নৌকার মাঝিদের গাফলতিতে সেন্ট্রাল খেয়াঘাটে যাত্রীদের দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত ২ টাকা টোল

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
নৌকার মাঝিদের গাফলতিতে বন্দর সেন্ট্রাল খেয়াঘাটে নৌকায় পার হওয়া যাত্রীদের কাছ থেকে টোল নেয়া শুরু করেছে ঘাট ইজারাদার। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বন্দরবাসীর মধ্যে। একটি সূত্র জানায় ঘাট ইজারাদার ঘাটে চলাচলরত নৌকা প্রতি দিনে টোল হিসাবে ৮০ টাকা ধার্য করেছিল। কিন্তু বাধ সাধে মাঝি সমিতির নেতারা। মাঝি সমিতির উপদেষ্টা বিএনপি নেতা শিবু দাস মাঝি সমিতির নেতাদের বলেন কোট টাকা দিতে হবে না। আমি কথা বলে সব ঠিক করে দিব। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। মাঝি সমিতির নেতা রমজান, কবির, জাহাঙ্গীর, জনি, কাজল ও মাঝি দিদার বিআইডবিøউটিএ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেও কোন সুরাহা করতে পারেনি। নৌকার যাত্রীদের টোল আদায় শুরু হয় হত মঙ্গলবার থেকে। যাত্রীদের অভিযোগ ট্রলারে ২ টাকা টোল নেয়া হয় তা মেনে নেয়া হয়েছে। অরিক্ত টাকা দিয়ে নৌকা পারাপার হয়ে আবার ২ টাকা টোল দিতে হবে তা মেনে নেয়া যায় না। কারণ আমরা দীর্ঘ দিন ট্রলারের জন্য টোল দিয়ে আসছিলাম। কিন্তু নৌকায় পারাপারের যাত্রীদের কাছ থেকে টোল নেয়া হতো না। নতুন ভাবে টোল নেয়ায় যাত্রীদের মধ্যে দেখা দিয়েছি চরম ক্ষোভ। এদিকে মাঝি সমিতির উপদেষ্টার কথায় মাঝিরা ঘাট জমা না দেয়ায় ঘাট ইজারাদার এখন ভোর থেকে ট্রলার চালু করে আর বন্ধ করে রাত সাড়ে ১২টায়। এতে করে মাঝিরাও পড়েছে বিপাকে। কারণ যাত্রীরা রাতে ট্রলার পেয়ে দ্রæত পারাপার হতে পারছে। এঘাটে শতাধিক নৌকা প্রতিদিন চলাচল করত। এখন যাত্রী কমে যাওয়ায় ২০/২৫টার বেশী নৌকা চলছে না। এতে করে অনেক মাঝির রুজি বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম সেন্ট্রাল খেয়াঘাটে নৌকা পারাপারের জন্য এখন ভাড়ার বাইরেও ২ টাকা অতিরিক্ত টোল হিসেবে পরিশোধ করতে হচ্ছে যাত্রীদের। হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এ ঘাটে নিয়মিত পারাপার করা যাত্রীরা। তারা বলছেন, এ ঘাটে নৌকা পারাপারের জন্য তারা সবসময় মাঝিকে ভাড়া পরিশোধ করতেন। নৌকা পারাপার করার জন্য কখনই টোল ছিল না। বরং ইঞ্জিনচালিত ট্রলার দিয়ে নদী পারাপারের সময় কেবল ২ টাকা টোল দিতে হতো। এবং সেক্ষেত্রে ট্রলারের কোনো ভাড়া ছিল না। নৌকা পারাপারেও অতিরিক্ত দুই টাকা টোল দেওয়ার বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এর ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর তীরে পাকা ঘাটে বাঁধা সারি সারি নৌকা। এবং ঘাটে বসানো হয়েছে কয়েকটি চেয়ার-টেবিল, যেখান থেকে যাত্রী প্রতি ২ টাকা করে টোল আদায় করা হচ্ছে। ঘাট পরিচালকদের পক্ষ থেকে লাগানো হয়েছে টোল তালিকাও। বিআইডবিøউটিএ সূত্রে জানা যায়, এ ঘাটটির এবার ইজারা পেয়েছেন বিএনপি নেতা দিদার খন্দকার। এর আগেও এ ঘাট পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। কিন্তু তখনও এ ঘাটে নৌকা পারাপারের সময় যাত্রীদের টোল দিতে হয়নি। বরং বিনা টোলে ট্রলার সুবিধাও ছিল কয়েকমাস। জানা যায়, গত ২০১৪ সালে সদর-বন্দর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বন্দর সেন্ট্রাল খেয়াঘাটে যাত্রী পারাপারে টোলমুক্তের ঘোষণা দেন। সেইসময় যাত্রী পারাপারে ৫০ পয়সা টোল দিতে হতো। কিছু দিন পর নৌকার যাত্রীদের টোল ফ্রি করা হলেও ট্রলার যাত্রীদের কাছ থেকে ২ টাকা আদায় শুরু করা হয়। বিনিময়ে ট্রলারের সংখ্যা বাড়ানো হয়। দীর্ঘ ১১ বছর নৌকার যাত্রীদের টোলমুক্ত সুবিধা থাকার পর চলতি মাস থেকে পুনরায় খেয়াঘাটে নৌকায় নদী পারাপারে টোল ধার্য করেছে ঘাটের ইজারাদার। যদিও এবার ঘাটের ইজারাও হয়েছে গত কয়েকবছরের তুলনায় অনেক বেশি টাকায়। দরপত্রের সময় একাধিক ইজারাদারের মধ্যে প্রতিযোগিতা হওয়ায় এ ঘাটের ইজারা হিসেবে অধিক রাজস্ব পেয়েছে বলে জানিয়েছে বিআইডবিøউটিএ। তবে, হঠাৎ টোল আদায়ের প্রক্রিয়া পরিবর্তনে সাধারণ যাত্রীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তারা বলছেন, নৌকা ভাড়ার সঙ্গে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়টি যুক্ত করা ‘যাত্রীদের সঙ্গে অন্যায়’। কেননা, প্রতিদিন এ ঘাটটি দিয়ে ২ লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করেন। টাকার পরিমাণ কম হলেও প্রতিদিন যাতায়াতের হিসেবে নি¤œবিত্ত কর্মজীবীদের জন্য তা বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে যোগাযোগের জন্য ঘাটের ইজারাদার দিদার খন্দকার বলেন, “সরকারি নিয়ম মেনেই ২ টাকা করে টোল নেয়া হবে। ইজারার কাগজে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যন্ত্রচালিত ট্রলার ও অযান্ত্রিক নৌকা উভয় থেকেই ২ টাকা করে টোল উঠানোর অনুমোদন রয়েছে। তাই আমরা বন্দর সেন্ট্রাল খেয়াঘাটে যাত্রীদের আরো উন্নত সেবা দিতে সরকারি নিয়ম মেনেই জন প্রতি ২ টাকা করে টোল আদায়ের ব্যবস্থা করেছে। আর ট্রলারগুলোও আগের মতই ২ টাকাই থাকবে।” নিয়ম অনুযায়ী নৌকাঘাট থেকেও টোল আদায়ে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন বিআইডবিøউটিএ’র এক উপপরিচালকও। তবে, যাত্রীদের অর্থনৈতিক বিষয়টিকে মাথায় রেখে ইজারাদারই চাইলে এ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে পারেন বলে মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, “গতবছরও এ ঘটটি দেড় কোটি টাকায় ইজারা হয়েছিল। এ বছর প্রতিযোগিতা বেশি থাকায় দুই কোটি ৬ লাখ টাকায় ইজারা হয়েছে। এতদিন নৌকায় পারাপারে টোল নেয়া না হলেও এবার ইজারা বেশি টাকা পাওয়ায় হয়তো ইজারাদার টোল নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এই কাজটি উনি করতে পারেন, কেননা ইজারা দেবার সময় নির্দেশনায় তেমন বাধা নেই। তবে নগরবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ইজারাদার টোল বন্ধও করতে পারেন।”