আজ সোমবার | ২৮ জুলাই ২০২৫ | ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২ সফর ১৪৪৭ | সন্ধ্যা ৭:৫৭

সংঘাতমুক্ত রাজনীতি চায় সাধারণ মানুষ

ডান্ডিবার্তা | ২৮ জুলাই, ২০২৫ | ১১:৪৩ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির অবস্থা কেমন চলছে। প্রায় একবাক্যে সবাই বলবেন যা চলছে তা ভালো না। রাজনীতিতে বিতর্ক, সমালোচনা থাকবেই আর থাকবে ক্ষমতায় থাকা বা যাওয়ার জন্য প্রতিদ্ব›িদ্বতা। একেই অনেকে বলেন গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু জবাবদিহির পরিবেশ না থাকলে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠে না। গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হারিয়ে যায়। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ শাসনামলে মানুষ সহিংসতার রাজনীতি আর সংস্কৃতিতে ভোগবাদিতা এবং সমাজে ক্রমাগত দুর্ভোগ সৃষ্টির রাজনীতি দেখেছে। কিন্তু এই কালচার থেকে শান্তি ও সুস্থ্য ধারার জবাব দিহির পরিবেশে রাজনীতি চায়। গত ১৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জ শহরের রাজপথ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পদচারনায় মুখরিত হয়েছে। কেননা কোন ধরনের সংঘাত বিহীন গতকাল নারায়ণগঞ্জ ছোট্র শহরের ৫টি রাজনৈতিক দল বিক্ষোভ মিছিলের সাথে আলোচনা সভা করেছে। কিন্তু বিরল দৃষ্টান্তের বিষয় হলো একই রাস্তা দিয়ে নারায়ণগঞ্জে এনসিপির নেতারা পতযাত্রা মিছিল করেন অপর সাইডে ইসলামী আন্দোলন বিশাল সমাবেশ চলে। অথচ কারো সাথে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে একে অপরের সাথে হ্যান্ডশেক সৌহার্দপুর্ণ আচরণ হয়। পদযাত্রা থেকে জাতয়ী সিটিজেন পার্টির এনসিপি কেন্দ্রীয় নেতাদের পদযাত্রা মিছিল ডিআইডিতে ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশ স্থলে পৌছালে তারা একে অপরের মাঝে কথা এবয় হ্যান্ডশেক হয়। কেউ কাউকে নিয়ে কোন ধরনের ¯েøাগান দেন নাই। দুই পক্ষ তাদের কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার সহযোগিতা কামনা করে শুভেচ্ছা জানান। যা রাজনীতিতে এক বিরল দৃষ্টান্ত। অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতে ইসলামী তাদের দলের কেন্দ্র ঘোষিত ১৯ জুলাই সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে জাতীয় সমাবেশকে সফল করার জন্য দুপুরে নগরীতে র‌্যালী করেন। তার কিছুক্ষন পরে বিএিনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে কটুক্তি করায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি মৌন মিছিল বের করে নগরীতে। তখন এনসিপির নেতাকর্মীরাও নারায়ণগঞ্জে পদযাত্রা করেন। একই সময়ে মহানগর বিএনপি মৌন মিছিল করলেও এনসিপির সাথে তাদের কোন সংঘাত ঘটে নাই। তাছাড়া একই সময়ে নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়া শহীদ মিনারে গণসংহতি আলোচনা সভা করেন। তবে তাদের সভা চলাকালিন সময়ে তার একটু পাশেই চাষাঢ়া বিজয় স্তম্ভে নারায়ণগঞ্জ এনসিপির নেতারা বক্তব্য রাখেন। কিন্তু ৫০ ফিট দুরত্বের ব্যবধানে একই জায়গায় সমসায়িক ভাবে ৫টি দলের সভা হলেও কারো সাথে কোন ধরনের সংঘাত ঘটে নাই। রাজনীতির এই বিরল দৃষ্টান্তকে নিয়ে মানুষ সাদরে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করছে। সেই সাথে রাজনৈতিক দল গুলোর সৌহার্দপুর্ণ আচরণই দেখতে চান মানুষ। মানুষ এখন আর সহিংসতার রাজনীতি চান না। এমনকি মানুষের উপর কোন দল নির্যাতন, অত্যাচার, আগের মত গুম,খুন চালাক তাও দেখতে চান না। অথচ বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ শহরে কোন কর্মসূচি দিলে অন্যদলকে সভা করতে দেয়া হত না। এমনকি বিগত সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝেও একই দিনে নারায়ণগঞ্জে ৫টি দল কার্যক্রম চালাতে পারে নাই। যা গতকালকে রাজনৈতিক ভাবে নারায়ণগঞ্জে ইতিহাস তৈরী হয়েছে। তথ্যমতে, জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি বা ইউএনডিপির এক সা¤প্রতিক জরিপে জনগণের প্রত্যাশায় সৎ রাজনীতি সবার ওপরে স্থান পেয়েছে। এরপর ক্রমান্বয়ে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন রাজনৈতিক সমঝোতা, সংঘাতহীন রাজনীতি এবং তৃণমূলে রাজনীতিকে শক্তিশালীকরণের পক্ষে প্রত্যাশা জরিপে প্রাধান্য পেয়েছে। রাজনীতি একটি জাতির আয়-উন্নতি ও সুখ-শান্তির বড় নিয়ামক। কারণ রাজনীতি রাষ্ট্রক্ষমতার চালক। সৎ রাজনীতি একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন সুগম করে, যার মধ্যে আর্থিক উন্নয়ন, দেশে শান্তিশৃঙ্খলা, জনগণের নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাংলাদেশের মানুষও আয়-উন্নতি ও সুখ-শান্তি চায়। অসৎ রাজনীতিই যে আমাদের দুঃখ-দারিদ্র্য মোচনে বড় বাধা এটা আলোচ্য জরিপটি আবার নতুন করে তুলে ধরল। এছাড়া হরতাল, অবরোধ, পেট্রলবোমা মেরে নিরীহ মানুষ হত্যা, দুর্নীতি, সন্ত্রাস-সংঘর্ষসহ অসংখ্য অপকর্মের হোতা যে রাজনীতির ধারক ও বাহকরা, তা সাধারণ মানুষ জানে। কিন্তু প্রতিবাদ ও বিহিত করার ক্ষমতা তাদের নেই। ক্ষমতাসীন দলের মনোভাব যদি থাকে, আমরা যা করছি ঠিকই করছি, বিরোধিতাকারীরা বিরোধিতার নামে ষড়যন্ত্র করছে, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে, ক্ষমতায় যাওয়ার স্বার্থে মানুষকে ক্ষেপিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছে। ফলে পুলিশ এবং প্রশাসন দিয়ে দমন করতে হবে। তাহলে তৈরি হয় র্র্কতৃত্ববাদী মানসিকতা। এই মানসিকতা ও তৎপরতার ফলে বিশ্বের বহু র্র্কতৃত্ববাদী দেশে দুটি অবশ্যম্ভাবী পরিণতি ঘটেছে। প্রথমত, কিছু দেশের সরকার বিরোধীদের দমনে বেশ খানিকটা সফল হয়েছে। ফলে তাদের স্থায়িত্ব এবং জনগণের দুর্ভোগ আরও স্থায়ী হয়েছে। যা বিগত আওয়ামী লীগ একক কর্তৃত্বে দেশ শাসন করা একটানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলকে এই ধরনের সরকার বলা যায়। যার জন্য আওয়ামী লীগ তথা র্র্কতৃত্ববাদী সরকার টিকে থাকতে ব্যর্থ হয়েছে। যার পরিণতিতে মানুষের রোষানলে পড়ে তাদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সভায় গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ‘নতুন বন্দোবস্ত’ প্রয়োজন। তাঁর মতে, ক্ষমতা ব্যবহার করে ধনসম্পদ আহরণের বিদ্যমান ব্যবস্থা পরিবর্তন করে জনগণের সম্মতি নিয়ে একটি সংস্কারের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন করতে হবে। “অভ্যুত্থানের পরেও আমরা দেখছি ক্ষমতা ব্যবহার করে নানাভাবে দখল আর ধনসম্পদ আহরণ করা হচ্ছে। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান পরিষ্কার করে বলছে এই দেশ জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার দেশ। কাজেই, এই দেশে ক্ষমতা ব্যবহার করে ধনসম্পদ আহরণের যে ব্যবস্থা, তাকে বদল করতে হবে। আর সেটাই হলো নতুন বন্দোবস্ত। নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা আব্দুল জব্বার বলেছেন, জুলাই বিপ্লবের মুল স্পিরিডকে ধারণ করে সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে যেমনি ভাবে আমরা বিপ্লব ছিনিয়ে নিয়েছি,তেমনি ভাবে আগামী দিনে সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই করে শান্তি কামি মানুষের অধিকার নিশ্চিত করব।জামায়াতে ইসলামী যে সাত দফা দাবী দিয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে দেশের মানুষ আর ফ্যাসিবাদের নির্যাতনের শিকার হবেন না। দেশে কোন ফ্যাসিজম প্রতিষ্ঠা হবে না, চাদাঁবাজ,দখলবাজ,কোন সন্ত্রাস এসে মানুষের উপর জুলুম করতে পারবে না। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম (পীর সাহেব চরমোনাই) বলেন, নারায়ণগঞ্জের মাটি ইসলামের ঘাটি, স্বাধীনতার পর যারাই এই দেশ শাসন করেছে তাদের থেকে দুর্নীতি আর চুরির দিকে বিশ্বের কাছে এই দেশ প্রথম হয়েছে। এখন একটা দল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে রাখছে। ৫ আগস্টের পর এখনো চাঁদাবাজি খুন বন্ধ হয় নাই। আপনারা যদি এই চাঁদাবাজি, খুন বন্ধ না করেন তাহলে সব চাঁদাবাজদের ধরে বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করবো। আমাদের চোখ রাঙিয়ে লাভ নাই, আপনাদের রাজনীতি দেখেছি। সোহাগের মত বাংলার সন্তানকে পাথর মেরে হত্যা করবেন সেটা আর হতে দেওয়া হবে না। ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের মাটি, আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শাসন দেখতে চায় না। তারা ইসলামী শাসন দেখতে চায়। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহŸায়ক মো. নাহিদ ইসলাম দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন যে, দেশের বিদ্যমান মাফিয়াতন্ত্র ও পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে আরেকটি গণ-অভ্যুত্থান প্রয়োজন এবং এর সূত্রপাত নারায়ণগঞ্জ থেকেই হবে।“গণ-অভ্যুত্থানের পর বলেছিলাম বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে পরিবর্তন করতে হবে। এই দেশ যে সিস্টেমে চলে এর পরিবর্তন ঘটাতে হবে। যেখানে পরিবারতন্ত্র, মাফিয়াতন্ত্র, গডফাদারতন্ত্র সব মিলেমিশে একাকার ছিল। নারায়ণগঞ্জের যে সিস্টেম এই একই সিস্টেমে পুরো দেশ এতদিন পরিচালিত হয়েছিল। এই মাফিয়াতন্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা গণ-অভ্যুত্থান করেছিলাম। তাই খেলার নিয়ম বদলাতে হবে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা