আজ মঙ্গলবার | ১৫ জুলাই ২০২৫ | ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ | ১৯ মহর্‌রম ১৪৪৭ | বিকাল ৩:০১

পরিস্থিতি সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করবে বিএনপি

ডান্ডিবার্তা | ১৫ জুলাই, ২০২৫ | ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করতে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার পরিকল্পিত চক্রান্ত বলে মনে করে বিএনপি। গণতন্ত্রবিরোধী চক্র এই চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত বলে মনে করছে দলটি। এ অবস্থায় দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশের চলমান পরিস্থিতি সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন চাইলে সব ধরনের সহযোগিতাও করবে বিএনপি। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে দ্রæত দেশকে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ফেরাতে চায় দলটি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, আজকে যে প্রচার হচ্ছে, অপপ্রচার হচ্ছে এর পেছনে সুনির্দিষ্ট চক্রান্ত রয়েছে। সেই চক্রান্ত হচ্ছে বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করে দেওয়া। সেই চক্রান্তের অংশ হচ্ছে যিনি নেতা হয়ে উঠছেন, যার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে- সেই তারেক রহমানকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া; তাকে খারাপ জায়গায় ফেলে দেওয়ার অপচেষ্টা।’ বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, ’২৪-এর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট বিএনপির মূল প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের পতন হয়। এ অবস্থায় একক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিএনপিই একমাত্র ভরসা গণতন্ত্রমনা জনগণের। দলটির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বয়স ও অসুস্থতায় তার পক্ষে ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনাও কম। এর ফলে সার্বিক বিবেচনায় এই মুহূর্তে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গ্রহণযোগ্যতার বিচারে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছাকাছি কোনো রাজনৈতিক দলে কোনো নেতা নেই বলে মনে করেন দলটির নেতারা। সিনিয়র নেতারা মনে করেন, এই মুহূর্তে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে তারেক রহমানের নেতৃত্বে পরবর্তী সরকার গঠিত হবে। এ কারণে বিএনপি এবং তারেক রহমানকে চাপে রাখতে নানা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়েছে গণতন্ত্রবিরোধীরা। এরই অংশ হিসেবে দলটির নেতাকর্মীদের নেতিবাচক দিক তুলে ধরে রাজনীতির মাঠ গরম রাখতে সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে ইসলামপন্থিসহ দেশের ছোট ছোট রাজনৈতিক দল। এর পেছনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পতিত আওয়ামী লীগ ও তাদের অনুগত দেশি-বিদেশি অগণতান্ত্রিক মহল জড়িত বলে মনে করে দলটি। দলের নেতারা এও মনে করেন, জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করতে বিগত ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় তারেক রহমানকে হত্যার উদ্দেশে গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে গুরুতরভাবে আহত করা, একাধিক মিথ্যা মামলা এবং তার সুনাম ক্ষুণœ করতে নানাভাবে অপপ্রচার করা হয়। যুক্তরাজ্য চিকিৎসা ওয়ান-ইলেভেনের ধারাবাহিতায় শেখ হাসিনা সরকারও তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করে। এসব মামলায় আদালতকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক উদ্দেশে লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারেক রহমানকে সাজাও দেওয়া হয়। এ অবস্থায় লন্ডন থেকেই দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন তিনি। এতে করে দেশের মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তারেক রহমান। তার এই জনপ্রিয়তা কোনোভাবে মানতে পারছে না অগণতান্ত্রিক শক্তি। এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হয় গত ১৩ জুন যুক্তরাজ্যে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার সফল বৈঠক, যা তাকে রাজনৈতিক অঙ্গনে আরও মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছে। স¤প্রতি বিএনপির প্রতিনিধি দল সফরে গেলে চীনও তারেক রহমানকে দেশটিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় আমাদের সময়কে বলেন, ‘যে গাছে ফল দেয়, সেই গাছে ঢিল ছুড়বে- এটাই স্বাভাবিক। এখানে আমাদের গণতন্ত্রকামী নেতা তারেক রহমান দেশ-বিদেশে সমানভাবে জনপ্রিয়। অগণতান্ত্রিক শক্তির তাকে ঘিরে ষড়যন্ত্র করবে- এটা তো স্বাভাবিক। এখানে আমাদের দায়িত্ব হলো তাকে রক্ষা করা। এ ব্যাপারে জাতীয়তবাদী শক্তি সব সময় সতর্ক অবস্থায় আছে। কোনো ষড়যন্ত্র তাকে দুর্বল করতে পারবে না- এ শপথ আমাদের প্রতিটি নেতাকর্মীর। বিএনপি নেতারা মনে করেন, জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তারেক রহমান দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে ৫ আগস্টের পর থেকে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন। সামান্য অভিযোগ পেলেই দলের যে পর্যায়ের নেতাই হোক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিএনপি মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাক্সিক্ষত সফলতা দেখাতে না পাড়ায় সামাজিক শৃঙ্খলা প্রায় ভেঙে পড়েছে। বেশকিছু ঘটনার পরপরই নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে অনুরোধও জানানো হয়েছে। কিন্তু তেমন সাড়া পায়নি বিএনপি। দলের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, সার্বিকভাবে সাধারণ মানুষের জন্য একটা ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অকার্যকর মনে হচ্ছে। এটি কোনো অপশক্তিকে ষড়যন্ত্রের সুযোগ করে দেওয়ার অংশ কিনা, তাও অনেকে বলতে শুরু করেছেন। এমন অবস্থায় দেশ ও জণগণের স্বার্থে বড় দল হিসেবে বিএনপি এই পরিস্থিতির উন্নতি চায়, এর সুরাহা চায়। বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর দু-একটা রাজনৈতিক দল বিএনপিকে টার্গেট করেছে। বিনয়ের সঙ্গে বলব, রাজনৈতিক সহনশীলতা ও শিষ্টাচার বজায় রেখে এক-দুইটা রাজনৈতিক দল, যারা বিএনপিকে টার্গেট করে কথা বলছে, তারা যেন এসব কথা থেকে বিরত থাকে।’ আরেকটি বিষয় অত্যন্ত বেদনার ও দুঃখের উল্লেখ করে কায়সার কামাল বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশে যেমন টার্গেট কিলিং হয়েছিল, ঠিক তেমনিভাবে এখরও একটা বিশেষ রাজনৈতিক দল যারা স্বাধীনতার যুদ্ধে বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিল, তাদের কিছু নেতা মনে হচ্ছে তাদের কথায় বিএনপিকে টার্গেট করছে বা টার্গেট করেছে।’ কায়সার কামাল বলেন, এক নেতা গত শনিবার বক্তব্য দিচ্ছিলেন, আমি শুনছিলাম যে দল হিসেবে নাকি বিএনপির পতন চায়। বিএনপির পতন চান উনি দল হিসেবে? সরকারের পতন হতে পারে, রাজনৈতিক দলের পতন হয় কীভাবে? এ দেশে যিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে, মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন, সেই নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি। এই দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছেন, সংসদীয় গণতন্ত্র কায়েম করেছেন বেগম খালেদা জিয়ার দল। গত ১৭ বছর রাত-দিন পরিশ্রম করে ছাত্র-জনতাকে নেতৃত্ব দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বিদায় করেছেন- এই দল হচ্ছে তারেক রহমানের দল।’ বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে দেশকে গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রক্রিয়া থামাতে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত থেমে নেই। বিশেষ করে অগণতান্ত্রিক অপশক্তিগুলো এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রধান টার্গেট বানিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, দেশে যখনই কোনো ইস্যুতে পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখনই কিছু রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের ছায়াতলে থাকা চক্রান্তকারীরা, যারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কায় রয়েছে তারা তারেক রহমানের জনপ্রিয়তাকে লক্ষ্যবস্তু করে তোলে। নেতারা মনে করছেন, ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ ¯েøাগানে দেশ পুনর্গঠনের তারেক রহমানের স্বপ্নই তার ও তার দলের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অন্যতম প্রধান কারণ। হীনম্মন্যতা ও ঈর্ষা থেকে কিছু দল ও গোষ্ঠী তার ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে নানা অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। তারেক রহমানকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা এখন তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। সা¤প্রতিক ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা না থাকলেও তাকে জড়িয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আমাদের সময়কে বলেন, যেখানেই কোনো অপকর্মের অভিযোগ পেয়েছি, আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। বিভিন্ন জায়গায় দলের পক্ষ মামলাও করা হয়েছে। এখন দেখতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারকে। তবে এ নিয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক মহল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের মতো সেই পুরো কালচার শুরু করেছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশ কোনো অন্যায়কারীকে বিএনপি প্রশ্রয় দেবে না, সে যত বড় নেতা বা প্রভাবশালীই হোক না কেন- অন্যায় ও অপকর্মের বিরুদ্ধে দলের অবস্থান ‘জিরো টরারেন্স’।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা