আজ শনিবার | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১২ আশ্বিন ১৪৩২ | ৪ রবিউস সানি ১৪৪৭ | বিকাল ৩:১৬

ওসমান সাম্রাজ্য পুনর্বাসনের চেষ্টা!

ডান্ডিবার্তা | ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ৭:১৬ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
প্রাচ্যের ড্যান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জ সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল ওসমান পরিবারের জন্য। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের পুরোটা সময় নারায়ণগঞ্জে রাজত্ব ছিল ওসমান পরিবারের। সন্ত্রাসীদের গডফাদার শামীম ওসমানের নিয়ন্ত্রনে ছিল নারায়ণগঞ্জ শহর। আর ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে ৭২টি ব্যবসায়ী সংগঠন নিজের নিয়ন্ত্রনে রেখেছিলেন সেলিম ওসমান। ওসমান পরিবারের দুই সন্তান সন্ত্রাসী অয়ন ওসমান ও আজমেরী ওসমান নিজেকে নারায়ণগঞ্জের কিং বলে পরিচয় দিতেন। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ওসমান পরিবার বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে পুরো নারায়ণগঞ্জকে রেখেছিলেন হাতের মুঠোয়। আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় শামীম ওসমান হয়ে উঠেন নারায়নগঞ্জের অলিখিত মালিক। শামীম ওসমান প্রায় সময়ই বিভিন্ন সভা-সমাবেশে প্রশাসনের সামনে প্রকাশ্যেই অহংকার করে নিজের অস্ত্রবাজিসহ নানা অপকর্মের কথা তুলে ধরতেন। বহু টর্চার সেল নির্মাণ করে গুম-খুন, নির্যাতন, প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, ক্যাডার বাহিনী নিয়ন্ত্রন, দুর্নীতি ও অনিয়মসহ নিজ দলের রাজনীতিবিদদের ঘায়েল ও প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করে রাখতে শামীম ছিলেন দশে দশ! সর্বমহলেই তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ থাকতো। গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের আন্দোলনে আওয়ামীলীগ সরকার পতন হলে বিদেশে পালিয়ে যায় ওসমান ওসমান পরিবার । ওসমান পরিবারহীন নারায়ণগঞ্জবাসী স্বস্থিতে থাকলেও তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ওসমান পরিবারের আতংক এখনো কাটেনি জনমনে। কেননা ওসমানীয় ঘনিষ্টজনরা রয়েছেন বহাল তবিয়তে। বরং ধীরে ধীরে ওসমান পরিবারের নিয়ন্ত্রনে থাকা বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রনে নিচ্ছেন তারই ঘনিষ্টজনরা। নারায়ণগঞ্জে ওসমানীয় সাম্রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ওসমান ঘনিষ্ঠদের পুনর্বাসন করছে বিএনপি- এমনটাই অভিযোগ সচেতন নারায়ণগঞ্জবাসীর। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির কথিত কিং মেকার ও সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আলী ছিলেন ওসমান পরিবারের ঘনিষ্টজনদের মধ্যে অন্যতম। প্রয়াত নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে সেলিম ওসমান নির্বাচনে অংশ নিলে প্রথমে সেলিম ওসমানের পক্ষে ভোট চেয়ে ওসমানীয় সম্রাজ্যে যোগ দেন। এরপর থেকে ওসমান পরিবারের সাথে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নেন। মোহাম্মদ আলী নিজের রাজত্ব ধরে রাখতে সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী ও ওসমান পরিবার উভয়ের সাথেই সুসম্পর্ক রাখতেন। ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর ওসমান পরিবার পালিয়ে গেলেও তাদের বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা চালিয়ে যান মোহাম্মদ আলী। তার ভাতিজা ও ভাগ্নেরা দখলবাজী শুরু করেন ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকায়। তবে ২৪ মার্চ দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে অনুদান বিতরণ অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে তোপের মুখে পড়েন মোহাম্মদ আলী। দীর্ঘদিনে অভ্যাসের কারণে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন তিনি। এই ব্যক্তব্যকে কেন্দ্র করে মোহাম্মদ আলীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রতিরোধের ঘোষণা দেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুসহ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দরা। পরবর্তিতে সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষমা চান মোহাম্মদ আলী। ওসমান পরিবারের ঘনিষ্টজনদের মধ্যে একজন মোহাম্মদ হাতেম। সেলিম ওসমান দীর্ঘসময় বিকেএমইএ’র সভাপতি থাকলে পরিচালনায় ছিলেন মোহাম্মদ হাতেম। ৫ আগস্টের পর সেলিম ওসমান আত্মগোনে থেকেই সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করে হাতেমকে সভাপতি করেন। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা সৃষ্টি হলে গত ১০ মে ড্যামি নির্বাচনের মাধ্যমে বিনা ভোটে ফের সভাপতি হন মোহাম্মদ হাতেম। হাতেম প্যানেলে সেলিম ওসমান পর্ষদের ২০ জন রয়েছে। মোহাম্মদ হাতেম সেলিম ওসমানের সহযোগি হয়ে বছরের পর বছর বিকেএমইএ নিয়ন্ত্রণ করেছেন। ৫ আগষ্টের পর ভোল পাল্টে সে বিকেএমইএ’র সভাপতি হয়ে সেলিম ওসমানের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছেন। পাশাপাশি আবির্ভূত হয়েছেন ঝুট বাবা হিসেবে। বিসিক এলাকায় ঝুট ব্যবসার মূল নিয়ন্ত্রক হিসেবে ঘুরেফিরে হাতেমের নামটিই ব্যবহার করেন নানাজন। সরকার পতনের পরও গোটা ফতুল্লায় ঝুট ব্যবসার প্রচ্ছন্ন নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করেন হাতেম। ফ্যাসিস্টদের বিদায়ের পর বিকেএমইএতে ওসমানদের ছায়া হিসেবে মোহাম্মদ হাতেম এখনো তাদের নির্দেশনায় কাজ করছেন বলে অভিযোগ সর্বমহলে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ২০২৪ সালের ২২ জুলাই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সাথে বৈঠকে বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মো হাতেম বলেছিলেন, “যে তা-ব আমরা গত কয়েক দিনে দেখেছি, আমরা আশা করব, সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্য যারা আছেন, তারা উদযাঘটন করবেন এবং আইনের আওতায় আনবেন।“ব্যবসায়ী সমাজ আপনার (শেখ হাসিনা) পাশে ছিল, থাকবে।” হাতেম বলেন, “দুটো অনুরোধ। কারখানাগুলো যদি আমরা চালু রাখতে পারি, তাহলে শ্রমিকরা ভেতরে সুশৃঙ্খল পরিবেশে থাকবে। বাইরে থাকলে তাদের অন্যরা ব্যবহার করতে পারে, তাদের ভেতরে থাকাটাই নিরাপদ। “ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। স্বল্প পরিসরে হলেও ইন্টারনেটটা যাতে চালু করা যায়।” হাতেমের সেই ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের আরেক সহযোগী হলেন মডেল গ্রুপের কর্ণধার মাসুদুজ্জামান মাসুদ। সেলিম ওসমানের একান্তর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে প্রায়ই তাকে মঞ্চে দেখা যেতো। নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে দীর্ঘদিন যারা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে তাদেরকে হতাশ করে দিয়ে ৫ আগস্টের পর থেকে শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ ওরফে মডেল মাসুদ নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষের মনোনয়ন চাইছেন। এ লক্ষ্যে তিনি ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অতি সম্প্রতি তিনি বিশাল আয়োজন করে ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেন যা দেখে তৃণমূল নেতাকর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তৃণমূল মনে করে বিএনপির গত ১৭ বছরের আন্দোলন সংগ্রামে একদিনের জন্যও রাজপথে দেখা যায়নি মডেল মাসুদকে। বরং সে সময়ে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপিদের সভা সমাবেশে প্রায়ই দেখা মিলেছে তার। দুঃসময়ের আন্দোলন সংগ্রামে যখন সারা দেশে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছে তখন মাসুদুজ্জামান মাসুদ পুরোপুরি ব্যবসায়ী মেজাজে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে পাল্লা দিয়ে সমান তালে ব্যবসা করেছেন, কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। গত ১৫ বছরে সরকার বিরোধী আন্দোলনের মিটিং মিছিলে একবারের জন্যও দেখা মিলেনি মডেল মাসুদের। সারাদেশে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা সরকারের মামলা হামলায় জর্জরিত হলেও মডেল মাসুদকে কোনদিন পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ বিরক্ত করেনি। দলের দুঃসময় কেটে যাওয়ায় মঞ্চে আবির্ভূত হয়েছেন এই ব্যবসায়ী। আওয়ামী লীগের আমলে কামানো কোটি কোটি টাকা নিয়ে নেমে পড়েছেন মনোনয়ন কেনার প্রতিযোগিতায়। মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১২নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সেলিম ওসমানের পক্ষে নির্বাচনী সভা করেছিলেন। এজন্য তাকে দল থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছিল। সেলিম ওসমানের ঘনিষ্টজনদের মধ্যে অন্যতম হলেন শকু। সেলিম ওসমানের অবর্তমানে শকুই সকল দায়িত্ব পালন করতেন। অথচ আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর সেই শকু বিএনপির নেতাদেও সাথে আতাঁত করে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টার করছেন। সম্প্রতি জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানের কারামুক্তির দিন তার সাথে দেখা গেছে শওকত হাশেম শকুকে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা