আজ শনিবার | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১২ আশ্বিন ১৪৩২ | ৪ রবিউস সানি ১৪৪৭ | রাত ৯:৩৪

বুড়িগঙ্গার শাখা নদী এখন ময়লার ভাগাড়

ডান্ডিবার্তা | ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ৮:৪২ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
এক সময়ের খরস্রোতা বুড়িগঙ্গার শাখা নদীটি এখন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। গৃহস্থালি বর্জ্য, প্লাস্টিক আর আবর্জনার স্তূপে নদীর অস্তিত্ব প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। উৎকট দুর্গন্ধে আশপাশের প্রায় দশটি এলাকার মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বর্ষাকালে কিছুটা স্বস্তি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে দুর্গন্ধ এত বেড়ে যায় যে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়াও কষ্টকর হয়ে পড়ে এসব এলাকার মানুষের। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশীপুর এলাকার শাখা নদীটির অবস্থা এমনই করুণ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন টনকে টন বর্জ্য ফেলায় দূষিত হয়ে গেছে এর পানি। নদীর তীরবর্তী হাজীপাড়া, চর কাশীপুর, চর নরসিংপুর, ভোলাইল, গেদ্দরবাজার এবং শান্তিনগর এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষ এই দুর্ভোগের শিকার। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুড়িগঙ্গার শাখা নদীতে একসময় বড়বড় জাহাজ লঞ্চ স্টিমার চলাচল করতো। প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জের পাট ব্যবসায় বিখ্যাত হওয়ার সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলার যোগাযোগ ছিলো এই নদীর সঙ্গে। একই সঙ্গে নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়া যেতো। স্থানীয় এলাকার লোকজন দিনের কাজ শেষে দুপুরে গোসলে নামতেন। আর তখন হাত দিয়েই বিভিন্ন রকমের মাছ ধরতেন পারতেন এখানকার মানুষ। নদীর পাশেই রয়েছে মারকাযুল উলুম আলইসলামিয়া মাদরাসা, যেখানে প্রায় ১২০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। মাদরাসার শিক্ষক আনোয়ার হোসেন জানান, দুর্গন্ধে নামাজসহ ইবাদতে মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। মাদরাসার হেফজ বিভাগের প্রধান শিক্ষক হাফেজ ফয়সাল আহমেদ বলেন, দুর্গন্ধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কষ্ট করে থাকতে হয়। অনেকে এ কারণে মাদরাসা ছেড়ে চলে গেছেন। বর্তমানে বর্ষার পানি থাকায় গন্ধ কিছুটা কমলেও শুষ্ক মৌসুমে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। নদীর তীরবর্তী এলাকা হাজীপাড়ার বাসিন্দা রহিমা বেগম বলেন, আশপাশের বাড়ি-ঘরের যতো ময়লা আছে সব এখানে ফেলা হয়। নদীটা এখন পুরোপুরি ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। কেউ বাধা দেয় না, আর কর্তৃপক্ষও কোনো ব্যবস্থা নেয় না। চর নরসিংপুরের বাসিন্দা ইসরাফিল বলেন, একসময় এই নদীতে বিভিন্ন রকমের মাছ পাওয়া যেত। ছোটোবেলায় মাছ শিকার করেই আনন্দ করতাম। এখন আর মাছ তো নেই-ই, নদীর কাছে যাওয়া যায় না দুর্গন্ধের কারণে। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরের চারদিকে নদী রয়েছে। এই জলাবদ্ধতা হবে এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কিন্তু দীর্ঘ দুই দশক শহরের একটি অংশ বৃষ্টি আসলেই পানির নিচে তলিয়ে যায়। আমি নারায়ণগঞ্জে যোগদানের পর থেকেই ব্যক্তিগতভাবে জলাবদ্ধ এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছি। খালগুলো উদ্ধার করার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে ৩ হাজার ৫৩৪ ট্রাক ময়লা সরানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বুড়িগঙ্গা শাখা নদীটিও একই কারণে বিলুপ্তির পথে। খাল উদ্ধারের পর তারা নদীগুলো পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু করবেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।

 




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা