উগ্রতার কারণে তমাল মার খেয়েছে বহুবার
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নারী কাউন্সিলর শারমিন হাবিব বিন্নীর সাথে তথাকথত ব্যবসায়ী তমাল আহমেদ এর বিরোধের নেপথ্য কারণ বেড়িয়ে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে একটি মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার ও চরিত্র হননের অপচেষ্টা চালালেও অনুসন্ধানে মিলেছে আসল তথ্য। শুধু কাউন্সিলর বিন্নিই নন, উগ্র স্বভাবের তমালের সাথে ঐ ভবনের আরো বেশ কয়েকজনের বাসিন্দার সাথে ইতিপূর্বেও মারামারি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। উগ্র স্বভাবের তমাল আহম্মেদ কয়েক বছর আগেও শহরের একটি ক্লিনিকে তার এই উগ্রতার কারণে বেদম মারধরের শিকার হয়েছিলেন বলে জানা গেছে। তাকে ব্যবসায়ী হিসেবে একটি মহল পরিচয় দিলেও প্রকৃত পক্ষে তিনি নগরীর একটি ব্যাগ তৈরীর কারখানার কর্মচারী বলে জানা গেছে। এদিকে কাউন্সিলর বিন্নির কাছ থেকে ফ্ল্যাট বিক্রির পুরো টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাকে ঐ ভবন থেকে উৎখাত করতেই নানা পায়তারা করছিল সুচতুর তমাল। বিশেষ করে ৬তলা ঐ ভবনের সামনে সিটি কর্পোরেশনের পাকা রাস্তা হওয়ার পর ভবনের ফ্ল্যাটের মূল্যের বাজার দর প্রায় দ্বিগুন হওয়ায় এই ফন্দি আটে তমাল এমন অভিযোগও রয়েছে। জানা গেছে, গত শুক্রবারের ঘটনার পর কাউন্সিলর বিন্নির বিরুদ্ধে যেসব মনগড়া অভিযোগ তমাল ও তার বড় ভাই করছেন তা একেবারেই মিথ্যা। কারণ গত সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বিন্নির মনোনয়ন ফরমে প্রস্তাবক হিসেবে তমালের বড় ভাই আইয়ুব আহম্মেদ এর নাম ছিল। স্থানীয়রা বলছেন, উপযুক্ত সম্মান না থাকলে ৩টি ওয়ার্ডের এত নামীদামী লোক থাকতেও তমালের বড় ভাইকে বিন্নি তার প্রস্তাবক বানাতেন না। স্থানীয়রা জানান, মূলত তমালের উগ্র ও অস্বাভাবিক আচরণে প্রায়শই অপ্রস্তত হয়ে যান তার পরিবারের লোকজন। সম্প্রতি ঐ ভবনের পাশে নির্মানাধীন আল জয়নাল ট্রেড সেন্টার এর মালিক জয়নাল আবেদীনের সাথে জমিজমা নিয়ে শালিসে নিজের বড় ভাইদের সামনেই জাতীয় পার্টির নেতা জয়নাল আবেদীনকে কয়েকবার মারতে তেড় যান উগ্র স্বভাবের তমাল। এই ঘটনায় উপস্থিত সবাই অপ্রস্তুত হয়ে পরেছিলেন। অপরদিকে বিন্নিকে নানাভাবে মানসিক যন্ত্রনা দিয়ে ঐ ভবন থেকে উৎখাত করতে ফন্দি আটে তমাল। ভবনের নিচে সিটি কর্পোরেশনের রাস্তার ধার ঘেষে রেলওয়ের জায়গায় সৌন্দর্য বর্ধনে ফুলের গাছ রোপন করেন কাউন্সিলর বিন্নি। কয়েক মাস আগে বেশ কয়েকবার সেখানে থাকা জীবন্ত গাছ ও টব ছুড়ে ফেলে দেন তমাল। বিষয়টি জানতে চাইলে তমাল তখন বিন্নির সাথে বাজে আচরন করে জানায় এই বাড়ীর মালিক তারা। অনুমতি ছাড়া গাছ লাগানো যাবেনা। বিষয়টি নিয়ে বিন্নি বেশ কয়েকবারই তমালের বড় ভাই ইকবাল আহমেদ ও আইয়ুবকে জানালেও তারা তমালের উগ্রতার কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাড়ীর বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এত বড় ভবনে দারোয়ান থাকলেও তার কোন পয়:নিস্কাশনের ব্যবস্থা রাখেনি হাউজিং কোম্পানী। মূলত ঐ হাউজিং কোম্পানীও তমালদের পারিবারিক বলে জানান বাসিন্দারা। ভবনটিতে লিফট লাগানোর কথা থাকলেও সেই লিফট লাগানো হয় অনেক বছর পর। প্রায়শই বিদ্যুতের লাইন কেটে দিয়েছিল ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া পাশের জমির মালিকের সাথেও তাদের জমি নিয়ে বিরোধ আছে। এসব নানা অসঙ্গতির বিষয়ে ফ্ল্যাট মালিক ও ভাড়াটিয়ারা দ্বারস্থ হতেন স্থানীয় কাউন্সিলর ও ঐ বাড়ীর বাসিন্দা বিন্নির কাছে। ফলে বিন্নির প্রতিবাদের কারণে আগে থেকেই চক্ষুসূল হয়ে উঠেন বিন্নি। বাসিন্দাদের কয়েকজন জানান, ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রিতে বিলম্ব, বাসিন্দাদের গাছ তুলে ফেলে দেয়াসহ নানা কারণে তমালের সাথে ঐ ভবনের ২ফ্ল্যাট মালিকের সাথে এর আগেও পৃথক পৃথক মারামারির ঘটনা ঘটেছিল। অপরদিকে ফ্ল্যাটের পুরো টাকা পরিশোধের পরও প্রায় ২বছর ধরে বিন্নিকে রেজিস্ট্রি করে দিচ্ছিল না তমাল আহম্মেদ। বারবার বলার পরেও কালক্ষেপন করে তমাল নানাভাবে জটিলতা সৃষ্টি করছিল। কাউন্সিলর বিন্নি জানান, তমাল আহম্মেদ ও তার ভাই বোনরা পৈত্রিক সূত্রে জমি পেয়ে একটি ডেভেলপার কোম্পানীর সাথে ঐ ৬তলা ভবনটি নির্মাণ করেন। ঐ ভবনের ২য় তলার পশ্চিম-উত্তর কোণে ৯৪৫ বর্গফুট বিশিষ্ট ১/ডি ফ্ল্যাটের মালিক ছিলেন তমাল। আমাদের আলোচনায় ফ্ল্যাটটি আটত্রিশ লাখ টাকা দাম নির্ধারণ করা হলে আমি আমি প্রথম দফায় নগদ ছয় লাখ এবং গত ২২শে মে ২০১৯ ( ডাচ বাংলা ব্যাংক- রেফারেন্স নং ২৪০৫২৭৫) ইনহাউজ চেকের মাধ্যমে বোত্রিশ লাখ টাকা তমাল আহম্মেদকে পরিশোধ করি। বিগত ২৫ শে জুলাই ২০১৯ তারিখে তমাল আহম্মেদ একটি একটি বায়না চুক্তি সম্পাদন করলেও সেখানে তিনি পরিপূর্ণ টাকা উল্লেখ না করে আঠাশ লাখ টাকা উল্লেখ করেন। পরিশোধিত টাকার অংক কম উল্লেখ করার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ইনকাম ট্যাক্সের বিষয় আছে,তাই কম উল্লেখ করেছি। উক্ত বায়না চুক্তিতে স্বাক্ষী হিসেবে তার ভাগিনা সাংবাদিক শওকত এ সৈকত সাহেবও স্বাক্ষর করেন। বায়না চুক্তিতে বিবাদী তমাল আহম্মেদ অঙ্গীকার করেন যে, চুক্তি সম্পাদনের ১মাসের মধ্যে তিনি উক্ত তফসিলের ভুমি ও ফ্ল্যাটের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ সাফ কবলা বায়নাপত্র আমার বরাবর সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করে দিতে বাধ্য থাকবেন। এছাড়াও উক্ত বায়না পত্রে আমার সুবিধামত সময়ে ফ্ল্যাটটি রেজিস্ট্রিসহ দখল বুঝে নিবো, এমন শর্তও ছিল। উক্ত ভবনের সামনে পায়ে হাটা কাচা রাস্তা ছাড়া যানবাহন চলাচলের কোন রাস্তা ছিল না। এক পর্যায়ে সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র মহোদয়ের স্বদিচ্ছায় ও স্থানীয় কাউন্সিলর হিসেবে আমার তদারকিতে সেখান দিয়ে সড়ক নির্মাণ হওয়ার কাজ শুরু হয় আর এরপর থেকেই তিনি অতি মাত্রায় টালবাহানার পাশাপাশি বাজে ব্যবহার শুরু করেন। কারণ রাস্তা হওয়ায় ঐ ফ্ল্যাটের বর্তমান বাজার দও প্রায় দ্বিগুন হয়ে গেছে। তিনি আমাকে ফ্ল্যাটটি রেজিস্ট্রি করে না দিতে নানাভাবে কুৎসা রটনা করেন, এক পর্যায়ে তিনি ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রি করার কথা বললে দুর্ব্যবহারসহ অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন এবং সরাসরি আমাকে ফ্ল্যাটটি ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিতে থাকেন। উক্ত ভবনের সামনে সিটি কর্পোরেশেনের রাস্তার ধারে রেলওয়ের পরিত্যাক্ত জমিতে আমি সৌন্দয্য বর্ধনের জন্য গাছ লাগালেও তিনি কয়েকমাস ধরেই বাধা প্রদান করছেন, আমার লাগানো গাছ তুলে ফেলে আমাকে গালমন্দ করেন। এই বিষয়ে বিবাদীর ভাই জনাব আইয়ুব ও ইকবাল আহম্মেদকে একাধিকবার বলেও কোন ফল হয় নাই। তার প্রতিফলন ছিল গত শুক্রবারের ঘটনা। তমাল আহমেদ নিজে বাচঁতে এখন আমার নামে কুৎসা রটনা করছেন। আমি বিষয়টি নিয়ে আইনের আশ্রয় নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।