আজ সোমবার | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৩১ ভাদ্র ১৪৩২ | ২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭ | রাত ৯:১০

বিএনপির বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি চক্র সক্রিয়

ডান্ডিবার্তা | ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ১০:৫৪ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জের বিএনপি নেতারা ঐক্যবন্ধ না থাকায় বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আটকাচ্ছেন। আর ঐক্যবদ্ধ না থাকলে আগামীতে যে ভরাডুবি হবে তা অনুমেয় করা যাচ্ছে। এদিকে ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে দেশে-বিদেশে বেশ বিশ্লেষণ চলছে। শিবিরের অভাবনীয় বিজয়কে পুঁজি করে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপিকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার এক ধরনের বয়ান নিয়ে দেশি-বিদেশি একটি চক্র এখন মাঠে নেমেছে। তাদের এই বয়ানের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে, বাংলাদেশে এখন জামায়াত ছাড়া বিকল্প কোনো দল নেই, তা প্রতিষ্ঠিত করা। তারা পরোক্ষভাবে বোঝাতে চাচ্ছে, জামায়াতকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী করে ক্ষমতায় আনতে হবে। এজন্য দেশে-বিদেশে বিএনপির ভাবমর্যাদা বিনষ্ট করার মিশন নিয়ে নেমেছে তারা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে একই কাতারে ফেলছে। এই মিশনের লক্ষ্য, বিএনপি যতটা না মন্দ কাজ করেছে, সেগুলোকে ম্যাগনিফাই বা অতিবড় করে তুলে ধরা। ডাকসুতে শিবিরের বিজয়ের পর গত বৃহস্পতিবার ভারতের কংগ্রেস নেতা শশী থারুর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেয়া তার পোস্টের এক জায়গায় লিখেছেন, বাংলাদেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ও বিএনপিÑউভয়ের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা হারানোর কারণে ভোটাররা বিকল্প হিসেবে জামায়াতের দিকে ঝুঁকছেন। অধিকাংশ ভারতীয় হয়তো ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। বিজেপির থিঙ্কট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও রাজ্যসভার সদস্য হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, ‘বাংলাদেশে জামায়াত নতুন করে শক্তি অর্জন করায় ভারতকে সতর্ক থাকতে হবে’। শশী থারুর দাবি, বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও অযোগ্যতায় হতাশ হয়ে পড়েছে। ফলে যারা উভয় দলের ব্যর্থতা থেকে মুক্তি চাইছেন, তারা জামায়াতকে বিকল্প শক্তি হিসেবে দেখছেন। তার মতে, ভোটাররা উগ্রবাদ বা মৌলবাদে বিশ্বাসী বলে জামায়াতের দিকে ঝুঁকছেন না; বরং তারা জামায়াতকে তুলনামূলকভাবে অকলুষিত শক্তি হিসেবে দেখছেন, যেটি এখনও মূলধারার রাজনীতির দুর্নীতি বা বিশৃঙ্খলায় ডুবে যায়নি। এই প্রবণতা যদি অব্যাহত থাকে, তবে আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে এর বড় ধরনের প্রভাব দেখা যেতে পারে। শশী থারুর এই প্রতিক্রিয়ার দুটি দিক রয়েছে। প্রথমত, দুর্নীতি বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপিকে একসারিতে মিলিয়ে দেখা। দ্বিতীয়ত, জামায়াতকে নিষ্কলুষ ও পরিশুদ্ধ দল হিসেবে উপস্থাপন করা। অস্বীকার করার উপায় নেই, প্রায় দুই যুগ আগে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় দুর্নীতি হয়েছিল। তবে তা গত দেড় দশক ধরে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সরকারের তুলনায় নস্যি। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে কী পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে, তা সকলের জানা। অন্তর্র্বতী সরকার তার একটি হিসাবও দিয়েছে। দেড় দশকের প্রতিবছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার হিসেবে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার দেশ থেকে লুটপাট করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার লন্ডনভিত্তিক দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস (এফটি) ‘বাংলাদেশের হারানো বিলিয়ন : চোখের সামনেই চুরি’ শিরোনামে একটি বিস্তারিত তথ্যচিত্র প্রচার করেছে। তথ্যচিত্রে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার (২৮ লাখ ৫৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা) বাংলাদেশ থেকে লুট হয়েছে। এ হিসেবে বলা যায়, বাংলাদেশের প্রায় তিনটি বার্ষিক বাজেট আওয়ামী লীগ লুট করে অর্থনীতিকে তলানিতে রেখে বিদায় নিয়েছে। ফলে দুই যুগ আগে চারদলীয় জোট সরকারের সময়ের দুর্নীতির সাথে এই দুর্নীতির তুলনা কোনোভাবেই হতে পারে না। অথচ শশী থারুর আওয়ামী লীগের দুর্নীতির সাথে চারদলীয় জোট সরকারের দুর্নীতিকে এক ঝুড়িতে রেখে মন্তব্য করেছেন। বলা বাহুল্য, চারদলীয় জোট সরকারে তো শুধু বিএনপি ছিল না, জামায়াতও ছিল। দুর্নীতির সেই বদনাম তো জামায়াতেরও প্রাপ্য। অথচ তিনি এ তথ্য উল্লেখ না করে জামায়াতকে নিষ্কলুষ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। বিএনপি প্রায় দেড় যুগ ধরে ক্ষমতায় নেই। দুর্নীতি করা দূরে থাক, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের নিপীড়ন, নির্যাতন, খুন, গুম, হামলা-মামলায় দলটির নেতাকর্মীরা দৌঁড়ের উপর ছিল। তাদের জীবন বাঁচানো দায় হয়ে পড়েছিল। অস্বীকার করার কিছু নেই, গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর বিএনপির একশ্রেণীর নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলদারিত্বের অভিযোগ রয়েছে। যারা এসবের সাথে জড়িত, চিহ্নিত হওয়ার সাথে সাথে দল থেকে তাদের বহিষ্কারও করা হয়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। গণমাধ্যমের মতে, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অপকর্মের অভিযোগে এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে কারো কারো বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আহ্বান জানিয়ে বলেছে, বিএনপির নামে যারাই চাঁদাবাজি ও অপকর্মে জড়াক না কেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে। দলটি দলের দুর্বৃত্ত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থানে রয়েছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে দেশি-বিদেশি একটি গোষ্ঠী বিশেষ করে ভারত আওয়ামী লীগের সীমাহীন দুর্নীতির সাথে তুলনা করে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে এবং বিএনপিকে দুর্নীতিবাজ দল হিসেবে তুলে ধরছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, এটি বিএনপিকে মাইনাস করা এবং আগামী নির্বাচনে যাতে তারা ক্ষমতায় আসতে না পারে, তার একটি দূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র। এ কথা সকলেরই জানা, অন্তর্বতী সরকারের ওপরও জামায়াতের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। অন্তর্বতী সরকার গঠনের পরপরই জামায়াতের আমীর শফিকুর রহমান সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘এ সরকারের ওপর আমাদের অনেক প্রভাব আছে।’ তার এ কথার প্রতিফলন তো বিগত এক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে। প্রশাসন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, মাদরাসা বোর্ড, শিক্ষা কারিক্যুলাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদরাসা, গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সর্বত্র তার সমর্থকদের বসিয়ে দেয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৪১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগেই জামায়াত সমর্থিতদের ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সচিব, ডিসি, ইউএনও থেকে শুরু করে মাঠ প্রশাসনের সর্বত্র জামায়াত সমর্থিতদের আধিপত্য। এ কথা এখন বহুল প্রচলিত যে, জামায়াত অন্তর্র্বতী সরকারের ছায়া সরকার। জামায়াতের ওপর অন্তর্র্বতী সরকারের ব্লেসিং রয়েছে। দলটি ক্ষমতা উপভোগ করছে। এ কথাও প্রচলিত, এ সরকারের সময়ে যত সরকারি টেন্ডার ও প্রকল্পের কাজ রয়েছে, তার বেশিরভাগই জামায়াত সমর্থিতরা পাচ্ছে। তাহলে, এখানে বিএনপির অবস্থান কোথায়? ১৫ বছরে বিএনপির প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এমনকি একজন নেতার বিরুদ্ধে ২০টি থেকে ৫’শ মামলা করা হয়েছে। গুমÑখুন-জুলুম-নির্যাতন মেকাবিলায় ব্যস্ত থেকেছে বিএনপি। টিকে থাকাই ছিল দায়, বিএনপির কি দুর্নীতি করার সুযোগ আছে? বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, জামায়াতের এই নিরঙ্কুশ প্রভাব বিস্তার নিয়ে মিডিয়া এবং ভারত-জামায়াত স্তাবক গোষ্ঠীর কোনো কথা নেই। তারা কেবল মাঠ পর্যায়ের বিএনপির একশ্রেণীর নেতাকর্মীর চাঁদাবাজিকে বড় করে তুলে ধরে বিএনপিকে দুর্নীতিবাজ ট্যাগ দিচ্ছে। এটা যে বিএনপিকে ম্যালাইন করে জামায়াতকে মহান করে তোলার ভারতীয় মিশন, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। তাদের এখন লক্ষ্য একটাই, আওয়ামী লীগকে যেহেতু পুণঃপ্রতিষ্ঠা সম্ভব হচ্ছে না; তাই বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে দেয়া যাবে না। স্বাধীনতার পর আমরা যদি জামায়াতের রাজনীতি অবলোকন করি, তাহলে দেখব, আওয়ামী লীগের সাথে তার একটি ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা