আজ রবিবার | ১৭ আগস্ট ২০২৫ | ২ ভাদ্র ১৪৩২ | ২২ সফর ১৪৪৭ | দুপুর ১:৩০

নির্বাচন নির্ধারনেই সরকারের সময় পার

ডান্ডিবার্তা | ১৭ আগস্ট, ২০২৫ | ১০:৪৭ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষমতার অর্ধেক সময়ই রাজনৈতিক দলের সাথে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ সংক্রান্ত আলোচনায় কেটে গেছে। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের শক্তি হারানোর পর সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটি জোর দিয়ে বলেছে, অন্তর্বতী সরকারকে শুধু মুক্ত ও ন্যায়সঙ্গত নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করা উচিত এবং অন্যান্য পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সরকারের হাতে রাখা উচিত। তবে দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামিক দল জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল আরো সংস্কারের পর নির্বাচন চাইছে। বাংলাদেশের কমিশনগুলোর সংস্কার প্রস্তাব তদারকি করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এই কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল দুই মাস ধরে সংবিধান ও শাসন সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। এই আলোচনায় কোনো তিক্ত বাক্য বিনিময় হয়নি, যা অগ্রগতির আশাব্যঞ্জক চিত্র ফুটিয়ে তোলে। বিভিন্ন দল স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ও প্রধানমন্ত্রী পদে মেয়াদের সীমাবদ্ধতার মতো বিষয়গুলোতে একমত হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ১৭ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দীর্ঘ দিন ধরে চলা দুর্নীতি, মুদ্রাস্ফীতি, কর্মসঙ্কট এবং জটিল প্রশাসনসহ বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে হিমশিম খাচ্ছে। এসব সমস্যা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। ছাত্ররা চাইছেন, গণতান্ত্রিক সংস্কার দ্রুত বাস্তবায়িত হোক। তারা চাইছেন, গত বছরের আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় যেসব রাজনৈতিক দলের সদস্য ও পুলিশ কর্মকর্তারা জড়িত তাদের দ্রুত শাস্তি কার্যকর হোক। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী বলেন, ‘এটি আমাকে কষ্ট দেয়। আমরা ভেবেছিলাম দেশ নৈতিকভাবে উন্নত হবে, বৈষম্য দূর হবে, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, হত্যাকারীরা শাস্তি পাবে, আর সেই শাস্তি অপরাধীদের ভয় দেখাবে; কিন্তু এমন কিছুই ঘটেনি।’ তবে রমজানের মতে, ইউনূস না থাকলে পরিস্থিতি হয়তো আরো খারাপ হতো। বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র ও দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের সংস্কার করার ভার বড় পরিমাণে এখন ড. ইউনূসের কাঁধে এসে পড়েছে। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে এখনো বিভাজন রয়েছে এবং এখানে প্রায় ৬০টি রাজনৈতিক দল সক্রিয়। ড. ইউনূসের প্রথম কাজ ছিল আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। বিপ্লবের পর লুটপাট, দাঙ্গা এবং সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করেছিল। যদিও এখন বাংলাদেশ কিছুটা স্থিতিশীল। এক হাজার ৪০০ জন শহীদের একজন আবু সাঈদ। এই গণ-অভ্যুত্থানেই শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের পতন ঘটে, পালিয়ে চলে যান ভারতে। তিনি এমন সময়ে দেশ ছেড়ে পালান, যখন দেশ অরাজকতার শেষসীমায় পৌঁছেছিল। তবে আশার আলোও ছিল। ছাত্ররা দেশের পুনর্গঠন চেয়েছিলেন। তারা একটি বৈষম্যহীন এবং কম দুর্নীতিগ্রস্ত গণতান্ত্রিক দেশ চেয়েছিলেন। এ আশায় তারা নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্র্বতী সরকারের শীর্ষে বসান। তিনি বাংলাদেশকে অস্থিরতা থেকে স্থিতিশীলতার দিকে নেতৃত্ব দেয়ার কাজটি গ্রহণ করেছিলেন। ইউনূসের পরবর্তী লক্ষ্য ছিল, একটি ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি শুরু করা। এ লক্ষ্যে তিনি ১১টি কমিশন নিয়োগ করেন সংস্কারের প্রস্তাব দিতে, যার মধ্যে নির্বাচনব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা এবং পুলিশ সংস্কার অন্তর্ভুক্ত। এর সামগ্রিক লক্ষ্য ছিল, শেখ হাসিনা ক্ষমতা ধরে রাখতে যেসব প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এনেছিলেন সেগুলোর সংস্কার করা। কিন্তু এই সংস্কারের কমই বাস্তবায়িত হয়েছে। এর আশাও এখন হাল ছাড়ার অবস্থায়। আন্দোলনের সময় পায়ে গুলিবিদ্ধ হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ সালেহীন অয়ন। তিনি বলেন, ‘এখন সবকিছু যেন বিশৃঙ্খল মনে হচ্ছে। আমাদের স্বপ্নগুলো এখনো পূরণ হয়নি।’ এই শিক্ষার্থী জানান, ছাত্রনেতারা তাড়াহুড়োর মধ্যে পরিকল্পনা শুরু করেছিল, তা এখন ফিকে হয়ে আসছে। গত সপ্তাহে ড. ইউনূস ঘোষণা করেছেন, বাংলাদেশের পুনর্গঠিত ভোটিং সিস্টেমের অধীনে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যদিও রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতবিরোধের কারণে এখনো অনেক বিষয়ে সমাধান করা বাকি রয়েছে। শেখ হাসিনার পতনের বার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া ভাষণে ইউনূস বলেছেন, তার সরকার সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত একটি দেশ পেয়েছিল। তবে এটি ধীরে ধীরে পুনর্গঠন করা হচ্ছে। তিনি জানান, তার সরকার নির্বাচিত সরকারের হাতে দেশের পরিচালনার দায়িত্ব হস্তান্তর করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সব দলেই তরুণ ভোটাররা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর গড় বয়স প্রায় ২৬ এবং দেশের অনেক তরুণই এমন সময় বড় হয়েছে যখন তারা শুধু হাসিনার শাসনই দেখেছে। চলচ্চিত্র নির্মাতা সাঈদ খান সাগর বলেন, ‘আমরা, এই প্রজন্ম, গণতন্ত্রকে ভালোভাবে বুঝি না, কারণ আমরা এটি কখনো দেখিনি। সুতরাং রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে নাগরিকরা শান্তিতে জীবনযাপন করবে, কোনো ধরনের ভয়ের ছায়া ছাড়া।’ বাংলাদেশে অর্থনীতি ধীর গতিতে এগোচ্ছে। এ অবস্থায় অধিকাংশ দেশটির মানুষজনের দৈনন্দিন জীবনেও উদ্বেগ বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ৫.৮ শতাংশ থেকে কমে ৪.২ শতাংশে নেমেছে। ঢাকায় এয়ার কন্ডিশনার ও ফ্রিজ মেরামতের দোকান চালানো ৩৭ বছর বয়সী আবদুল কাদের জানান, গণ-অভ্যুত্থানের পর তার আয় ১০ শতাংশ কমেছে। তিনি বলেন, ‘মানুষের কাছে মনে হচ্ছে পর্যাপ্ত টাকা নেই, আর যারা টাকার মালিক তারা খরচ করতে চাচ্ছে না।’




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা