
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
গত বছরের জুলাই আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনার বর্বরতা এতটাই ভয়ানক ছিল। যা দেশের মানুষ একটি যুদ্ধ দেখেছে। ১৯৭১ সালের পর দেশের মানুষ জুলাই আন্দোলনের সময় সরকারি বাহিনীর বর্বরতা এতটাই নিষ্ঠুর ছিল যা মানুষ শত বছর মনে রাখবে। দেখা গেছে গত বছরের ২০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিদ্ধিরগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সঙ্গে শিক্ষার্থী ও জনতার অবিরাম সংঘর্ষে আটজনের প্রাণহানি ঘটে। সেদিনও আন্দোলনকারীদের দমাতে স্নাইপার পাশাপাশি হেলিকপ্টার দিয়ে গুলি ছোড়া হয়। তারা হলেন, সিলিং মিস্ত্রি হৃদয়, জুতা কারখানার শ্রমিক সজল, শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মেহেদী, হোটেলের ম্যানেজার শাহিন, প্ল্যাষ্টিক কোম্পানীর শ্রমিক মিনারুল ইসলাম, বিক্রমপুর হার্ডওয়্যার দোকানের কর্মচারী সজীব, ফল দোকানের কর্মচারী মো. আকাশ ও সড়ক পারাপারকালে মৃত্যু হয় সিদ্ধিরগঞ্জ পুলস্থ মাছ বাজারের মিলন নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর। তিনি হলেন, মতলব উত্তরের সিদ্দিকুর রহমান সরদারের ছেলে আলাউদ্দিন (৩৫) নিমাইকাশারী এলাকায় বেড়াতে এসেছিলেন। ওই সময়ে কোটা আন্দোলনে সারা দেশে পৌনে দুই শ মানুষের মৃত্যুর খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ ও পুলিশ সদস্য। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। সময় যত গড়ায় আন্দোলন তত বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘অ্যাকশন’ সশস্ত্র হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে পুঁজি করে ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও সহিংসতায় অংশ নেয় বহিরাগত দুর্বৃত্তরা। ১৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জ শহরে পর সিদ্ধিরগঞ্জ অংশে কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। এখানকার বহু কারখানা কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, হামলা ও লুট করে দূর্বৃত্তরা। এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী তলব ও কারফিউ জারি করার পর শান্ত হলেও থমথমে অবস্থা বিরাজ ছিলো। টানা ছয় দিন বন্ধ থাকার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে সীমিত পরিসরে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। শহীদ হৃদয় : ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক ছফেদ আলীর ছেলে ২৮ বছরের হৃদয় মিয়া। দাম্পত্য কলহের জেরে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর ছোটবেলা থেকেই নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের হাউজিং এলাকায় নানির কাছেই থাকতেন। ২০২০ সালে ভালোবেসে নিজের পছন্দে বন্ধুর শ্যালিকা ভোলার শিরিনা আক্তারকে বিয়ে করেন। পেশায় সিলিং মিস্ত্রি হৃদয় মিয়া দুই সন্তান (এক ছেলে ও এক মেয়ে) ও স্ত্রীকে নিয়ে সুখে-শান্তিতে সংসার করছিলেন। হৃদয় মিয়া গত বছর ২০ জুলাই প্রতিদিনের ন্যায় কাজের সন্ধানে ঘর থেকে বের হন। এরপর বিকালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ মোড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে পুলিশের ছোড়া গুলিতে নিহত হন। কাজের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হলেও রাতে ফেরেন লাশ হয়ে। এ ঘটনায় হৃদয় মিয়ার স্ত্রী-সন্তানদের হৃদয় ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।
শহীদ সজল: সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোডেও পালিত হচ্ছিল ‘কমপ্লিট শাটডাউন’। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে মানুষ রাস্তায় নেমেছিল। কারও হাতে পোস্টার-ফেস্টুন, মাথায় সবুজ-ঘেরা রক্তিম সূর্যের জাতীয় পতাকার ব্যান্ড, কারও কণ্ঠে উচ্চকিত ¯েøাগান তাদের দাবি ছিল, সকল বৈষম্যে অবসানের, ন্যায্য ও সমান অধিকারের, সমান মর্যাদার। কিন্তু রাষ্ট্র তাদের সেই কণ্ঠরোধ করতে বেছে নেয় নিষ্ঠুর দমন-পীড়নের পথ। সেদিন সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোড এলাকায় আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে চলছিল গুলির বিকট শব্দ। হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ, ককটেল বিস্ফোরণ আর একের পর এক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া— পুরো এলাকা পরিণত হয় এক ভয়ানক রণক্ষেত্রে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গুলিতে সেই রাস্তায় এক টুকরো স্বপ্ন মৃত্যু বরণ করেন, তিনি হলে সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকার বাসিন্দা ২৩ বছরের সজল। সেই সময় প্রাণ বাঁচাতে একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নিয়েছিলেন সজল। কিন্ত লুকিয়েও শেষরক্ষা হয়নি। সজল ছিল চার ভাইবোনের মধ্যে বড়। সজলের মা-বাবা কখনোই ঠিকমতো পেটপুরে খেতে পারেননি। কিন্তু ছেলেমেয়েদের মুখে যেন কখনও অভাবের ছায়া না পড়ে—এই ছিল তাদের ব্রত। এই শিক্ষাটি মনে-প্রাণে মানতেন সজলও। ভাইবোন পড়ালেখা করলেও নিজে বাবার সাথে সংসারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন সজল। চিটাগাং রোডে বাবার সাথে জুতার কারখানায় কাজ করতেন। শহীদ মেহেদী : নি¤œবিত্ত পরিবারের একমাত্র সন্তান ছিল ২০ বছরের মো. মেহেদী। বেঁচে থাকার জন্য শিক্ষাজীবন থেকেই জীবনযুদ্ধে নেমে পড়েন তিনি। বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে আন্দোলনে রাস্তায় নেমে আসেন মেহেদী। ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাবা মার মুখ উজ্জ্বল করতে না পারলেও গর্বিত করেছেন পরিবার আর এলাকাবাসীকে। শহীদ মেহেদীর পিতা মোহাম্মদ সানাউল্লাহ জানান, ২০ জুলাই বিকাল ৫টায় নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোডে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের পেছনে হিরাঝিল আবাসিক এলাকায় রাস্তায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয় মেহেদি। গুলিতে মাথার মগজ পেছন দিক দিয়ে বের হয়ে যায়। সন্ধ্যা ৭টায় মেহেদীর মোবাইল থেকে অপরিচিত একজন বলে আপনার সন্তান চিটাগাং রোডে গুলি খেয়েছে। আমি নারায়ণগঞ্জে চিটাগাং রোডে গিয়ে দেখি আমার একমাত্র সন্তান রাস্তার ওপর পড়ে আছে। মাথায় গুলি লাগায় মগজ পেছন দিক দিয়ে বের হয়ে গেছে। এলাকার লোকজন পলিথিন দিয়ে সন্তানকে ঢেকে রেখেছিল। পুলিশ শুধু গুলিই করেনি, মৃত সন্তানের শরীরেও লাথি মারে। ওই দিন রাতেই সন্তানের লাশ ঝাউচরে নিয়ে আসি এবং জানাজা শেষে স্থানীয় সামাজিক কবরস্থানে দাফন করি। শহীদ শাহিন: জীবিকার তাগিদে পরিবারের সাথে ঢাকা নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন। শাহীনকে সিদ্ধিরগঞ্জের নিউ হিরাফিল হোটেলে কাজে লাগিয়ে দেন তার পিতা। এই দশ বছর বয়স থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এই হোটেলেই তিনি চাকরি করতেন। হোটেলের সাধারণ কর্মচারী থেকে শুরু করে তিনি ম্যানেজারে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। শহীদ শাহিনের ১৩ বছরের ছোট ভাই শামীম এই হোটেলেই কাজ করে। ২০জুলাই বিকেলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা হোটেলে ঢুকে শাহীনকে গুলি করে হত্যা করে বলে জানিয়েছেন তার হোটেলের মালিক। তিনি আরও জানান, আমার সামনেই শাহীনকে হত্যা করা হয়েছে। আমাকেও গুলি করেছে কিন্তু ভাগ্যক্রমে আমি বেঁচে গিয়েছি। আমি পুলিশের পা জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলেছিলাম শাহীনকে ছেড়ে দাও। ওর কোন দোষ নেই আমরা কেউ আন্দোলনে যাইনি। আমরা হোটেলের মালিক। তারপরেও কুখ্যাত পুলিশ বাহিনী শাহীনের বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে পরপর দুইটি গুলি করল। শহীদ মিনারুল ইসলাম: সিদ্ধিরগঞ্জে একটি প্লাস্টিক কোম্পানিতে চাকরি করতেন মিনারুল ইসলাম। তার অপর দু’ভাই সোহেল ও নাজমুল অটো চালক। মিনারুল ইসলাম ওই সময়ে দুই পক্ষের গুলিতে শহিদ হন। তার মরদেহ রাজশাহীতে এনে দাফন করা হয়। পরিবারের লোকজন জানান, মিনারুলের স্ত্রী নুরে সান শম্পা মিনারুল নিহত হওয়ার চারদিন পর সন্তান প্রসব করেন। মিনারুল তার সন্তানের মুখটাও দেখে যেতে পারেনি। শহীদ আকাশ: ছোট ভাইয়ের জন্য নাস্তা আনতে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় এস.এস.সি পরিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন আকাশ। ঘড়ির কাটা তখন সকাল সাড়ে ১১টা, হঠাৎ মুহুমুহু গুলি। কিছু বুঝে উঠার আগেই দুটি গুলি আকাশের শরীরে বিদ্ধ হয়। ‘ও বাবাগো’ বলেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে। এ দৃশ্য দেখে জ্ঞান হারান বাবা আকরাম হোসেন। গুলির শব্দে প্রাণবাঁচাতে মানুষের ছুটোছুটির মধ্যে কোনভাবে আকাশকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সে। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় এলাকায় খানকা মসজিদের সামনে।
হাবিবুর রহমান বাদল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সাথে সাথে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার দোসররা কেউবা পালিয়েছে আবার কেউ আত্মগোপনে রয়েছে। বিগত পতিত সরকারের আমলে পেশাদার সাংবাদিকরা সব কিছু দেখলেও কোন কিছুই লিখতে পারতনা। আকাঁরে ইঙ্গিতে কোন কিছু লিখলেই সেইসব সাংবাদিকের উপর খর্গ নেমে […]
হাবিবুর রহমান বাদল নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার ঘটনা প্রতিদিন প্রকাশ পাচ্ছে। এনিয়ে সাধারণ নাগরিকরা সরব হয়ে উঠেছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে বিভিন্ন মহল থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা […]
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট: আড়াইহাজার থানায় দায়ের করা উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি বাবুল মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবুল মিয়ার মৃত্যু হলেও দুই মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে ২২ আগস্ট হত্যা মামলা করেছেন দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন। এই […]
প্রকাশক ও সম্পাদক
হাবিবুর রহমান বাদল
০১৯১১০১০৪৯০
hr.badal@yahoo.com
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়
৬. সনাতন পাল লেন
(হোসিয়ারী ক্লাব ভবন, তৃতীয় তলা)
৭৬৪২১২১
dbartanews@gmail.com
রেজি: ডিএ নং-২০৯৯