোটের সংগঠনপ্রধান আবু লায়েস মুন্না বলেন, ‘গত নয় মাসে সংস্কার, বিচার, নির্বাচন-কোনোটির দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই যুক্তিযুক্ত। যারা ডিসেম্বরের পরে বা আরও দেরিতে নির্বাচন চাইছে, তারা অধিকাংশই নিবন্ধিত দল নয়। বাম জোটের বিবৃতি : বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, সিপিবি সভাপতি মো. শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাসদ মার্কসবাদীর সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী গতকাল এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা-একটি দল বাদে কেউ ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় না-মর্মে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সত্যের অপলাপমাত্র। তাঁর এ বক্তব্য দুরভিসন্ধিমূলক। ’ জোটের নেতারা অন্তর্র্বতী সরকারকে সব টালবাহানা ও চক্রান্ত বন্ধ করে দ্রæত প্রয়োজনীয় নির্বাচনী সংস্কার করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান।
ই-




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা