আজ মঙ্গলবার | ২২ জুলাই ২০২৫ | ৭ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২৬ মহর্‌রম ১৪৪৭ | রাত ১০:১১

মেধা বিকাশে বাধা মাদক

ডান্ডিবার্তা | ০৬ এপ্রিল, ২০২৩ | ১১:২২ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট সারাদেশে মাদকের যে ভয়াবহতা দেখা দিয়ে তাতে বুঝা মুশকিল আগামী প্রজন্ম কতটুকু সুস্থ মস্তিস্ক কিংবা প্রতিভাবান হবে। বাধাহীন মাদক বিক্রি সেবনে মেধাহীন হয়ে উঠা সন্তান নিয়ে বিপাকে অভিভাবক। আর তাদের ব্যক্ত কন্ঠে অনুভুতি “তোমার সন্তান শিক্ষিত, আমার সন্তানকে কেন মাদকাসক্ত”। সন্তান নিয়ে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত অভিভাবকদের এমন প্রশ্নের জবাব কে দেবে সরকার নাকি প্রশাসন? বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মাদকের ভয়াবহতা দেখে বেশকিছু মাদকাসক্ত সন্তানের অভিভাবকদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জের প্রত্যন্তস্থানে মাদকের ভয়াবহতা যেহারে বেড়েছে তা অত্যন্ত বিপদজনকভাবে পৌছে গিয়েছি। প্রতিটি অলিগলিতে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে মাদক। তবে স্থানীয়দের মতে, রাজনীতিবিদদের শেল্টার, রাজনীতির ব্যানারে নেতাদের মাদক বিক্রি, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন ও পুলিশের নিরবতা অনেকটা মাদকের কড়ালগ্রাসে গিলে খাচ্ছে এখানকার যুবসমাজকে। অনেকেই বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর, পুলিশ কিংবা রাজনীতিবিদ তাদের তো কোন সমস্যা নেই। কারন তাদের সন্তানরা দেশের কোন আলো-বাতাসের মধ্যে নেই। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে তাদের সন্তানদের বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। আর বিপাকে রয়েছি আমরা আমাদের সন্তানদের নিয়ে। মাদকের বিরুদ্ধে তাদের উদাসীনতা মনোভাবই আজ সমাজের প্রতিটি স্তরে মাদকের ভয়াবহতা দেখা দিয়েছে। ফতুল্লার আলীগঞ্জ, রেলষ্টেশন, দাপা, লালপুর, ইসদাইর, গাবতলী, মাসদাইর, কাশিপুরসহ বিভিন্ন এলাকার অনেক বাসিন্দা বলেন, আমাদের এখানে মাদক বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে অনেকটা ঝালমুড়ি বিক্রেতার মত। কোন প্রকার ভয়ভীতি বা বাধা উপেক্ষা করেই উক্ত মাদক বিক্রেতারা নির্বিগ্নে চালাচ্ছে তারা ব্যবসা। স্থানীয় নেতা কিংবা বিশের পেশার ব্যক্তি অথবা পুলিশের সোর্সের মাধ্যমে পুলিশকে ম্যানেজ করেই যুবসমাজকে ধ্বংসের যন্ত্র মরননেশা মাদক বিক্রি করছে উন্মাদ গতিতে। আর এ কাজে বাধা প্রদানকারী পরবর্তীতে উক্ত মাসোহারা গ্রহনকারীদের পরামর্শক্রমে মাদক বিক্রেতাদের সাজানো নাটকে বনে যাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে। যে কারনে পরিবারের সকলের সুখ-শান্তির কথা বিবেচনা করে প্রতিবাদের পরিবর্তে দর্শকের ভুমিকায় থাকতে হয় আমাদেরকে। কাশিপুরের বাসিন্দা আকমল হুদা বলেন, জীবনের অনেকটা সময় চলে গিয়েছে এখন অপেক্ষা শুধু আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যারা। আমি যতটুকু বয়স পেয়েছি তার অর্ধেক বয়স আমাদের সন্তানরা পাবে কিনা তা নিয়ে সংশয়। কারন মাদকের ভয়াবহতা ¯্রােতে যেভাবে বিভিন্ন বয়সী ছেলে-মেয়েরা আসক্ত হচ্ছে তাতে ওদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করাটাও বোকামীর পর্যায়ে চলে এসেছে। আপনি তো দেখেছেন,মাদকাসক্ত হয়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ে তার বাবাকে হত্যা করেছে। তাছাড়া মাদকের টাকা না পেয়ে সমাজের প্রতিটি স্তরে সন্তান দ্বারা পিতা-মাতা হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছে। মাসদাইরের বাসিন্দা আবদুল সোবহান বলেন, ভাই খুবই বিপদে রয়েছে দুইটি সন্তান নিয়ে। চেয়েছিলাম সন্তান দুটোকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে কিন্তু পারলাম না। কারন স্কুলের পাশেই রয়েছে বিরাট মাদকের হাট। সেখানে থেকেই ছেলে দুটো মাদকাসক্ত বনে গেছেন। স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি কিংবা পুলিশী টহল এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ভাই কিছুক্ষন অপেক্ষা করেন সবকিছুই টের পাবেন। অথ্যাৎ গন্যমান্য কিংবা নেতা অথবা পুলিশ তারা সবাই এখানে আসেন। কিন্তু প্রতিবাদ কিংবা বন্ধ করতে নয় আসেন মাসোহারা নিতে। আবদুল সোবহান কিংবা আকমল হুদার মতই প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় অনেক অভিভাবক যেন আজ মাদকের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন তা নির্মুল না করার ফলে। মাদকের আগুনে ক্রমেই ঝলছে যাচ্ছে সন্তান নিয়ে তাদের হাতের মুঠোয় থাকা স্বপ্নগুলো। চিন্তিত রয়েছে ঘরে থাকা সন্তানগুলো নিয়ে। কারন আমার আগেই তারা মারা যাবে কিনা মাদকাসক্ত হয়ে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর,প্রশাসনের নিরবতা আর জনপ্রতিনিধি কিংবা সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তিরা যদি এভাবেই মাদক বিরুদ্ধে কঠোর না হয়ে নিরবতা পালন করেন তাহলে হয়তবা একদিন সেই মাদকাসক্ত সন্তানের দ্বারাই তারা আক্রমনের শিকার হতে পারেন বলে অভিমত চুপসে থাকা অভিভাবকদের। তাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের চিন্তা করে যদি টাকার জোরে বিদেশ পাঠাতে পারেন শিক্ষা অর্জনের জন্য তাহলে আমাদের সন্তানকে মানুষের মত মানুষ হতে কেনইবা সহযোগিতা হাত বাড়াচ্ছেননা। কেনইবা সমাজকে মাদকমুক্ত রাখতে মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষনা করছেনা। তাই বুকভরা আক্ষেপ নিয়ে অনেক অভিভাবক বলেন,মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর,প্রশাসনের কর্মকর্তা আর জনপ্রতিনিধি কিংবা সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তিদের যদি শিক্ষত হতে পারে তাহলে আমাদের সন্তানরা কেন মাদকাসক্ত হবে? এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে প্রচলিত মাদকের মধ্যে গাঁজা, ফেনসিডিল, চরস, ভাং, হেরোইন, প্যাথেড্রিন, মদ, ইয়াবা অন্যতম। শুধুমাত্র মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রনে অধিদপ্তরের অধীনে ২০১৭ সালে ১১,৬১২টি মামলা, ২০১৮ সালে ১৩,৭৯৩টি মামলা, ২০১৯ সালে ১৭,৩০৫টি মামলা, ২০২০ সালে ১৭,৩০৪টি মামলা এবং ২০২১ সালে ৯৮৮৬টি মামলা হয় সারাদেশে। আর পুলিশের পক্ষে মাদক সংক্রান্ত কতটি মামলা হয়েছে তার পরিসংখ্যান জানা যায়নি। আর ২০২১ সালে ঢাকা কেরানীগঞ্জে একটি অনুষ্ঠানে স্বরাষ্টমন্ত্রী মহোদয় বলেছেন যে,দেশে মাদকাসক্তের পরিমান ৮০ লক্ষ। এছাড়া বিভিন্ন সংস্থা ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য উদ্ধৃতিতে জানা যায়, এখন মাদক ব্যবসায় জড়িত ২০০ গডফাদার ও ১ লাখ ৬৫ হাজার বিক্রির নেটওয়ার্ক। এদের মাধ্যমে মাদক খাতে বছরে লেনদেন হয় ৬০ হাজার কোটি টাকা। আর বেশকিছু সংস্থার তথ্যানুযায়ী অবৈধ মাদক আমদানিতে প্রতিবছর বিদেশে পাচার হচ্ছে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। গত ১২ বছরে ঐ পাঁচ সংস্থা ইয়াবা উদ্ধার করে ২২ কোটি ৩০ লাখ ৭৪ হাজার ১৯১ পিস। সর্বোচ্চ উদ্ধার হয় ২০১৮ সালে ৫ কোটি ৩০ লাখ ৪৮ হাজার ৫৪৮টি এবং সর্বনিম্ন উদ্ধার হয় ২০০৯ সালে ১ লাখ ৩২ হাজার ২৮৭ পিস। হেরোইন উদ্ধার হয় ২ হাজার ৫৪৫ কেজি। সর্বোচ্চ উদ্ধার হয় ২০১৮ সালে ৪৫১.৫ কেজি ও সর্বনিম্ন ২০১৪ সালে ৭৮.৩ কেজি। কোকেন উদ্ধার হয় ৪৫.৬৯ কেজি। এর মধ্যে ২০১৩ সালে সর্বোচ্চ ১১.৬২ কেজি ও ২০১১ সালে সর্বনিম্ন শূন্য দশমিক ৪৭ কেজি। ২০০৯ সালে আফিম উদ্ধারের ঘটনা না থাকলেও ২০১৪ সালে সর্বোচ্চ ৯১.২২ কেজি উদ্ধার হয়েছে। এক যুগে মোট আফিম উদ্ধার হয়েছে ২১৭.৩৯ কেজি। গাঁজা উদ্ধার হয়েছে ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮৯২ কেজি। ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ ৬৯ হাজার ৯৮৯ কেজি এবং ২০১৯ সালে সর্বনিম্ন ৩২ হাজার ৬৫৭ কেজি গাঁজা উদ্ধার হয়। বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে যে, কি পরিমানে মাদক দেশে প্রবেশ করছে প্রতি বছর। আর এ সকল ব্যবসায় যারা জড়িত তারা কতটুকু ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা তা বুঝে উঠান কোন প্রশ্ন থাকেনা।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা