আজ বৃহস্পতিবার | ১০ জুলাই ২০২৫ | ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ | ১৪ মহর্‌রম ১৪৪৭ | সন্ধ্যা ৬:১৮

নারায়ণগঞ্জের ইউনিয়ন পরিষদগুলিকে প্রশাসনিক স্থবিরতা নিরসনের দাবি

ডান্ডিবার্তা | ১০ জুলাই, ২০২৫ | ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার কাঠামোর ভিত্তি হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) গ্রামীণ উন্নয়ন ও বিকেন্দ্রীকৃত সেবাপ্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে নারায়ণগঞ্জ জেলায় সা¤প্রতিক সময়ে এই প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ৫ আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের পর নারায়ণগঞ্জ জেলার কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসনিক কাঠামোর মারাত্মক ভাঙন পরিলক্ষিত হয়েছে। নির্বাচিত অনেক চেয়ারম্যান বর্তমানে পলাতক, যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা রয়েছে, এই মামলাগুলোর বেশিরভাগই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে উদ্ভূত এবং সরকার পরিবর্তনের সাথে যুক্ত। ফলে, জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতির প্রেক্ষিতে বর্তমানে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানরা দায়িত্ব পালন করছে। ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কাঠামোতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একটি অন্তর্বতীকালীন দায়িত্ব পালনকারী পদাধিকারী হিসেবে বিবেচিত হন। এ পদে আসীন ব্যক্তিরা প্রায়শই পূর্ণাঙ্গ চেয়ারম্যানদের ন্যায় প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রয়োগে সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হচ্ছেন। এর ফলে দ্রæত ও কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে, যা পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানদের দায়িত্বকাল সাময়িক হওয়ায় তারা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ কিংবা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দ্বিধান্বিত থাকছেন। ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতা নিয়ে উদ্বেগ, এই দ্বিধার অন্যতম কারণ। তদুপরি, যেহেতু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানরা সরাসরি জনসাধারণের ভোটে নির্বাচিত নন, ফলে তাদের প্রতি জনগণের আস্থার ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এই আস্থার ঘাটতি জনসম্পৃক্ত কার্যক্রম পরিচালনায় অন্তরায় সৃষ্টি করছে এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে দুর্বল করছে। বর্তমান সময়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানরা স্বল্পমেয়াদী দায়িত্ব পালন করছে, যেহেতু স্বল্পমেয়াদী দায়িত্ব পালন কোনো অবস্থাতেই অবহেলা করা যায় না এবং তা প্রাতিষ্ঠানিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ, তবে দীর্ঘমেয়াদী দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে একটি অধিকতর স্থায়ী ও সুদৃঢ় নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। যদি বর্তমান কর্তাব্যক্তিরা দীর্ঘমেয়াদী দায়িত্ব পালনের সম্পূর্ণভাবে উপযোগী হত, তবে তারা পূর্ববর্তী নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতেন। দীর্ঘমেয়াদী দায়িত্ব পালন শুধুমাত্র প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে না, বরং সাধারণ জনগণের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে আস্থা ও বিশ্বাসের গভীরতা বৃদ্ধি করে। এই আস্থা ও বিশ্বাস স্থানীয় শাসনের কার্যকারিতা ও জনপ্রিয়তাকে বহুগুণে বৃদ্ধি করে। অপরদিকে, স্বল্পমেয়াদী দায়িত্ব পালন শুধুমাত্র সীমিত কার্যকরী সময়সীমার মধ্যে কাজ সম্পাদনে সক্ষম হওয়ায় তা স্থানীয় শাসনের প্রতি জনসাধারণের আস্থা সৃষ্টিতে সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। দীর্ঘমেয়াদী নেতৃত্বের অভাব ইউনিয়নগুলোর উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং স্থানীয় শাসনের প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন করছে। অতএব, বর্তমান প্রেক্ষাপটে উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়নে, সেবা সরবরাহ ও জনগণের মধ্যে আস্থাহীনতার সমস্যা প্রকটভাবে বিরাজ করছে। এই কারণবশতঃ নারায়ণগঞ্জের উল্লেখযোগ্য কিছু ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে কার্যকারিতা, স্বচ্ছতা ও জনবিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য প্রশাসক নিয়োগ করা বর্তমানে সময়োপযোগী ও অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের রাজনৈতিক ও আইনগত জটিলতার কারণে পরিষদগুলোর কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। উপযুক্ত নেতৃত্ব না থাকায় চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ঝুঁকির মুখে পড়ছে।এ অবস্থায় প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে স্বাভাবিক প্রশাসনিক কার্যক্রম দক্ষতার সাথে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। একজন নিরপেক্ষ প্রশাসক কেবল বাজেট বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে না ,বরং সেবা কার্যক্রমেও কার্যকর তদারকি নিশ্চিত করতে পারেন। যেহেতু ভারপ্রাপ্তদের অধিকাংশের দক্ষতা পর্যাপ্ত নয়, তারা কার্যকরভাবে কর্তব্য পালন করতে সক্ষম নন; অতএব, তাদের অপসারণের মাধ্যমে প্রশাসক নিয়োগ করাই প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে সম্ভাব্য কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ অনুযায়ী, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে প্রশাসক নিয়োগের বিধান রয়েছে। এটি একটি সংবিধানসম্মত এবং আইনসম্মত পদক্ষেপ। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেইসব ইউনিয়ন পরিষদগুলোর কার্যক্রম পুনরায় সুশৃঙ্খল ও কার্যকরভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে প্রশাসক নিয়োগ সময়ের বাস্তব দাবি হয়ে উঠেছে। এই পদক্ষেপ কেবলমাত্র সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে না, বরং স্থানীয় প্রশাসনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা