আজ সোমবার | ১৪ জুলাই ২০২৫ | ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ | ১৮ মহর্‌রম ১৪৪৭ | বিকাল ৩:১৫

সেদিন দিলদার যা বলেছিলেন

ডান্ডিবার্তা | ১৪ জুলাই, ২০২৫ | ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
কমেডি অভিনয় করে প্রশংসিত হলেও এই দাপুটে অভিনেতা ক্যারিয়ারে একটিমাত্র সিনেমায় নায়ক হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। সেই সিনেমা দিয়ে দর্শকদের যেমন হাসিয়েছিলেন, তেমনি কাঁদিয়েছিলেন। সেই সিনেমার নাম ‘আব্দুল্লাহ’। এই সিনেমার নায়ক ছিলেন দিলদার। এই অভিনেতা ২২ বছর আগে, ২০০৩ সালে ১৩ জুলাই না–ফেরার দেশে চলে যান। আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী। দিলদারের ‘আব্দুল্লাহ’ সিনেমার নায়িকা ফারহানা আমিন নূতন এক সাক্ষাৎকারে দিলদারের সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেন। সিনেমার একটি দৃশ্যে দেখা যায়, নূতন বসে কাঁদছেন। সেই সময়েই দিলদারের মুখে শোনা যায় একটি দুঃখের গান। সেই গানের শিরোনাম ‘কী করে বলব তোমায় আমি ভালোবাসি।’ গানটিতে ঠোঁট মেলানোর সময় পাশেই ছিলেন নূতন। এই সময় দিলদারের অভিনয় দেখে নূতন বলেন, ‘দিলদার ভাইয়ের সঙ্গে শুটিংয়ের থাকার পুরো সময়েই হেসেছি বলা যায়। দিলদারকে দেখলেই দর্শকদের মতোই হুট করে হাসি পেত। তো গান গাওয়ার সময় তিনি কাঁদছিলেন। আমার কাছে হঠাৎ মনে হলো দিলদার ভাই কাঁদছেন কেন? আমি বললাম, ওই মিয়া কাঁদলেন কেন? দিলদার ভাই আমার দিকে এমন করে তাকালেন। আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করেছি।’ শুটিংয়ের মধ্যে কেউ কথা বললে অনেকটাই বিরক্ত হতেন দিলদার। নায়িকা কথা বলে শুটিং থামিয়ে দেওয়ায় কিছুটা বিরক্ত হয়ে দিলদার হাসিমুখেই বলেছিলেন, ‘আরে দূর, আপনি দিছেন আমার মুডটা নষ্ট কইরা।’ এর পরে আর খুব বেশি কথা বলেননি দিলদার। আবারও চলে যান শুটিংয়ে।’ শুটিংয়ের সেই স্মৃতি স্মরণ করে নূতন বলেন, ‘সব সময় দিলদার ভাইকে দেখেছি দর্শকদের হাসাতে। কিন্তু তিনি কেন কাঁদবেন? তো সেদিন সেটাই বলেছিলাম, আপনি সবাইকে হাসান, আপনি আইছেন কাঁদতে? আমি সেই মুহূর্তে ভুলে গিয়েছিলাম দিলদার ভাই সিনেমার নায়ক, পরে তো বুঝতে পারলাম। তিনি তো মজার মানুষ ছিলেন। পরে বললেন, “আপনার অভিনয়ের সময় যখন কাঁদবেন, তখন এমন হাসানি হাসাব, অভিনয় করতে পারবেন না।”’ ‘আব্দুল্লাহ’ সিনেমার সেই শুটিংয়ে সেদিন দিলদারও বলেছিলেন, ‘আপনার কান্নার দৃশ্যে হাসাব।’ পরে একদিন নূতনের একটি দৃশ্য ছিল কান্নার। দৃশ্যে তিনি কান্না করছেন আর খুঁজছেন আব্দুল্লাহকে। সেই দৃশ্যের সময়ে নূতনকে হাসানোর চেষ্টা করতে থাকেন দিলদার। নূতন বলেন, ‘আমি একবার চরিত্রে ঢুকলে আর কোনো কিছুতে মাথা থাকে না। যে কারণে দিলদার ভাই আমাকে হাসানোর চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু আমার তখন হাসি পাচ্ছিল না। পরে দিলদার ভাই বলেছিলেন, আপনি অনেক শক্ত। সেই সময় না হাসলেও শুটিংয়ের বাইরে দিলদার ভাই প্রতি মুহূর্ত হাসাতেন। সেই মানুষটা নাই, ভাবতেই পারি না।’ অভিনয় দিয়ে পরিচয়ের আগেই দিলদারের সঙ্গে পরিচয় ছিল নায়িকা নূতনের। একসঙ্গে তাঁরা অনেক সিনেমায় অভিনয়ও করেছেন। একদিন হঠাৎ করেই পরিচালক তোজাম্মেল হক বকুল নূতনকে জানান, তিনি ‘আব্দুল্লাহ’ নামে নতুন একটি সিনেমার শুটিং করতে যাচ্ছেন। সেই সিনেমার নায়ক দিলদার। নূতন বলেন, ‘আমি শুনে সেদিন একটুও চমকাই না। কিন্তু শকট হওয়ার কথা ছিল। একজন কমেডিয়ানের সঙ্গে আমি অভিনয় করব কীভাবে। আমার কাছে মনে হয়েছে, দিলদার ভাইকে কমেডি অভিনয় থেকে নতুনরূপে যে সিনেমায় নিয়ে আসা হচ্ছে, এখানে দিলদার ভাইকে দর্শক গ্রহণ করেছে কি না, এটা জানার দারুণ একটি সুযোগ ছিল। কারণ, একটা মানুষ নানা চরিত্রে অভিনয় করবেন। সেটাই স্বাভাবিক। পরে তো চরিত্রের সঙ্গে একদম মানিয়ে গিয়েছিলেন দিলদার।’ সিনেমার গল্পে, নূতনের দেখাশোনার দায়িত্ব পড়ে এই আব্দুল্লাহ চরিত্রের ওপর। পরে তাদের মধ্যে প্রেম হয়। নূতন মনে করেন, এই সিনেমায় দিলদার ছাড়া অন্য কাউকে দিলে বাস্তবসম্মত হতো না। সিনেমায় অভিনয় করার সময় সহকর্মীদের নানা কথা শুনতে হয়েছে নূতনকে। তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ বলছিলেন, “এ রকম একজন কমেডিয়ানের সঙ্গে হিরোইন চরিত্র করছেন, এটা কেমন দেখায়।” তখন আমি সবাইকে একই কথা বলেছিলাম, গল্পের প্রয়োজনে আমার পাশে একজন পরিচালক যাকে দাঁড় করাবেন, তার সঙ্গেই আমি অভিনয় করব। কোনো কথাকে গুরুত্ব দিইনি। এ জন্য অনেকে আমার প্রশংসাও করেছেন সেই সময়। মুক্তির পরে দেখলাম দিলদার ভাই অনেক সুন্দর অভিনয় করেছেন। মানুষটার জন্য এখন খুবই খারাপ লাগে।’ ব্যবসাসফল হয় এই সিনেমা। কিন্তু সিনেমার পারিশ্রমিক নিয়ে মন খারাপ ছিল দিলদারের। সিনেমাটি নিয়ে এর আগে দিলদারের বড় মেয়ে মাসুমা আক্তার রুমা প্রথম আলোকে বলেছিলেন, তাঁর বাবা সিনেমায় অভিনয় করে কোনো পারিশ্রমিক পাননি। মাসুমা বলেছিলেন, ‘ছবির প্রযোজকের সঙ্গে বাবার চুক্তি হয়েছিল, যদি ছবিটি সিনেমা হলে চলে, তাহলে তাঁরা বাবাকে ১০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক দেবেন, ব্যর্থ হলে কোনো টাকা পাবেন না। কারণ, নায়ক হিসেবে বাবাকে নিয়ে প্রযোজক ঝুঁকি নিচ্ছেন। বাবাও রাজি হন। পরে “আব্দুল্লাহ” ছবিটি হিট হলেও বাবা ছবির পারিশ্রমিক পাননি। এখন কে টাকা দিল না দিল, এগুলো নিয়ে আমাদের আর কোনো দাবিদাওয়া নেই। আফসোসও নেই।’ দিলদার ও নূতন অভিনীত ‘আব্দুল্লাহ’ মুক্তি পায় ১৯৯৭ সালে। সিনেমাটিতে আরও অভিনয় করেছেন, আহমেদ শরীফ, জাভেদ, সাইফুদ্দিন, আবুল হায়াৎ, নাদির খান, আমির সিরাজী প্রমুখ।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা