আজ রবিবার | ৩ আগস্ট ২০২৫ | ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২ | ৮ সফর ১৪৪৭ | রাত ৪:৩৩

না’গঞ্জে সংসদীয় আসনের নতুন সীমানায় সংক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ

ডান্ডিবার্তা | ০১ আগস্ট, ২০২৫ | ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জে সংসদীয় ৩টি আসনের সীমানা পরিবর্তনের খসড়া প্রকাশ করার পর সংক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বন্দরবাসী। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের পূর্বে সীমানা বহাল রাখার পক্ষে সকলেই মত দিয়েছেন। তারা সোনারগাঁয়ের সাথে সংযুক্ত হতে নারাজ। কারণ তাদের রাজনীতি ও প্রশাসনিক কর্মকান্ড শহর কেন্দ্রীক। তাই তারা নতুন সীমানা মেনে নিতে চান না। এতে করে সংক্ষুব্ধ হয়েছেন বন্দরবাসী ও রাজনৈতিক নেতা এভং সম্বাব্য প্রার্থীরা। প্রার্থীদের মতামত হলো তারা তাদের ঘর গুছিয়ে রেখেছেন। নতুন সীমানায় তারা সুবিধা করতে পারবে না। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বন্দরবাসীর পক্ষ থেকে নতুন সীমানা বাতিল করে পূর্বে সীমানা বহাল রাখার দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের কাছে স্বারকলিপি দাখিল করেছে। এদিকে খসড়া তালিকায় সীমানা পরিবর্তন নিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহŸায়ক এড.সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের ৩টি আসন নিয়ে সীমানা পরিবর্তন নিয়ে প্রাথমিকভাবে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এতে নারায়ণগঞ্জের নাগরিকরা খুশি হতে পারেনি। আমরা এটা নিয়ে জনগণের মতামত নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আপত্তি জানাবো। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে খসড়া তালিকায় বন্দরকে দুটি ভাগ করে এখানকার মানুষের মাঝে বিভক্ত তৈরী করা হয়েছে। অপরদিকে সদর থানার আংশিক এলাকা বিভক্ত করে নাগরিকদের মাঝে বিভক্ত তৈরী করা হয়েছে। যা এখানকার নাগরিকরা মেনে নিতে পারেনি। এই জন্য আমরা স্থানীয় জনগণকে সাথে নিয়ে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যা যা করা প্রয়োজন তার সকল ধরণের ব্যবস্থার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।’ জেলা বিএনপির আহŸায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের ট্যাকনিক্যাল কমিটি নারায়ণগঞ্জের ৩টি আসনের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত খসড়া প্রকাশ করেছে। এটা তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। নারায়ণগঞ্জের মানুষ যেভাবে এখন অভ্যস্ত রয়েছে, আমরা সেভাবেই থাকতে চাই। আর এটা আমরা আমাদের দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে তুলে ধরবো।’ নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার আজ্ঞাবহ হয়ে বর্তমান সরকারের অপকৌশল হিসেবে রাজনৈতিক কুটচাল করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত ও বানচাল করার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর নাগরিকদের অধিকার খর্ব করে নারায়ণগঞ্জ-৩, ৪ এবং ৫ আসনকে নতুন করে বন্টন করেছে। আমরা জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে না.গঞ্জ -৩,৪ ও ৫ আসন পূর্বের অবস্থায় বহাল রাখার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি। সীমানা পুনর্নিধারণ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কারিগরি কমিটির প্রস্তাবনার তীব্র সমালোচনা করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদ। তিনি বলেন, “নির্বাচনী সীমা বিভক্ত করে আমাদের ঐক্য ভাঙা যাবে না। নারায়ণগঞ্জে-৫ আসনের সাতটি ইউনিয়ন দীর্ঘদিন অবহেলিত। নাগরিক সুবিধা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, ড্রেনেজ ও কর্মসংস্থান সবদিক থেকেই পিছিয়ে রয়েছে। যেখানে উন্নয়নের প্রয়োজন, সেখানে করা হয়েছে বিভাজনের মতো বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত- এটি মেনে নেওয়া যায় না।” নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনকে ভেঙে নতুনভাবে সীমানা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত শুধু একটি রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাস নয় এটি আমাদের হৃদয়ের টুকরো ছিঁড়ে নেওয়ার মতো একটি নির্মম পদক্ষেপ। বন্দর উপজেলা, যাদের সাথে যুগ যুগ ধরে আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, সেই বন্দরকে সোনারগাঁয়ের সাথে যুক্ত করে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনকে কেবল সিটি কর্পোরেশন এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। বন্দর উপজেলা নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমি বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান হিসেবে এখানকার জনসাধারণের আবেগ, প্রত্যাশা ও ন্যায্য দাবির কথা আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরছি আশা করি আপনারা এই গণদাবিকে মূল্যায়ন করবেন। শীতলক্ষ্যা নদী আমাদের শহরের মাঝে নদী নয়, এটা আমাদের আত্মার বন্ধন। এই নদীর এ-পার ও-পার ছিল না কখনো; ছিল একটি অদৃশ্য মেলবন্ধন, যেখানে একে অপরকে ছাড়া কল্পনাও করা যায় না। কিন্তু আজ সেই শীতলক্ষ্যার দুই পাড়কে যেন কল্পনাহীন এক বিভাজনের রেখায় টেনে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। এটা শুধু ভৌগোলিক বিচ্ছেদ নয় এটা অনুভব, সম্পর্ক, ইতিহাস এবং আত্মার ওপর চালানো এক নিষ্ঠুর আঘাত। নির্বাচনের আগে এ ধরনের সীমানা পরিবর্তন শুধু যে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, তা নয় এটা প্রার্থীদের বহুদিনের প্রস্তুতিকে মুহূর্তে অকার্যকর করে দেয়া, এবং সবচেয়ে কষ্টের বিষয়, এলাকাবাসীর আবেগ-ভিত্তিক ভোটাধিকারকে চরমভাবে আঘাত করা। মানুষ তাদের প্রার্থীদের নিয়ে স্বপ্ন দেখছে, প্রতিদিন কথা বলছে, মত প্রকাশ করছে তারা প্রস্তুত ছিল একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে ভোট দেওয়ার জন্য। হঠাৎ করে এই কাঠামো ভেঙে ফেলা মানে শুধু পরিকল্পনার ধস নয়, এটা বিশ্বাসেরও ভাঙন। আমরা নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সচেতন নাগরিক হিসেবে অত্যন্ত ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ। আমরা এই অযৌক্তিক, অবিচারমূলক এবং আবেগবিচ্যুত সিদ্ধান্ত বাতিল চাই। আগের সীমানা ফিরিয়ে এনে আমাদের আবেগ, সম্পর্ক ও ভোটাধিকারকে সম্মান করুন। বন্দরের সীমানা বিভাজন করে নতুনভাবে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের তীব্র বিরোধিতা করেছেন গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন। তিনি বলেন, নতুন সীমানা নির্ধারণ হলে বন্দর থেকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য হয়ে যাবে। এটি ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বৈষম্য দূর করার আকাক্সক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালের ভোটার তালিকা অনুযায়ী বন্দরে মোট ভোটার ২ লাখ ৬১ হাজার ৫৯৩ জন। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৯ থেকে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটার ১ লাখ ৩২ হাজার ২৯৫ জন। বাকি ৫টি ইউনিয়নে ভোটার ১ লাখ ২৯ হাজার ২৯৮ জন। এই ইউনিয়নের ভোটাররা এখন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ফলে বন্দরকে দুটি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে- এক অংশ সিটি করপোরেশন এলাকায় এবং অন্য অংশ ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে বন্দর উপজেলা। এই বিভাজনের কারণে জাতীয় সংসদ ও সিটি করপোরেশন এই দুই নির্বাচনে বন্দর থেকে কোনো প্রার্থী জেতা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে। এছাড়াও বন্দর থেকে সাধারণ মানুষ ও গনমাধ্যম কর্মীরাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। বন্দরবাসী পূর্বে সীমানায় থাকতে চান।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা