আজ রবিবার | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১৩ আশ্বিন ১৪৩২ | ৫ রবিউস সানি ১৪৪৭ | রাত ১:০১

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে হতাশা

ডান্ডিবার্তা | ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ৯:০৯ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে কে হচ্ছেন ধানের শীষের কর্নধার এনিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা। কে পাচ্ছেন বিএনপির মনোনয়ন। গত সোমবার থেকে সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে কিংবা নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন কেন্দ্রীক রাজনীতিতে ভিন্নমাত্রা যুক্ত হয়েছে মডেল গ্রুপের মালিক শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদের বিএনপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদানের বিষয়টি। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিএনপির কেন্দ্রীয় পার্টি অফিসে ডেকে নিয়ে মাসুদের যোগদানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সেখানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর হাতে ফুল দিয়ে যোগদানের বিষয়টি নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে রীতিমত তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। এমন বিষয়টিকে কেউ কেউ নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে মাসুদকে আগাম মনোনয়ন দেয়ার সবুজ সংকেত হিসেবে দেখছেন। যেখানে আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর বিএনপির কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষণা ছিল বিএনপির রাজনীতিতে কাউকে যোগদান করানো যাবে না। কিন্তু মডেল মাসুদ কি ভেল্কি দেখালো যে, তাকে নিয়ে কেন্দ্রীয় পার্টি অফিসে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যোগদান করানো হলো? নারায়ণগঞ্জে বিএনপি চালাতে হটাত মাসুদের কেন প্রয়োজন পড়লো? এই ঘটনায় রাজপথের সক্রিয় ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাঝে চরম হতাশার সৃষ্টি হওয়ায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তাহলে আওয়ামীলীগ সরকার আমলের বিগত সাড়ে ১৫ বছর সহ ১৭টি বছর রাজপথে রক্ত ঝড়ানো ত্যাগী নেতাদের কি হবে? যদি হুট করে রাজনীতিতে এসেই রাজনীতির মাঠে ধনকুবের রাজনীতির মোড়ল সেজে যায় তাহলে দীর্ঘ রাজনৈতিক আন্দোলনের ফসল কোথায়? যদি তেমনটাই হয় তাহলে কি আগামী জাতীয় নির্বাচনে এই আসন থেকে রাজপথের ত্যাগীদের বাদ দিয়ে ধনকুবের শিল্পপতির হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক? এমন নানা আলোচনায় নারায়ণগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটির ত্যাগী সক্রিয় রাজপথের নেতাকর্মীরা চরম হতাশ হয়েছেন। সূত্রমতে, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে একাধিকবার বিএনপির মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম। তিনি তার রাজনীতিতে কখনই রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেননি। যদিও বিএনপির প্রয়াত নেতা জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেও জামানত হারানো আবুল কালাম বিএনপির মনোনয়নে একাধিকবার এমপি হোন। এবারও তিনি সেই আশা নিয়ে আছেন। ২০১৮ সালে এই আসনে দলের প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পান আবুল কালাম ও মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি নাসিকের ৪বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা প্রয়াত এসএম আকরাম ধানের শীষ প্রতীকে চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন পান। ২০১৮ সালের দলের মনোনয়ন না পেলেও ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে মেয়র পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন মহানগর বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। তার অনুগামীরা ধরে নিয়েছিলেন আগামী নির্বাচনে এই আসনে তিনি মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন। কিন্তু মডেল মাসুদের রাজকীয় উত্থানে সাখাওয়াত শিবিরে চরম হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। একইভাবে আশায় গুড়ে বালি পড়েছে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুর ক্ষেত্রেও। তার অনুগামীরাও বেশ প্রচারণায় ছিলেন তার পক্ষে। মডেল মাসুদের এমন উত্থানে যেনো, তাদের ঝলমলে আকাশ, কালো মেঘে ঢেকে গেল। ১/১১ এর মত কঠিন সময়েও বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন সাখাওয়াত হোসেন খান, আবু আল ইউসুফ খান টিপু, মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ সহ হাতে গোনা কয়েকজন নেতা। ২০০৯ সাল থেকে বিএনপির রাজনীতিতে সামনে থেকে রাজপথে নেতৃত্ব দিয়ে বহু হামলা মামলা নির্যাতনের শিকার হোন খোরশেদ। ওই বছরের ২৫ নভেম্বর জেলা বিএনপির সম্মেলনের পর সাখাওয়াত ও টিপু তাদের নেতা তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকারের নেতৃত্বের বাহিরে গিয়ে শহর বিএনপির বিদ্রোহী কমিটিতে সাখাওয়াত সেক্রেটারি ও টিপু সাংগঠনিক সম্পাদক নিজেকে ঘোষণা করেন। বিদ্রোহী বলয় নিয়ে খুড়কুটো ধরে বিএনপির রাজনীতিতে টিকে ছিলেন সাখাওয়াত ও টিপু। ওইদিকে তৈমুর আলমের ভাই হিসেবে খোরশেদ রাজপথের নেতৃত্বে সচল ভুমিকা রেখে চলেছেন। ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব হিসেবে সাখাওয়াত ও টিপু দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ভুমিকা রাখেন তারা। এর আগে মাঝের প্রায় দেড় যুগ রাজপথে ভুমিকা রাখেন খোরশেদ। এদিকে আগামী নির্বাচনে যখন আবুল কালাম, সাখাওয়াত হোসেন খান, মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে নিয়ে মনোনয়ন পাওয়ার লড়াই নিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে আলোচনা চলছিল, ঠিক সেই সময়ের মাঝে মডেল মাসুদের উত্থান ঘটলো। খোরশেদ, সাখাওয়াত ও টিপুর মধ্যে তিনজনই কম বেশি হামলা মামলা জেল জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কালামের রাজপথে নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিতে যখন তারা তিনজন ব্যস্ত, ঠিক সেই সময় তাদের উপর সাপে ভর হয়েছে মডেল মাসুদের এমন রাজকীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতিতে যোগদানের বিষয়টি। নেতাকর্মীদের মনে প্রশ্ন জেগেছে, তাহলে আগামী নির্বাচনে এই আসনে কি বিএনপির পছন্দ শিল্পপতি নাকি রাজপথে রক্ত ঘাম ঝড়ানো কোনো কর্মী?




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা