আজ মঙ্গলবার | ২২ জুলাই ২০২৫ | ৭ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২৬ মহর্‌রম ১৪৪৭ | রাত ১০:১৫

শেখ হাসিনার বর্বরতায় ৮ জনের প্রাণহানি ঘটে সিদ্ধিরগঞ্জে

ডান্ডিবার্তা | ২২ জুলাই, ২০২৫ | ১২:৩০ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
গত বছরের জুলাই আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনার বর্বরতা এতটাই ভয়ানক ছিল। যা দেশের মানুষ একটি যুদ্ধ দেখেছে। ১৯৭১ সালের পর দেশের মানুষ জুলাই আন্দোলনের সময় সরকারি বাহিনীর বর্বরতা এতটাই নিষ্ঠুর ছিল যা মানুষ শত বছর মনে রাখবে। দেখা গেছে গত বছরের ২০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিদ্ধিরগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সঙ্গে শিক্ষার্থী ও জনতার অবিরাম সংঘর্ষে আটজনের প্রাণহানি ঘটে। সেদিনও আন্দোলনকারীদের দমাতে স্নাইপার পাশাপাশি হেলিকপ্টার দিয়ে গুলি ছোড়া হয়। তারা হলেন, সিলিং মিস্ত্রি হৃদয়, জুতা কারখানার শ্রমিক সজল, শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মেহেদী, হোটেলের ম্যানেজার শাহিন, প্ল্যাষ্টিক কোম্পানীর শ্রমিক মিনারুল ইসলাম, বিক্রমপুর হার্ডওয়্যার দোকানের কর্মচারী সজীব, ফল দোকানের কর্মচারী মো. আকাশ ও সড়ক পারাপারকালে মৃত্যু হয় সিদ্ধিরগঞ্জ পুলস্থ মাছ বাজারের মিলন নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর। তিনি হলেন, মতলব উত্তরের সিদ্দিকুর রহমান সরদারের ছেলে আলাউদ্দিন (৩৫) নিমাইকাশারী এলাকায় বেড়াতে এসেছিলেন। ওই সময়ে কোটা আন্দোলনে সারা দেশে পৌনে দুই শ মানুষের মৃত্যুর খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ ও পুলিশ সদস্য। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। সময় যত গড়ায় আন্দোলন তত বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘অ্যাকশন’ সশস্ত্র হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে পুঁজি করে ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও সহিংসতায় অংশ নেয় বহিরাগত দুর্বৃত্তরা। ১৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জ শহরে পর সিদ্ধিরগঞ্জ অংশে কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। এখানকার বহু কারখানা কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, হামলা ও লুট করে দূর্বৃত্তরা। এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী তলব ও কারফিউ জারি করার পর শান্ত হলেও থমথমে অবস্থা বিরাজ ছিলো। টানা ছয় দিন বন্ধ থাকার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে সীমিত পরিসরে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। শহীদ হৃদয় : ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক ছফেদ আলীর ছেলে ২৮ বছরের হৃদয় মিয়া। দাম্পত্য কলহের জেরে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর ছোটবেলা থেকেই নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের হাউজিং এলাকায় নানির কাছেই থাকতেন। ২০২০ সালে ভালোবেসে নিজের পছন্দে বন্ধুর শ্যালিকা ভোলার শিরিনা আক্তারকে বিয়ে করেন। পেশায় সিলিং মিস্ত্রি হৃদয় মিয়া দুই সন্তান (এক ছেলে ও এক মেয়ে) ও স্ত্রীকে নিয়ে সুখে-শান্তিতে সংসার করছিলেন। হৃদয় মিয়া গত বছর ২০ জুলাই প্রতিদিনের ন্যায় কাজের সন্ধানে ঘর থেকে বের হন। এরপর বিকালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ মোড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে পুলিশের ছোড়া গুলিতে নিহত হন। কাজের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হলেও রাতে ফেরেন লাশ হয়ে। এ ঘটনায় হৃদয় মিয়ার স্ত্রী-সন্তানদের হৃদয় ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।
শহীদ সজল: সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোডেও পালিত হচ্ছিল ‘কমপ্লিট শাটডাউন’। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে মানুষ রাস্তায় নেমেছিল। কারও হাতে পোস্টার-ফেস্টুন, মাথায় সবুজ-ঘেরা রক্তিম সূর্যের জাতীয় পতাকার ব্যান্ড, কারও কণ্ঠে উচ্চকিত ¯েøাগান তাদের দাবি ছিল, সকল বৈষম্যে অবসানের, ন্যায্য ও সমান অধিকারের, সমান মর্যাদার। কিন্তু রাষ্ট্র তাদের সেই কণ্ঠরোধ করতে বেছে নেয় নিষ্ঠুর দমন-পীড়নের পথ। সেদিন সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোড এলাকায় আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে চলছিল গুলির বিকট শব্দ। হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ, ককটেল বিস্ফোরণ আর একের পর এক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া— পুরো এলাকা পরিণত হয় এক ভয়ানক রণক্ষেত্রে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গুলিতে সেই রাস্তায় এক টুকরো স্বপ্ন মৃত্যু বরণ করেন, তিনি হলে সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকার বাসিন্দা ২৩ বছরের সজল। সেই সময় প্রাণ বাঁচাতে একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নিয়েছিলেন সজল। কিন্ত লুকিয়েও শেষরক্ষা হয়নি। সজল ছিল চার ভাইবোনের মধ্যে বড়। সজলের মা-বাবা কখনোই ঠিকমতো পেটপুরে খেতে পারেননি। কিন্তু ছেলেমেয়েদের মুখে যেন কখনও অভাবের ছায়া না পড়ে—এই ছিল তাদের ব্রত। এই শিক্ষাটি মনে-প্রাণে মানতেন সজলও। ভাইবোন পড়ালেখা করলেও নিজে বাবার সাথে সংসারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন সজল। চিটাগাং রোডে বাবার সাথে জুতার কারখানায় কাজ করতেন। শহীদ মেহেদী : নি¤œবিত্ত পরিবারের একমাত্র সন্তান ছিল ২০ বছরের মো. মেহেদী। বেঁচে থাকার জন্য শিক্ষাজীবন থেকেই জীবনযুদ্ধে নেমে পড়েন তিনি। বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে আন্দোলনে রাস্তায় নেমে আসেন মেহেদী। ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাবা মার মুখ উজ্জ্বল করতে না পারলেও গর্বিত করেছেন পরিবার আর এলাকাবাসীকে। শহীদ মেহেদীর পিতা মোহাম্মদ সানাউল্লাহ জানান, ২০ জুলাই বিকাল ৫টায় নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোডে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের পেছনে হিরাঝিল আবাসিক এলাকায় রাস্তায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয় মেহেদি। গুলিতে মাথার মগজ পেছন দিক দিয়ে বের হয়ে যায়। সন্ধ্যা ৭টায় মেহেদীর মোবাইল থেকে অপরিচিত একজন বলে আপনার সন্তান চিটাগাং রোডে গুলি খেয়েছে। আমি নারায়ণগঞ্জে চিটাগাং রোডে গিয়ে দেখি আমার একমাত্র সন্তান রাস্তার ওপর পড়ে আছে। মাথায় গুলি লাগায় মগজ পেছন দিক দিয়ে বের হয়ে গেছে। এলাকার লোকজন পলিথিন দিয়ে সন্তানকে ঢেকে রেখেছিল। পুলিশ শুধু গুলিই করেনি, মৃত সন্তানের শরীরেও লাথি মারে। ওই দিন রাতেই সন্তানের লাশ ঝাউচরে নিয়ে আসি এবং জানাজা শেষে স্থানীয় সামাজিক কবরস্থানে দাফন করি। শহীদ শাহিন: জীবিকার তাগিদে পরিবারের সাথে ঢাকা নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন। শাহীনকে সিদ্ধিরগঞ্জের নিউ হিরাফিল হোটেলে কাজে লাগিয়ে দেন তার পিতা। এই দশ বছর বয়স থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এই হোটেলেই তিনি চাকরি করতেন। হোটেলের সাধারণ কর্মচারী থেকে শুরু করে তিনি ম্যানেজারে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। শহীদ শাহিনের ১৩ বছরের ছোট ভাই শামীম এই হোটেলেই কাজ করে। ২০জুলাই বিকেলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা হোটেলে ঢুকে শাহীনকে গুলি করে হত্যা করে বলে জানিয়েছেন তার হোটেলের মালিক। তিনি আরও জানান, আমার সামনেই শাহীনকে হত্যা করা হয়েছে। আমাকেও গুলি করেছে কিন্তু ভাগ্যক্রমে আমি বেঁচে গিয়েছি। আমি পুলিশের পা জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলেছিলাম শাহীনকে ছেড়ে দাও। ওর কোন দোষ নেই আমরা কেউ আন্দোলনে যাইনি। আমরা হোটেলের মালিক। তারপরেও কুখ্যাত পুলিশ বাহিনী শাহীনের বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে পরপর দুইটি গুলি করল। শহীদ মিনারুল ইসলাম: সিদ্ধিরগঞ্জে একটি প্লাস্টিক কোম্পানিতে চাকরি করতেন মিনারুল ইসলাম। তার অপর দু’ভাই সোহেল ও নাজমুল অটো চালক। মিনারুল ইসলাম ওই সময়ে দুই পক্ষের গুলিতে শহিদ হন। তার মরদেহ রাজশাহীতে এনে দাফন করা হয়। পরিবারের লোকজন জানান, মিনারুলের স্ত্রী নুরে সান শম্পা মিনারুল নিহত হওয়ার চারদিন পর সন্তান প্রসব করেন। মিনারুল তার সন্তানের মুখটাও দেখে যেতে পারেনি। শহীদ আকাশ: ছোট ভাইয়ের জন্য নাস্তা আনতে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় এস.এস.সি পরিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন আকাশ। ঘড়ির কাটা তখন সকাল সাড়ে ১১টা, হঠাৎ মুহুমুহু গুলি। কিছু বুঝে উঠার আগেই দুটি গুলি আকাশের শরীরে বিদ্ধ হয়। ‘ও বাবাগো’ বলেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে। এ দৃশ্য দেখে জ্ঞান হারান বাবা আকরাম হোসেন। গুলির শব্দে প্রাণবাঁচাতে মানুষের ছুটোছুটির মধ্যে কোনভাবে আকাশকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সে। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় এলাকায় খানকা মসজিদের সামনে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা