আজ সোমবার | ১৪ জুলাই ২০২৫ | ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ | ১৮ মহর্‌রম ১৪৪৭ | বিকাল ৩:০২

তারা শিক্ষানীতি মানছেন না

ডান্ডিবার্তা | ১৪ জুলাই, ২০২৫ | ১২:০৬ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
সিদ্ধিরগঞ্জে একটি এমপিওভূক্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজেরা আরেকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করছেন। মানছেন না প্রধান শিক্ষকের নির্দেশনা। অনলাইন ফটোকপিসহ কম্পিউটার সংক্রান্ত সকল কাজ এক শিককের দোকান থেকে করাতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে। প্রধান শিক্ষকের নির্দেশ অমান্য করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ব্যবহারিক পরীক্ষার ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আদায় করে স্কুল তহবিলে জমা না দিয়ে তারা ভাগবণ্টন করে নিয়েছেন। এনিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় শেখ মোরতোজা আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীরচর্চার শফিকুল ইসলাম, বিজ্ঞানের আলী আজগর ও কৃষি শিক্ষার শিক্ষক একেএম আসাদুজ্জামান। এমপিওভূক্ত প্রতিষ্ঠানের ওই ৩ শিক্ষক মিলে যৌথভাবে শেখ মোরতোজা আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশেই আসমত আলীর কাছ থেকে জায়গা ভাড়া নিয়ে ‘নিউ মডেল পাবলিক স্কুল’ নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তুলেছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিও নীতিমালা ২০২১ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মতে, এমপিওভূক্ত কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক যদি অন্য প্রতিষ্ঠানের মালিক, পরিচালক, কোচিং সেণ্টার পরিচালনা বা শিক্ষক হিসেবে যুক্ত থাকেন, তা অসদাচরণ, স্বার্থের সংঘাত হিসেবে গণ্য ও মূল চাকরির দায়িত্ব পালনে অবহেলা হিসেবে বিবেচিত হবে। পাশাপাশি অন্য প্রতিষ্ঠানের মালিকানা বা ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ বৈধ হবে না। নীতিমালায় আরো রয়েছে, যদি কোন শিক্ষক অন্যপ্রতিষ্ঠানে সময় দেন বা সেখান থেকে আর্থিক সুবিধা ভোগ করেন তাহলে এটি শাস্তিযোগ্য। অভিযোগ উঠেছে, সরকারি নীতিমালা অমান্য করে ওই ৩ শিক্ষক চাকরির মূল প্রতিষ্ঠানের চেয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। অন্য দিকে একই স্কুলের আরেক জন ধর্শ শিক্ষার শিক্ষক হেমায়েত উদ্দিন বিদ্যালয়ের পাশেই ‘আইটেক মাল্টিমিডিয়া’ নামে একটি কম্পিউটার দোকান গড়ে তুলেছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনলাইন সংক্রান্ত আবেদন, জটিলতা, কম্পিউটার সংক্রান্ত কাজ ও ফটোকপি তার দোকান থেকে করাতে বাধ্য করছেন। এক দোকানে কাজ করতে গিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। তাছাড়া স্কুল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয় শিক্ষক হেমায়েত উদ্দিনের দোকানে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্যবহারিক পরীক্ষার ফি বাবদ জনপ্রতি বাধ্যতামূলক ৫০০ টাকা নিয়েছেন ওই শিক্ষকরা। পরিসংখ্যান মতে সাড়ে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অন্যায়ভাবে প্রায় ১ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা হাতিয়ে দেন তারা। শিক্ষকদের এসব অনিয়ম, অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়া ও শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অভিভাক ইসমাইল হোসেন, হাফিজ উদ্দিন, আবুল হোসেন ও আলম মিয়া। তাদের অভিযোগ ওই শিক্ষকরা সিÐিকেট গড়ে তুলে শিক্ষার নামে বাণিজ্য করছেন। সরেজমিনে নিউ মডেল পাবলিক স্কুলে গিয়ে জানতে চাইলে, প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন,বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা সানারপাড় শেখ মোরতোজা আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম,আলী আজগর ও একেএম আসাদুজ্জামানসহ মোট ১০ জন। নিজের চাকরিকৃত বিদ্যালয়ের পাশে জমি ভাড়া নিয়ে ‘নিউ মডেল পাবলিক স্কুল’ নির্মাণ করার কথা স্বীকার করে শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি আমাদের স্কুলে মাঝে মাঝে যাই। বছরে কিছু আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকি। এমপিওভূক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করে নিজে আরেকটি স্কুল পরিচালনা করা শিক্ষানীতি বহির্ভুত বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে চাননি। ব্যবহারিক পরীক্ষার ফি বাবদ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা আদায় করে ভাগবণ্টনের অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি। একই কথা বলেন অন্য দুশিক্ষক আলী আজগর ও একেএম আসাদুজ্জামান। ধর্ম শিক্ষক হেমায়েত উদ্দিন স্কুলের পাশে নিজের কম্পিউটার দোকানের কথা স্বীকার করেছেন। তবে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করার অভিযোগটি সঠিক নয় বলে দাবি করেন। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্যবহারিক পরীক্ষার ফি বাবদ জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে ১ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা আদায় করে শিক্ষক শফিকুল ইসলামগংরা ভাগবণ্টন করে নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. বশির উদ্দিন। তিনি আপত্তি জানালে তার সঙ্গে তারা অসাধাচরণ করেন। ওই শিক্ষকরা তার কোন নির্দেশনা মানেন না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এমপিওভূক্ত একটি স্কুলের শিক্ষক হয়ে নিজেরা আরেকটি স্কুল পরিচালনা করার বৈধতা নেই। এসব বিষয় তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসককে মৌখিকভাবে অবগত করিয়েছেন। লিখিতভাবে অভিযোগ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি জেলার সিনিয়র সহকারী কমিশনার (শিক্ষা ও আইসিটি) ফারাহ ফাতেহ তাকমিলা বলেন, এমপিওভূক্ত স্কুলের শিক্ষক নিজের কিংবা অন্য আরেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জড়িত থাকতে পারেন না। এমন অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মাশফাকুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় কিংবা ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা আরেকটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, সানারপাড় শেখ মোরতোজা আলী স্কুলের অনিয়ম বিষয়ে আমি অবগত নই। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা