আজ শনিবার | ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২২ ভাদ্র ১৪৩২ | ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭ | সকাল ৯:১৬

নির্বাচন বানচালে আ’লীগের ষড়যন্ত্র

ডান্ডিবার্তা | ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ৮:৪১ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ অন্তর্বতী সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করে শেখ হাসিনাকেই প্রধানমন্ত্রী দাবি করছে এবং দেশ-বিদেশে বহুমুখী ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তারা প্রোপাগান্ডা ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় জনমত প্রভাবিত করে নির্বাচনী প্রক্রিয়া ব্যাহত ও দেশে অরাজকতা তৈরি করে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার চেষ্টা করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য আওয়ামী লীগ হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে। জানা গেছে, শেখ হাসিনার সঙ্গে একাধিক বৈঠকে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসন ফেরাতে পরিকল্পনা করেছেন। সম্প্রতি দিল্লিতে তিনি পলাতক শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে ২৫০০ কোটি টাকা হস্তান্তর করেন এবং আরও দুই হাজার কোটি টাকার প্রতিশ্রুতি দেন। তাদের ধারণা, একবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেলে তাদের ক্ষমতায় ফিরে আসার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। তাই তারা অন্তর্বতী সরকারের আমলেই দেশে বড় ধরনের অরাজকতা, মব ভায়োলেন্স এবং সহিংসতা সৃষ্টির মাধ্যমে একটি সংকট তৈরি করতে চাইছে। এই লক্ষ্যে তারা বিভিন্ন স্থানে জনমনে ভয়ভীতি সৃষ্টি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করছে। গত ৩১ আগস্ট ধানমন্ডিতে তাদের প্রকাশ্যে মিছিল করাকে এই ষড়যন্ত্রের একটি অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে তারা শক্তি প্রদর্শন এবং অন্তর্র্বতী সরকারের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের গবেষণা সংস্থা সিআরআই-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা অন্তর্বতী সরকার ও বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে সাইবার হামলা, প্রোপাগান্ডা ও বিভেদ তৈরির মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ কার্যক্রম অবাধ নির্বাচন এড়ানো ও দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কৌশল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, আওয়ামী লীগের এই তৎপরতার পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো অন্তর্র্বতী সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এড়ানো, কারণ তারা জানে যে, এমন নির্বাচনে তাদের জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ এবং দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা, যাতে তারা নিজেদের ‘নির্যাতিত’ হিসেবে উপস্থাপন করে সহানুভূতি অর্জন করতে পারে এবং বিদেশি হস্তক্ষেপের পথ সুগম হয়। এই কৌশলকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। বর্তমান নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ভূমিকা বিশেষভাবে আলোচনায় রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দুটি দলই ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত সাধারণ নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করছে। জামায়াত মূলত পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ও সাংবিধানিক সংস্কারের দাবি সামনে এনেছে। গত ১ সেপ্টেম্বর জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও আগামী জাতীয় নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়নের দাবিতে শক্ত অবস্থান নেওয়া হয়। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, সংবিধানে এ ধরনের পদ্ধতি নেই, আইন পরিবর্তন ছাড়া এটি সম্ভব নয়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, জামায়াত জানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে তাদের শক্তিশালী অবস্থান তৈরি হবে না। তাই সময়ক্ষেপণই তাদের এই কৌশল, যাতে অন্তর্বতী সরকারের অধীনে প্রশাসন ও রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে তারা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারে। অভিযোগ আছে, অভ্যুত্থানের পর সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে জামায়াত। জানা গেছে, দেশের অন্তত ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে মনোনীত হয়েছেন জামায়াত সমর্থকরা। প্রশাসনের শীর্ষ পদ থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়েও একই প্রভাব বিস্তার করেছে তারা। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও তাদের এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, বিএনপি ক্ষমতায় ফিরলে এই সুবিধাগুলো হারানোর আশঙ্কা করছে জামায়াত। সেই কারণেই তারা নির্বাচনের ব্যাপারে তেমন আগ্রহী নয়, যা একটি ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনমুখী পরিবেশ তৈরির পথে বড় বাধা হিসেবে দেখা দিচ্ছে। অন্যদিকে, এনসিপি সংবিধান পরিবর্তন ও সংস্কারের আগে নির্বাচন চায় না। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বিদেশে এক অনুষ্ঠানে এবং দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ঢাকায় এক সম্মেলনে বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না। তারা এর যৌক্তিকতা হিসেবে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে একটি গণপরিষদ ভোটের দাবি জানাচ্ছে। এনসিপি মনে করে, জুলাই সনদে উল্লেখিত বিষয়গুলোকে আইনি কাঠামো দেওয়া এবং একটি গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের শাসনতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা উচিত। নির্বাচন ঠেকানোর বিভিন্ন ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে বিএনপি সতর্ক ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। দলের পক্ষ থেকে অন্তর্র্বতী সরকারের বিভিন্ন কর্মকা-ের সমালোচনা করা হলেও, এখনও পর্যন্ত তারা সরকারের প্রতি সমর্থন জারি রেখেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি একটি কৌশলী পদক্ষেপ, যাতে বিএনপি অন্তর্র্বতী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং একই সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে। এ ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যে গঠিত ঐকমত্য কমিশনের বিভিন্ন মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবের ক্ষেত্রে বিএনপি নিজেদের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুবউল্লাহ বলেন, “বিএনপি যেহেতু নির্বাচন চাইছে এবং মনে করছে, নির্বাচন হলে দেশের অবস্থা ভালোর দিকে যাবে, তাই তাদের দায়িত্ব হলো ধীরস্থিরভাবে কাজ করা, যাতে নির্বাচন বানচাল না হয়। এজন্য অন্য দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা জরুরি। বড় দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব বেশি। ”




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা